somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয়াংকা চোপড়া, আমি ও আমরা

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয়াংকা চোপড়া বলেছেন, 'সন্তান ছাড়া অন্য কোন কারণে তাঁর পুরুষের দরকার নেই।' কথাটা শুনলে প্রথমে একটা ধাক্কা লাগে, পুরুষতো বটেই,নারীরাও অনেকে দেখলাম একথার প্রতিবাদ করছেন। সেলিব্রেটিরা একেকটা কথা বলেন আর মানুষ সেটা নিয়ে কয়েকদিন হৈচৈ করে। অভিনয় বিষয়ে পিগি চপস কি বলেন সেটা গুরুত্বের সাথে নেয়া যায়, ' সম্পর্ক '-সম্পর্কে কি বলেন সেটা নিয়ে এত গুরুত্ব দেবার কি দরকার? আর সবকিছুর আগে তাঁরা সাধারণ মানুষ। মুহূুর্তের ইম্পালসে বা হয়তো এমনিতে তাদের মধ্যে ভালো মন্দ অনেক চিন্তাধারা আসতে পারে। অনেককিছু মুখ ফুটে বলে ফেলেন। পাবলিক তারপরে এটা নিয়ে জাবর কাটতে থাকে। হয়ত পিসি এটা বলেছেন , তার নিজের ব্যক্তিগতভাগে মানসিক ,শারীরিক আর কোন চাহিদা নেই পুরুষের কাছ থেকে শুধু সন্তান ছাড়া। সেক্ষেত্রে বলার আর কি আছে? যদি সাধারণ ভাবে বলেই থাকেন, তাহলে অবশ্য এটাকে সমর্থন করা যায় না। নারীর কাছে পুরুষ সন্তান উৎপাদনের/ পোষণের মেশিন- এ কেমন কথা? কিন্তু...আচ্ছা ওয়েট। প্রিয়াংকার কথা শুনে শক হবার কিছু নেই।উনি তো নতুন কিছুই বলেন নি।নতুন বোতলে পুুরানো মদ পরিবেশন করেছেন মাত্র।


আয়নায় নিজেকে দেখুন ,নারী হোন বা পুরুষ। আমি , আপনি এরকম কত কেইস তো চারপাশে দেখছিনা-শুধু সন্তানধারণে অক্ষম হবার কারণে পুরুষ কর্তৃক নারী পরিত্যাগ,তালাক, বহুবিবাহ? আমার এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনেও নেই। খুব আগের কথা না, আমারই এক কাজিনের বেলায় এরকম হতে হতে হয় নি। সন্তান হচ্ছে না বংশরক্ষা হবে কিভাবে, এই যুক্তিতে আরেকটা বিয়ে দেবার চিন্তা চলছিল, সৌভাগ্যবতী সে,অবশেষে দুটি সন্তানের জননী হয়ে সতীনের সাথে সংসার করা থেকে বেঁচে গেছে। বংশ রক্ষা -পুরুষের জীবনে নারী আসার একটা বড় কারণে আমাদের সমাজে। অথচ বংশরক্ষা একটি হাস্যকর কনসেপ্ট। বিলাসী গল্পটা পাঠ্যপুস্তকে ছিল, শরৎচন্দ্র ওতে এই জাতীয় একটা কথা লিখেছিলেন,অবশ্য অন্য প্রসঙ্গে, তবু এখানেও কথাটা খাটে,টিকিয়া থাকাই একমাত্র সার্থকতা না, 'অতিকায় হস্তি লোপ পাইয়াছে; তেলাপোকা টিকিয়া আছে।' তেলাপোকার দিকে চেয়ে ওদের শুধু টেকসইত্বের গুণ দেখে কোন সম্ভ্রম জাগে কি?মানুষ তার কর্মের দ্বারা অনেক বেশিদিন বাঁচে,অনেক অর্থবহ বাঁচে, কীর্তিহীন সন্তানসন্ততিপূর্ণ জীবনের চেয়ে।তবু সে সন্তানের জন্য পুরুষ যুগ যুগ ধরে সঙ্গিনীকে গ্রহন করেছে, ত্যাগ করেছে। এবং সন্তানের মা কোনকারণে মারা গেলে আবার বিয়ে করেছে সেও সন্তানের লালনের অজুহাত দেখিয়ে।অথচ কটা নারী নিজের সন্তানের বাবা মারা গেলে তাদের ভরণপোষণের জন্য আবার বিয়ে করে একটা বাবা আনতে যান সেটা গুণে বলা যায়। তখন কেন খারাপ লাগেনা, অন্তত শকড হইনা? মেনে নেই?


আরেকটা কারণে মানুষ সন্তান নেয়-উত্তরাধিকার, যাতে তার কষ্টার্জিত সম্পত্তি তার অবর্তমানেও ভোগ করা হয়, তার ভবিষ্যত সত্ত্বা তার সন্তানের মাধ্যমে, হোক ছেলে হোক মেয়ে। কত নারীকে শেখানো হয়, নারীর কর্তব্য পুরুষকে সন্তান উপহার দেয়া, না দিতে পারলে নারীজন্ম ব্যর্থ। সে নিজে না পারলে অন্তত ধরেবেঁধে স্বামীর আরেকটি বিয়ে দিয়ে দেয়া সতীস্বাধী নারীর কর্তব্য।তখন যদি আঁতকে না ওঠেন এখন আঁতকে উঠছেন কেন?এখন তো নারীও উপার্জন করে , উপার্জন করার সাথে সাথে তারও মনে জাগতেই পারে সে সম্পত্তি তার পরে কে ভোগ করবে?আর স্নেহের কারণে সন্তানের আকাঙ্খা? সন্তানের প্রতি নারীর টান ও ভালোবাসা কি পুরুষের চেয়ে কম? তাহলে এই অজুহাতে যদি পুরুষ বিয়ে করতে পারে, আবার বিয়ে করা নারীকে ছেড়ে যেতে পারে নারী কেন নয়?- এগুলো হলো কুটতর্ক, নারী ও পুরুষের মধ্যে কুকুর বিড়ালের মত শুধু প্রজনন সময়ে প্রজনন ক্রিয়া ছাড়া আর কোন প্রয়োজন থাকবে না- এ কেমন কথা?সমস্যাটা তাহলে এই কারণে যে কথাটা এক নারী বলেছে পুরুষ সম্পর্কে যেটা পুরুষ বহুবছর ধরে নারী সম্পর্কে বলে আসছে । নারীর এত বড় সাহস!কিন্তু তাহলে এখন সময় এসেছে যদি নারীর পক্ষে পুরুষকে বলা প্রিয়াংকার কথাটা যদি অন্যায় বলে মনে হয় তাহলে পুরুষ কর্তৃক মাতৃত্বেই নারীর স্বার্থকতা- একথাটাও ভুয়া বলে মেনে নেয়া। পুরুষের প্রশংসার ছদ্মাবরনে যুগ যুগ ধরে নারীর মাতৃরূপের বাহবায় কথাটা বলা হয়, শুনে আমরা মেয়েরা নিজেকে সম্মানিত বলে গদগদ হই, কিন্তু কথাটা তো আসলে একই রকম আপত্তিকর। কিভাবে? ঘুরিয়ে ভাবুন, নারীর সফল হওয়া মা হবার উপরে নির্ভরশীল, তার মানে যে নারী মা হতে পারেনি সে আসলে ব্যর্থ। কথাটা কেমন লাগছে ভাবতে? আপত্তিকর লাগা উচিত অন্তত যদি গোড়ার অভিনেত্রীর উক্তিটি খারাপ লেগে থাকে।যদি নারীকেও আপনি পুরুষের মতই মানুষ ভাবতে শেখেন । অন্তত এই যুগে নারী পুরুষ প্রকৃত সঙ্গী হয়ে ওঠা উচিৎ- একে অপরের পরিপূরক , সাথী , শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও। শুধু জৈবিক সংখ্যাবৃদ্ধির ক্ষমতা দিয়ে যদি পুরুষকে মাপা ভয়াবহ ধৃষ্টতা বলে মনে হয়, নারীকেও তো তাহলে পুরুষের তাদের জনন উর্বরতা দিয়ে মাপা একই রকম ধৃষ্টতা হওয়া উচিত।কেননা সন্তান জন্ম দিতে উভয়ের ভূমিকা লাগে, তাকে লালন করতে যেমন নারীকে লাগে, ভরনপোষণে পুরুষ। নারী পুরুষ উভয়ের মূল্য নির্ধারিত হোক, নীতি, মনন ,মেধায়। না হলে উগ্র ফেমিনিস্টরা ধর্ম, দেশ , জাতি ,সমাজ গোল্লায় দিল,কলিকালে কত কিছু শুনতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে সত্যকে, আমাদের সমাজের আসল বৈষম্যকে এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন লাভ হবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩২
৩৭টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×