somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইক্রোএক্সপ্রেশনসঃ মনের কথা পড়ার যে বিদ্যা!! প্রথম পর্ব- মিথ্যা শনাক্ত করবেন যেভাবে...

২৮ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথমেই একটি নববিবাহিত দম্পতির ডিনার টেবিলের কিছু কথোপকথন লক্ষ্য করা যাক-

স্বামীঃ তোমাকে পেয়ে আমি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
স্ত্রীঃ আমিও।
স্বামীঃ আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি, কিছু মনে করবে না তো?
স্ত্রীঃ (একটু নড়েচড়ে বসে) অবশ্যই। (পানির গ্লাস হাতে নিল)
স্বামীঃ (ইতস্তত করে) জামাল নামে কোন লোকের সাথে তোমার আগে পরিচয় ছিল?
স্ত্রীঃ জামাল! কোন জামাল?
স্বামীঃ তোমার সাথে একসাথে চাকরি করত...

১/
...স্ত্রীঃ তুমি কার কাছ থেকে শুনেছ তার কথা? (পানির গ্লাস এখনো মুখের সামনে ধরা)
স্বামীঃ (উত্তপ্ত স্বরে) তার মানে তোমার জামাল নামে কোন ছেলের সাথে পরিচয় ছিল?
স্ত্রীঃ (একটু চোখ বন্ধ করে রেখে, এক ঢোকে কিছু পানি খেয়ে) হ্যাঁ, ছিল। কিন্তু তুমি রেগে যাচ্ছ কেন?
স্বামীঃ সেটা আমার ব্যাপার। তুমি তাহলে এর আগে এ সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলেছিলে!
স্ত্রীঃ নাতো! (নরম স্বরে) সত্যি করে বলছি, বিশ্বাস করো, ও আমার শুধুই কলিগ ছিল।
স্বামী কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
স্ত্রীঃ (জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে) তুমি আমাকে বিশ্বাস করছ না, তাইনা?
স্বামী এবারো চুপ। তার আঙ্গুল টেবিলে নাচছে।
স্ত্রীঃ (জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে) তুমি কিন্তু ভাল করেই আমাকে চেনো! আমি খুব ভাল করে জানি তুমি আমাকে ভুল বুঝতে পারো না। বাদ দাওনা এসব। আচ্ছা... জামাল সাহেবের স্ত্রীর কথা কি তোমাকে বলেছি?
স্বামীঃ (আঙ্গুল নাচানো বন্ধ করে, ভুরু কুঁচকে) না, কেন?
স্ত্রীঃ (হাসিমুখে) আরে ভদ্রমহিলা তো এমনিতে দারুণ সুন্দরী, তারওপর যা অদ্ভুত স্বভাব............

২/
স্ত্রীঃ (অস্বস্তিভরে) না, আমাদের অফিসে জামাল নামে কেউ ছিল না।
স্বামীঃ তাই নাকি?? কিন্তু আমি যে শুনলাম...
স্ত্রীঃ (হাত থেকে পানির গ্লাস নামিয়ে রেখে) তুমি কি শুনেছ না শুনেছ সেটা যাচাই না করেই আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?
স্বামীঃ আরে তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করেছি!
স্ত্রীঃ (তীক্ষ্ণ স্বরে) কেউ থাকুক না থাকুক, তোমার তাতে কি?
স্বামীঃ দেখো, তোমার রেগে যাওয়াই কিন্তু বলে দিচ্ছে...
স্ত্রীঃ (কান্নাভেজা স্বরে) আমি জানি কি বলে দিচ্ছে। (কাঁধ ঝাঁকিয়ে) এ ব্যাপারে আমি কোন কথা বলতে চাইনা। আর আমি আজ তোমার সাথে ঘুমাবো না।

৩/
স্ত্রীঃ (তীক্ষ্ণস্বরে) হ্যাঁ, ছিল। হঠাৎ তার কথা কেন জিজ্ঞেস করছ? (পানির গ্লাস মুখের সামনে ধরা)
স্বামীঃ না, এমনি। আচ্ছা, উনি কি প্রায়ই তোমাদের বাসায় আসত?
স্ত্রীঃ মানে? সে খামোখা আমাদের বাসায় আসতে যাবে কেন?
স্বামীঃ আরে তুমি রেগে যাচ্ছ নাকি?
স্ত্রীঃ হ্যাঁ, আমি রেগে যাচ্ছি। (এক চুমুকে পানি শেষ করে) তুমি আমাকে বল তুমি কেন এটা আমাকে জিজ্ঞেস করলে?
স্বামীঃ দেখো, তোমার রেগে যাওয়াই কিন্তু বলে দিচ্ছে তুমি এ ব্যাপারে সেনসিটিভ।
স্ত্রীঃ (গ্লাসটা ছুঁড়ে মেরে) হ্যাঁ, আমি সেনসিটিভ। তোমার কোন অসুবিধা আছে? এবার তুমি আমাকে বল, মীরা নামের ওই মেয়ে মাঝে মাঝে তোমার সাথে দেখা করত কেন?
স্বামীঃ মানে? কি বলছ?
স্ত্রীঃ (উঠে দাঁড়িয়ে) যা বলছি ঠিকই বলছি। উত্তর দাও।

৪/
স্ত্রীঃ হ্যাঁ, ছিল তো। বেশ লম্বা মতন, ফর্সা করে, ওই লোকটা না? (গ্লাস হাতে ধরা) কার কাছ থেকে শুনলে বল তো?
স্বামীঃ এই তো, শুনলাম আর কি।
স্ত্রীঃ (ভুরু কুঁচকে) প্রায় ছ-সাত মাস কোন যোগাযোগ নেই। বেশ আগে তাদের বাসায় একবার গিয়েছিলাম। বনানীতে বাসা। কিন্তু তুমি চেনো নাকি? (ধীরে ধীরে গ্লাস টেবিলে নামিয়ে রাখল, পানি খাওয়া হয়নি।)
স্বামীঃ মাঝে কিছুদিন একসাথে একটা কাজ করেছিলাম। আজকে দেখা হলো রাস্তায়।
স্ত্রীঃ (নির্লিপ্তভাবে) কি বলল? (আবার গ্লাস তুলে নিল, পানি খেল।)
স্বামীঃ এই তো... তেমন কিছু না। তোমার কথা জিজ্ঞেস করল।
স্ত্রীঃ লোকটার স্বভাব ভাল ছিল না। প্রায়ই অফিসে ওর নামে অভিযোগ শোনা যেত। আমার পেছনেও ঘুরঘুর করত। চিন্তা করলেই এমন মেজাজ খারাপ লাগে! (কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, রাগত ভঙ্গিতে গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখল)
স্বামীঃ কই, আমার তো ভালই লাগল।
স্ত্রীঃ তোমার তো লাগবেই! তুমি কি আর মানুষ চেন! আচ্ছা, বনানীতেই দেখা হয়েছে নাকি?
-----------------------------------------------------------------------

মাইক্রোএক্সপ্রেশন হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন অভিব্যক্তি থেকে তার মনোভাব সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। ডিটেকটিভ বই যারা পড়েন, তারা এ ব্যাপারটির সাথে বেশ ভালভাবে পরিচিত। আমাদের যদিও এ ধরনের বিশ্লেষণের কথা শুনলে প্রথমেই শার্লক হোমস, ফেলুদার কথা মনে আসে, বাস্তবিক ক্ষেত্রে কিন্তু এর বিস্তার আরও বহুদূর! বিশেষ করে সাইকোলজির অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায় এই মাইক্রোএক্সপ্রেশন। অপরাধীর কাছ থেকে সত্য কথা বের করার জন্যে এর জুড়ি নেই।



উপরে আমি জনৈক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চারটা সিকোয়েন্সের কথা লিখেছি। এখানে প্রশ্ন করা হয়েছে মূলত স্ত্রীকে, তার সাথে জামাল নামে কারও সাথে সম্পৃক্ততা আছে কিনা বের করতে চেয়েছে তার স্বামী। এই চারটির মধ্যে কি কোনটি মিথ্যা আছে? থাকলে কোনটি কোনটি? লেখার বাকি অংশটুকু পড়ার আগে একবার আন্দাজ করার চেষ্টা করে দেখুন তো।

মিথ্যা কথা শনাক্ত করার পদ্ধতিকে, কিংবা অভিযুক্ত সত্যিই দোষী কিনা তা বের করার পদ্ধতিকে মূলত ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হচ্ছে-

১. বডি ল্যাংগুয়েজঃ => যে মানুষটি মিথ্যা বলছে, সে সাধারণভাবে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে না, অর্থাৎ আই কন্ট্যাক্ট তেমন হবে না। হলেও মিথ্যার মূল অংশটুকুতে সে চোখ ফিরিয়ে নিবে, কিংবা ওই মূহূর্তে চোখের পলক ফেলবে। সম্ভাবনা আশি ভাগ যে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই পলক ফেলতে সে বেশি সময় ধরে চোখ বন্ধ করে থাকবে

=> ফিজিক্যাল এক্সপ্রেশন লক্ষ্যনীয় হবে, শরীরের কোন অঙ্গ খুব বেশি নড়াচড়া করবে না। এছাড়াও হাত-পা ছড়ানো অবস্থায় থাকলে সেগুলো কাছাকাছি টেনে নিবে। ঘন ঘন চুলে হাত দেয়ার অভ্যাস না থাকলে এবং কোন বিশেষ কথা বলার সময় সেটা করলে সেটা মিথ্যা হবার সম্ভাবনা বেশি। কারও যদি হাত ভাঁজ করার অভ্যাস না থাকে, তাহলে বিশেষ কোন কথা বলার সময় হাত ভাঁজ করলে মোটামুটি আশি ভাগ সম্ভাবনা সে কথাটা মিথ্যা।

=> সহজ ভঙ্গিতে উত্তর দিতে চাইবে, ব্যাপারটাকে তুচ্ছ করার জন্যে শ্রাগ করবে, কিংবা হাত নেড়ে পাত্তা না দেয়ার ভঙ্গি করবে।

২. ইমোশনাল স্টেটের পরিবর্তনঃ => এক্সপ্রেশন ও কথার মধ্যে সময়ের অসামঞ্জস্যতা থাকবে, সাধারণভাবে কথা বলার পর সেটার অভিব্যক্তি ফুটে উঠবে। যেমন- ‘আমার কিন্তু এখন তোমার উপর দারুণ রাগ হচ্ছে...’ একটু বিরতি, তারপর রাগের চিহ্ন ফুটে ওঠা, এর মানে কথাটা মিথ্যা হবার সম্ভাবনা বেশি। এবং এই অভিব্যক্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হবেনা।

=> কথা ও এক্সপ্রেশনের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা থাকবে। যেমন- হাত ভাঁজ করে রেখে, শক্ত রেখে কিংবা পা নাচাতে নাচাতে বলা, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’। কিংবা আবেগী, নরম স্বরে বলা, ‘সত্যি বলছি, এই কাজটা করতে পারব, যতো কঠিনই হোক না কেন’।
=> চট করে এক্সট্রিম ধরনের এক্সপ্রেশনের পরিবর্তন হবে। যেমন- হঠাৎ খুব রেগে যেতে যেতে কেঁদে ফেলা, কিংবা হাসতে হাসতে হঠাৎ বিষম খাওয়া, কাঁদতে কাঁদতে রেগে যাওয়া। উল্লেখ্য, এক্সপ্রেশনের পরিবর্তন না হলে, কিংবা কোন নির্দিষ্ট একটা এক্সপ্রেশন মোটামুটি কিছু সময় ধরে স্থায়ী হলে নব্বই ভাগ সম্ভাবনা অভিযুক্ত নির্দোষ, অর্থাৎ সে সত্য বলছে।
=> শুরুতে নির্লিপ্ত থাকলেও পরবর্তীতে অধিক রেগে যাবে, কিংবা অনবরত নির্লিপ্ত থাকবে। তবে রাগ থেকে হঠাৎ নির্লিপ্ত হয়ে গেলে অভিযুক্ত নির্দোষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবং যে নির্দোষ সে কখনোই অভিযোগের ফলে নির্লিপ্ত বা সহজ ভঙ্গিতে থাকবেনা, রেগে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত নব্বুই ভাগ।

৩. বাচনভঙ্গিঃ => মিথ্যাবাদী প্রশ্নকর্তার কথাকেই উত্তর দেয়ার সময় পুনরাবৃত্তি করবে। যেমন- ‘তুমি কি এক হাজার টাকা নিয়েছ?’ ‘না, আমি এক হাজার টাকা নেই নি’। এই রিপিটশনের ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বপুর্ণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা মিথ্যা হয়ে থাকে। তবে শুধু ‘না’ বলা মানেই যে সত্যি, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না।

=> ‘আমি এ ব্যাপারে আর কোন কথা বলতে চাই না,’ কিংবা ‘আমি আর এ ব্যাপারে তর্ক করতে চাইনা,’ ‘তুমি আমাকে এ ব্যাপারে আর কোন কথা বললে আমি খুব কষ্ট পাব,’ এই ধরনের সমাপ্তিমূলক কথার কারণ মূলত হয়ে থাকে অভিযুক্তের দোদুল্যমান মনে অবস্থা। এক্ষেত্রে কথাগুলো মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

=> সাধারণত অন্যের মাধ্যমের নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যেসব ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রশ্নকর্তা ছাড়া অন্য কারও মাধ্যম সেটা করলে কথাটা মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত আশি ভাগ। যেমন- ‘তুমি কি আমার সাথে প্রতারনা করেছ?’ ‘তুমি ভাল করেই জানো আমি তা করতে পারি না, তোমার চেয়ে ভাল করে আমাকে কেউ চেনেনা,’ এ ধরনের কথা মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবং ‘রফিক/শফিক/রহিম/করিমকে জিজ্ঞেস করে দেখ, ও আমাকে অনেক ভালভাবে চেনে, আমি কখনো এরকম কিছু করতে পারব না,’ ধরনের কথা মোটামুটি নিশ্চিত মিথ্যা।

=> মিথ্যাবাদী সাধারণতভাবে প্রশ্নকর্তার চুপ করে থাকা সহ্য করে থাকতে পারে না যতোক্ষণ না সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হচ্ছে, সে বিভিন্নভাবে অভিযোগ সম্বন্ধে প্রশ্নকর্তা কতোটুকু জানে জানার চেষ্টা করে, কিংবা নিজে থেকেই অভিযোগ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিতে থাকে। এই তথ্য দেয়ার সময় সে কখনো আই কন্ট্যাক্ট করে না, শরীরের নড়াচড়া খুব সীমিত হয়। কোন কারণে চুপ করে থাকলেও তার মধ্যে অস্থিরতা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।

=> প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, সাধারণত নির্দিষ্ট কোন বিষয় জানার জন্যে একই প্রশ্ন কয়েকবার করতে হয়। যেমন- ‘তুমি কি জায়গাটা চেন?’ ‘আমি তো কখনো যাই-ই নি, চিনব কিভাবে?’ ‘তার মানে তুমি চেন না?’ ‘আমার এক বন্ধু থাকত ওখানে, তার বাসায়ও কখনো যাইনি। চেনার প্রশ্নই ওঠে না।‘

=> ‘আমাকে তুমি বিশ্বাস কর না?’ ‘আমি কি তোমার সাথে মিথ্যা বলতে পারি?’ ‘সত্যি করে বলছি...’ ‘আমি তোমার কাছ থেকে এভাবে আশা করিনি,’ ইত্যাদি ধরনের বাক্য ব্যবহার করলে সে কথা মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

=> ‘কোথা থেকে শুনেছ?’ ‘কে বলল?’ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকলে, এবং এ ধরনের প্রশ্ন রিপিট করা হলে নব্বুইভাগ সম্ভাবনা অভিযুক্ত মিথ্যা বলছে। এছাড়া সে অভিযোগটিকে নিজের মতো করে রিপিট করে, যাতে সেটা রীতিমতো অসম্ভব বলে মনে হয়। যেমন- ‘তুমি তাহলে বলতে চাচ্ছ আমি তোমার সাথে প্রতারণা করেছি? আমি? যাকে তুমি ছয় বছর ধরে চেনো?’

=> ‘আমি চাই না তুমি চিন্তা করো যে...,’ ‘তোমাকে আঘাত দেয়ার জন্যে বলছি না,’ ইত্যাদি ধরনের প্রস্তাবনা কথার শুরুতে থাকলে কথাটা অবশ্যই ওই বিশেষ ব্যাপারটার জন্যেই বলা হচ্ছে। যেমন- উপরের বাক্য দুটো দিয়ে অভিযুক্ত চাচ্ছে প্রশ্নকর্তা সেই বিশেষ বিষয়টা চিন্তা করুক, কিংবা তার কথা থেকে আঘাত পাক, যাতে অভিযুক্তের নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা সহজ হয়।

৪. পারস্পরিক ইন্টারেকশানঃ => মিথ্যাবাদী নিজে প্রশ্নের জবাব দিতে পারুক বা না পারুক, একই ব্যাপারে প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন করার অধিকার থাকলেও সে তা করবে না, এবং এনকাউন্টার ধরনের কিছু করতে যাবে না। যেমন- দুই বন্ধুর মধ্যে কথা হচ্ছে, ‘তুই আগে কখনো ড্রাগ নিয়েছিস?’ ‘না, আমি কখনো ড্রাগ নেইনি’। বলে দ্বিতীয় বন্ধু চুপ করে থাকল। মোটামুটি শতভাগ সম্ভাবনা দ্বিতীয় বন্ধুটি মিথ্যা বলছে। সত্যি বললে সে অবশ্যই তার বন্ধুকেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করত।

=> মিথ্যাবাদী সাধারণত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এমন কোন ঘটনার কথা বলে, যার চরিত্রদের প্রশ্নকর্তা জানে না। এবং একই ধরনের অভিযোগে ওই চরিত্রদের কাউকে অভিযুক্ত করে। যেমন- ‘মিরপুরের হাসেম কে চেনেন? ও তো আগে এইসবের ব্যবসা করত, আমার দুই চোখের বিষ...’

=> মিথ্যাবাদী অভিযোগের চেয়েও ইন্টারেস্টিং কোন বিষয়ের প্রতি প্রশ্নকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। এবং সেটা যদি হয় অভিযোগের কোন একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে, তাহলে অভিযুক্ত দোষী হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। যেমন- ‘আপনি তাহলে টাকার বান্ডিলগুলো দেখেননি?’ ‘আরে ভাই, এই কটা টাকার বান্ডিল আমি কিভাবে দেখব? সেদিন বস নিজেকে আমাকে এতোগুলো টাকার বান্ডিল এনে দিলেন, ওগুলো নিয়ে যে কী অবস্থা...’

৫. সাইকোলজিক্যাল প্রোফাইলঃ => অভিযুক্তের দেয়া বিভিন্ন তথ্য, সংখ্যার মধ্যে কোন না কোন ধরনের মিল থাকবে। এবং এই মিল ভেবে বের করার জন্যে অভিযুক্ত কিছু সময়ও ব্যয় করবে।

=> সরাসরি অভিযোগকে কখনো কখনো সিরিয়াসলি নেয়ার বদলে ব্যঙ্গাত্বক দিকে নিয়ে যাবে, হাসি-ঠাট্টা করার চেষ্টা করবে, কিন্তু সেগুলো সাধারণভাবে লক্ষ্যণীয় রকম দুর্বল হবে।
=> অভিযুক্তের সামনে গ্লাস, চায়ের কাপ, বালিশ, বই ইত্যাদি থাকলে সেসব খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসবের সাথে তার ইন্টারেকশান সাবধানে লক্ষ্য করতে হবে। মিথ্যা কথা বলার সময় তার হাতে এগুলোর কোনটা থাকলে সে সেটা দুজনের মাঝখানে রেখে দিবে, চায়ের কাপ হাতে থাকলে চুমুক না দিয়েই টেবিলে রেখে দিবে। একটু পরই যদি আবার চায়ের চাপ হাতে নেয় চা খাওয়ার জন্যে এবং খাওয়া শুরু করে, তাহলে তার মিথ্যাবাদী হওয়ার সম্ভাবনা আশি ভাগ। অথবা কাপ কিংবা গ্লাসে দু-এক কাপ চুমুক দিয়ে রেখে দেয়া মানে কথাগুলো মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু অভিযুক্ত যদি কাপ/গ্লাস নামিয়ে না রাখে বা পুরোটা খেয়ে নেয়, তাহলে সে নিশ্চিত সত্য বলছে। তবে এক্ষেত্রে একটা খুব সহজ কাজ করা যায়, কোন পানীয় খাবার সময় অকস্মাৎ অভিযোগ করলে প্রকৃত দোষীর বিষম খাওয়ার, কিংবা তৎক্ষণাৎ কাপ/গ্লাস নামিয়ে রাখার সম্ভাবনা শতভাগ। পৃথিবীর মোটামুটি সব ইন্টারোগেশনেই তাই প্রশ্নকর্তা ও অভিযুক্তের মধ্যে চা, সিগারেট ইত্যাদি থাকে। ক্রিমিনাল সাইকোলজির জন্যে এটা খুব গুরুত্ব্বপূর্ণ। হাওয়ার্ড টেটেন নামক এক বিখ্যাত ইন্টারোগেটর অভিযুক্তের খাওয়ার ধরন দেখেই দোষ বিচার করতেন।
=> অভিযুক্তের দৃষ্টিভঙ্গি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি সে তার কথার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী থাকে, তাহলে প্রশ্নকর্তাকে বোঝানোর চাইতে নিজের প্রেজেন্টেশন নিয়ে বেশি মনযোগী থাকবে, যদি সে মিথ্যা কথা বলে, তবে প্রশ্নকর্তাকে বোঝানোই হবে তার ধ্যান-জ্ঞান।
=> অভিযুক্তের কোন একটা কথা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হলে মোটামুটি নিশ্চিত সে আরও অনেকগুলো মিথ্যা কথা বলেছে, এবং তার প্রতিটা কথাই মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

মোটামুটিভাবে এই হচ্ছে মিথ্যা সনাক্ত করার বেসিক কিছু পদ্ধতি। উপরের শ্রেণীবিন্যাসটা মূলত করেছেন ডেভিড জ. লিবারম্যান, আর ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনের অন্যতম দিকপাল বলা হয় পল একম্যান কে।
তবে মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার শুধু মাইক্রোএক্সপ্রেশন পর্যবেক্ষণ করাই না; সেগুলো কে খাপে খাপে বসিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা। এই কাজটুকুই সবচেয়ে কঠিন। একটা সহজ উদাহরণ বলি- উপরের থিওরি অনুযায়ী কেউ যদি বলে, ‘সত্যি করে বলছি, আমি কাজটা করিনি,’ তাহলে সে মিথ্যাবাদী। কিন্তু মনে রাখুন, এভাবে চিন্তা করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভুল। এই কথাটা বলা মানে কেবল অভিযুক্তের নেগেটিভ দিকে এক পয়েন্ট বেড়ে যাওয়া, এর বেশি কিছু না। আবার কেউ কাপ হাতে তুলে চুমুক না দিয়ে রেখে দেয়া মানেই মিথ্যাবাদী হতে পারে না। আপনার সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে তার মিথ্যা কথা বলার একটা সুযোগ রয়েছে, কিংবা তার মিথ্যাবাদী হওয়ার সম্ভাবনার পাল্লা ভারী হল। তাই এভাবে পজেটিভ-নেগেটিভ মিলিয়ে, অনেক হিসাব-নিকাশ করে তবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত। মনে রাখা দরকার, ছোট একটা বিষয় থেকে কোনভাবেই এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না। আপনার সামনে একটা ৪ আর একটা ২ থাকলে সেগুলো গুণ, ভাগ, যোগ না বিয়োগ করলে ফল পাওয়া যাবে, সেটা আপনিই ঠিক করবেন। এবং এসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট চর্চা থাকা উচিত; কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিযুক্ত একই সাথে বিভিন্ন কন্ট্রাডিক্টরী ধরনের কাজ করে, যার ফলে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়। আর একজন নির্দোষ মানুষ কে সাইকোলজির প্যাঁচ কষে দোষী বানিয়ে ফেলা খুবই খারাপ ধরনের অপরাধ! কিন্তু ঠিক ট্র্যাকে চিন্তা করতে পারলে আর মোটামুটি চর্চা করলে ভুল হবার সম্ভাবনা বেশ কমে যায়।

সাইকোলজি আমার অতি প্রিয় একটা বিষয়, আর এক্সপ্রেশনস অতি অতি প্রিয়। তাই এসব নিয়ে আরও কিছু পর্ব লেখার ইচ্ছে আছে। আর এ ব্যাপারগুলো সবচেয়ে চমৎকারভাবে জানতে পারবেন Fox tv এর জনপ্রিয় সিরিয়াল Lie to Me দেখে। আমার আগ্রহের শুরুটা মূলত ওখান থেকেই।


যারা কষ্ট করে এ পর্যন্ত পড়েছেন, তারা আরেকটু কষ্ট করে এবার শুরুর প্রশ্নটার উত্তরটা দিয়ে যান- শুরুর চারটা সিকোয়েন্সের মধ্যে স্ত্রী কি কোনটায় মিথ্যা কথা বলেছে? বলে থাকলে কোনটায়??

আর মূল পোস্ট শুরু হওয়ার আগেও একই প্রশ্নটা করেছিলাম... তুলনা করে দেখুন তো পদ্ধতিগুলো জানার পর আপনার সিদ্ধান্তের কতোটা চেঞ্জ হল??

উত্তর ও ব্যাখ্যা দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:৪৮
৭৯টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×