somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয় : যেমন দেখা যায়

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন অনেক ছোট। এরকমই কোন এক হিম হিম আয়েশী শীতের ডিসেম্বরের দিন গুলো। পত্রপত্রিকায় প্রচুর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা ছাপা হচ্ছে। ঐ বয়সে মানুষের বড়দের মত পেপারের নেশা থাকে না। আমারও ছিলো না। কিন্তু কেন যেন মুক্তিযুদ্ধের উপর যাই ছাপা হয় পড়তে লাগলাম। অত কম বয়সে মানুষের এগুলো পড়তে তেমন পছন্দ করার কথা না, কিন্তু আমি যেখান যা পাই গোগ্রাসে পড়ি। সে বয়সে যুদ্ধটা বেশ মজার উত্তেজনার কিছু একটা মনে হত। মেয়ে বলে ছেলেদের মত খেলনা অস্ত্র উপহার পেতাম না, বাসা ভর্তি ছিল পুতুল। অতএব বালিশটাকে ঢাল তলোয়ার বানিয়ে লড়াই লড়াই খেলতাম। ঐ বয়সে শান্তিপূর্ণ নির্ঝঞ্জাট জীবন কারোর ভালো লাগে না। অ্যাডভেঞ্চার গল্পগুলোর বিপদের বর্ননা পড়ে মনে হতো ,কেন আমাদের জীবনও এমন চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ হলো না?


তারপরে যখন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর লেখা পড়তে শুরু করলাম, যুদ্ধের বিভৎস দিকটার সাথেও পরিচিত হতে লাগলাম।পড়তে পড়তে গায়ে কাঁটা দিতো।কি বর্বর হয়ে যায় মানুষ সময় সময়।কিন্তু মানুষের অভ্যস্ত হবার ক্ষমতা অসাধারন।একসময় আমিও বর্ননাগুলোয় অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। যেন যুদ্ধ মানেই- এরকম নৃশংসতা তো থাকবেই। নিশ্চিত ভাবেই ঐসময়ের মানুষগুলোও কাগজের পাতায় পাতায় না , বরং বাস্তবেই হয়ত অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই যে নেশাসক্ত হয়ে পড়েছিলাম, এখন কিন্তু তেমন করে আর যুদ্ধের সময়কার বিবরণ পড়তে পারিনা। ডিসেম্বর মাসে পত্রিকায় এধরণের পাতাগুলো একরকম এড়িয়ে যাই। কারণ ওতে কি থাকবে আমি জানি। এমন না যে সব জেনে গিয়েছি তাও ঐ সময়কার অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আর যেতে ইচ্ছা করে না। পড়তে গেলেই ঐ নিষ্ঠুর সময়টার ছবি কল্পনায় দেখতে পাই , ভালো লাগে না।কিন্তু তাহলেও এই এত বছর পরেও আমাদের প্রতিনিয়ত নানা রকম নাগরিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।জানিনা,এমন স্বাধীনতা পাবো জানলে মুক্তিযোদ্ধারা কি দেশ স্বাধীন করার প্রেরণা পেতেন? যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী থাকলেই বাইরে বার হতে ভয় পাই, ভয় পেয়ে প্রিয়জনদেরও বাধা দিই। বেশী যেদিন বাড়াবাড়ি হয়, ফিরে না আসার আগ পর্যন্ত বুক ঢিপঢিপ করে। অথচ রাজনীতি তো মানুষের কল্যাণের জন্যই হবার কথা। মানুষ রাজনীতি করবে মানুষের কল্যাণে, মানুষ রাজনীতিবিদদের আপন ভাববে কারণ তারা তাদের কথা ভাবেন।অথচ হচ্ছে উল্টাটা। আমরা নিজেরা রাজনীতি থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকি। রাজনৈতিক আলোচনাগুলোও করি খুব সাবধানে, গা বাঁচিয়ে শুধু পরিচিত মহলের মধ্যে। কে জানি আবার কেউ কি ট্যাগ দিয়ে দেয় , কোন সমস্যা হয়। আর কিছু না হোক বিশেষ করে অনলাইন হয়রানিতে ওয়ার্ড ওয়াইড ওয়েবেও আমাদের গন্ডি একদম সংকীর্ণ, মোটেই ওয়াইড না।যারা ক্ষমতাধর তাদের কথা ছেড়েই দেই, একে অপরকেও আমরা সাধারন মানুষেরা শুধু রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিন্নতার জন্য কীবোর্ড বাটনকে অস্ত্র বানিয়ে আক্রমণ করি। এসব বিপদ এড়াতে তাই আমরা শামুকের মত গুটিয়ে থাকি, নিজের জন্য , নিজেদের জন্য বাঁচি।


গতকাল ডিসেম্বরের চৌদ্দ তারিখ গেল । শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। অনেক কৃতী সন্তানের স্মরণে একটি দিন। কেমন লাগতে পারে ঐ পরিবারের যার প্রিয়জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? তাও এমন একজন যে হয়ত তার পরিবারের , পরিচিত মন্ডলের,সমাজের দেশের সবার গর্ব। কত শ্রমে কত দিনের সাধনায় এক একটি শাণিত মানুষ পাওয়া যায়, যারা তাদের প্রতিভার উজ্জ্বতায় অনেকখানি আলোকিত করতে পারেন।এরকম এক একজন মানুষকে তাদের স্ত্রী,সন্তানের সামনে থেকে নিয়ে যাওয়া হলো।তখনকার অনুভূতি কেমন? যাপিত অনিত্যতার মধ্যে থেকে ভাবি, সামান্য একটু হয়ত বুঝতেও পারি। কিন্তু তবুও এখন তবু ভাবতে পারি যথেষ্ট গোলমালেও জানি বাইরে থাকা নিকটজন ফিরে আসার সম্ভবনাই বেশি, কয়জন আর বিপদে পড়ে? কিন্তু তখন যাদেরকে নিয়ে যাওয়া হতো তারা জানতেন তাদের বাবা, ভাই, ছেলে, মা , বোন এরা আর সম্ভবত ফিরে আসবেন না।কি ভয়ংকর ব্যাপার!আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। অনেক অনেক বছর আগে যখন এই দিনটা প্রথম বিজয় দিবস হয়ে ওঠে তখন এই পরিবারগুলো নিশ্চয় বিজয়ের তেমন আনন্দ উপভোগ করেনি।সবাই আনন্দ করেছে আর এরা দ্বিধা ,ভয়, শঙ্কা, আশা, নিরাশা নিয়ে বধ্যভূমি থেকে বধ্যভূমি ঘুরে বেরিয়েছে।একে ওকে ফোন করেছে।না পেলে ভেবেছে, হয়ত মানুষটা বেঁচেই আছেন। এভাবেই অনেক অনেক দিন পার করেছে, আশায় আশায়।


তখনকার ওদের কষ্টের অনুভূতি যেমন আমরা বুঝতে অক্ষম, এখন ঘাতকদের বিচারে আমাদের আনন্দ আর ওদের আনন্দের তীব্রতাও সমান হবেনা।তবুও ভালো লাগছে, বিচার হচ্ছে। কিন্তু তৃপ্তির ঢেকুর তোলার অধিকার আমাদের নেই এটাই সত্যি। ঠিক আছে, যুদ্ধপরাধীদের বিচার হচ্ছে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তো এখনও ধুঁকে ধুঁকে মরছেন।পাকবাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারীরা এখন সমাজে মুখ লুকিয়ে বাঁচছেন। আমাদের আত্নতৃপ্তির সুযোগ কোথায়?


পুনশ্চ: আমার এক কাজিন আছে। আমার চেয়ে বেশ ছোট।কিন্তু অর্জন আমার চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশী। অনলাইনে অফলাইনে হাজার হাজার বন্ধু। একেবারেই আধুনিক প্রজন্মের একজন।চকচকে স্মার্ট।নিয়ম করে বিশেষ বিশেষ দিবসে বিশেষ ড্রেসআপ করে, সেলফিও দেয়।ম্যাসেজ পাঠাতেও কখনো ভুল হয় না। আজকেও ওর ম্যাসেজ পেলাম আগামীকালের বিশেষ দিনটি উপলক্ষ্যে। আজকে থেকেই পাঠানো শুরু করেছে, নাহলে সবাইকে কালকের মধ্যে শেষ করতে পারবে না।ম্যাসেজে সে লিখেছে ,'' স্বাধীনতা দিবসে (!) র অনেক অনেক শুভেচ্ছা।''

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৫
৩৫টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×