"আপু কি বলছ এসব?" সেই মানুষটাকে ভালবাসার সুযোগ করে নেয়ার ক্ষীণ আশা নিয়ে আপুকে প্রশ্ন করলাম। যদিও আশাটা অবান্তর এবং অযৌক্তিক।
"ঠিকই বলছি, তুই বড় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস কর?"
ভাইয়া সবসময় আদিবকে সাপোর্ট করে এসেছে এমনকি আমরা যখন সম্পর্ক চুকে দিচ্ছিলাম তখনও বলেছে আদিব খুব ভাল ছেলে।
"ভাইয়া আপু কি বলছে?"
"হ্যাঁ, তোকে ছবিগুলো দেখালেই বুঝতে পারবি।"
"ওর ছবিতো আমি দেখতে চাই না।"
"দেখ না!"
"দেখলাম, তো কি হয়েছে?"
"ছবিতে ওর ব্যবহার কি নরমাল মনে হচ্ছে তোর?"
আপু যোগ করল, "তুই একেই বিয়ে করতে চেয়েছিলি। ভাগ্যিস শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি!"
এখনই আমার ওর পক্ষে সুপারিশ করার সুযোগ যদিও আশা রাখা ঠিক নয়। "আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম আপু কখনোই আদিবের পক্ষ টেনে কথা বলবেনা কারন আমাদের বিয়েটা হোক তা চায়নি। কিন্তু ভাইয়া আজ তুমিও সবসময় যার গুণগান গেয়ে এসেছ আজ তাকে পাগল মনে করছো?"
"নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করতে পারিনা।"
"ফান করে কি এরকম ছবি কেউ তুলতে পারেনা?"
"ফান করে তোলা ছবি আর পাগলের ছবির মধ্যে পার্থক্য আছে!"
এখন বুঝতে পারছি ওদেরকে বুঝানো অসম্ভব। আমি জানি আদিব ফানই করছিল। সেই ফাঁকেই ওর ফেন্ড ছবি তুলে পোস্ট করেছে। কিন্তু আমি আর ওদের কথাগুলো সহ্য করতে পারছিলাম না। খাবার শেষ না উঠে বাইরে চলে এলাম। আপু আমার পিছু পিছু আসলো আর ভাইয়াও বিল মিটিয়ে এসে আমাদের সাথে হাটছে। বাস স্টপটা একটু দূরে তাই হাটতে হচ্ছে। বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দিব। মন খারাপ হয়ে গেলে আমি খুব বেশি করে ঘুমাই। এতদিন মনে মনে একটু শান্তি পেতাম যে অন্তত ভাইয়া কখনো আদিবকে নেগেটিভ ভাবে দেখেনি। মা-বাবা চায়নি বলেই আমার বিয়েটা হয়নি।
এইসব চিন্তা করতে করতে আমি অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছি বুঝতে পারছি। ইচ্ছে করছে রাস্তার মাঝখানে গিয়ে দাড়াই আর কোন একটা বাস অথবা ট্রাক এসে আমাকে পিষে যাক রাস্তার সাথে।
কিছুদূর হাটার পরেই বাঁচার সাহস পেলাম। রাস্তার অন্যপাশ দিয়ে আদিব হাটছে। যা হয় হবে, আজ আমি ফ্যামিলির কারো মতমতকে প্রাধান্য দিবনা! আমি আদিবকে ভালবাসি এবং বিয়ে করব আদিবকেই! এটাই ফাইনাল সিদ্ধান্ত। সারাজীবন তো অন্যের সিদ্ধান্তে চলেছি। এইবার নাহয় আমি মেরুদন্ড সোজা করে দাড়ালাম।
আদিবকে দেখলেই আমি কিছুটা হিপনোটাইজড হয়ে যাই। অদ্ভূত হলেও এটাই সত্যি। কখনো বিশ্বাস করতাম না সম্মোহন জিনিসটাকে! কিন্তু আদিবকে যেদিন প্রথম দেখলাম সেদিন থেকেই নিজে সম্মোহিত হয়েছি।
আর কয়েক কদম বাকি। তারপরেই আমি আদিবের হাত ধরব চিরদিনের জন্য। যত ঝঞ্ঝাই আসুক ওর হাত আমি কখনোই ছাড়বো না!
আমি আদিবকে ডাক দিলাম। হঠাৎ প্রচন্ড একটা ধাক্কা মাথায় লাগলো। মনে হচ্ছে মাথার খোল অর্ধেকটা খুলে পরে গেছে। তরপর চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিনা; সব অন্ধকার হয়ে আসলো। শুধু শুনতে পেলাম আদিবের ডাক, "পরী!"