somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘে ঢাকা অভিমানী তারাঃ ঋত্বিক কুমার ঘটক

২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ ছবি লোকে দেখে। ছবি দেখানোর সুযোগ যতদিন খোলা থাকবে,ততদিন মানুষকে দেখাতে আর নিজের পেটের ভাতের জন্য ছবি করে যাবো। কালকে বা দশ বছর পরে যদি সিনেমার চেয়ে ভালো কোনও মিডিয়াম বেরোয় আর দশবছর পর যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে সিনেমাকে লাথি মেরে আমি সেখানে চলে যাবো। সিনেমার প্রেমে নেশায় আমি পড়িনি। আই ডু নট লাভ ফিল্ম। ”
-ঋত্বিক কুমার ঘটক।
শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক; স্পষ্ট ভাষায় তাঁকে সরাসরি মেঘে ঢাকা তারা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়াটা রীতিমত ভুল বলেই গণ্য করা যায়। কারণ তারকাখ্যাতি ঋত্বিক ঘটকের জীবদ্দশায় ছিল না; বরং তাঁকে বলা যায় বাংলা চলচ্চিত্রের মরণোত্তর তারকা। এই বিরল তারকাখ্যাতির ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত তিনি নিজেই তাঁর স্ত্রীকে করে গিয়েছিলেন-
“ লক্ষ্মী,টাকাটা তো থাকবে না, কাজটা থাকবে। তুমি দেখে নিও,আমি মারা যাওয়ার পর সব্বাই আমাকে বুঝবে।”
১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার ঋষিকেশ দাশ লেনে ঐতিহ্যময় ঘটক বংশে ঋত্বিকের জন্ম। বংশের আদি পুরুষ পণ্ডিত কবি ভট্টনারায়ণ। তাঁরই বারেন্দ্র শ্রেণীর শাণ্ডিল্য গোত্রের জমিদার বংশের নীলরক্ত ধারণ করেই জন্মেছিলেন ঋত্বিক। তাঁর মায়ের নাম ইন্দুবালা দেবী এবং বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক। মা ইন্দুবালা দেবীর যমজ গর্ভে জন্ম ঋত্বিক এবং প্রতীতি দেবীর। তিনি বাবা-মায়ের ১১ তম এবং কনিষ্ঠতম সন্তান।
তাঁর বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি কবিতা ও নাটক লিখতেন। বাবার বদলীর চাকুরীর কারণে তিনি ঘুরেছেন দেশের নানা প্রান্তে। তাঁর বাবা অবসরের পর রাজশাহীতে গিয়ে বাড়ি করেন;উল্লেখ্য যে,তাঁদের রাজশাহীর বাড়িটাকে এখন হোমিওপ্যাথিক কলেজ করা হয়েছে এবং তার নাম ঋত্বিক ঘটক হোমিওপ্যাথিক কলেজ।
ঋত্বিকের বড়দা মণীশ ঘটক ছিলেন কল্লোলযুগের নাম করা কবি। তিনি ছিলেন ইংরেজির অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী। আইপিটিএ থিয়েটার মুভমেন্ট এবং তেভাগা আন্দোলনে মনীশ ঘটক জড়িত ছিলেন। সেই সুবাদে বাড়িতে একটা সাহিত্যের পরিবেশ ছিল। শম্ভু মিত্র, বিজন ভট্টাচার্য, গোপাল হালদার,মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়,তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়রা বাড়িতে আসতেন। মণীশ ঘটকের মেয়ে বিখ্যাত লেখিকা ও সমাজকর্মী মহাশ্বেতা দেবী।
দেশভাগ অব্দি ঋত্বিক মোটামুটি আর্থিক দিক থেকে নিরাপদই ছিলেন। কারণ পূর্ববঙ্গে তাদের যথেষ্ট ভূসম্পত্তি ছিল,আর তাঁর পিতা সুরেশচন্দ্র ঘটক ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে। বাড়িতে ছিল সাংস্কৃতিক ধারা। বাবা সুরেশচন্দ্র ঘটক প্রতি দিন সকালে গাইতেন,
‘ তুমি নির্মল করো,মঙ্গল করো...’।
মা ইন্দুবালা সন্ধেবেলায় বাইরের ঘরে পিয়ানো বাজাতেন। পরিবারের ছেলেমেয়েরা সেখানে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকত।
ঋত্বিক ঘটকের শৈশবের একটা বড় সময় কেটেছে রাজশাহী শহরে। তিনি রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪৬ সালে মেট্রিক পাশ করেন। পরে তিনি বহরমপুরে বড় ভাই মণীশ ঘটকের কাছে চলে যান। সেখানে কৃষ্ণ নারায়ন কলেজে পড়াশুনা করেন। ১৯৪৮ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পরে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) কলকাতায় আশ্রয় নেয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর পরিবার কলকাতায় চলে যায়।
ছাত্রাবস্থায় লেখক হিসেবে ঋত্বিকের বেশ পরিচিতি ছিল। ‘অভিধারা’ নামের একটি কাগজও প্রকাশ করতেন। নিজের লেখা ছোটগল্প ‘অয়নান্ত’ অভিধারায় ছাপা হয়েছিল। তাতে একটি লাইন লিখেছিলেন—
‘ আমার বাইরের রহস্যটা জানতে হলেও তো আগে চাই নিজের সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান ’।
সে কারণেই হয়তো, ওই বয়সেই বাড়ি থেকে দু’তিন বার পালিয়েছেন ঋত্বিক। কানপুরে একটা টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্টেও কাজ করেছেন কিছু দিন। শেষে ১৯৪২ সালে,কানপুর থেকে বাড়ির লোকজন ঘরে নিয়ে এলেন। মাঝখানে দু’বছর পড়াশোনাও দিলেন ছেড়ে।
বাবা সুরেশচন্দ্র ঘটক বলেছিলেন,
“ ম্যাট্রিক পাশ করলে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়। নতুবা মিস্ত্রি ”।
হঠাৎ পড়াশোনায় মন আসে। এরই মধ্যেই রাজনীতিতে তাঁর ঢুকে পড়া!
১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল, চারদিকের নানা ঘটনার প্রতিবাদ ঋত্বিকের গল্পের প্রেক্ষাপট হয়ে উঠল। ‘মাই কামিং ইনটু ফিল্মস’ শীর্ষক একটি লেখায় ঋত্বিক লিখছেন,
“ শুরুর দিকটায় লেখক ছিলাম। কেরিয়ার শুরুর সময়ে,সেই ১৯৪৩ সাল পরবর্তী সময়ে আমি প্রায় শ’খানেক ছোটগল্প ও দু’টি উপন্যাস লিখি। তখন চারদিকের নানা পরিস্থিতি আমায় সব সময় ভীষণ ভাবে অস্থির করে তুলত। ”
তিনি রাজশাহী কলেজে পড়া অবস্থায় নাটক শুরু করেন। ঋত্বিক ঘটক তাঁর প্রথম নাটক ‘কালো সায়র’ লেখেন ১৯৪৮ সালে। একই বছর তিনি ‘নবান্ন’ নামক পুনর্জাগরণমূলক নাটকে অংশ গ্রহণ করেন। এরই মাঝে তিনি নাটকের প্রতি এতই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে যে ১৯৪৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হয়ে এমএ কোর্স শেষ করেও পরীক্ষা না দিয়ে এই নাটকের নেশাতেই পড়া-লেখা ছেড়ে দেন। তাঁর লেখা ‘কলঙ্ক’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন উৎপল দত্তের সঙ্গে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লাভ করেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদও। এই সময়ে তিনি নাটক লেখার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন,নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাঁর নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জ্বালা’, ‘অফিসার’,‘দলিল’,‘সাঁকো’ এবং ‘সেই মেয়ে’। হাজরার ‘প্যারাডাইস কাফে’তে সে সময় নিয়মিত আলোচনা হত সিনেমা- নাটক নিয়ে। সেখানে আসতেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, নবেন্দু ঘোষ, মৃণাল সেন, বিজন ভট্টাচার্য, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, উমানাথ ভট্টাচার্য, ঋত্বিকেরা। ১৯৪৯ সালে নিজের নাটকের দল গড়েন ঋত্বিক— নাট্যচক্র। সেখানে তিনি নীলদর্পণ নাটকে অভিনয়ও করেন। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের প্রযোজনায় ঋত্বিক পরিচালনা করেছিলেন নাটক ‘ঢেউ’ (বীরু মুখোপাধ্যায়),‘জ্বালা’, ও ‘ম্যাকবেথ’। তাঁর ‘দলিল’ নাটকটি ১৯৫৩ সালে গণনাট্য সংঘের সর্বভারতীয় বোম্বে সম্মেলনে প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছিলো। নাটকটির পরিচালক এবং প্রধান অভিনেতা ছিলেন ঋত্বিক নিজেই।
১৯৪৭ সালে চলচ্চিত্র সমালোচক চিদানন্দ দাশগুপ্ত ও সত্যজিৎ রায় মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি’। ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির আন্দোলনর ফসল হিসেবে ১৯৫০ সালের শুরুতে কলকাতায় শুরু হয় বিশ্বের ধ্রুপদ এবং অন্যান্য ভালো ছবি দেখানো। এসময় তিনি ছবি নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করলেন এবং বুঝতে পারলেন জনমানুষের বড় অংশের কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার চলচ্চিত্র। তবে মূলত ১৯৪৮ সাল থেকেই চলচ্চিত্র আন্দোলনে একজন ‘কর্মী’ হিসেবে ঋত্বিক জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৯ সালে মনোজ ভট্টাচার্যের ‘তথাপি’ নামক ছবিতে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ঋত্বিক ঘটক, নিমাই ঘোষের ছিন্নমূল(১৯৫১) সিনেমায় একই সাথে অভিনয় করেন এবং সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন।
১৯৫১ সালে ঋত্বিক ঘটক প্রথমবারের পরিচালকের দায়িত্ব পান। ‘বেদেনী’ নামের এই সিনেমাটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সালের দিকে, কিন্তু স্টুডিওতে আগুন লেগে যাওয়ায় পরবর্তীতে মূলত অর্থনৈতিক কারণে সিনেমাটির শূটিং বন্ধ হয়ে যায়। নির্মল দে’র পরিচালনায় এটি নির্মিত হচ্ছিল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নাগিনী’ নামক ছোটগল্প থেকে। পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঋত্বিক এর গল্প ও চিত্রনাট্য নতুন করে লেখেন এবং নাম দেন ‘অরূপ কথা’... সুবর্ণরেখা নদীর তীরে প্রায় ২০ দিন ধরে শূটিং করা হয় কিন্তু ক্যামেরার যান্ত্রিক ক্রুটির ফলে ফিল্ম এক্সপোজ না হওয়াতে সিনেমাটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
১৯৫২ সালে নিজের গল্প ও চিত্রনাট্যে ঋত্বিক নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম ছবি ‘নাগরিক’। যদিও ‘নাগরিক’ সে সময়ে প্রদর্শিত হয়নি। ছবিটি প্রসঙ্গে ঋত্বিকের ভাষ্য,
‘নাগরিক মোটামুটি একটা কো-অপারেটিভ ভেঞ্চার ছিল। কেউ পয়সা কড়ি নেয়নি, ল্যাবরেটরি নেয়নি,স্টুডিও নেয়নি,এমনকি ফিল্মস্টক যেটা পাওয়া যায় না সেটাও আমি বিনে পয়সায় পেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা এমন বোকা ছিলাম যে ছবির শেষ পর্যায়ে গিয়ে ব্যবসাগত ব্যাপারে একটা বাজে লোকের পাল্লায় পড়লাম আর সব জিনিসটাই নষ্ট হয়ে গেল। আমাদের মন ভেঙ্গে গেল,বুক ভেঙ্গে গেল। ও ছবি কোনদিন রিলিজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই দেখে আমরা ধরেই নিলাম যে লোকে আর ও ছবি দেখতে পাবে না’।
ঋত্বিকের মৃত্যুরও দেড় বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৭ সালের দিকে ফিল্মটির একটা প্রিন্ট সংগ্রহ করে ছবিটিকে প্রথমবারের মতো আলোর মুখ দেখানো হয়। ১৯৭৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নিউ এম্পায়ারে ছবিটি মুক্তি পায়। ছবিটি সম্পর্কে তাঁর নিজের মতামত,
‘নাগরিকের চিত্রনাট্য ১৯৫০-৫১ সালের রচনা। তখনকার দিনে বাংলাদেশে বাস্তববাদী ছবি মোটেও হতো না। সেদিক থেকে একটা ভালো বিষয় নিয়ে ছবি করার চেষ্টা করেছিলাম’।
চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় বাংলার মধ্যবিত্তের জীবন যন্ত্রণার প্রথম বস্তুনিষ্ঠ শিল্পরূপ। এক টুকরো নিশ্চিন্ততার সন্ধানে দৃঢ় প্রত্যয় নাগরিকের জীবন পথপরিক্রমা এটির বিষয়বস্তু।
এরপর ঋত্বিক ১৯৫৫ সালে তৈরি করেন তিনটি তথ্যচিত্র, আদিবাসী ওরাওঁ সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা নিয়ে ‘ওরাওঁ’, বিহারের আদিবাসীদের জীবন নিয়ে ‘আদিবাসীও কা জীভন স্রোত’, এবং বিহারের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে ‘বিহার কি দর্শনীয় স্থান’।
ঋত্বিক ঘটক ১৯৫৫ সালের ৮ মে সুরমা ঘটককে বিয়ে করেন। তিনিও ছিলেন একজন থিয়েটার কর্মী এবং থিয়েটারের মাধ্যমেই তাদের পরিচয় হয়েছিল। পরবর্তী জীবনে স্ত্রী সুরমা ঘটক ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। নবদম্পতি প্রথমে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে থাকার পরে ‘বোম্বে’র গোরেগাঁওয়ের একটি ফ্ল্যাটে এসে উঠেছিল। এর কিছুদিন পর সলিল চৌধুরীর সাহায্যে ঋত্বিক বোম্বের ফিল্মিস্তান স্টুডিওতে একটি চাকরি নেন। প্রথমদিকে তিনি হৃষীকেশ মুখার্জির সাথে থাকতেন এবং তাঁর পরিচালনায় নির্মিত মুসাফির(১৯৫৭) সিনেমার জন্য চিত্রনাট্য লেখেন। ঋত্বিকের জীবনে শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক সাফল্য আসে তাঁর চিত্রনাট্য থেকে ১৯৫৮ সালে নির্মিত বিমল রায়ের মধুমতি সিনেমার মাধ্যমে। পুনর্জীবনের ধারণা নিয়ে তৈরী হওয়া প্রথমদিকের সিনেমার মধ্যে এটি একটি। পরবর্তীকালে তিনি আরও কিছু ছবির জন্য চিত্রনাট্য লেখেন যার মধ্যে রয়েছে স্বরলিপি(১৯৬০),কুমারী মন(১৯৬২),দ্বীপের নাম টিয়ারং (১৯৬৩),রাজকন্যা(১৯৬৫) ও হীরের প্রজাপতি(১৯৬৮)। প্রবন্ধ ও চিত্রনাট্য লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বোম্বের বাণিজ্যিক ধাঁচের সিনেমার জন্য নিয়মিত চিত্রনাট্য লেখার চাহিদার চাপ ঋত্বিকের জন্য অসহ্য হয়ে উঠছিল। তাই বোম্বের নিশ্চিত আয়ের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ঋত্বিক আবার ফিরে আসেন কলকাতায়।
বিমল রায় এর ‘জ্বালা’ নাটকটি তিনি লেখেন এবং পরিচালনা করেন ১৯৫৭ সালে। এটিই তাঁর পরিচালনায় শেষ নাটক।
একটি সাক্ষাত্কারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,
‘চলচ্চিত্র নির্মাণে কী ভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন?’
উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন,
“ আমি একটি ‘জিগজ্যাগ’ পথ ধরে ফিল্মে এসে পড়েছি। বাবার ইচ্ছে পূরণ হলে একজন ‘ইনকাম-ট্যাক্স অফিসার’ হতাম। কিন্তু সেই চাকরিটি পেয়েও আমি ছেড়ে দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিই। চাকরিতে থাকলে আজ কমিশনার বা অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল হতাম, হয়তো। কিন্তু এখন আমি শুধুই একটি ‘রাস্তার কুকুর’।”
নাগরিকের ছয় বছর পর ১৯৫৭ তৈরি হয় ঋত্বিকের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’, যা মুক্তি পায় ১৯৫৮ সালে। ছবির নায়ক ড্রাইভার এবং নায়িকা তার গাড়ি। ‘অযান্ত্রিক’ এর গল্প এগিয়ে গেছে এভাবেই। সেসময় পুরো ভারত জুড়েই অন্যরকম আলোড়ন সৃষ্টি করে ছিলো ছবিটি। অযান্ত্রিক প্রসঙ্গে আরেক জ্বল জ্বলে তারা সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন,
‘ঋত্বিক ঘটকের দ্বিতীয় ছবি অযান্ত্রিক যারা দেখেছিলেন,তারা ঋত্বিকের অসামান্য বৈশিষ্ট ও মৌলিকতার পরিচয় পেয়ে চমৎকৃত হয়েছিলেন’।
ট্যাক্সি ড্রাইভার বিমলের যে চরিত্র ঋত্বিক নির্মাণ করেন তার সাথে পরবর্তীতে মিল পাওয়া যায় সত্যজিৎ এর অভিযান(১৯৬২) সিনেমার ট্যাক্সি চালক নারা সিং ও মার্টিন স্করসেসির ট্যাক্সি ড্রাইভার(১৯৭৬) এর ট্রাভিস বিকেল চরিত্রের। ‘অযান্ত্রিক’ ১৯৫৯ সালের ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়। সেখানে ছবিটি দেখার অভিজ্ঞতা বিখ্যাত সমালোচক জর্জেস সাডৌল বর্ণনা করেন এভাবে,
‘অযান্ত্রিক কথাটার অর্থ কি? আমার জানা নেই এবং আমার বিশ্বাস ভেনিস ফেস্টিভালের কারোরই এটা জানা ছিল না। আমি পুরো গল্পটাও বলতে পারব না,কারণ সেখানে কোন সাবটাইটেল ছিল না। কিন্তু এতদস্বত্বেও আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি দেখেছিলাম’।
ঋত্বিক ঘটকের প্রথম ছবি ‘অযান্ত্রিক’ তৈরী হয়েছিলো সুবোধ ঘোষের প্রথম ছোটগল্প ‘অযান্ত্রিক’ থেকে। একজন মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে সৃষ্ট সম্পর্ক নিয়েই তৈরী এই সিনেমাটি।
সত্যজিৎ রায় এ ছবিটি দেখে ঋত্বিককে বলেছিলেন,
‘ ঋত্বিকবাবু,সিনেমাটা সময় মত রিলিজ করলে আপনি পথিকৃৎ হতেন ’।
‘চলচ্চিত্র সাহিত্য ও আমার ছবি’ নিবন্ধে ঋত্বিককুমার ঘটক ‘অযান্ত্রিক’ সম্পর্কে বলেছিলেন –
“ কতখানি সার্থক হয়েছি সেটা আপনারা বলবেন-তবে আমি চেষ্টার ত্রুটি করিনি। সুবোধ বাবুর মূল বক্তব্যের প্রতি আমি চেষ্টা করেছি বিশ্বস্ত থাকতে। জানি না কতখানি কৃতকার্য হয়েছি।”
একই বছর অর্থাৎ ১৯৫৮ সালেই ঋত্বিক মুক্তি দেন তার তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘বাড়ী থেকে পালিয়ে’। মূল গল্প শিবরাম চক্রবর্তীর। মূল চরিত্র কাঞ্চনের চোখ দিয়ে তৎকালীন কলকাতার বাস্তব চালচিত্র দেখা যায়।
এই চলচ্চিত্রে ঐ সময়ের নিম্নবিত্ত মানুষের অভাবের ভয়াবহতার চিত্র পাওয়া যায়। সিনেমাটোগ্রাফিতে ডীপ ফোকাসের ব্যবহার লক্ষনীয়। এই সিনেমার সাথে ফ্রান্সের ন্যুভেল ভাগের বিখ্যাত সিনেমা ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ (১৯৫৯) এর কাহিনীর সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯৫৯ সালে ‘কত অজানারে’ নামের একটি সিনেমার কাজ অনেকদূর সম্পন্ন করেও অর্থনৈতিক কারণে সেটা আর শেষ করতে পারেননি ঋত্বিক।
এক সাক্ষাতকারে ঋত্বিক বলেছিলেন,
‘মানুষের অবক্ষয় আমাকে আকর্ষণ করে। তার কারণ এর মধ্য দিয়ে আমি দেখি জীবনের গতিকে,স্বাস্থ্যকে। আমি বিশ্বাস করি জীবনের প্রবাহমানতায়। আমার ছবির চরিত্ররা চিৎকার করে বলে আমাকে বাঁচতে দাও। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সে বাঁচতে চায়-এ তো মৃত্যু নয়,জীবনেরই জয় ঘোষণা।’
এই জয় ঘোষনার সূত্রপাত হয়েছিল ১৪ এপ্রিল,১৯৬০; কলকাতায় মুক্তি পাওয়া ঋত্বিক ঘটকের বাংলা ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মাধ্যমেই। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ঋত্বিকের চতুর্থ ছবি আর বক্স অফিসে তাঁর প্রথম সাফল্য। শুধু তাই নয়, ১৯৭৫ সালের বার্ষিক চিত্রবীক্ষণ পত্রিকায় ঋত্বিক ঘটক জানান, দেশবিভাগের পেক্ষাপটে নির্মিত মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), কোমল গান্ধার (১৯৬১) এবং সুবর্ণরেখা (১৯৬২) এই তিনটি চলচ্চিত্র মিলে ট্রিলজি নির্মিত হয়েছে।
তাঁর ভাষ্যে,
‘একটি ছেলের সঙ্গে একটি মেয়ের দেখা হলো-এ ধরনের পুতু পুতু গল্পে আমার রুচি নেই। আমি আপনাদের ঘা দেব এবং বোঝাবো,এ কাহিনী কাল্পনিক নয়। বলবো,চোখের সামনে যা দেখছেন তার অন্তর্নিহিত বক্তব্য,আমার বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করুন। যদি সচেতন হন এবং আমার উত্থাপিত প্রতিবাদটি উপলব্ধি করতে পারেন,তবে বাইরে বেরিয়ে বাস্তবকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেন,তাহলেই স্বার্থক আমার ছবি করা।’
‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্র সম্পর্কে ঋত্বিক ঘটক বলেন,
“ ‘মেঘে ঢাকা তারা’ নামটি আমার দেয়া, মূলগল্পটি ‘চেনামুখ’ নামে নামকরা একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গল্পটার ভেতর কিছু একটা ছিল যা আমাকে খোঁচা দিচ্ছিল, যে কারনে শেক্সপিয়রের ‘দ্য ক্লাউড ক্যাপড স্টার’ নামটা মাথায় ঢুকে গিয়েছিল এবং সাথে সাথে নতুন চিত্রনাট্য লেখায় হাত দিয়ে দিলাম ”। (অনূদিত)
‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল গল্পকার শক্তিপদ রাজগুরুর ভাষ্যমতে,
“ সাত বছর আমি ঋত্বিকের সঙ্গে ঘর করেছি। ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কুমারী মন’,‘কোমল গান্ধার’ ও ‘সুবর্ণরেখা’ পর্যন্ত ওঁর সঙ্গে ছিলাম। পরে আমি অন্য কাজে মুম্বাই চলে যাই শক্তি সামন্তের কাছে। আমাদের একটা জমাটি টিম ছিল। কোমল গান্ধারের পর থেকে টিম ভাঙতে শুরু করে।”
এই সিনেমায় ঋত্বিক শব্দ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। দক্ষিণ ভারতীয় হংসধ্বনি রাগ এবং এ রাগভিত্তিক খেয়াল ব্যবহার করেন সিনেমার আবহ সংগীত হিসেবে। ঋত্বিক প্রথমবারের মত রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহার করেন এই ছবিতে,এছাড়াও বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। ভারতের এক জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার সাম্পতিক জরিপে প্রকাশ যে,নীতার মুখে এ ছবির সংলাপ ‘দাদা,আমি বাঁচতে চাই’ বাংলা ছবির সবচেয়ে প্রচলিত সংলাপ। ঋত্বিক ঘটকের এই সিনেমায় ভারত বিভাজনের সেই করুণ সময়কার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ‘পথের পাঁচালী’র পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চর্চিত এই সিনেমাটি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ট ধ্রুপদী সিনেমা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ‘সাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ চলচ্চিত্র বিষয়ক মাসিক সাময়িকীতে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় এটি ২৩১ নম্বরে অবস্থান পেয়েছে।
ঋত্বিকের নিজের ভাষায়,
‘বাংলা ভাগটাকে আমি কিছুতেই গ্রহন করতে পারিনি– আজও পারিনা। ইতিহাসে যা হয়ে গেছে তা পাল্টানো ভীষন মুশকিল, সেটা আমার কাজও নয়। সাংস্কৃতিক মিলনের পথে যে বাধা, যে ছেদ,যার মধ্যে রাজনীতি-অর্থনীতি সবই এসে পড়ে, সেটাই আমাকে প্রচন্ড ব্যথা দিয়েছিল’।
ঋত্বিক যে সাংস্কৃতিক মিলনের কথা বলেছেন সেটা তিনি চিত্রায়ণ করেছিলেন তাঁর পরের সিনেমাতে যার নাম ‘কোমল গান্ধার’। ‘কোমল গান্ধার’ চলচ্চিত্রের নির্মানসাল ১৯৬১।
‘কোমল গান্ধার’ উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি রাগ বিশেষ। এই রাগের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই সিনেমার এই নামকরণ। এ ছবির মূলসুর দুই বাংলার মিলনের। এই ছবিতে ঋত্বিক দুইটি রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি’ গানটি ব্যবহার করেন,এছাড়াও বিয়ের প্রাচীন সুরের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
‘কোমল গান্ধার’ যেমন সাংস্কৃতিক মিলনের কথা বলে,তেমনভাবে ঋত্বিকের পরের ছবি ‘সুবর্ণরেখা’ বর্ণনা করে দেশভাগের কুফলসমূহ। ১৯৬২ সালে তৈরী হলেও মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৫ সালে। ঋত্বিক তিনটি প্রজন্মের গল্প বলেছেন এই সিনেমাতে। প্রথম প্রজন্ম ঈশ্বর, হরপ্রসাদ। দ্বিতীয় প্রজন্ম সীতা,অভিরাম। তৃতীয় প্রজন্ম বিনু। দেশভাগ ও তার ফলাফলের কারণে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে প্রথম দুইটি প্রজন্মের স্বপ্ন-আকাঙ্খা। তৃতীয় প্রজন্ম মাত্র তাঁর যাত্রা শুরু করেছে,তাঁর ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা আমরা জানি না।
তবে ঋত্বিক চেয়েছিলেন যেন তা সুন্দর হয়,তাই সিনেমার শেষে লিখে দিয়েছিলেন,‘জয় হোক মানুষের,ওই নবজাতকের,ওই চিরজীবিতের’।
ঋত্বিকের এই ট্রিলজিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটি বড় ভূমিকা আছে। একটি সাক্ষাৎকারে ঋত্বিক বলছিলেন,
‘রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া আমি কিছুই প্রকাশ করতে পারি না। আমার জন্মের অনেক আগেই তিনি আমার সমস্ত অনুভূতি জড়ো করে ফেলেছিলেন। তিনি আমাকে বুঝেছিলেন এবং সেসব লিখেও ফেলেছিলেন। আমি যখন তাঁর লেখা পড়ি তখন আমার মনে হয় যে সবকিছুই বলা হয়ে গেছে এবং নতুন করে আমার আর কিছুই বলার নেই’।
১৯৬২ সালে বানালেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সিজর্স’ ও ১৯৬৩ সালে ডকুমেন্টরী ‘ওস্তাদ আলাউদ্দীন খান’। এই সময় ‘বগলার বঙ্গদর্শন’ নামে একটি সিনেমার কাজ শুরু করলেও আর শেষ করতে পারেননি। ১৯৬৫ সালের দিকে বাংলা মদ ধরলেন,এমনকি গোসল করাও ছেড়ে দিলেন। তাঁর এমন জীবনযাত্রার ফলে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হলেন। ঋত্বিক ঘটক ১৯৬৫ সালে স্বল্প সময়ের জন্য পুনেতে বসবাস করেন। ১৯৬৫/৬৬ সালের দিকে ঋত্বিক পুনের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন, দু’বছর কাজ করেছেন। এরপর একই প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন আরও ৩ মাস। এখানে শিক্ষকতা করার সময় তিনি শিক্ষার্থীদের নির্মিত ‘ফিয়ার’ ও ‘রঁদেভূ’ নামের দুইটি সিনেমার সাথে যুক্ত ছিলেন।
ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মণি কাউল,কুমার সাহানি এবং প্রসিদ্ধ আলোকচিত্রী কে কে মহাজন তারই ছাত্র। ঋত্বিক তার এই শিক্ষকতা জীবনকে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের উপরেই স্থান দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য,
‘আমি মনে করি,আমার জীবনে যে সামান্য কয়েকটি ছবি করেছি সেগুলো যদি পাল্লার একদিকে রাখা হয়,আর মাস্টারি যদি আরেক দিকে রাখা হয় তবে মাস্টারিটাই ওজনে অনেক বেশি হবে। কারণ কাশ্মীর থেকে কেরালা,মাদ্রাজ থেকে আসাম পর্যন্ত সর্বত্র আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আজকে ছড়িয়ে গেছে। তাদের জন্য আমি যে সামান্য অবদান রাখতে পেরেছি সেটা আমার নিজের সিনেমা বানানোর থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ’।
এরপর ১৯৬৯ সালের দিকে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ঋত্বিককে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শ্রীমতি সুরমা ঘটকের এক লেখায় জানা যায়,ঋত্বিকের সিজোফ্রোনিয়া ছিলো। এর কারণও সুবোধ্য। ‘সুবর্ণরেখা’ সৃষ্টির পর দীর্ঘদিন তার হাতে কোনো ছবি ছিলো না। নিজের প্রতি অত্যাচারের জেদ ঐ সময় থেকেই। মদ তখন তার ব্যর্থতা ভোলার অনুষঙ্গ। ঐ সময়ে তিনি একবার মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং দীর্ঘদিন তাঁকে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছিলো। এই অত্যাচারের ফলেই ঋত্বিকের দেহে বাসা বাঁধে মরণব্যাধি।
১৯৬৯ সালেই ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন।
ব্যবসায়িক ব্যর্থতার কারণে এই সময়কালে কোন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে না পারলেও তিনি কিছু তথ্যচিত্র ও শর্টফিল্মের কাজ করেন। এর মধ্যে আছে, সায়েন্টিস্টস অফ টুমরো(১৯৬৭),ইয়ে কিঁউ(১৯৭০),পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য নিয়ে পুরুলিয়ার ছৌ(১৯৭০), লেনিনের ১০০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমার লেনিন(১৯৭০),বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে দূর্বার গতি পদ্মা(১৯৭১) এবং আরও পরে ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজকে নিয়ে তথ্যচিত্র রামকিঙ্কর(১৯৭৫,অসমাপ্ত)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শরনার্থীদের জন্য সাহায্য সংগ্রহে ঋত্বিকের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথাও শোনা যায়।
ঋত্বিক ঘটকের পুণরাবির্ভাব ঘটে সত্তরের দশকে যখন এক বাংলাদেশী প্রযোজক তিতাস একটি নদীর নাম (চলচ্চিত্র) নির্মাণে এগিয়ে আসেন। অদ্বৈত মল্লবর্মন রচিত বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস “তিতাস একটি নদীর নাম” এর চিত্রায়ন এটি । ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে। “সুবর্ণরেখা” নির্মাণের পর প্রায় এক যুগ বিরতি নিয়ে ঋত্বিক ঘটক ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে(স্বাধীন) রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে এসে ছবিটি পরিচালনা করেন।
এ চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহের কারণ হিসেবে ঋত্বিক কুমার ঘটক বলেন,
‘তিতাস পূর্ব বাংলার একটা খণ্ডজীবন,এটি একটি সৎ লেখা। ইদানীং সচরাচর বাংলাদেশে (দুই বাংলাতেই) এ রকম লেখার দেখা পাওয়া যায় না। এর মধ্যে আছে প্রচুর নাটকীয় উপাদান, আছে দর্শনধারী ঘটনাবলী, আছে শ্রোতব্য বহু প্রাচীন সঙ্গীতের টুকরো, সব মিলিয়ে একটা অনাবিল আনন্দ ও অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করা যায়। ব্যাপারটা ছবিতে ধরা পড়ার জন্য জন্ম থেকেই কাঁদছিল। ... অদ্বৈতবাবু অনেক অতিকথন করেন। কিন্তু লেখাটা একেবারে প্রাণ থেকে, ভেতর থেকে লেখা। আমি নিজেও বাবুর চোখ দিয়ে না দেখে ওইভাবে ভেতর থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। অদ্বৈতবাবু যে সময়ে তিতাস নদী দেখেছেন, তখন তিতাস ও তার তীরবর্তী গ্রামীণ সভ্যতা মরতে বসেছে। বইয়ে তিতাস একটি নদীর নাম। তিনি এর পরের পুনর্জীবনটা দেখতে যাননি। আমি দেখাতে চাই যে, মৃত্যুর পরেও এই পুনর্জীবন হচ্ছে। তিতাস এখন আবার যৌবনবতী। আমার ছবিতে গ্রাম নায়ক, তিতাস নায়িকা’।
এই চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যে দেখা যায়,চরে গজিয়ে ওঠা নতুন ঘাসের মধ্যে দিয়ে ভেঁপু বাজাতে বাজাতে ছুটে আসছে একটি শিশু। নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়ে সিনেমাটি শেষ হয়। ঋত্বিকের ভাষায়,
‘একটি সভ্যতাকে কি চিরতরে ধ্বংস করে ফেলা যায়? না, যায় না। এর শুধু রূপান্তর ঘটে। এটাই আমি এই ফিল্মের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছিলাম’।
ছবিটিতে বাংলাদেশের তখনকার তরুণী নায়িকা কবরীকে চরিত্রের প্রয়োজনে বলতে গেলে একেবারে ভেঙ্গেই গড়েছিলেন ঋত্বিক। ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেন বাংলাদেশের শক্তিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র।
ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রবীর মিত্র এভাবেই বলেন,
‘এই মাকড়া, এই ছোঁড়া এদিকে আয়, এই সব বলেই তিনি(ঋত্বিক) আমাকে ডাকতেন। কখনোই আমার নাম ধরে ডাকতেন না। বলতেন,এডিটিংয়ের সময় তুই আসিস। তোর সঙ্গে আমার কথা আছে। আমি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। তিনি কিছুই বলেন না। কাজের ভেতরেই ডুবে থাকেন। মুখ তুলেন না। ঋত্বিক-দা চলে গেলেন। তার না-বলা কথাটা আমার আর শোনা হয়নি।’
২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা দর্শক,চলচ্চিত্র সমালোচকদের ভোটে এ চলচ্চিত্রটি সেরা বাংলাদেশী ছবির মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে।
ঋত্বিকের মূল্যায়ন,
‘আমি ছাড়া তিতাস হতো না। তিতাস ছিলো আমার স্বপ্ন। আমার মতো মমতা নিয়ে এই কাহিনীকে কেউ তুলে ধরতে আগ্রহী হতেন না’।
১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ঋত্বিকের শেষ ছবি ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’। এই সিনেমাটি ঋত্বিকের আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র। মূল চরিত্র একজন মাতাল বুদ্ধিজীবী নীলকণ্ঠ বাগচী,যে তাঁর বন্ধুদের মত সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে নিজেকে বিক্রি করে দেয়নি। নীলকণ্ঠ চরিত্রে অভিনয় করেন ঋত্বিক স্বয়ং। সিনেমাটি ঋত্বিকের আত্মজীবনীমূলক হলেও এটা ১৯৪৭ এর দেশভাগ,রাজনৈতিক পরিস্থিতি,১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আর নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সময়ের একটি নির্মোহ-নির্মম সমালোচনাও বটে। সুশীল লেখক সত্যজিৎ বসু যখন তাঁকে বলছেন বাংলাদেশ নিয়ে তার ভাবনার কথা,নীলকণ্ঠ বাগচীর কণ্ঠে তখন চরম উপহাস,"ভাবো,ভাবো,ভাবা প্র্যাক্টিস করো। "
এই ছবির ব্যাপারে ঋত্বিক বলেন,
‘১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সময়কালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমি যেমনটি দেখেছি, ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’তে আমি ঠিক সেটাই দেখাতে চেয়েছি। এটাতে কোন ভাবাদর্শের বর্ণনা নেই। আমি কোন রাজনীতিকের দৃষ্টিতে এটাকে দেখিনি। কোন রাজনৈতিক ভাবাদর্শকে তুষ্ট করা আমার কাজ নয়’।
মাত্র দুইদিনে ঋত্বিক ঘটক এ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিকই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজের চিত্রনাট্য,পরিচালনা ও প্রযোজনায় নির্মিত ছবিতে নিজেরই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ঋত্বিকের চলচ্চিত্র জগতে আসার অনেকগুলো কারণ ছিল। তাঁর মেজদা (সুধীশ ঘটক) ছিলেন ‘টেলিভিশন এক্সপার্ট’। তিনি গ্রেটব্রিটেনে ডকুমেন্টারি ক্যামেরাম্যান হিসেবে ছ’বছর কাজ করেন। পরে সুধীশবাবু নিউ থিয়েটার্সে যুক্ত হন। বহু ছবিতে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি,তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাননবালা-সায়গলের ‘স্ট্রিট সিঙ্গার’। বাড়িতে আসতেন বড়ুয়াসাহেব থেকে বিমল রায় পর্যন্ত অনেকেই। আর পাঁচজন যেমন ওঁদের ছবি দেখেন তেমনই ঋত্বিক ওই সব ছবি দেখে বিশেষ উৎসাহ পেতেন। কারণ দাদার সঙ্গে তাঁদের আড্ডা চলত বাড়িতেই।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ফিল্মের শূটিং করার সময় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে তাঁর জীবনীশক্তি দ্রুত ফুরিয়ে আসে। লিভারের রোগে ভুগছিলেন দীর্ঘ দিন। ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার শেঠ সুখলাল করোনারি হাসপাতালে এই বিশিষ্ট শিল্পীর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার সময় স্ত্রী সুরমাদেবী কাছে ছিলেন না। তিনি তখন সাঁইথিয়ার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন তাঁকে খবর পাঠান-‘Ritwik Ghatak expired’. ঋত্বিক ঘটকের মৃত্যু সম্পর্কে মহাশ্বেতাদেবী বলেন,
‘সেই দিনটা মনে পড়ে,বাবা তখন থাকতেন বহরমপুরে। আমি আর মা বাইরের ঘরে বসে আছি,বাবা এসে বললেন,আজ আর আমাকে মাছ-মাংস খেতে দিও না। ভবা(ঋত্বিক) চলে গেছে’।
ঋত্বিক বলতেন,
‘আমি প্রতি মুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব যে,ইট ইজ নট এন ইমেজিনারি স্টোরি বা আমি আপনাকে সস্তা আনন্দ দিতে আসিনি। প্রতি মুহূর্তে আপনাকে হাতুড়ি মেরে বোঝাব যে যা দেখছেন তা একটা কল্পিত ঘটনা,কিন্তু এর মধ্যে যেটা বোঝাতে চাইছি আমার সেই থিসিসটা বুঝুন,সেটা সম্পূর্ণ সত্যি,সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই আমি আপনাকে এলিয়েন্ট করব প্রতি মুহূর্তে। যদি আপনি সচেতন হয়ে উঠেন,ছবি দেখে বাইরের সেই সামাজিক বাধা দুর্নীতি বদলের কাজে লিপ্ত হয়ে উঠেন,আমার প্রোটেস্টটাকে যদি আপনার মধ্যে চাপিয়ে দিতে পারি তবেই শিল্পী হিসেবে আমার সার্থকতা’।
এই ক্ষণজন্মা মহান নির্মাতা আজ একবিংশ শতাব্দীতেও হাতুড়ি মেরে বাঙ্গালীকে বুঝিয়ে যাচ্ছেন, আপনি সচেতন হয়ে উঠেন,ছবি দেখে বাইরের সেই সামাজিক বাধা দুর্নীতি বদলের কাজে লিপ্ত হয়ে উঠেন।


-অনিক কান্তি সরকার
পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
1. Ritwick Ghatak [Wikipedia],[IMDB]
2. List of works of Ritwick Ghatak [Wikipedia]
3. The Ritwick Ghatak Experience- Facebook page
4. The Cloud Capped Star- P.G.R. Nair
5. A River Called Ritwick- Alaka Sahani
6. Cinema and I- Ritwick Ghatak, Ritwick Memorial Trust
7. Strictly Film School
8. Harvard Film Archive
9. Ritwik Ghatak: Reinventing the Cinema- Jonathan Rosenbaum
10. The Film We Accompany- Raymond Bellour
11. "Born in a dream": studies of Ritwik Ghatak
12. Of Time And The River… - PARTHA CHATTERJEE
13. My husband as I saw him- Surama Ghatak
14. A River called Titas, The cloud Capped Star [Wikipedia]
15. The Woman and Homeland in Ritwick Ghatak’s films: Constructing post-independence Bengali culture identity- Erin O’Donnell
16. ঋত্বিক ঘটক [উইকিপিডিয়া]
17. নাগরিক, অযান্ত্রিক, বাড়ি থেকে পালিয়ে, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, সুবর্ণরেখা, তিতাস একটি নদীর নাম, যুক্তি তক্কো আর গপ্পো [উইকিপিডিয়া]
18. ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’-পার্থ চট্টোপাধ্যায় (অনুবাদ:হিল্লোল দত্ত)
19. ঋত্বিক ঘটকঃ জীবন,কর্ম ও দর্শন- অরিন্দম গুস্তাভো বিশ্বাস
20. ঋত্বিক- সুরমা ঘটক, অনুষ্টুপ
21. অতীতের তারাঃ ব্যক্তি,সিনেমা আর ঋত্বিক
22. স্মরণে ঋত্বিক কুমার
23. জ্বলে জ্বলে তারা ঋত্বিক ঘটক।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:২৫
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×