প্রযুক্তি জীবনকে দিয়েছে বেগ। কিন্তু এর
বিড়ম্বনাও নেহায়েত কম নয়। গোপন
ক্যামেরা ও দ্বিমুখী আয়না বর্তমান
সময়ে তেমনি এক প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনা। বিশেষত
মেয়েদের জন্য গোপন
ক্যামেরা এবং দ্বিমুখী আয়না একটা আতংক
হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটে ঢুকলেই নানান
সাইটে দেখা মিলে গোপন ক্যামেরায় ধারণ
করা ভিডিও,ছবি বা নিউজ। অনেক মেয়ে তাই
যে কোনো নতুন জায়গায় গেলে আড়ষ্ট
হয়ে থাকে। বন্ধুত্বেও অনেক সময়
থাকে না স্বত:স্ফূর্ততা।কিন্তু জীবনতো আর
থেমে থাকে না।
নানা প্রয়োজনে আপনাকে বিউটি পার্লার
বা দর্জি বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তেই হয়।
কাজের সূত্রে বা বেড়াতে গেলে উঠতে হয়
হোটেলে। শপিংমলের ট্রায়াল রুম,
বিউটি পার্লার, হোটেল থেকে শুরু করে মেয়েদের
স্কুল-কলেজ- টয়লেট এই গোপন
ক্যামেরা থাকতে পারে।এর মাধ্যমে নষ্ট
হতে পারে আপনার ব্যক্তিগত জীবনের
গোপনীয়তা।গোপন ক্যামেরা ও
দ্বিমুখী আয়না থেকে নিজেকে রক্ষা করার
কিছু উপায় জানাচ্ছে অর্থসূচক।ভুল
ধারনা ত্যাগ
করুন:একটা ধারনা আছে ,যদি কোনো রুম
থেকে কল করা যায় ও সেখানে নেটওয়ার্ক
থাকে- তাহলে গোপন ক্যামেরা নাই। আর
যদি কল করা না যায় ও নেটওয়ার্কহঠাৎ
করে ডাউন হয়ে যায়- তাহলে সেখানে গোপন
ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু ধারনাটি সত্যি নয়।
এভাবে নিশ্চিত হবেন না যে গোপন ক্যামেরার
চোখ আপনার ওপর নেই।মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত
প্রযুক্তি এবং গোপন ক্যামেরার
প্রযুক্তি ভিন্ন। তাই গোপন
ক্যামেরা থাকলেও মোবাইল নেটওর্য়াক
জ্যাম হবার কোন কারণ নেই। গোপন
ক্যামেরা বসানোযায়গায়
আপনি ভালভাবেই
মোবাইলে কথা বলতে পারবেন ।
সাধারণভাবে মোবাইল ফোনে জিএসএম-৯০০
এবং জিএসএম-১৮০০ সিগন্যাল ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে গোপন ক্যামেরাতে ২.৫
গিগা হার্জের এফ সিগন্যাল ব্যবহার
করা হয়, যা মোবাইল সিগন্যালের চেয়ে ভিন্ন।
শপিংমলের ড্রেসিং/ট্রায়াল
রুমে যে আয়না থাকে সেটা আসল নাও
হতে পারে, এটিও গোপনক্যামেরার মতই
মারাত্মক। আসল আয়নার মাঝে এখন যুক্ত
হয়েছে নকল আয়না, যাকে বলা হয়
দ্বিমুখী আয়না। এই আয়নায় আপনি আপনার
চেহারা দেখতে পারবেন, কিন্তু ভুলেও
বুঝতে পারবেন না যে অন্যপাশে একজন
আপনাকে দেখছে!কি করবেন:আপনার আঙ্গুল
আয়নার উপর রাখুন। যদি আপনার আঙ্গুলের
মাথা প্রতিবিম্ব আঙ্গুলের মাথার
সাথে না লাগে (মাঝে যদি ফাঁকা থাকে)
তাহলে আয়না আসল।আর যদি আঙ্গুলের
মাথা প্রতিবিম্বের মাথার
সাথে লেগে যায়, তার মানে আয়না নকল!
এটা আসল আয়না না,
একটা দ্বিমুখী আয়না- যার
অন্যপাশে থেকে আপনাকে দেখা যাবে, কিন্তু
আপনি তাকে দেখতে পাবেন না।
মানে অন্যপাশে থেকে কেউ
আপনাকে দেখছে বা ভিডিওকরছে!কারণ আসল
আয়নার সিলভার প্রলেপ থাকে আয়নার
পিছনে, যার জন্য আপনার আঙ্গুল ও
প্রতিবিম্বের মাঝে ফাঁকা থাকবে আয়নার
পুরুত্বের জন্য।আর নকল আয়নার
(দ্বিমুখী)সিলভার প্রলেপ থাকে আয়নার
সামনে, যার জন্য আপনার আঙ্গুলের ছাপ
আপনার আঙ্গুলের প্রতিবিম্বের
সাথে লেগে যাবে কারন
মাঝে কোনো বাঁধা নেই।গোপন
ক্যামেরা আছে সন্দেহ হলে, চারপাশ ভাল
করে দেখুন। মূলত ছাদের কোনা, দেয়ালের ছবি,
ফুলের টব অথবা আয়নার পিছনে বসানো হয়
এটি। সুতরাং এই জায়গাগুলি ভাল
করে খেয়াল করুন।সিডি প্লেয়ার
বা এজাতীয় বস্তুতেও বাসনো হয়। মূলত
রুমের অন্ধকার
এলাকাগুলোতে গোপনক্যামেরা বসানো হয়,
যাতে তা অন্যের নজরে না আসে; আবার
আলোকিত এলাকার ছবিও
ভালোভাবে পাওয়া যায়।রুম
পুরোটা অন্ধকার করে কিছু সময় নিন,
যাতে করে চোখ অন্ধকারকে সয়ে যায়। এবার
খুবভাল করে দেখুন- লাল, সবুজ
বা হালকা নীল কোন আলো কোথাও
থেকে বের হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন।
যদি খুঁজে পান তবে ধরে নিতে পারেন
সেটা ক্যামেরা।রুমের সব তার খেয়াল করুন,
কোন তার কোথায় গেছে সেটি বুঝার
চেষ্টা করুন। তারগুলোরমাঝে যদি একটি তার
বিশেষ কোন কোনায় চলে যায় বা এরকম সন্দেহ
করেন তবে ওই তারের শেষ
গন্তব্যটা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।অনেক
ক্যামেরাতে “মোশনডিটেক্টর” থাকে।
মানে হলো আপনি রুমের যেদিকে যাবেন
ক্যামেরার লেন্স অটোমেটিক সেই
দিকে ঘুরে যাবে। আপনি রুম অন্ধকার করে একটু
সময় নিন। এরপর খুব সাবধানে শব্দ
না করে রুমের এদিক থেকে ওদিক যান। কান
খাড়া করে কোন শব্দ পান কিনা খেয়াল করুন।
আপনার নড়াচড়ার
সাথে সাথে যদি হালকা লেন্স ঘোরার শব্দ
পান তবে বুঝবেন অবশ্যই গোপন ক্যামেরার
নজরদারিতে আছেন আপনি।অতি আধুনিক কিছু
যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় , যা গোপন
ক্যামেরা সনাক্ত করতে পারে। সেগুলি মুলত
চীনের তৈরি, নেট হতে কম
দামে এগুলো কিনতে পারেন।সর্বোপরি,একমাত্র
সচেতনতাই পারে আপনাকে যেকোন
প্রাযুক্তিক বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা করতে।
সুতরাং সাধান মেয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৪