এদেশে বিরোধীদল-বামদলের হরতাল করতে দেয়া হয়না। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে হরতাল করতে দেয়না। সরকারের একান্ত অনুগত পুলিশবাহিনী একেবারে খ্যাদায়ে দেয় সবাইকে তখন। কিন্তু যখন এইরকম সরকারকে, মহামান্য আদালতকে অবমাননা করে নৈরাজ্য চলে তখন তাদের কিছু করার নাই। সরকার থেকে মিনমিন করে বলে আমরা এর নিরসনের চেষ্টা করছি কিন্তু সরকারের মন্ত্রীই 'সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন' অর্থাত্ যারা এই নৈরাজ্য করতেসে তাদের কার্যনির্বাহী সম্পাদক। অন্যদিকে এখন এই যারা ধর্মঘট ডেকে দেশকে স্থবির করে দিসে, জনগণকে জিম্মি করে রাখসে, এই তারাই গতপরশু বামমোর্চার গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে হরতাল বাধা দিসে, বলে এমন হরতালে দেশের অর্থনীতির চাকা থেমে যায়।
এখন আবার আমাদের সাধারণ জনগণেরই একদল অতিআবেগ দেখায়ে বয়ান ছাড়তেসে যে, "একটা অনিচ্ছাকৃত দূর্ঘটনার জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া যায়না। আমরা ধর্মঘট সমর্থন করি।" আরে ভাই আপনারাতো পুরা ঘটনাই জানেননা। এই ধর্মট হইতেসে সম্পূর্ণ একটা ইচ্ছাকৃত হত্যাকান্ডের বিচার হইসে, তার বিরুদ্ধে। অর্থাত্ একজন হত্যাকারীর সাপোর্টে আদালতের অবমাননা করে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করতেসে। সাভারে মাটিকাটা ট্রাক বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ঐ বাড়ির কর্তা-কর্ত্রী যেয়ে নিয়েধ করে দাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ট্রাক নেয়া যাবেনা। ড্রাইভার চেতে ঐ স্বামী-স্ত্রী দুইজনের উপরই ট্রাক চালায় দেয়। স্বামী সরে যেতে পারলেও স্ত্রী তা পারেনি। সে সেখানে ট্রাকের নিচে পড়ে মারা যায়। এজন্য ঐ ড্রাইভারকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। আর এর বিরুদ্ধে ধর্মঘট ডাকা হইসে। এটাকে আপনারা দূর্ঘটনা বলবেন নাকি অনিচ্ছাকৃত বলবেন?
আর এর আগে যে তারেক-মুনির হত্যার জন্য যাবজ্জীবন দেয়া হইসে সেটার রায় বিজ্ঞ আদালত আইনের ধারা অনুযায়ীই দিসে, অতিআবেগী হয়ে সেই রায় দেয়নাই।
এখন এই রায়ে ভিত হয়ে আন্দোলনে নামসে আমাদের পরিবহণ শ্রমিকেরা যাদের ড্রাইভারদের ৮০% ই মাদকাসক্ত এবং গাড়িও চালায় মাদক গ্রহণ করে, ট্রাফিক রুল্স না মেনে, ভূয়া লাইসেন্স নিয়ে। তাদের রায়ে সমস্যা থাকলে এই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করারও সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে তারা যা শুরু করসে তা সোজা কথায় নৈরাজ্যবাদ ছাড়া আর কিছুনা।
এখন আসে এতে আমরা সাধারণ জনগণেরা কেমন ভূমিকা রাখতেসি সেটা। ব্যাপরটা হইলো আমরা দুর্ভোগ পোহাবো ঠিকই, মুখে-ফেসবুকে-টকশোতে বয়ান ছাড়বো ঠিকই, কিন্তু প্র্যাক্টিকালি কিছু করার সময় আমরা নাই। এক অর্থে সবসময় জিম্মি হয়েই থাকতে চাইবো এমন কারো না কারো দ্বারা। আজকে এরা কালকে ওরা, বিভিন্ন রকমের অপশক্তি নিজেরা এক হয়ে দেশটারে ছিড়া খাবে। কিন্তু আমরা সেই চিরাচরিত নন্দলাল মার্কা আচরণই করে যাবো। কারো মাঝে নাই কোনো সাহস, জাতীয় ঐক্য, দেশপ্রেম বা এর বহিঃপ্রকাশ কিংবা নিঃস্বার্থপরতা।
হয়তো এখনকার সমস্যার নিরসন হবে একসময়, কিন্তু এরপর আবার এমন কোনো সমস্যা কয়দিন পর আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবে কেউ? কখনো কী আমরা পুরাপুরি স্বাধীন হতে পারবো? আমাদের নিয়ে পুতুলখেলার শেষ কবে? কবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শ্বাসন? আদৌ কী কখনো আমরা এক হয়ে নতুন কোনো ভালো শক্তির অভুদ্যয় ঘটাতে পারবো, যা অপশক্তিগুলাকে দেশ থেকে বিলিন করে দিবে? এই কয়দিন পর পর নতুন ইস্যুর আগমনের শেষ কবে?!
[ছবিগুলি সংগৃহীত]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৮