এই পোস্টটি রাজীব নুর ও সত্যপথিক শাইয়্যান এর সাম্প্রতিককালের চাঁদগাজী বিষয়ক পোস্টের প্রতিউত্তর জাতীয় কিছু ভাবা যেতে পারে। অনেকে বলতে পারেন আলাদা পোস্ট না দিয়ে রাজীব- বা সত্যপথিক-এর পোস্টে মন্তব্য আকারে দিলে কী সমস্যা ছিল! আইডিয়ালি, তাই করা উচিত ছিলো। কিন্তু, আমার ব্যক্তিগত অবজারভেশন হচ্ছে, আপনি খুব খেঁটে, সময় নিয়ে রাজীব- বা সত্যপথিক-এর পোস্টে কোন মন্তব্য করবেন, তারা বিশাল তালগাছটা নিজেদের কোলে নিয়ে বসে থাকবেন, এক লাইনে আপনার মন্তব্যের জবাব দিয়ে দেবেন এবং সেই জবাব পড়ে আপনার মনে হবে "ধুর্ছাই!!"
চাঁদগাজী নামক নিকটি সপ্তাহ দু'য়েক হবে ব্লগে অনুপস্থিত। আপাতদৃষ্টিতে প্রথমে মনে হয়েছিল নিকটিকে "সুলেমানী ব্যান" করা হয়েছে - মানে নিক, লেখা সহ তার ব্লগের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নাই করে দিয়েছেন কতৃপক্ষ। যাহোক, সম্ভবত নিকের লেখাগুলো ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা কতৃপক্ষ ভালো করেছেন বলে মনে হয়। ব্লগার হাসান মাহবুব রাজীবের এক পোস্টে লেখাগুলো ফিরিয়ে দেবার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
চাঁদগাজী নিকটি ব্যান হবার পর আমরা রাজীব- ও সত্যপথিক-এর কিছু পোস্ট দেখেছি [পোস্ট লিংকঃ লিংক ১, লিংক ২, লিংক ৩, লিংক ৪] যার মূল বক্তব্য নিকটিকে অন্যায়ভাবে ব্যান করা হয়েছে এবং নিকটি ফিরিয়ে দেয়া উচত (ব্যান তুলে নেয়া উচিত)। রাজীব এর কাছ থেকে এই ধরণের পোস্ট আসাটায় অবাক হওয়ার কিছু নেই -- দীর্ঘ এক যুগের ব্লগ জীবনে রাজীব যদি কারো কাছ থেকে অ্যাটেনশন বলে কিছু পেয়ে থাকেন তা পেয়েছেন চাঁদগাজীর কাছ হতেই। রাজীবের লেখা চুরি নিয়ে যখন ব্লগ-এ অন্যরা সমালোচনা মুখর তখনও চাঁদগাজী রাজীবের পাশে থেকেছে এবং রাজীবের অন্যায় চৌর্যবৃত্তিকে সমর্থন দিয়েছে। সত্যপথিক-এর সাপোর্ট নিয়ে আমার সহ কিছু ব্লগারের মনে কিছুটা ধোয়াঁশা থাকলেও ব্লগার সোহানীর দেয়া এক স্ক্রিনশট থেকে (মন্তব্য ১০ দেখুন) আমরা ধরে নিতে পারি ব্লগের বাইরে সত্যপথিক ও চাঁদগাজীর একটা বোঝাপরা ছিলো যে তারা কেউ কাউকে ঘাটাবেনা, একজন আরেকজনকে সমর্থন দেবে।
রাজীব ও সত্যপথিক ছাড়াও অনেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পোস্টে মন্তব্যের মাধ্যমে জানিয়েছেন তারা চান চাঁদগাজী ফিরে আসুক [এই লিংকগুলোর মন্তব্য দেখুনঃ লিংক ১, লিংক ২, লিংক ৩, লিংক ৪]। যারা চাঁদগাজীর ব্যান তুলে নেয়ার কথা বলেছেন তাদের কিছু কমন যুক্তি আছে। যেমনঃ চাঁদগাজী মুক্তিযোদ্ধা-দেশপ্রেমিক; চাঁদগাজী প্রবীন; চাঁদগাজী সবার পোস্টে মন্তব্য করে; চাঁদগাজী ব্লগ ভালোবাসে; চাঁদগাজী না থাকলে ব্লগ শেষ ইত্যাদি... ... এই বিষয়গুলোর প্রেক্ষিতে আমার কিছু বক্তব্য নিচে তুলে ধরলামঃ
-- কেউ যদি সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা হন তা তাঁর বচনে-করণে, মন্তব্যে-প্রতিমন্তব্যে, মানুষের প্রতি সন্মান দেখানোয় এমনিতেই বোঝা যায়। জাতীর সূর্য সন্তান একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি ব্লগে মননশীলতার পরিচর্যা করবেন তিনি অন্য ব্লগারদের বুলি করতে পারেননা। তিনি ব্লগে মাস্তানের মত আচরণ করতে পারেননা। চাঁদগাজী ঠিক তাই করেছে!
-- একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি নাকি আবার পিএইচডি করেছেন, টিচিং করেছেন, এবং আমেরিকাতে বসবাস করেন তিনি কোনভাবেই চৌর্যবৃত্তির স্বপক্ষে কথা বলতে পারেন না। চাঁদগাজী রাজীবের লেখা চুরি বিষয়ে কখনোই বলেনি রাজীব ভুল করেছেন। বরং, সে রাজীবকে সাপোর্ট করেছে।
-- আমরা কেউ চাঁদগাজী নিকটির সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ পেছেনর মানুষটিকে দেখিনি। এবং, কথা হচ্ছে দেখার প্রয়োজনও নেই। কারণ একজন ব্লগার ছেলে না মেয়ে, বয়ষ্ক না কিশোর-কিশোরী তা কোনভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু, যখন প্রবীন হওয়টা কেউ নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে চায় তখন প্রশ্ন আসে চাঁদগাজী নিকটির পিছনের মানুষটিকে কি আমরা আসলেই চিনি! সে কি আসলেই প্রবীন; সে কি আসলেই একজন মুক্তিযোদ্ধা! কেউ প্রবীন দাবী করলে বা কেউ মুক্তিযোদ্ধা দাবী করলে তাঁকে সন্মান দিতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু, যদি কেউ এই পরিচয়ে কোন সুবিধা নিতে চায়, তার বিষয়ে আমি আরো জানতে চাইতেই পারি।
-- ব্লগিং মানে শুধু লেখা-লেখি করাই না। মন্তব্য হচ্ছে ব্লগের লেখার প্রাণ। ব্লগের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে মন্তব্য করা-পাওয়া-জবাব দেয়া-জবাব পাওয়া। চাঁদগাজী প্রায় সব লেখায় মন্তব্য করতো। এটা খুব ভালো জিনিস। কিন্তু, মন্তব্য করতে গিয়ে সে অন্যান্য ব্লগারদের বুলি করতো ও ব্যক্তিগত আক্রমন করতো যা স্পষ্টতই ব্লগ নীতিমালার বাইরে। সে অহেতুক-অপ্রাসংগীক মন্তব্য করতো এবং মন্তব্যে স্পামিং করতো যা খুবই বিরক্তিকর।
দিন শেষে চাঁদগাজী একটা ব্লগ নিক যার পিছনে আছে একজন ব্যক্তি। যে ব্যক্তি হতে পারে একজন তরুন; হতে পারে একজন বৃদ্ধা নারী; এমনও হতে পারে চাঁদগাজী নিকটি রাজীব নুরেরই। সেই ব্যক্তি অনেক কিছুই হতে পারে যা আমরা জানিনা -- আমি জানতে চাইছিও না। সবার মনে রাখা উচিত সামহোয়ারইন দেশের সবচেয়ে বড় বাংলা ব্লগ। অনেক ঝড়-ঘাত-প্রতিঘাত সামলে টিকে থাকা একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। একজন চাঁদগাজী সামহোয়ারইন কে টিকিয়ে রেখেছে; একজন রাজীব সামহোয়ারইন থেকে চলে গেলে ব্লগ ধসে পরবে এমন যারা ভাবে তাদের জেনে রাখা উচিত ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান অনেক বড়।
পদটীকাঃ
একঃ এই পোস্ট কোন তথাকথিত ক্যাচাল পোস্ট নয়। পোস্টে প্রসংগক্রমে দু-চার-পাঁচজন ব্লগারের নাম এসেছে। তাদের নাম আমি সরাসরি উল্লেখ না করে আকারে ইংগিতে করতে পারতাম। কিন্তু, সেটা করলে পোস্টকে অর্গানিক মনে হতোনা। তাই সরাসরি নামোল্লেখ করেছি। যদি কতৃপক্ষের বা কোন ব্লগারের আপত্তি থাকে, আমাকে জানাবেন। আমি ব্যবস্থা নেবো।
দুইঃ ইদানিং একটা জিনিস খেয়াল করছি, কেউ মন্তব্য করলে, এবং সেই মন্তব্যের লেখা পছন্দ না হলে কেউ কেউ ব্লগের পরিসংখ্যান নিয়ে টান দেন। এটার কারণ আমি বুঝিনা। কেউ গত ১২-১৫ বছর এর লাথি ওর গুতো খেয়ে টিকে থাকলেও যেহেতু সে পুরোনো ব্লগার সেহেতু তার কথার মূল্য আছে। নতুন ব্লগারের বা যে কখনো পোস্ট করেনি তার লেখার বা মন্তব্যের বা বক্তব্যের কোন দাম নেই!!
ছবি
আ.র.ইউ
বিকেল ৩:৫২
জানুয়ারী ১৩, ২০২২
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৪৮