somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের স্বাধীনতা তো কোন নষ্ট জন্ম নয়.... শকুনের ছায়া এর উপর থেকে সরে না কেনো???

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-------------------------------------------------------------------------------
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে...
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা - একি হবে নষ্ট জন্ম ?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?

জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।

বাতাশে লাশের গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ -
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমুতে পারিনা ...

রক্তের কাফনে মোড়া - কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার - স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন -
স্বাধীনতা - আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।

বাতাসে লাশের গন্ধ / রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
--------------------------------------------------------------------------------

বিজয় দিবসের দিনে প্রতিবেশী বেড়াতে এসেছিলো পিচ্চিকে সাথে নিয়ে... পিচ্চির গালে আঁকা পতাকা, মাথায় বাঁধা পতাকা... খুব ভালো লাগলো, বললাম আম্মু বলোতো আজকের দিনটা কি...পিচ্চি হা করে তাকায় আছে, বিজয় দিবস কি সেইটা বোঝানোর চেষ্টা করলাম, মা এসে বলে আরে ধুর এতটুকু বাচ্চা ও কি বুঝে এইসব.... একটু পরে শুনলাম পিচ্চি নাকি কোন প্যাকেজ নাটকে অভিনয়ের চান্স পেয়েছে, মা ওরে ফটোসেশন করাতে নিয়ে গিয়েছিলো.... পিচ্চিরে বললাম কার সাথে নাটক করার শখ, তড়িৎ উত্তর - অপুর্ব... এতটুকু বাচ্চা স্বাধীনতা বোঝে না, দেশ বোঝে না তাকে আমরা এগুলো না বুঝিয়ে অপুর্ব আর শাহরুখ বুঝিয়ে ফেলেছি... বাহ...

এতসব প্যাঁচাল অনেক মন খারাপ ভাব থেকে... চারপাশে নষ্টদের নগ্ন উল্লাসে চক্ষু কর্ণ ঝালাপালা... সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে, আম্মার মুখে শোনা স্বাধীনতার গল্প... অমিতাভ আর মাধুরীকে চেনার আগে দেশকে চেনার গল্প... বিহারীর বাসার কাজের ছেলের ভয়ে এপ্রিলের কোনো এক রাতে ঢাকা ছাড়ার গল্প, রাজাকার আর আর্মীর অত্যাচারে সবকিছু হারানো, লাইনে দাঁড়িয়ে গুলি খেয়ে বেঁচে যাওয়া এক মানুষের গল্প, শহরের বাড়ির অবস্থা দেখতে রাস্তায় নামা এক কিশোরের লুঙ্গি খুলে ধর্ম পরিচয় দেখানোর গল্প.... ডোবার পঁচা পানি খেয়ে বেঁচে থাকা একদল রিফিউজির গল্প... যশোর রোডের গল্প, স্বাধীনতা পরবর্তী সব হারিয়ে ফেলা এক পরিবারের দূর্দশার গল্প, যুদ্ধের মাঠে গায়ে উকুন ধরে যাওয়া এক মুক্তিযোদ্ধার গল্প.... বিপথে যাওয়া আরেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের শোচনীয় পরিণতির গল্প.... এসবের চরিত্রগুলোকে নিজের চোখে দেখেছি আসেপাশে, শিউরে উঠেছি এই পরিচিত মানুষগুলোই সেই সময় কি অবর্ননীয় কষ্টে সময়গুলো কাটিয়েছে.... ঠাকুরমার ঝুলির আগে এগুলা জেনেছি, দুই কিশোরীর লুকিয়ে ছাদে উঠে ডিসেম্বরের রাতে ঢাকার আকাশে বিমানের আনাগোনার দেখার গল্প শুনে রাতে ঘুমিয়েছি.....

খুব অসহায় লাগে যখন দেখি কেউ আর এসব শুনতে চায় না....বাচ্চাদের জন্য হাজারটা কমিকস আর গল্পের বই এর ভীড়ে এসব আর চলে না.... ব্যার্থতার আক্রোশে বসে থাকি যখন দেখি এখনও কিছু মানুষ তাদেরই মতো কিছু মানুষরুপী পশুকে পশু বলে স্বীকার করতে চায় না.... সমাজের উচ্চ স্তরের লোকজনেরাও এড়িয়ে যায়, কবিরাও পশুদের কাছে আত্মা বিক্রী করে বসে থাকে..... নীতি নির্ধারকরা আশা দেখিয়ে বসে থাকে..... থাকুক সবাই বসে, আমার বলার আমি বলে যাই... উপর তলার পিচ্চি আরেকদিন বাসায় এসেছিলো, ওরে আধা ঘন্টা গল্প শুনিয়েছি... আম্মারা পালিয়ে যাবার সময় বাসার শখের অ্যালসেসিয়ান কুকুরটা পিছে পিছে অনেকদূর দৌড়ে এসেছিলো.... এইখানে এসে থেমে গেছি, দেখি বাচ্চাটার চোখ ছল ছল করে উঠেছে..... ইস একটা কুকুরের দু:খে বাচ্চাদের চোখে জল আসে, এইরকম হাজারটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে কিভাবে বেয়োনেটে, পায়ে দলে ওরা মারতে পেরেছিলো কে জানে.... আমরা আবার ওদের সাফাই এখনো গাই.... ইনিয়ে বিনিয়ে.... মাঠে ময়দানে এমনকি ব্লগেও....

অনেকদিন আবৃতি শুনি না, কাল রাতে টিভির চ্যানেল বদলাতে বদলাতে হটাৎ রুদ্রর কবিতাটার আবৃতি শুনছিলাম, পূরানো একটা পোষ্টের কথা মনে পড়ে গেলো.... সামহোয়ারইনের কিছু জঘন্য কমেন্টের কথাও মনে পড়ে গেলো....

লাল সবুজের পতাকা খামচে ধরা নষ্ট শকুনগুলো আর কতদিন আমাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে থাকবে কে জানে.....
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:২৬
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×