somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কমিটমেন্ট

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




-অসহ্য ঋদ্ধ। আমি আর পেরে উঠছি না তোর সাথে
-সে তো জানা কথা । এখন তো আমায় অসহ্য লাগবেই!!
-মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ!! তোর সাথে কোন কমিটমেন্টে আমি কখনো যাই নি!
-হ্যাঁ জানি। কারন আমি ই চাই নি কোন কমিটমেন্ট দিয়ে তোমায় বেঁধে রাখতে। তোমার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম তার জন্য যা করার করেছি। তোমার কাজ শেষ এখন তুমি ভাগছ। এই তো!!
-কমিটমেন্টে করাস নি, কিন্তু আমার প্রতিটা কাজে ইনফ্লুয়েন্স করেছিস। তোর মন রাখার জন্য আমাকে অনেক কিছু করতে হয়েছে। অস্বীকার করতে পারিস?
-ওয়াও। এ্যমেইজিং!! কি চাও সোজা করে বল তো!!
-তোর সাথে থাকা আমার জন্য বিরাট পেইন হয়ে দাড়িয়েছে। আমি আর তোর সাথে থাকছি না।
-বেশ। তবে যাচ্ছ কবে?
-এখন ই। ব্যাগ প্রায় গোছানো ই আছে। বেশিক্ষন লাগবে না আমার
-ঠিক আছে। যাওগা। তোমারে আটকানোর শক্তি বা অধিকার কোনোটাই আমার নাই।



ঋদ্ধর ডাইরী থেকে. . .
আরণ্য মাত্র ব্যাগ নিয়ে গটগট করে হেঁটে চলে গেল। আজ পাঁচ বছর আমরা একসাথে লিভটুগেদার করছি, ছোটখাট ঝামেলা মাঝে মধ্যেই হয়। কাল রাতে হয়ত বাড়াবাড়ি ই করেছি। তাতে কি? আমি যা করেছি ঠিক ই ছিল। হয়ত তার নতুন কাওকে দরকার ছিল! আমি ও মানি খাবার যত ভাল ই হোক না কেন তা প্রতিদিন খেতে ভাল লাগে না। শুধু অবাক লাগছে এই ভেবে যে এই ছেলে ই এক সময় পলিগ্যামাস হওয়ার বিপক্ষে কথা বলত। আমার কি? জেমস কয়দিন থেকেই আমার দিকে চোরা চাহনি দিচ্ছে। কাল সিস্টেম করে বাসায় আনলে ই টেস্ট চেঞ্জ করতে পারব। এই ব্যাপারে আমি আবার ভাল এক্সপার্ট। কাল থেকে আমি আবার ফ্রি! সকালে দুপুরে কাউকে ম্যাসেজ কল দেওয়ার ঝামেলা নাই। টাংকি কত প্রকার ও কি কি এবার আমি দেখে নিব। অনেক দিন পুরোন ফেসবুক আই ডি তে ঢোকা হয় না। আজ দেখি কি কাওকে পাই কিনা। স্বাধীনতা যখন পেলাম তখন তা পুরোদমে উপোভোগ না করলেই নয়। আজ থেকে আমার স্বাধীন জীবন আবার শুরু, যেখানে শুধুমাত্র আমার নিজের প্রায়োরিটি থাকবে। অন্য কারো নয়. . .


জেমস আমার বুকের উপর শুয়ে আছে। ওকে পটানো যত সোজা মনে করেছিলাম আসলে তার চে ও সোজা ছিল। এই জন্য অবশ্যই আমার এ্যপারিয়েন্স অনেক বেশী মুখ্য ভূমিকা রাখে। আমাকে দেখলে দ্বিতীয়বার তাকাবে না এমন খুব কম মানুষ ই আছে। তবে অরণ্য আমার চে সুন্দর এটা ও ঠিক। ধুররররর, এখন আবার ওই হতচ্ছাড়ার কথা মনে পড়ছে ; কোন মানে হয়? সকাল থেকে ই কি যেন নাই এম মনে হচ্ছে। আসলে গত দু বছরের অভ্যাস ওকে পাশে নিয়ে ঘুমানো, অফিসে ড্রপ করে দেওয়া তাই হয়ত খারাপ লাগছে। এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কল দিয়ে ফেললাম ওকে. . .
-হ্যালো!
-হ্যাঁ হ্যালো। কি কর?
-রাত দেড়টায় ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করছিস কি করি?
-কামন! আমি জানি তুমি রাত তিনটার আগে ঘুমাও না!
-বাহ! অনেক কিছু জানিস দেখছি! তা ফোন দিলি কি মনে করে?
-না ভাবলাম কই গেলা একবার ও তো বললা না। তাই. . .
-তা জানা কি খুব দরকার? মনে তো হয় না। বেশি দরকার হলে আগে ই ফোন দিতি
-দেখ বেশী কথা বইল না। কই গেস সেই কও।
-রেদোয়ানের বাসায় আছি আমি। তোকে একটা রিকুয়েস্ট করি?
-কর।
-তোর বেডরুমের প্রতিটা জিনিস আমার হাতে গোছানো। যদি পারিস এখানে অন্য কাউকে ঢোকাস না। রুম তো আরো একটা আছে সেখানেই নাহয় কষ্ট করে থাকিস। শোনা না শোনা তোর ব্যাপার।
-দেখি। কথা দিতে পারছি না।
-ঠিক আছে। আমি এখন রাখছি। ভাল থাকিস।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
অরণ্য রেদোয়ানের বাসায় কেন যাবে?? ওর যাওয়ার জায়গার তো আভাব নাই ।তবে কি রেদোয়ানের জন্য ই ও আমাকে ছেড়ে গেল?? রেদোয়ানের তাকানো নাকি এই ছেলের পছন্দ না, এটিচিউড ও ভাল না তবে কেন সে ওর বাসাতে ই গেল। হুহ আমার কি? যেতেই পারে। আমি কেন এসব নিয়ে এত ভাবছি?? জেমস কে ও কেন যেন এখন অসহ্য লাগছে। আস্তে করে ওকে বুক থেকে নামিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলাম। আমি আমার বেডরুমে জেমস কে আনি নি। কেন যেন এই রুমটার যে দিকে তাকাই সে দিকেই অরন্য কে দেখি। প্রতিটা জিনিস এখানে অরণ্যের পছন্দে কেনা। এক সময় এটা আমাদের বেডরুম ছিল কিন্তু এখন সম্পূর্ণ আমার হয়ে ও যেন অরণ্য প্রটিটা জিনিসের সাথে মিশে আছে। মরুক ওই ছেনাল। আমার কাছে থেকে যেতে না যেতে ই আরো একটা জুটায় ফেলসে। খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছে। অরণ্য থাকলে অবশ্য আমাকে এতখনে কফি এনে দিত সে আমি শিউর। আমার কখন কি লাগবে না লাগবে সেটা আমার চে ও যেন ভাল বুঝত। আমার বেডরুমে আমাদের দুজনের একটা বিশাল পোট্রেইট আছে। এটা অবশ্য আমার শখ ছিল আর আমাদের থার্ড এনিভর্সিরি তে অরন্য আমাকে গিফট করেছিল। আমি রুমে ঢুকে সোফায় বসে ছবিটা দেখছি। মনে হচ্ছে অরন্য যেন আবার ছবি থেকে জীবিত হয়ে গেছে। ওকে হালকা তুলে ধরে রেখেছি আমি আর ও হেসেই যাচ্ছে পাগলের মত। ওর হাসির শব্দ যেকোনো মেলোডি কে হার মানাবে। ওর চোখের গভীরতা এতই যে সেখানে ডুব দিয়ে অনন্তকাল পার করে দেওয়া যাবে, তবু ও তার তল যেন মিলবে না। ওর চোখের তারায় যে সত্য আঁকা সেটা দেখেই ওর প্রতি পাগল হয়েছিলাম আমি। সেই সত্যের বন্ধনে বাঁধা পড়েই আমি যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিতে পারি. . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
-Good Morning
-Morning
-When you came in the couch? Why not in the bed?
-Umm, I was feeling a bit uncomfortable that’s all. Nothing serious dear!
-Oww, who’s that gorgeous guy??
-My x-boyfriend. Whatever he’s not sexier than you . . .
-Oh Rids! I love you Dear!
-Ok give me a kiss
-Go n freshen up if u want a kiss!!!
-Come’n!!! Why not now??
-Cause it’s so unhygienic you know!!!
-Okay babes.
ধুরর খেতা পুড়ি এই বিদেশী আইটেমের। অরণ্য আর আমি আছি কখন যে কি অবস্থায় আছি তা ভাবার সময় ই পেতাম না! আমাদের দিনের শুরুটাই হত চুমু খেয়ে। সারা দিনে কতগুলো চুমু খেতাম তার তো হিসাব ই ছিল না। প্রথমদিকে যখন ক্যাম্পাসে বসে আমরা সবার অগোচরে প্রেম করতাম তখন ও। অবশ্য আমি ই বেশী পাগলামি করতাম। তখন ওকে ভাইয়া বলে ই বলতাম। কারন ও আমার সিনিয়র ছিল। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেই আমার যেন খরা শুরু হত আর সেই মাসুল বেচারা কে ক্যাম্পাস খোলার পর দিতে হত। প্যারিসে স্যাটেল হওয়ার পর গত দুই দিন শুধু আমি অরণ্য কে চুমু খাই নি। শালার আনহাইজেনিকের আব্বু কে আম্মু। আচ্ছা অরি কে একটা মেসেজ দেই। ব্রেকআপের পর ও আমরা তো ফ্রেন্ড থাকতেই পারি, তাই না. . . . .


oh o o oh o o
can’t remember to forget you
when you look at me
the only memory
is us kissing in the moonlight

অরণ্য কেন ফোন দিচ্ছে? এইটা ওর জন্য স্পেশাল রিংটন সেট করেছিলাম, আজ থেকে আরো পাঁচ বছর আগে। পরে আর চেইঞ্জ করা হয় নি। আসলেই ওকে ভোলার কথা ই আমার মনে পড়ছে না। রিসিভ করব কি না ভাবতে ভাবতে ই ফোনটা কেটে গেল। কল ব্যাক করলাম।
-হ্যালো
-কি করিস?
-কিছু না। তুমি?
-নাথিং স্পেশাল। অফিসে আজ কাজ কম তাই ভাবলাম তোকে একটু ডিস্টাপ দেই।
-রেদোয়ানের খবর কি? কেমন আছে?
-মানে?
-ও সরি ভুল হয়েছে। তোমারে পাইসে এখন তো ভালো থাকার ই কথা।
-শাট আপ ঋদ্ধ।
-সত্যি শুনলে সবার ই খারাপ লাগে।
-যা জানিস না তা নিয়ে তর্ক করিস না।
-তবে জানিয়ে দাও!!! রেদোয়ান নামের একটা ফাউলের জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে গেস তা আমি বুঝি না মনে হয়??
-বাজে কথা বলবি না বলছি।
-আমি জানি তো সব ই। এটা যদি কারন না হয় তবে কেন আমারে ছেড়ে গেলা? কি দেখস ওর??
-ঋদ্ধ!!!!!!!!!!!!
-Shut up bitch!!! You’ve ruined my life. . .
-You yourself have ruined your life . . .
-Yap you are right. I ruined my life by believing a bitch like you . . .
-I’m a bitch & you knew if from the first day. Then why did you relay on me??
-Cause . . . . I loved to be with you.
-Then you got whatever you wanted. So don’t blame me now. I’ve the right to live my life in my way!!
-Ok!! Fine! Lead your life in your way! Never call me again!!
-Fine! I won’t!!!
হয়তো একটু জোরে চেচিয়ে ফেলেছিলাম। দেখলাম জেমস এসে আমার পাশে দাড়িয়েছে
-Are you okay Baby?
-Maintain your attitude in office!! I’m your boss here!
-Key sorry!! Are you okay Mr. Chowdhury?
-Umm, a bit sick. I should leave.
-So can u manage to go home? Or should I accompany??
আমি কোন এন্সার দিলাম না। কারন যতটা চিনেছি এখন না করলে ও এই ছেলে কোন না কোন কারন দেখিয়ে আমার বাসায় উপস্থিত হবে। রাস্তায় সে কয়েকবার আমার সাথে স্বাভাবিক কথা বলার ট্রাই করেছে। কিন্তু কথা বলার কোন মুড আমার আপাতত নাই। অরন্য আমার সাথে এমন রাফ বিহেভ আজকের আগে কখনো করে নি। মানলাম সমস্ত ক্যাম্পাসে আমার বকবকানি শোনার মানুষ এই একজন ই ছিল। তিন বছর পুরো ক্যাম্পাসে আমাদের দুজন কে সবাই দিনের ১৬ ঘন্টাই একসাথে দেখেছে। ওর আমাকে যতটা দরকার ছিল তার চে আমার বরং বেশি দরকার ছিল ওর মত একজন কে। আমার এ্যারোগেন্সির জন্য আমি কারো সাথে মিশতে পারতাম না, সে আমাকে হাতে ধরে সব শিখিয়েছে। নেটওয়ার্কিং এর প্রতিটা জিনিস আমি ওর থেকে শিখেছি। এখন আমি যা তার পিছে এই ছেলেটার অবদান কম না। আর আমি একে যা তা বলেছি!! আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কি করছি। এই এ্যারোগেন্সি আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। আচ্ছা অরি ও কি আমাকে বুঝতে পারছে না আমার মধ্যে কি চলছে? কাকে বলব আমি এই কথা??কথাগুলো গলার কাছে এসে জমাট বেঁধে থাকে, বের হওয়ার কোন জায়গা খুঁজে পায় না। আর মনে হয় বুকের বাম দিক টা যেন হালকা হয়ে গেছে। কিছু একটা থকার কথা কিন্তু তা হঠাৎ ই নাই হয়ে গেছে। চোখের পানি কোনায় এসে আটকে থাকে, গড়িয়ে পরতে গেলেই কে যেন চেপে ধরে বলে তুমি ছেলে মানুষ এই সব তোমায় মানায় না।
-Sir! We are here. SIR?
-Oh yes! Umm James you may stay tonight. I may need something!!
-Anything for you sir . . .
জেমস কেমন যেন জঘন্যভাবে এপ্রোচ করছে বলে আমার মনে হল। আমার কথার অন্য মিনিং নিয়েছে বোধহয়। যা হোক আমি সাড়া না দিলেই হয়। নিজেকেই কেমন যেন অপবিত্র মনে হচ্ছে। এই আমি ই এ্ক সময় অরণ্যকে ছাড়া কিছু বুঝতাম না, একসাথে অফিস থেকে ফিরে ওকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকতাম। ওকে জোর করে গোসল করিয়ে দিয়ে তবে ই আমার ছুটি হত আর আজ জেমস নামের চিপ একটা ছেলে প্রায় আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ফ্লাটে ঢুকছে। জেমস কে কেন চিপ বলছি? আমি নিজেই কি চিপ না!! না হয় ওকে কেন আমি এই সু্যোগ নিতে দিলাম। ধুর্, মাথায় এত চিন্তা থাকলে আমি পাগল ই হয়ে যাব। ভাল লাগে না। শাওয়ার টা ফুল স্পীডে ছেড়ে মাথা ঠান্ডা করার বৃথা চেষ্টা করেই যাছি। কিন্তু কেবল ই পুরোনো সব ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। অরির সাথে আমার সব দুষ্টমি, খুনসুটি রাগ অভিমান সব কিছু! আসলেই কি আমাদের মধ্যে কোন কমিটমেন্ট ছিল না?? হ্যাঁ হয়তো মুখে কখনো ছিল না, কিন্তু আমরা তো একে অন্যের পরিপূরক ছিলাম।আমার যেমন ওকে দরকার ছিল তেমনি সে ও তো আমার উপর ডিপেন্ড করত। জানি না কি হচ্ছে আর কি হবে। জেমসের ডাকাডাকি শুনে একটা টাওয়েল জড়িয়ে বের হয়ে আসলাম। শান্তিতে গোসল ও করতে দিল না *গী টা।
-What is the need of that towel? I guess I’d seen everything!!
-why you were calling me?
-Ow, actually Rids there’s nothing much in your fridge for dinner
-Don’t worry we’ll go outside for the dinner
-So you are calling me for a dinner? Very intelligent way to apologize!!
-Come’n! What happened last night was just a sex! Nothing else!
-Okay! Okay! I understand!


সারাটা সন্ধ্যা আমাকে জেমসের প্যাঁচাল শুনতে হল। তার বকবকনির টপিক কেবল মাত্র একটাই, কিভাবে লাইফে এনজয় করা যায় আর তার কোন ফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড কেমন দেখতে। আসলে এই সব ছেলেদের চরিত্র এমন ই হয়।ঢাকাতে ও এমন অনেক ছেলে কে দেখেছি এখানে ও চাক্ষুষ দেখছি। রিলেশনের প্রতি আমার ভক্তি অনেক আগেই উঠে গেছিল। ওপেন রিলেশনশিপ এর নামের টাইম পাস করে বেড়াতাম, তখন ই দেখা হয়েছিল অরণ্যে সাথে। জানি না কেন যেন খুব কাছের কেউ মনে হয়েছিল প্রথম দেখাতেই। রিলেশনশিপ না হোক অন্তত ভাল ফ্রেন্ডশীপ হবে এমন একজন ছিল সে। হঠাৎ এক রাতে এক তিনতলা বিল্ডিং এর ছাদে বসে গল্প করছিলাম। কিছু ব্যাপার নিয়ে সে খুব আপসেট ছিল। আমি সান্তনা দিতে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম। সে সময় হঠাৎ ই কোত্থেকে যেন মেঘের দল খবর পেয়ে বৃষ্টি হয়ে নেমে এল। আর সেই বৃষ্টির মাঝে শক্ত আলিঙ্গন আরো শক্ত হল। যে মেকী দেওয়াল টা আমাদের আলাদা করে রেখেছিল, বারিধারা তা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল। মিলে গেল দুটি ঠোঁট। সে রাতের জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। আরো অনেক কিছু যে বাকি ছিল তা মানি, কিন্তু অনেক সময় ছোট কিছু ব্যাপার ই এত ইনফ্লুয়েন্স করতে পারে সে আবার নতুন করে বুঝলাম। তবে ভালবাসা বলতে তখন ও হয়ত কিছু ছিল না আমাদের মধ্যে। আমার ভাল লাগত ওর সাথে থাকতে, তার ও হয়ত লাগত। সারা দিনের জমিয়ে রাখা কথা গুলো শেয়ার না করলে কারো দিন ই যেন কাটত না। শেষে তিন বছর পর যেদিন সে ক্যাপাস ছেড়ে চলে যাচ্ছিল, সেদিন বুঝলাম হয়ত অরণ্যকে পাব বলেই র‍্যাটস আমার হয় নি। আমি তখন ও কিছু বলি নি। এর মধ্যে আমরা দুজন ই স্কলারশিপের জন্য ট্রাই করছিলাম আর কাকতালিয় ভাবে দুজন ই প্যারিসের একটা ভার্সিটি তে চান্স পেয়ে গেলাম। ওকে ফোন করে জানাতেই সে বলল একসাথে প্লেনের টিকেট করতে। পুরো পথ দুজন পাশাপাশি বসে এসেছিলাম আমরা। আমার হাতের মুঠোয় ওর হাত ছিল। কেমন যেন নির্ভরতা খুঁজে পাচ্ছিলাম। তার অর এই তো আমরা একই সাথে রুম নিলাম নিজেদের মত গোছালাম সব কিছু। লোন নিয়ে ফ্লাট কিনলাম, ভালই চলছিল সব। কিন্তু সেদিনের সামান্য একটা ঘটনায় আজ অরণ্যর বদলে জেমসের ফাউল টাইপের কথা শুনতে হচ্ছে আমার।
-Are you okay sweetheart?
জেমস গলায় মধু মিশিয়ে প্রশ্ন করল। আমার কানে ঠিক ততটাই বিষ মেশানো অবস্থায় প্রবেশ করল কথাটা। খাঁটি বাংলায় একটা গালি ঝেড়ে বললাম,
-I’m not feeling well .I need to leave from here soon.
-Oh! Would you mind if I accompany with you?
-No need at all. I wanna be alone for some time.
তবে অবস্থা যা দেখলাম মনে হচ্ছে না এর থেকে খুব সহজে রেহাই পাব। কোন রকম ডিনার গিলে বের হয়ে ই ট্যাক্সি নিলাম। আমার নিজের একটু স্পেস দরকার। এমন কাওকে দরকার যে আমাকে ধরে রাখতে পারবে। অরণ্য কেন এমন কারো বাসায় উঠল যাকে আমার পছন্দ না। আমার কাছে সমস্ত ব্যাপার টা কেমন যেন বিষাক্ত লাগছে। আমার শান্তি সব কোথায় উবে গেছে সেই খুঁজে পাচ্ছি না। আবার আমার অজ্ঞাতবাসের সময় হয়েছে সে বুঝতে পারছি। অরণ্যর সাথে দেখা হওয়ার আগে আমার সারা দিন রুমেই কাটত। ক্লাস থাকলেই কেবল ক্যাম্পাসে যেতাম। খুব বেশি ঠেকা না পড়লে সারাদিন ই রুমের মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছি এমন রেকর্ড ও আমার ছিল। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন বাসায় এসে পৌঁছুলাম খেয়াল ই করি নি। বাসায় ঢুকেই মনে হল ড্রইংরুমের কাউচে কে যেন বসে আছে খুব পরিচিত ভঙ্গীতে।

-Why are you here??
-I thought I could give you a surprise
-I hate surprises. Specially from those whom I’ve already forbidden to come
- Why are you behaving like this? You’ve left your Boyfriend & I’m single. So why don’t you take me?
-Cause I don’t get proper satisfaction from you. You are just a dead body in the bed.
-Please try to understand!! I’ll do my best tonight.
-James! Go n sleep in that room. I don’t wanna see you in my bed again
-As you wish!!
জেমস কে দেখে মনে হল এখন ই যেন কেঁদে ফেলবে। তা কাঁদুক। সেটা তার প্রোবলেম। আমি আমার প্রোবলেম নিয়ে ভাবি। একটা সমস্যা থেকে বাঁচতে গিয়ে আমি উটকো আরো একটা ঝামেলা নিয়ে এসেছি। রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। ওকে বিশ্বাস নাই। কখন কি অঘটন ঘটায় কে জানে! কফিমেকার থেকে কফি নিয়ে বারান্দায় এসে বসলাম। এখান থেকে আইফেল টাওয়ারের চূড়া দেখা যায়। আমাদের অনেক প্রিয় একটা জায়গা ছিল এটা। আমরা কত নির্ঘুম রাত পার করেছি এই বারান্দায় বসে। অরণ্য আর আমি পিঠে পিঠ লাগিয়ে কত স্বপ্ন বুনেছি এখানে বসে। আমি বুঝতে পারছি না আসলে আমার কি হচ্ছে। অরণ্যকে যত ভুলতে চাচ্ছি তত ই মনে পড়ে যাচ্ছে। ওর সাথে প্রথম কাটানো নির্ঘুম রাত। বসে বসে তারা গোনা, আমার সব পাগলামির এক্সপেরিমেন্ট সব কিছুতেই সে মিশে আছে। আমার সত্তার একটা অংশ অরি। বসে বসে সময় গুনছি রাত দুটো হবে এমন সময় মনে হল কেউ দরজা খোলার ট্রাই করে যাচ্ছে। আমি চুপচাপ সাউন্ড বাড়িয়ে গান শুনতে লাগলাম। পিটবুলের হোটেল রুম শেষ হতেই শাফেল হয়ে ব্রায়ান এ্যডামসের একটা গান চলে আসল. . .
You fill up my senses
Like a night in the forest
Like maples in the spring time
Like a walk in the rain
Like a storm in the desert
Like a sleepy blue ocean
You feel up my senses
Come fill me again
Come let me love me you
Let me give my life to you
Let ne drown in your laughter
Let me die in your arms. . . . .
গানটা শুনতে শুনতে চোখ লেগে আসল। ঘুমিয়ে হঠাৎ মনে পড়ল একদিনের কথা, পরদিন অরণ্যর জন্মদিন ছিল। বিভিন্ন কাজে সে নিজেই হয়ত ভুলে গেছিল। আমি হঠাৎ রাত ১১টায় ফোন দিয়ে ওকে আর্জেন্টলি বের হতে বললাম। সে ভয়ে বের হতেই এই কথা সেই কথা বলে ওকে ঝারি মারছিলাম। আর বারটা বাজতেই অকে জড়ীয়ে ধরে উইশ করেছিলাম, আর গাধা টা রাস্তার উপর ই আমায় চুমু খেয়ে বসেছিল। সেদিন দুজন যেন উন্মত্ত হয়ে গেছিলাম। লোকজন সমাজ সব ভয় ভীতি তুচ্ছ হয়ে গেছিল। শুধু মনে হচ্ছিল খোলা আকাশের নিচে আমরা দুজন বাদে অন্য কোন মানুষ নেই। চোখের সামনে কেবল অরণ্যর মুখটা ই ভাসছিল। এটা এতই জীবন্ত যে সপ্ন আর বাস্তবের কোন পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
Main kahi vi jata hoon(Wherever I go)
Tumse hi mil jata hoon(I just met with you)
Tumse hi (Its you)
Shore main khamoosi hain (Silence lies in the crowd)
Thori si beehosi hain (Something that takes away sense)
Tumse hi (Its you)
আমি আর অরণ্য দুজনের ই মিউজিকের প্রতি দুর্বলতা কিছুটা বেশী ই। বিশেষ করে গাগার প্রতিটা গান ই আমাদের অনেক ফেভারিট। গান নিয়ে আলোচনা সমলোচনা করতে করতে কত সময় পার করেছি তার হিসেব নেই। আসলে আমরা কখন কিভাবে সময় পার করেছি কি করি নি তেমন কয়টা ব্যাপার আছে আমরা হাতে গুণে বলে দিতে পারি। এত কিছুর পর ও কেন আমাদের ওয়ার্ক আউট করল না সেটা বুঝলাম না। আসলে ভাগ্য বলে ও একটা ব্যাপার আছে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ওকে কি আমার ফোন দেওয়া উচিত? কিন্তু তাতে আমার ইগো ছোট হয়ে যাবে, আমি সব সময় আমার ইগো কে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি এবার কি তবে তা বিসর্জন দিতে হবে। ভালো লাগছে না কিছু ই। শিট!! সাড়ে আটটা বাজে। এখন ই যদি বের না হই তবে আজ কপালে সত্যি ই দুঃখ আছে। আসলে আমার লাইফে অরণ্য এভাবে আমার লাইফের সাথে জড়িয়ে আছে যে ওকে অস্বীকার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। জানি না কি হবে। আমি পারছি না। কম্প্রোমাইস করে করে আমি যখন ক্লান্ত তখন আমার জীবনটাকে সজিয়ে দিয়েছিল সে। আবার একা হয়ে ই ওর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছি। জেমস গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। কাল রাতের কথা ওকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে চুপচাপ অফিসে চলে আসলাম।

লাঞ্চ আওয়ার চলছে। বসে বসে অরন্যকে মিস করছি। এম সময় একটা ফোন আসল. . .
-Hellow, Mr. Chowdhury?
-Yep!
-I’m Gorge from the orphanage. You asked for a girl to adopt.
-Yeah! I’ve started the procedure. So can you give me any update?
-We collected almost all the needed information of you & your partner. It has satisfied the board and they are ready to allot you a girl. But tomorrow you’ve to come along with your partner to compleat the procedure.
-Okey. Then we’ll se you after the lunchon.
-Well, Good luck.
আমার দেখা সর্বশেষ স্বপ্ন একটা বাচ্চার। যে আমার চোখের সামনে বড় হবে আমাকে বাবা বলে ডাকবে। এই স্বপ্নের দোর গোড়ায় এসে এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না আমি। ইগো এ্যরোগেন্সি সব ভুলে আমি অরণ্য কে কল করলাম
-কি রে!! চব্বিশ ঘন্টা না যেতেই যে ফোন দিয়ে বসলি?
-I need your help. . .
-গতকাল ই তো বললি যে আমাকে তোর লাগবে না। হঠাৎ?
-অরি প্লিস হেল্প মি। আমি আমার একটা স্বপ্ন কে পূরণ করতে চাই। আমার বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন দরকার!!
-যাই বলিস আমি আর ব্যাক করছি না। এটা সম্ভব না।
অরি, এটা শুধু আমার স্বপ্ন না। এটা আমাদের স্বপ্ন। এটা পূরন করতে হলে আমাদের দুজঙ্কে ই দরকার।
-ক্লিয়ারলি বল তো কি বলতে চাস!
-অরফানেজ থেকে কল এসেছিল। তারা আমাদের একটা মেয়ে এডপ্ট করার চান্স দিয়েছে। তুমি না থাকলে পিচ্চি এরিয়েলের স্বপ্ন আমার অপূর্ণ ই থাকবে। আমি তোমার কাছে এই লাস্ট একটা অনুরোধ করছি প্লিজ অরি।
-তোর কি মনে হয় না একটা বাচ্চা মেয়ে এরকম ঝগড়া দেখে বড় হলে তা ওর মনে বাজে প্রভাব ফেলবে? আমরা একসাথে থাকলে ঝগড়া হবে ই। সো এটাই ভাল আমরা আমাদের নিজেদের মত থাকি।
-অরন্য, ফর গডস সেক আমি আর পারছি না। আমাকে প্লিজ লাস্ট একটা চান্স দাও। আই উইল মেক এভ্রিথিং ফাইন!
-ওকে। লেট মি থিঙ্ক। যদি আমার মনে হয় যে তুই সব ঠিক করতে পারবি তাহলে আমি কাল দুপুরে তোর অফিসে আসব। এর আগে আমাকে কল দিবি না। আমার যদি মনে হয় তুই সত্যি ই চেঞ্জ হতে পারবি সে ক্ষেত্রে ই আমি ব্যাক করব নয়তো নয়।
-কিন্ত. . .
-কাল লাঞ্চ টাইম। ওকে? টা টা
অরণ্য কি তবে ব্যাক করবে? নাকি এভাবে বাকি জীবন আমার একা ই থাকতে হবে। আচ্ছা, অরণ্য যখন আসবে তখন কি হবে? যখন এরিয়েল কে কোলে নিব তখন কি হবে? অরণ্য যদি না আসে? ওর রাগ যদি না ভাঙ্গে! ধুর ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আর তো মাত্র একটা রাত। আমার জন্য এটাই সবচে বড় রাত হবে। এইবার নাহয় একটা কমিটমেন্টেই জড়িয়ে নিব ওকে। এক রাতের অপেক্ষা কেবল!!ঘড়ি কি নষ্ট হয়ে গেল? এত আস্তে চলছে কেন???
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×