somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেলাপোকা, বেবি অলিম্পিয়াড, 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে' পৃথিবী

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে একটা খবর পড়ে অনেকক্ষন হাসলাম। খবরটা হচ্ছে এই যে, অস্ট্রেলিয়া ডে উদযাপন করতে তেলাপোকার রেস হয়েছে ব্রিসবেনে। এই প্রথমবারের মত না, গত ৩৫ বছর ধরে এই প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। প্রতিযোগিতার নিয়মগুলো অত্যন্ত হাস্যকর। অংশগ্রহনকারীদের নিজের তেলাপোকা নিয়ে আসতে হবে। না পারলে সাড়ে তিন ডলার থেকে পাঁচ ডলারে ভাড়া করার ব্যবস্থা আছে।আরেকটা নিয়ম হচ্ছে, কেউ তাদের তেলাপোকাদের উড়তে দিতে পারবে না।

এখন দ্বিতীয় যে বিষয়টা নিয়ে লিখছি সেটা নিয়ে লিখতে কিন্তু হাসি পাচ্ছে না। যদিও বিষয়টা যথেষ্ট আমোদের। বাসার সবাই টিভিরুমে বসে নাস্তা করছি। চ্যানেল টেপার সময় চোখ গেল । অল্প কতক্ষণ ব্যাপারটা দেখলাম। একেবারে শেষাংশ। হাসি পেলেও যে জিনিসটা হাসির না তাহলো ' সুপারমম বেবি অলিম্পিয়াড'। এক থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের অংশগ্রহণে।শেষ যে অংশটা দেখছিলাম, তাতে ছোট ছোট বাচ্চা -একেবারেই দুধের শিশুদের একটা ম্যাটের উপর রেসে অংশ নেয়ার অংশ। একপাশ থেকে অভিভাবকেরা ঠেলছেন। যেহেতু বাচ্চা বোঝেনা জিতলে সে কি পাবে, জেতার কি মাহাত্ন্য সে কেবলই এদিক সেদিক মনের আনন্দে 'দিকভ্রষ্ট' চলে যেতে চাইছে , আর অভিভাবকেরা 'ঠিক পথে' তাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন । প্রতিযোগিতার আরো কিছু অংশ দেখলাম, বাচ্চারা কাঁদছে, হাসছে,গড়াগড়ি দিচ্ছে, একে অপরকে ধরে টানছে।টিভিতে দেখে হাসি আটকাতে পারিনি আমরা কেউ।কিন্তু আসলেই কি জিনিসটা খুব হাসির? এক অভিভাবক প্রতিক্রিয়া জানাতে বলছিলেন, সকাল থেকে অপেক্ষা করছি,ইতস্তত যোগ করলেন, বাচ্চা ছোট তো।
আরেকজন খুব প্রশংসা করতে গিয়ে বললেন, এত ছোট বাচ্চা নিয়ে যে এমন আয়োজন হতে পারে তিনি ভাবতেই পারেন নি, তবে তিনি চান আগের বছর আরো সাফল্যর সাথে এটা হবে।বাচ্চাদের তিলমাত্র কষ্ট হয় এমন কারণে খুব ছোট বাচ্চা নিয়ে অনেক মায়েরা ওদের নিয়ে ঘরের বাইরে যেতে চান না, বিশেষ করে লম্বা সময়ের জন্য অথচ এই প্রতিযোগিতার কারণে তারা কিন্তু তা স্বীকার করে নিয়েছেন।

আমার মনে হয় প্রতিযোগিতা খুব ভালো জিনিস, মানুষকে এগুবার প্রেরণা দেয় তবে পাশ্চাত্যের তীব্র ভোগবাদী প্রতিযোগিতা খুব ভালো জিনিস না, সেটা মানুষকে পিছিয়ে নিয়ে যায়। এখন বাচ্চারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই 'জীবনে উন্নতির' বস্তুগত মানে হিসেব করে মাবাবারা চার পাঁচ বছর হলেই বাচ্চাকে প্রাণান্তকর নিরানন্দ মুখস্থ বিদ্যায় লাগিয়ে দেন । ভালো স্কুলে ভর্তি হতে হবে। পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড হতে হবে। না হলে প্রগ্রেস রিপোর্টের দিন বাচ্চাকে তুলাধুনা করা হয় যে হতে পেরেছে তার সাথে তুলনা করে।এরপর কি? এর পর কি এই যে, বাচ্চারা মায়ের পেট থেকে পড়তেই তাদেরকে দৌড় অনুশীলন করানো হবে? নাকি আরেকধাপ এগিয়ে গর্ভবতী মায়েদের প্রতিযোগিতা হবে? অ্যাবসার্ড লাগছে নাকি কথাগুলো? দুগ্ধপোষ্য বোধহীন বাচ্চাদের দিয়ে যদি প্রতিযোগিতা হতে পারে একদিন অমন আসাও বিচিত্র কিছু না।
আজকেই তো আরেকটা খবরে পড়লাম, চীনে কয়েকটি খাবারের রেস্টুরেন্টে মেয়েদের শরীর , সৌন্দর্য আর ড্রেসের সংক্ষিপ্ততাকে 'পুরস্কৃত' করা হচ্ছে মূল্যছাড়ের মাধ্যমে। যার পোশাক হাঁটুর যত উপরে তার ছাড় তত বেশী। সেলুকাস! কর্পোরেট দুনিয়ায় কী-না সম্ভব ?

উন্নত বিশ্বের মানুষের ক্রমাগত নতুনত্ব পিয়াসী। আজ যা নতুন তা এমন নিঃশেষে ভোগের উদগ্র আকাঙ্খা, যে তাই কাল সেটা পুরানো হয়ে যায়। তাই তাদের তেলাপোকার রেসের উদ্ভব করতে হয়। তেলাপোকারা 'বুদ্ধিমান' মানুষের মন মত হাঁটেচলে না। এবং বলাইবাহুল্য কখনো কখনো তারা ওড়ে , শুধু মেঝেতে কিলবিল করে না।অথচ তেলাপোকা দৌড়ের নিয়মানুসারে তেলাপোকা উড়তে পারবে না। তাহলে প্রশ্ন জাগে , তাদের কি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সময় ডানা ছেঁটে দেয়া হয়? মানব সন্তানের উড়তে হলে ডানা লাগে না।প্রতিটি শিশু সহজাত আগ্রহ, দক্ষতা, মানসিকতা নিয়ে জন্মায়, সে তার নিজের স্বপ্নের জগতে উড়তে ভালোবাসে। প্রতিযোগিতার নামে , এগিয়ে যাবার নামে আমরা তাদের এই কল্যাণকর ইচ্ছেডানাগুলো ছেঁটে ফেলছি নাতো?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৫
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×