somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"তরী আর চন্দ্রালোকের নীল ডায়েরী" শেষ পর্ব

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বের লিন্ক
"তরী আর চন্দ্রালোকের নীল ডায়েরী"
:
:
"আবির আর চন্দ্রার পরিচয় হয়েছিল একুশের এক বইমেলায় আজ থেকে প্রায় ছাব্বিশ বছর আগে। চন্দ্রার তখন ষোল আর আবিরের আঠারো। সেখান থেকেই ওদের ভালোলাগা, ভালোবাসার শুরু। ভালোবাসার সাথে শুরু হয় কত রকমের পাগলামি। এক সাথে ভোর দেখা, সুর্য্য ডোবা দেখা, কদম ফুলের মালা গাথা.. রাত দুটায় চুপি চুপি ছাদে বসে জ্যোৎস্না দেখা। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আইসক্রিম খাওয়া, বৃষ্টিতে ভিজে প্রথম চুমু খাওয়া। আরও কত রকমের মিস্টি পাগলামিতে ভেসে যাওয়া! প্রতিদিন একবার দেখা বা কথা হওয়াটা দুজনের যেন অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়। হোক সেটা ছাদে বা রাস্তায় বা ১০ সেকেন্ড এর জন্য হলেও দেখা বা কথা যেন হতেই হবে।

দেখতে দেখতে কিভাবে যেন দুবছর চলে যায়। চন্দ্রা যখন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখন আবির ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পড়তে ইন্ডিয়ার ব্যাঙ্গালোরে এ ভর্তি হয়। দুজন দুজনকে ছেড়ে এতো দুরে কিভাবে থাকবে এই ভেবেই যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে। এমনি এদের ব্যাপারটা চন্দ্রার বাবা একদম মেনে নেয়নি। কিন্তু কিভাবে থাকবে দুজন দুজনকে ছেড়ে..। এই বয়েসটাই কেমন জানি... মানুষ এমন সব দুঃসাহসের কাজ করে বসে যা হয়তো অনেক ম্যাচুউরড মানুষও করতে পারেনা।

ইন্ডিয়া যাবার আগের দিন চন্দ্রা আর আবির একটা দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলে। ওরা কাজি ওফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে। তারপর বিকেলে যে যার বাসায় চলে যায়। কথা ছিল পরাশুনা শেষ করে দুজোন দুজনের পরিবার কে জানাবে। কত স্বপ্ন চোখে কত ভাবনা... এমনকি ওদের কোল জুড়ে যে মেয়ে আসবে তার নাম ও ঠিক করে ফেলে: "তরী" জাফরিন জারা তরী। কিন্তু আবিরের আর পড়াশুনা করার জন্য ইন্ডিয়া যাওয়া হয়নি..। বিয়ের পর বাসায় যাবার পথেই সে রোড এক্সিডেন্ট করে। আবিরকে যখন হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও ওর জ্ঞান ছিল। মাকে মারা যাবার আগে ওদের বিয়ের ব্যাপারটাও বলে যায়। তখন মোবাইল ছিল না। আনালগের যুগ। চন্দ্রা যখন আবিরের এক্সিডেন্টের খবর পায় তখন রাত দুটো বাজে। আবিরের মা ফোন করে চন্দ্রার বাবার সাথে প্রথমে কথা বলে সব ঘটনা জানায়। চন্দ্রার রাগী বাবাটা ঘটনা শুনে বাচ্চাদের মত হয়ে শোকাতুর হয়ে গেলো। মেয়েকে ঘুম থেকে আলতো করে ডেকে বলে,"চন্দ্রা ওঠো, তোমার ফোন এসেছে।" চন্দ্রা এত রাতে বাবার ডাকে উঠে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আবিরের মা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
" মাগো, তুমি কি আমার ছেলেটাকে একবার দেখতে আসবে?" চন্দ্রা কি বলবে কিছু বুঝার আগেই বাবা চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে বলে," আয় মা! তোকে আমি নিয়ে যাচ্ছি।" চন্দ্রার মা ততখনে জ্ঞান হারায়। বাসার লোকজন উনাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

রিক্সায় উঠে পুরো রাস্তা বাবা চন্দ্রার হাত শক্ত করে ধরে রাখে। সে রাতে পুর্নিমার তোরে পুরো শহর যেন ভেসে যাচ্ছিল। শুধু চন্দ্রাকেই যেন পুর্নিমার আলো স্পর্শ করার সাহস হয়নি। হসপিটালে চন্দ্রা আবিরের পায়ের কাছে বসে পা জড়িয়ে সারারাাত পাথর হয়ে বসে থাকে। এরপর বাসায় ফিরে ওর তিনদিন কোন জ্ঞান ছিল না। আবির মারা যাবার প্রায় দু বছর পরও স্বাভাবিক হতে পারেনি। শুধু ভরা পূর্নিমার রাতে ছাদে গিয়ে চাদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো আর কি যেন খুজতো।

এর প্রায় পাঁচ বছর পর আবিরের বন্ধু রাশিদের সাথে চন্দ্রার বিয়ে হয়। রাশিদ আবিরের বন্ধু হলেও চন্দ্রাদের পাড়াতেই থাকতো। ছোট থেকেই চন্দ্রাকে পছন্দ করতো কিন্তু কখনো বলার সাহস পায়নি। রাশিদ সব জেনে শুনেই চন্দ্রার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। ওদের বিয়ে হয়।

তরী ডায়রিটা বন্ধ করে আবার আকাশের দিকে তাকায়.... পুর্নিমার রুপালি আলোর ছটায় আজকেও যেন পুরো শহর ঝলসে যাচ্ছে... পুরো শহরেই যেন চন্দ্রালোকের কেমন জানি একটা মায়া লেপ্টে আছে.... জোৎস্নার আলো জানালার গ্রীল বেয়ে গলে গলে তরীর ঘরে এসে ঠিকরে পড়ছে। সেই আলোয় ভিজে যাচ্ছে তরীর হাতে রাখা মায়ের নীল ডায়েরীটা। তরীর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আবার। তরী সেই ঝাপসা চোখে আবার আকাশের দিকে তাকায়।জ্যোৎস্নানীলে মায়ের জমে রাখা নীলকষ্ট গুলো আবার খুঁজতে চেষ্টা করে। আচ্ছা মা ও কি আজ জ্যোৎস্না দেখছে? মা কি আজও সেই আগের মত জ্যোৎস্নানীলে মুখ লুকিয়ে কাঁদে আর অপেক্ষা করে সেই প্রিয় মানুষটির জন্য, যার সাথে চন্দ্রজলে গা ভাসিয়ে একদিন স্বপ্ন দেখেছিলো ভালবাসার নীলকাব্য লেখার, স্বপ্ন দেখেছিলো একটা ছোট্ট সুখের সংসার আর তরী নামের একটা ফুটফুটে রাজকন্যার।

দুরের কোন ফ্লাট হতে রবি বাবুর একটা গান ভেসে আসছে...। তরী কান পেত গানের কথাগুলি শোনার চেস্টা করে...। আর নিজের অজান্তেই কখন যেন ওর চোখ বেয়ে নীলকস্ট গুলি টপ টপ করে ঝড়তে থাকে....


তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে যত দূরে আমি ধাই—
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই॥
মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় হে দুঃখের কূপ,
তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ আপনার পানে চাই॥
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব আছে আছে আছে—
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন কাঁদি তাই।
অন্তরগ্লানি সংসারভার পলক ফেলিতে কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার রাখিবারে যদি পাই॥

তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে যত দূরে আমি ধাই—
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই....
তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে যত দূরে আমি ধাই.....
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×