somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদ্দিউ নতিম কিংবা মতিন উদ্দিন

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের একটি দৃশ্য

নাটক তো বিনোদন! বিনোদন মানে হাসি-আনন্দ! তাইতো নাকি? তবে যে নাটক হাসি তৈরি করে না, শেষপর্যন্ত তীব্র এক বেদনাবোধের জন্ম দেয় আর তাই অনিচ্ছায় বহন করে ফিরতে হয় বাড়ি সেই নাটক কি বিনোদনের শর্তপূরণ করল? যাক সে কথা। বলছি ম্যাড থেটার’র প্রথম প্রযোজনা নদ্দিউ নতিম’র কথা। ৩০ অক্টোবর ২০১৫, সন্ধ্যা ৭টায় ঢুকলাম জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটারে। ক্ষুদ্র আনুষ্ঠানিকতা শেষে নাটকের শুরু। হুমায়ুন আহমেদের কে কথা কয় উপন্যাস অবলম্বনে এটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। অভিনয়ও করেছেন। মঞ্চে সাদা প্যান্ট আর আকাশী রঙের শার্ট পরিহিত আসাদের সূচনা অংশের অভিনয় দেখে মনে মনে হতাশার জন্ম হবে হবে যখন তখন কেমন করে যেন মোড় ঘুরে যায়। অজান্তেই লক্ষ করি নাটকটি আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়েছে। কাল্পনিক উজবেক কবি নদ্দিউ নতিম আর মানসিক প্রতিবন্ধী কমল চরিত্রে মেঘদূত ক্রমশ ভেতরে সেঁধিয়ে যেতে থাকে। টানা দুইঘণ্টা ধরে চলে অবিরাম চিন্তা আর প্রতীক্ষার খেলা। মুনা চরিত্রে সুবর্ণাও উৎরে গেছেন। তবে তাঁর কণ্ঠের প্রজেকশন আরো একটু বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে। পোশাক পরিবর্তনের সঙ্গে সময় পরিবর্তনকে মিলিয়ে দেয়া কিংবা কিছু অংশ হেঁটেই ভিন্ন ভিন্ন স্থানের নির্দেশ আমাদের কল্পনাপ্রবণতাকে উস্কে দিয়েছে। দর্শকের প্রতি নির্দেশকের এই আস্থা ব্যর্থ হয়নি। দীর্ঘায়তনের উপন্যাসটিকে নাট্যরূপ দেয়ার ক্ষেত্রেও আসাদুলের দক্ষতা উল্লেখ করার মতো। কেননা, পুরো উপন্যাসটিকে মঞ্চে মেলে না ধরলেও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে মনে আসেনি কোনো ঘাটতি।


হুমায়ুন আহমেদ

পৃথিবীতে যুগে যুগে সত্যপ্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ করেছে মানুষ। সক্রেটিস, গ্যালিলিও থেকে শুরু করে ধর্মসম্প্রদায়ের যিশু পর্যন্ত প্রত্যেকেই মানুষের সামগ্রিক মুক্তির জন্যেই নিজেদের প্রাণ দিয়েছেন বিসর্জন। নাট্যের শেষাংশে নদ্দিউ নতিম শিশু কমলের কাছে সত্যরক্ষার জন্য চারতলা ভবন থেকে নিচে ঝাঁপ দেন। হাসপাতালের দৃশ্যে জীবনমৃত্যুর দোলাচলে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ ভঙ্গিকে গ্রহণ করে নির্দেশক সৃষ্টি করেছেন বিষয়টির একটি সার্বজনীন রূপ। আর এরমধ্যদিয়ে কবি হতে চাওয়া সাধারণ মতিন উদ্দিন নিজেকে যিনি উল্টো করে উজবেক কবি নদ্দিউ নতিম বলে দাবি করেন, এক অনন্য উচ্চতায় আরোহন করেন, তিনি নিজেকে প্রকৃতঅর্থেই দাঁড় করান মহানদের সারিতে।
নাটকটি দেখার সময় আশপাশে খানিক উসখুস ছিল বটে। সেটা প্রলম্বিত দীর্ঘায়তনের নাটক দেখার অনভ্যস্ততাজনিত কারণ হতে পারে। অবশ্য কিছু কিছু অংশ ছেঁটে নাটকটির আয়তন খানিক কমানোর সুযোগ রয়েছে। এলি গোল্ডিং-এর লাভ মি লাইক ইউ ডু শীর্ষক ভায়োলিনের মিউজিকসহ অপরাপর মিউজিক নিয়ে আর একটু ভাবনাচিন্তা প্রযোজনাটির মান বাড়াবে। আলোকে গ্রহণের বিষয়টিও অভিনয়শিল্পীদের খানিক সচেতনতা দাবি করে। তবে এসবই পরিবর্তনযোগ্য কিংবা বলা যেতে পারে, সুসংহত করে নেবার সুযোগ রয়েই যায় শেষ পর্যন্ত। আর বাদবাকিসব? ছোট্ট করে বলি- ‘বাহ!’


‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের একটি দৃশ্য

নাটকটির প্রসঙ্গে আসাদুল ইসলাম তাঁর ফেইসবুক পৃষ্ঠায় লিখেছেন- ‘নাটকে একজন কাল্পনিক উজবেক কবি ও একজন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর মনোজাগতিক বিশ্লেষণ দেয়া হয়েছে। নাটকে বেশির ভাগ সময় তারা নিজে নিজে কথা বলে। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা, এটা জটিল একটা ক্রিয়া। এটা অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলা দুরূহ। নাটক সাধারণত হয় কথোপকথনের মধ্যদিয়ে, রস থাকে- আনন্দ থাকে, হাসি-কান্না থাকে। নদ্দিউ নতিমে দীর্ঘ দীর্ঘ স্বগতোক্তি, বর্ণনা, বিরামহীন, বর্ণহীন, বিষাদ। বিবর্ণতা, কে পছন্দ করে! নাটকের পাণ্ডুলিপি হিসাবে নির্দেশকের কাছে এটি ভয়ংকর লাগে। এটিকে মঞ্চে আনার চিন্তা কেউ বিপদে না পড়লে করবে বলে মনে হয় না।’

আমি বলি- হয়তো বিপদেই পড়েছিলেন। তবে বিপদ থেকে উদ্ধারে যে সামর্থ্যরে পরিচয় আসাদুল দিয়েছেন তা অসামান্য। কবি, নাট্যকার, অনুবাদক, অভিনয়শিল্পী-এইসব অভিধার সঙ্গে এখন নির্দেশক নামক এক নয়া পালক যুক্ত হল তাঁর শিরে। আর সেই যে শুরুতে বলেছিলাম, এই নাটক বিনোদন কীভাবে- সেটা আসলে ক্যাথারসিসের মধ্যদিয়ে। আমাদের ভেতরে থাকা ক্লেদজকুসুমগুলোকে দূর ঠেলে দেয়ার মধ্যেই এর মহিমা। ‘নদ্দিউ নতিম’ ঠিক এ কারণেই সফল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×