পৃথিবী যদি আবাস হয় আর আমরা,মনুষ্যজাতি যদি এর বাসিন্দা হই,তাহলে বলতে হয় যে আমরা এক শুণ্যে ভাসমান শোষণগোলকে বাস করি।এমন এক শোষণস্থল যেখানে অফুরন্ত চর্ব্য,চোষ্য,লেহ্য,পেয় থাকা সত্ত্বেও কেবল শোষণই প্রকটভাবে প্রতীয়মান।কেবল চুষে খেতেই আমাদের পরমাত্মা পরিতৃপ্তি লাভ করে।অনেক মহাত্মার পক্ষেও এই চুষে খাওয়ার লোভ সংবরণ করা কঠিন হয়ে ওঠে। আম-আত্মাদের কথা দূরেই থাক।এর কারণ হিসেবে জ্ঞানগর্ভ গবেষণায় না গিয়ে কেবল একটা কথাই বলতে পারি।মায়ের পেট থেকে পড়ার ঠিক পরমুহূর্ত থেকেই একমাত্র খাদ্য "মায়ের দুধ"টুকু আমরা কিন্তু একরকম শোষণ করেই পান করেছি।আর তখন থেকেই আমরা শোষণ অব্যাহত রেখেছি।এখন আপনিই বলুন,এইসব জন্মগত অভ্যাস কি এত সহজে ছাড়া যাআআই?
এখন চলছে বিংশ শতাব্দী।মানুষ এখন কত্ত ক্রিয়েটিভ।আর শোষণও হচ্ছে নিত্যনতুন ক্রিয়েটিভ উপায়ে।শোষণের আবহে এমনভাবে লেপ্টে আছি যে অনেক শোষণই গায়ে সওয়া হয়ে গিয়েছে। শোষণকে আর শোষণ বলে মনে হয়না।শোষণের ঢং দেখে মনে হয় এটা শোষণকারীর ন্যায্য অধিকার।আপত্তি করলেই তেড়ে আসবে নাহয় জিডি করে দেবে।।
চুষণকর্ম কাহাতক যায় একবার দেখুন।আমার বন্ধু ভার্সিটিতে গেল ভর্তা হতে, ধুত্তোর ভর্তি হতে। ভর্তির ফি কত তা ডিপার্টমেন্টএ এসে জেনে নিলো,কিন্তু ফি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি মনে হওয়াতে বন্ধুটি কর্তব্যরত পিয়নকে ব্যাখ্যা করতে বললো কোন খাতে কত নিচ্ছে তারা।পিয়ন সবিস্তারে সব ব্যাখ্যা করে শেষে বললো,ডিপার্টমেন্ট হেড স্যারের দুঠো বই বের হয়ছে গত হপ্তায়। ওইগুলোও আপনারে দেওয়া হপে।এর জন্য লাগবে একাজার(একহাজার)। বন্ধুবর মোর তো পুরাই মাননীয় স্পিকার হয়ে গেল।এরপর ফেসবুকে স্টেটাস "ফিলিং সাক্ড"।
হ্যা,দেশ ডিজিটাল(!) হচ্ছে।আমাদের শোষণও ডিজিটাল হচ্ছে।কেবল আমাদের মন মানসিকতাই এনালগ রয়ে যাচ্ছে।সেদিন দেখলাম এক রিক্সাওয়ালা ভাইকে চড়-থাপ্পড় মারছে এক ডিজিটাল নাগরিক।কারণ হল ভাইটি ৫ কি ১০ টাকা বেশি চেয়েছে।ঘর্মাক্ত পরিশ্রম করে হাতেপায়ে রিক্সা টেনে সুদূর থেকে অদূরে একেবারে বাড়ির দরজার সামনে নিরাপদে নামিয়ে দিয়ে ভাইটি কি করলেন? অপকৌশলে না খেয়ে জালিয়াতি না করে ৫-১০টা টাকা সবিনয়ে চেয়ে নিলেন।বলতে গেলে ভিক্ষে চাইলেন,তবুও তা ভিক্ষা নয়।এই ১০টা টাকা দিয়ে যাতে খালিপেটে,আধাপেটে থাকা বউ বাচ্চার পেটে যতসামান্য বাড়তি কিছু দেওয়া যায়।আর আমাদের ডিজিটাল নাগরিক এতে মহা শোষিত বোধ করলেন।ব্যাটা জোচ্চোর রিক্সাওয়ালা,বাড়তি টাকা দিয়া ব্যাংক বেলেন্স বাড়াইবি না?
প্রশ্ন হল,আমাদের নাগরিকটি কেবল এইক্ষেত্রেই শোষিত বোধ করছেন? না নিত্য শোষিত হচ্ছেন বলে এই সামান্য ক্ষয়টাও ধাতে সয়ছেনা উনার?