somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পদ্ম পাতার জল: মনে রাখার মতো একটি সিনেমা

২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বানিজ্যিক সিনেমা মূলত দুই ধরনের৷ কিছু সিনেমার মানে শুধুই আড়াই ঘন্টার বিনোদন, আপনি সিনেমা দেখলেন কিছুক্ষন মজা নিলেন, দুই দিন পর সিনেমাটার কথা ভুলেই গেলেন৷
.
আবার কিছু সিনেমা আছে আড়াই ঘন্টার মুগ্ধতা, যেগুলো হৃদয়ে গেঁথে যায়৷ এসব সিনেমা আপনি বিশ বছর পরেও ভুলবেন না৷ সিনেমা হলে দেখে তো মুগ্ধ হবেনই৷ একটা ডিভিডিও সংগ্রহে রাখতে চাইবেন অথবা অনেক বছর পর একদিন টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে কোন একটা ঐ চ্যানেলে সিনেমাটা দেখাচ্ছে দেখলেই আয়েশ করে দেখতে বসে যাবেন৷ ২নং ক্যাটাগরি খুব কম বাংলা সিনেমা গুলোর তালিকায় থাকার মতো একটি সিনেমা পদ্ম পাতার জল৷
.
বানিজ্যিক ফিল্মেও যে শিল্প থাকতে পারে তার উৎকৃষ্ঠ উদাহরন পদ্ম পাতার জল৷
অসাধারন গল্প, সংলাপ, অভিনয় শৈলী, লোকেশন সব মিলিয়ে একটা অসাধারন কাজ৷
.
অত্যাচারী জমিদারের পুত্র খেয়ালি কবি রিজওয়ান৷ বাবার নির্দেশে শহরে যায় বিদ্যা অর্জনের জন্য৷ সেখানে এক রাতে দুই বন্ধুর পাল্লায় পড়ে এক নাঁচের আসরে আসেন এবং বাইজী ফুলেশ্বরীর প্রেমে পড়ে যান৷ কি হবে তাদের পরিনীতি? এটুকু কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে হয়ত অনেকেই ছবির কাহিনীকে ধনী গরীবের প্রেম টাইপ ট্রিপিক্যাল বাংলা সিনেমা ভাবছেন৷ আপনিও যদি সেটা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি ভুল ভাবছেন৷ ছবির কাহিনী সাধারন কোন বাংলা সিনেমার মতো নয়৷ ছবির কাহিনী আসলে কেমন? সেটা সম্পর্কে ধারনা দিতে গেলে ছবির ভিতরের অনেক চমক ফাস হয়ে যাবে৷ যা আপনার ছবিটা দেখার মজা নষ্ট করে দিতে পারে৷ তারচেয়ে বরং আপনিই ছবিটা দেখে ছবির কাহিনী জানুন৷
শুধু একটা কথা বলতে পারি এ ছবি আপনাকে হাঁসাবে, কাঁদাবে, রাগাবে, ভাবাবে সর্বোপরি মুগ্ধ করবে৷
.
শুরুর দিকের বেশ কিছু কমেডি সিকোয়েন্সে আপনি হাসবেন৷ ইমন ও মীমের প্রনয়ের জায়গা গুলোতে এক ফালি মুচকি হাঁসি আপনার মুখে লেগে থাকবে৷ মীমের সাথে ইমনের কবিতার মাধ্যমে ভাব প্রকাশ আপনাকে এক অনন্য মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখবে৷ তারপর আস্তে আস্তে যত এগোতে থাকবে নাটকীয়তা ততই বাড়তে থাকবে তখন আপনি কখনও ভাববেন আবার কখনও হলের অন্য দর্শকদের মতো আপনার চোখও কান্নায় জ্বল জ্বল করে ওঠবে৷ ছবির দ্বিতীয়অর্ধে একটা সময় আসবে যখন কাহিনী একটি সাধারন সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে এমন ভেবে বিরক্ত হতে শুরু করবেন৷ ঠিক তখনই কাহিনীতে আসবে নতুন বাঁক৷ ছবির শেষটা অনেকেই মেনে নিতে পারবেন না৷ শেষের দিকের প্রতিটা মুহূর্ত আপনার হৃদয়ে পিন ফোটার মতো অনুভূতি জাগাবে৷ মোট কথা দর্শকের আবেগ অনুভূতি নিয়ে সফল ভাবে খেলতে সক্ষম হয়েছে ছবিটি৷ আর এজন্য ধন্যবাদ পাবে ছবির কাহিনী ও চিত্রনাট্যকার লতিফুল ইসলাম শিবলী৷ উনি অসাধারন কাহিনীর পাশাপাশি তিনি সংলাপ গুলোও ভালো দিয়েছেন৷ প্রত্যেকটা সংলাপই অনেকদিন মনে রাখার মতো৷ তাছাড়া সংলাপে প্রচুর কবিতার ব্যাবহার ছিল৷ এছাড়া ছবির শেষটা যিনি যেভাবে করেছেন সেটা সত্যিই অভাবনীয়৷ ছবিটা মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে শুধু মাত্র শেষের অংশ গুলোর কারনে৷ সব মিলিয়ে বলা যায় তিনি বেশ পরিশ্রম করেই ছবির কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখছেন৷ পরিচালক ও প্রযোজকদের উচিত ওনার মতো প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী চিত্রনাট্যকারকে বাংলা সিনেমায় নিয়মিত করা৷
.
ছবির প্রেক্ষাপট ইংরেজ আমলের অর্থ্যাৎ আজ থেকে কমপক্ষে ১০০ বছর পূর্বের৷ ইতিপূর্বে বহু বাংলা সিনেমায় ইংরেজ আমল, জমিদারী,এগুলো উঠে আসলেও৷ কোন সিনেমাতেই ১০০ বছর পূর্বের পরিবেশ ফুটে ওঠেনি কিংবা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়নি৷ কিন্তু পদ্ম পাতার জল ছবিতে সেই সময়টা সফল ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন ছবির নির্মাতাগন৷ লোকেশন, বাড়ি ঘর, আসবাপত্র, যানবাহন, পোশাক-আশাক সব কিছুতে ছিল ১০০ বছর আগের ছোয়া৷ আর এজন্য ছবির পরিচালক, সেট নির্মাতা, মেক্যাপ ম্যান এবং কস্টিউম ডিজাইনারকে স্যালুট৷ সেই সঙ্গে ছবির প্রডিউসারকে ধন্যবাদ এধরনের ব্যায়বহুল একটি ছবি প্রযোজনার সাহস করার জন্য৷
.
এবার আসি অভিনয়ে৷
'তীর মেরোনা মেরোনা' শিরোনামের গানের মাধ্যমে,যখন পর্দায় মীমের আগমন ঘটলো৷ তখন ভয় হচ্ছিল এই মেয়ে পারবে তো? কিন্তু সময় যতো গড়াতে থাকলো ততই অবাক হতে থাকলাম মীমের অভিনয়ে৷ শুরুর দিকে মীমের হাসি, সংলাপ বলা, সৌন্দর্য এসব আপনার হৃদয়কে উথান পাথাল করে দিবে৷ উল্টোদিকে ছবির শেষে মীমের অভিনয়ে আপনার হৃদয় বিষাদে ভরে ওঠবে৷ এককথায় মীম অসাধারন অভিনয় করেছে শেষের দিকে৷ শেষের দিকের প্রতিটি সিকোয়েন্সে মীমের এক্সপ্রেশন, ডায়লগ ডেলিভারি ছিল অনবদ্য৷ এই অভিনয়ের জন্য মীম জাতীয় চলচিত্র পুরুষ্কার পাওয়ার দাবিদার৷
যেসব হুজুগে লোকজন ছবি মুক্তির আগে ছবিতে ইমনকে নেওয়া ঠিক হয় নাই এমন মন্তব্য করছিলেন তাদেরকে বলতে চাই৷ ছবিতে ইমন অত্যান্ত ভালো অভিনয় করছে৷ ইমনের ক্যারিয়ারের সেরা ছবি 'পদ্ম পাতার জল'
.
রিজওয়ান তথা ইমনের বাবার চরিত্রে অভিনয় করা তারিক অনাম খানকে পর্দায় খুব বেশী সময় দেখা যায়নি৷ যতক্ষন ছিলেন ভালো অভিনয় করেছেন৷
তবে সবচেয়ে অসাধারন অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম৷ ভিলেনগিরি কাকে বলে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন ছবিতে৷ শেষের দিকে খুব কম সময়ের উপিস্থিতিতে অমিত হাসানের কাঁছ থেকে প্রধান ভিলেনের খেতাব রূতীমতো ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি৷ আপনি যেমন মানুষই ইউন না কেন ওনার চরিত্র'টি আপনাকে এক মহুর্তের জন্য হলেও রাগাবে৷
এছাড়া নিমা রহমান, আবু হেনা রনি সহ বাকিরা সবাই নিজ নিজ চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছে৷
তবে এক্ষেত্রে অমিত হাসান কিছুটা হতাশ করেছে৷ ওনার অভিনয়ে বিশেষ কিছু ছিল না, কোনরকমে চালিয়ে নেওয়ার মতো অভিনয় করেছেন তিনি :(
.
ছবিতে ক্যামোরার কাজ ও আবহ সংগীত ছিল আন্তর্জাতিক মানের৷ হলিউড বলিউডের সাথে এক কাতারে দাড়ানোর মতো৷
.
ছবির গান গুলো দেশের লোকেশন ব্যাবহার করে অসাধারন ভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে৷ আর গানের কথা গুলোও কাব্যিক৷ গান গুলোও ছবির প্রক্ষাপটে ঠিকঠাক৷ যদিও এটাও সত্য ছবির একটা গানও একবার শুনলেই গুন গুন করে সারাদিন গাওয়ার মতো মূর্ছনা জাগায় না৷ এই কারনে গান গুলো সকল দর্শকের কাঁছে ভালো লাগেনি৷ যদি গান গুলো জনপ্রিয় হতো তাহলে এই সিনেমাকে নিদ্বিধায় ঢালিউডের ইতিহাসের সেরা মুভি গুলোর একটি হিসেবে ঘোষনা করা যেত৷
.
সবমিলিয়ে পদ্ম পাতার জল মানে অন্যরকম অনুভূতি৷ বাংলা সিনেমা নির্মানে এক অনন্য বিপ্লবের নাম 'পদ্ম পাতার জল'
নির্মাতাদের ৩ বছরের পরিশ্রম স্বার্থক৷
.
উল্লেখ্য এক সাপ্তাহ আগে ভারতে বাহুবলি নামে একটা সিনেমা বের হয়েছিল৷ বাংলাদেশী সিনেমার মান ও বাজারের বিবেচনায় পদ্ম পাতার জলকে যদি কেউ বাংলাদেশের বাহুবলী বলেন তাহলে খুব একটা ভুল বলবেন না৷ অফসোস একটাই চারটি বলিউড সিনেমার সমান বাজেটের বাহুবলী চারদিনে লগ্নি তুলে ফেলে৷ আর বাংলাদেশের পদ্ম পাতার জল ঠিক মতো হলই পায় না৷ প্রদর্শনীতেও বলার মতো দর্শক থাকে না৷ ওদের সিনেমা আর আমাদের সিনেমার মধ্য মানের পার্থ্যক্যের পিছনের কারন হয়তো এটাই৷
#ppj
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×