somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ পর্ব ২

১০ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রবিউল হুসাইন (৩১ জানুয়ারি ১৯৪৩ - ২৬ নভেম্বর ২০১৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশি স্থপতি ও কবি। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।[১] এছাড়া, তিনি ২০০৯ সালে কবিতায় অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।[২] তিনি শিল্প-সমালোচক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও সংস্কৃতিকর্মী হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭১ সালে সংগঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন।

নয় - নীলিমার নীল কাহিনী

রবিউল হুসাইন
(জন্ম: ৩১ জানুয়ারী, ১৯৪৩ - মৃতু: ২৬ নভেম্বর, ২০১৯)
(১৯৯১ সালের সাক্ষাকারের ভিত্তিতে তৈরি)

বাসার শাহ যখন আসছি তখন দেখি রোজাকার সেই সমিছিল (যন ফিরে আসছে বিপরীত মুখী। এই ব্যাপার? দ্দনলাম, পাকসনারা গানবোট নিয়ে বুড়িগঙ্গার ওপারে যাওয়ার জন্যে নৌকোষ উপরের অসংখ্য মানুষ, শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ - বৃদ্ধাদের প্রতি তাক করে ম ম মেশিনমান চালিয়েছে। কত মানুষ যে গুলি খেয়ে আর নদীতে পড়ে ডুবে গেছে তার হিসাব নেই। তাই ফিরে আসছে সবাই আনার। শুয়কের বাচ্চারা জিজিবাতেও গিয়েছে। সেখানে মসজিদে আশ্রয় নেয়া উদ্ধান্ত মানুষদেরকেও রেহাই দেয়নি। গুলি চালিয়ে নির্বিচরে। ৭ ই মার্চের বিশাল সভায় না যেতে পারলেও, রেডিও শুনেছি, আর জানালা দিয়ে দেখেছি মানুষের প্রচণ্ড ভীড়। দেখতে দেখতে ২৫ শে মার্চ চলে এলো, তখনাে আমার ভীষণ শরীর খারাপ। ফ্লাটের কেউ নেই আমি ছাড়া। সারারাত ধরে আগ্নেয়াস্ত্রের শব্দ নিনাদ শুনেছি। মনে হচ্ছিলো এই কাছেই হচ্ছে, এখুনি আমাদের ফ্লাটে এসে পড়লো। রাতে কিছুতেই ঘুম আসে না। কারফিউ দিয়েছে, চারিদিকে ফিস্ ফিস্ শব্দ শুনি মানুষের, কেউ ভালো করে কথা বলতে চায় না। ঘরে খাবার নেই দূর্বল শরীর নিয়ে দোকানে গিয়ে চা বিস্কুট নিয়ে আসি। দোকান পাট সব বন্ধ। চার - পাঁচ দিন এরকম জ্বরের ঘোরে থাকি। একসময় কারফিউ একটু শিথিল হয়, শরীর একটু ভালো। আপিসে যাই নি। রাতে দেখেছি আঁধার ভেদ করে আকাশের একদিকে উজ্জ্বল আলো, এরকম প্রতিরাতে আকাশের প্রতি দিকে, দূরে মানুষের আর্তনাদ আর গুলির শব্দ। শুনলাম রাজারবাগ, চকবাজার, নিউ মার্কেট শান্তিনগরের সব বাজার - হাট পুড়িয়ে দিয়েছে। পাকসেনারা পশুরও অধম হয়ে দ্রুত ইতিহাসের কৃষ্ণ গহবরে নিপতিত হয়ে মানুষ নামধারী জীবের সর্বকালের কলঙ্কিত অধ্যায়ে অংশভুক্ত হয়েছে। স্বাধীনতার চরম মূল্যের রূপ ও আবহাওয়া কী এইরকম ভয়ানক ও ভয়াবহ? তবুও মানুষের কী আকুতি তাকে পাওয়ার জন্যে যুগে যুগে সব দেশে। আমাদের এই নরম মাটির দেশেও সে বোধকরি প্রচণ্ডভাবে আসছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের সেই ঐশ্বরিক আহবান মানুষকে তাই এত প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। তিনি কয়েকটি বাক্যে এদেশের ইতিহাস ইচ্ছা, গণমানুষের আকুতি, প্রকৃতি সব অবলীলায় প্রকাশ করে দিলেন। তার কণ্ঠ - নিনাদ, স্বর প্রক্ষেপণ, বাক্য গঠন, যথার্থ শব্দ ব্যবহারের পারঙ্গমতা তাকে সর্বকালের অন্যতম বক্তা ও জননেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার এই ৭ ই মার্চের ভাষণের পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা করতে গেলে খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশের জন্মকারণ খুঁজে পাওয়া যায়। সমস্ত দালানে বোধহয় আমি একা, মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে খুব ভয় করতে লাগলো, কেউ নেই অন্ধকারে, বাইরে প্রচণ্ড গুলির শব্দ, কাছে দূরে। মনে হচ্ছে এখনই পাক - সেনারা এই ফ্লাটে ঢুকে যাবে। ওরা নাকি তাই করছে, ঘরে ঘরে গিয়ে যুবক এবং যুবতী ধরছে। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে সকালে জানালা দিয়ে দেখি ফ্লাটের সামনের রাস্তা দিয়ে শুধু মানুষ আর মানুষের মিছিল। সবাই প্রাণভয়ে পেছনে স্মৃতি - বিস্মৃতির স্থাবর অস্থাবরের সব কিছু ফেলে
রেখে শহর ছেড়ে নদীর ওপারে চলে যাচ্ছে। সেই জনস্রোতের মুখে আমি রুগ্ন শরীর আর একাকীত্বের নিঃসহায়তা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। মানুষের বসবাসের নির্ভরতা এবং নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা যারা দিতে পারছেনা তাদেরকে তাই কিছুতেই বিশ্বাস করা যায় না। এইজন্যেই এই গণমিছিল। এশহরে কেউ থাকবে না আমার মত অক্ষম এবং রুগ্ন ব্যক্তি ছাড়া। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। খুব ইচ্ছে করছিলো বাইরে বেরিয়ে একটু দেখতে, কারফিউ তখন নেই। ঠিক এইসময়ে ওয়ারেস এসে হাজির। আমার আঁধার যেন সহসা কেটে গেল প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে, তার ওপর এতদিন হলো কোন পরিচিত মানুষের সাক্ষাতই পাই। নি। এই কদিন মনে হয়েছিলো আমার কোথাও কেউ নেই। ওয়ারেসই প্রথমে বাইরে বের য়ার কথা বললো। বিপরীত স্রোত উজিয়ে যেন আমরা দুজন এগিয়ে চলেছি। কারো মুখে কোনো কথা নেই। প্রথমে সলিমুল্লা হলের পূর্ব পাশ দিয়ে জগন্নাথ হলের পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে টি এস সির মোড়ে যাবো। শুনেছি এই কদিনে জগন্নাথ হলের প্রত্যেক কক্ষে গিয়ে পাক - সেনারা। হিন্দু ছাত্র খুঁজে মাঠে লাইন করে দাড়িয়ে ছোট ছোট দল করে গুলি করে মেরেছে এবং ওদেরকে দিয়েই মাঠ খুঁড়ে কবর দিয়েছে। হলের দক্ষিণের প্রবেশ মুখে রাস্তার ওপরের দৃশ্য দেখে আমার পা আর এগুতে চায় না। দেখি রাস্তার পাশে সবুজ ঘাসের ভেতর দিয়ে মানুষের পা উকি দিচ্ছে, একটি হাত, মুষ্টিবদ্ধ যেন, প্রতিবাদের ভঙ্গিতে উচিয়ে অছে। প্রতীকী এই হাতের ইঙ্গিত যে কত গভীর উচ্চারণে সমৃদ্ধ তা পাক সেনাদের সারা জীবনের সাধনায়ও স্পষ্টতর হবে না। ওইখানে শামসুন্নাহার হলের কাছে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বাসস্থান ছিল। প্রায় সবাই অমুসলিম। সেই নিরীহ মানুষদেরকে হত্যা করে শয়তানেরা এইভাবে তাড়াহুড়ো করে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে। মাটির গহবরে শায়িত মানুষের স্তুপের পাশ দিয়ে আমি আর ওয়ারেস তবুও নিশি- পাওয়া মানুষদের মতো সামনে এগিয়ে চলেছি। টিএসসির সামনের চত্বরে দেখি, রাস্তার দিকে মেশিনগান তাক করে অসংখ্য পাক - সেনা। ওরা জুলু জুলু চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে। আমরা কোনকিছু ভ্রুক্ষেপ না করে ডান দিকে আনবিক শক্তি কমিশনের অফিসে গিয়ে হাজির হলাম। অফিসের প্রায় লোকই অনুপস্থিত। ২৫/২৬ বছরের দুটি যুবককে এইভাবে দেখে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ভৎর্সনা করলেন। এইভাবে আমাদের আসা উচিত হয়নি। ওয়ারেস বাসার দিকে চলে যায়, আমি আপিসের দিকে পরীবাগে।। আপিসে যাওয়া হয়নি, তার আগেই একজন কর্মচারীর সঙ্গে দেখা। আপনি বেঁচে আছেন, আমরা মনে করেছি, আপনাকে পাক - সেনারা মেরে ফেলেছে। আমি স্নান হেসে একটা হােটেলে। ঢুকলাম। ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, ইস্ কতদিন ভাত খাইনি। বাসার কাছে যখন আসছি তখন দেখি রোজকার সেই গণ মিছিল যেন ফিরে আসছে বিপরীত মুখী। কী ব্যাপার ! শুনলাম, পাক-সেনারা গান বােট নিয়ে বুড়িগঙ্গার ওপারে যাওয়ার জন্যে নৌকোর ওপরের অসংখ্য মানুষ, শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি তাক করে ঠ- ঠা মেশিন গান চালিয়েছে। কত মানুষ যে গুলি খেয়ে আর নদীতে পড়ে ডুবে গেছে তার হিসাব নেই। তাই ফিরে আসছে সবাই আবার। শুয়ােরের বাচ্চারা জিঞ্জিরাতেও গিয়েছে।
সেখানে মসজিদে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তু মানুষদেরকেও রেহাই দেয়নি। গুলি চালিয়েছে নিবিচারে। মসজিদের চকচকে মোজাইক মেয়ে নামাজী মানুষের রক্তে ভিজে দ্বিজাতিতত্ব সমৃদ্ধ বিরাজনৈতিক প্রসূত মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি এমন এক প্রামাণ্য দলিলের সৃষ্টি করেছে, যার বাস্তবতা ও অস্তিত্ব কখনাে টিকে থাকতে পারে না। কারফিউ আস্তে আস্তে শিথিল হচ্ছে। আমাদের বাসায় এবং আশেপাশে সবাই ফিরে আসতে শুরু করেছে, তবে হাতে গােনা যায় এমন। বাসায় মহিলা ও শিশুদের সংখ্যাও খুব কম। তবে গাণিতিক হারে সংগ্রামী মুক্তিযােদ্ধা আর বিশ্বাসঘাতক রাজাকারদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে বেশ। এখন সন্ধ্যে হলেই কারফিউ। দিনে আপিসে যাই। একদিন গিয়ে দেখি মাজহারুল ইসলাম সাহেব নেই, তিনি একটি সাদা কাগজে আমার আর ওয়ারেসের কাছে আপিসের দায়িত্ব দিয়ে চলে গেছেন। আমরা যদি তার অনুপস্থিতিতে আপিস চালাতে পারি ভালো, তানা হলে উপায়ন্তর না দেখলে যা ভালো তাই বিবেচনা করা যাবে, এমনই বলে আমাদের আপিসে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিদ্যুৎ বিভাগের ডঃ নূরুল উল্লাহ খণ্ডকালীন উপদেশক ছিলেন। খুব চঞ্চল ও ভালো মানুষ। আপিসে একদিন কথায় কথায় বললেন, জানাে আমার ফ্লাট থেকে জগন্নাথ হলের সামনে মাঠের ভেতর যা যা ঘটেছে সব আমি দেখেছি। কী নির্মম গণহত্যা। এখনাে কবরগুলো দেখা যায়। আমি বললাম, স্যার একদিন আপনার ফ্লাটে গিয়ে একসময় দেখে আসবাে। উনি বললেন নিশ্চয়ই, চলে এসাে, আজই বিকেলে এসো। কথা মতো গেলাম। সত্যিই তাই, মাঠের উত্তর পাশে রাস্তা এবং তারপরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ফ্লাটগুলো, চার তলা উচু। উনি চার তলার বাসিন্দা। প্রায় সারা রাত ধরে ঘরের সব আলো নিভিয়ে জানালা দিয়ে, বারান্দার রেলিং - এর নীচে নীচু হয়ে পাষণ্ডদের তাণ্ডবতা দেখেছেন নিজের চোখে। আর সারারাত ছটফট করেছেন। উনি দেখালেন ওই যে দেখছো মাঠের সবুজ ঘাসের ভেতর হঠাৎ হঠাৎ ঘাসহীন শুধু মাটির টিবি মতো, ওগুলো সব গণ কবর। হল থেকে ধরে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে ছাত্রদেরকে মারা হয়। কী অসহায় ছিল ছেলেগুলো। চোখের সামনে এই নির্মম ঘটনা কিন্তু কিছু করা গেল না। কাছেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাঁটতে হাঁটতে সেখানে গেলাম।
হাসপাতালে হঠাৎ করে গুলি ও বুলেট বিদ্ধ আহতদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন তা বেড়েই চলেছে। তিল ধারনের জায়গা নেই। আহতদের আর্তনাদ ও কষ্ট দেখা যায়না। আমি প্রায় সব ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে দেখছি। হঠাৎ কুদরতের সঙ্গে দেখা। শালারা এদেশের কাউকে জীবিত রাখবেনা। ওর বান্ধবীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলো। চা খেতে খেতে ও বললো ... দেশের সব জায়গাতে এই গণহত্যা আরম্ভ হয়েছে। কুষ্টিয়ার খবর জানিস? কুষ্টিয়ার ছেলে সে, আমিও। কুষ্টিয়ায় প্রথম দিকে সাধারণ মানুষ সব এক হয়ে শহরের ভেতরে প্রায় সব অবাঙ্গালী পাক - সেনা গুলোকে খতম করেছে। তবে ওরা আবার শক্তি সঞ্চয় করে পালটা আক্রমণ করবে। তখন বাচবার উপায় থাকবে না। দেশের প্রতিটি শহরে এরকম হবে। পাক - সেনাদের আসার আগে কুদরত একবার কুষ্টিয়া যাবে। আমি বললাম, এখনই এক স্যারের বাসা থেকে আসলাম। কুষ্টিয়া যাবে। আমি বললাম, এখনই এক স্যারের বাসা থেকে এলাম। ওখান থেকে জগন্নাথ হলের গণহত্যা স্যার সব দেখেছেন। কুদরত বললো, এই যে দেখলি যাদের, তারা সবাই বিভিন্ন জায়গার গণহত্যা থেকে কোনো রকমে বেঁচে আসা প্রাণী। জগন্নাথ হল থেকে একজন লাইনে দাড়িয়ে গুলি খেয়ে মরার মত পড়েছিল মৃত গুলিবিদ্ধ সতীর্থদের মাঝ খানে। তার পর অনেকরাতে সেখান। থেকে কোনো রকমে জানটা নিয়ে সে হাসপাতালে এসেছে, চল দেখবি। তাকে। গিয়ে দেখি ভদ্রলোক মরার মত পড়ে আছেন, তার নাম কালীরঞ্জন শীল। মনটা খারাপ এবং ভীত। এর ভেতরে পাক - সেনাদের প্রতি ঘৃণা আর তীব্র বিদ্বেষে মনটা বিষিয়ে আছে। হাটতে হাটতে ঘরে এসে ঢুকলাম। রাতের আকাশ আবার আগুনমাখা।। ঝিঝি পোকাদের ডকের বদলে গুলি আর বোমার ভীষণ আওয়াজ। শুয়ে শুয়ে মা - ভাই বোনদের কথা মনে হয়। ছোট ভাই পাকশীতে কাগজের কলে। কী যে হবে তাদের ভবিষ্যতে, ভবিতব্যই জানে। সকালে আজিমপুর কলোনীর ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ বন্ধু মামুনের সঙ্গে দেখা, ও কলোনীতেই থাকে। আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো, তুমি। চলো বাসায় গিয়ে চা খাবে। ওদের বৈঠকখানায় ঢুকি। সবাই আমাকে অদ্ভুতভাবে দেখছে। ব্যাপার কী। মামুন বললো, তুমি বহুদিন বাচবে। আমি বললাম, কেন। মামুন তখন বলে ওঠে, সবাই জানে, তুমি পাক - সেনাদের গুলি খেয়ে শেষ, তাই। আমি হাসি। হয়তো অসুখটা বাচিয়ে দিয়েছে, রাতে ঘোরা - ফেরা করার অভ্যাস। তা না হলে রাতের অনেক পথচারীদের মতো আমারও একই অবস্থা হতো। অবশ্য সামনের দিন গুলোতে কি হবে, কে জানে। যুদ্ধের সময়ে একটি বাঙালি প্রতিষ্ঠানকে বাচিয়ে রাখার জন্যে আমরা সবাই ব্রত হিসেবে নিয়েছিলাম।
এই সময় মাজহারুল ইসলামের বন্ধু স্থপতি টাইগারম্যান আমেরিকা থেকে এসে আমাদের আপিসে এলেন। কাছেই তখনকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ওখানে থাকেন।। ওখান থেকে কলকাতা যাবেন ‘ বাস্তুকলাবিদ ’ আমাদের এই আপিস শুধু আপিস ছিলনা, বরং এর আড়ালে আমরা অনেক গোপন কাজও চালিয়ে নিতাম মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে। আমি যে ফ্লাটে থাকতাম সেখানেও ওরকম একই কাজের আস্তানা ছিল। যদিও আমরা সবাই অর্ধেক বেতন নিতাম, তবুও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে বিভিন্ন সময়ে সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করতাম। আমার অসুখটা তখন ভালোর পথে একটু একটু করে। আমার চোখের সামনে আমাদের ফ্লাট থেকে সবাই একে একে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে পাশের দেশে চলে যাচ্ছে। স্থপতি আলমগীর, রশীদ, ইয়াফেস প্রায় সবাই। আমি অসুখের জন্যে যেতে পারিনা। মুক্তিযুদ্ধের অনুকুলে এক এক সময় এক একটি কাজ করতে হতো। একদিন আনোয়ার ভাই এলেন, দুটি কাজ করে দিতে হবে, উনি প্রকৌশলী স্থপতি, এখন লণ্ডনের বাসিন্দা। গুলশানের পূর্বদিকে যে লেক আছে, তখন বারিধারা হয়নি, ওখানে গ্রাম আর কৃষিভূমি। লেকের ওই পাড়ে পাক - সেনারা অনেক বাংকার তৈরী করেছে, কংক্রিটের। আমার কাজ হচ্ছে ভাড়া নেয়ার বাড়ি ঘোজার নাম করে একেবারে লেকের পশ্চিম পাড়ের সবচেয়ে উচু দালানের ছাদে উঠে দেখে নিতে হবে ওইরকম বাংকার কয়টি দেখা যায় এবং সেগুলোর। মোটামুটি অবস্থান দেখিয়ে একটি সাইট - প্ল্যান তৈরী করে দিতে হবে। আনোয়ার ভাই তার এক বন্ধুর গাড়িতে আমাকে নিয়ে বাড়ি খোজা খুঁজি আরম্ভ করলেন। মোড়ে মোড়ে পাক সনাদের পাহারা। গাড়ি দেখে কিছু বলে না। তখন গুলশানে তেমন বাড়ি ঘর তৈরী হয়নি। সবকিছু দেখেশুনে মোট ১২ টি বাংকারের খোঁজ পেলাম। ওগুলো দিয়েই একটা নক্সা তৈরী করলাম সেই দিনই আপিসে বসে। আনোয়ার ভাই নিয়ে চলে গেলেন। এইরকম স্থপতি বন্ধু মাইনুলের সঙ্গে সদরঘাটের অর্থাৎ বুড়ি গংগার পাড়ে কয়টি বাংকার তৈরী হয়েছিলো তার অবস্থান দেখতে গিয়েছিলাম। পরে নক্সা তৈরী করে আনোয়ার ভাইকে দিতে গিয়ে এবং দেখার সময়ও একটু ঝামেলায় পড়ে ছিলাম। সদর ঘাটের লঞ্চ টার্মিনালের ছাদে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে দু’জন পাহারারত খান সেনা টের পায় ওরা আমাদের অনুসরণ করা আরম্ভ করে। আমরা তখন স্বাভাবিকতা দেখানোর জন্যে রাস্তার পাশে একবার হস্তরেখাবিদের সামনে বসে পড়ি, আরেকবার জিনিষপত্রের দরদাম করি। কিনিও বাধ্য হয়ে। এইভাবে আচরণ করতে করতে সবকিছু দেখে হঠাৎ রিক্সা নিয়ে ষ্টার সিনেমাহলের সামনে দিয়ে ফিরে আসি। মোট ৮ টি বাংকার দেখতে পেয়েছিলাম। গুলিস্তানের সামনে একজন। দাড়িয়ে থাকবে ডুইংটা তার হাতে সকালে দিতে হবে। আমি আপিস থেকে ড্রইং নিয়ে বের হয়ে তাড়া তাড়ি করার জন্যে স্কুটার নিলাম একটা, জোরে চালিয়ে যেতে বললাম। বেশ চলছি, হঠাৎ ইন্টারকনের সামনে দুই পাক - সেনা রাইফেল হাতে স্কুটার থামিয়ে দিল। কিধার যাতা, বললাম। চলো হামভি যায়েগা তোমহারা সাথ। আমি মাঝখানে দুজন দুত্বদিকেহাতে সদরঘাটের ড্রইং। ভয়ে আমি কাহিল। গুলিস্তানে এসে গেলে সত্যি সত্যিই নেমে গেল ওরা, আমি হাঁফ ছেড়ে বাচলাম। আরো এরকম দুবার হয়েছে। কপালের জোরে বেঁচে গেছি।
আমি, তাজু আর মুজাহিদ, তখন দিন এগারো - বারোটা হবে, ইত্তেফাক ভবনের সামনে। টিকাটুলীর মোড়ের দিকে দেশ - রেষ্টুরেন্ট, ক্ষুধার্ত সবাই। ভেতরে ঢুকে আমরা তিনজনেই খাবার অর্ডার দিলাম। তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে দেয়ে বের হচ্ছি, কাউন্টারে দাম দেবাে। তাজু আর মুজাহিদ আগে আগে, ওরা বেরিয়ে গেছে। হঠাৎ এক পাক - সেনা বসে চা খাচ্ছিলো পেছন থেকে ডাক দিলো। ইধার আও। কাছে গেলাম, বুকটা স্বাভাবিকভাবেই ধড়াস করে উঠলো। তাজুদের দিকে অসহায়ভাবে তাকালাম। তুম কিয়া করতা হ্যায়। ম্যায় ইঞ্জিনীয়ার হু, আর্কিটেকট বললে তাে বুঝবেনা, তাই। লেকিন তুম জরুর মুক্তি হ্যায়। আমি বললাম নেহী স্যার ম্যায় মুক্তি নেহী হু। শুনেছিলাম, স্যার বললে ওরা খুব খুশী হয়। ঠিক হ্যায় তােমহারা। ড্যাণ্ডি কার্ড দেখাও প্যান্টের পেছন থেকে মানিব্যাগ নিয়ে কাডটা দেখালাম। সিপাইটা খুলে দেখে নরম হলো মনে হয়। হা তুম বহুত পাকিস্তান পছন্দ করতা। ততক্ষণে হােটেলের সব গ্রাহকের রুদ্ধশ্বাস দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ। সে আইডেন্টিটি কার্ডটা আমাকে ফেরত দিল।। লেকিন শের পর এতনা বাল কিউ মুক্তিকা মাফিক। সবসময় চুল আমি লম্বা রাখতে পছন্দ করি, এখনাে। যাও বেটা বাল কাটলেও, হাম ছোড় দিয়া মগর দোসরা কোহ তুমকো ছেড়ে গা। নেহি। আরেকবার কী একটা কাজের বিজ্ঞাপন দিয়েছে খবরের কাগজে। আমি আর ওয়ারেস আপিসের ফাইল, বিজ্ঞাপনের কপি নিয়ে তখনকার ডি, আই, টি, আপিসের দিকে বের হলাম। যতদূর মনে হয় আমরা সােজা ডিআইটির গেটে গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছি যেহেতু গেট খােলা পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে রাইফেলধারী আট - দশটা মিলিটারী আমাদের দিকে তাক করে খুব জোরে হলট চলে তেড়ে এলো।
গাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে আমাকে এক কোণায় নিয়ে গিয়ে বললো, পারমিশন কাহা। আমি তখন ইংরেজীতে কথা বলতে লাগলাম, এবং বললাম আমি পারমিশন নেয়া সম্বন্ধে জানতাম না। আমাকে ওরা সঙ্গে সঙ্গে সারা। শরীর তল্লাশী আরম্ভ করলো, প্যান্ট খুলে, জাঙ্গিয়া খুলে সব দেখলো এবং প্রচণ্ড গালাগাল দিতে থাকলো, ওয়ারেসকেও। হে চৈ শুনে ঠিক সেই সময়ে একজন ক্যাপ্টেন অথবা মেজর। এসে পরিষ্কার ইংরেজীতে সব কিছু জিজ্ঞেস করলো, আমরাও তার সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম, ফাইলের কাগজপত্র দেখতে দেখতে সে বললো, তােমাদেরকে আমি হয়তাে বিশ্বাস করছি, কিন্তু জানাে তাে ইচ্ছে করলে এখনই আমি তােমাদেরকে ক্যান্টনমেন্টে পাঠাতে পারি। এবং তােমরা ভাল করেই জানাে ওখানে গেলে তােমাদের কী হবে। আমরা বললাম, ইয়েস স্যার। কাজের কিছু করা না গেলেও জানে যে বেঁচে এসেছি এই আমাদের ভাগ্য। পরে শুনলাম, আমরা যেদিন গিয়েছিলাম, তার আগের দিন, ডি আইটি টাওয়ারে মুক্তিযােদ্ধাদের কল্যাণে একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়েছিলো, তার জন্যে এই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং এটা আশ্চর্যজনক সত্যি কথা, আমরা এর কিছুই জানতাম না। এই বিষময় দুঃসময়ে প্রতিটি মানুষের ভাগ্য এমনভাবে সূতাের দোলনায় দুলছিলো। কার যে কখন কীভাবে বিপদ হচ্ছে আবার কে যে কীভাবে বেঁচে যাচ্ছে তার কোন কারণ বা তত্ব নেই। এই রকম সময়ে মানুষের মৃত্যুর সহজ প্রক্রিয়ার চেয়ে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা খুবই কম। হয়। তবুও মানুষেরা কেউ আকস্মিকতায় কেউ ভীষণ বিপদ থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়, তখন ঘটনার মানুষ আস্তিকতা কিংবা অজ্ঞেয়বাদে নিজেকে সমর্পন করে। আর ভেতরে ভেতরে কঠিন এক শপথে, অন্যায়, নির্মম, অমানবিক ক্রিয়াকলাপের কারণে নিঃশব্দে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। ওয়ারেসের বেঁচে যাওয়ার কাহিনী আরো আশ্চর্যজনক। আমাদের ফ্লাটে রোজ সন্ধ্যেবেলায় বন্ধু - বান্ধব এসে আড্ডা দিত। ওয়ারেসও আসতাে। তখন ছয় অথবা সাতটা বাজে। হঠাৎ অনেকক্ষণ ধরে গুলির শব্দ শােনা গেল যেন কাছেই আজিমপুর নিউ মার্কেটের দিকে। আটটার পরেই কারফিউ শুরু হয়। ওয়ারেস সাড়ে সাতটার দিকে চলে যায়। গুলির শব্দ শােনার পর ওকে আমরা তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বললাম, ওর বাসা আজিমপুর গােরস্তান আর ইপিআর গেট পেরিয়ে। আমরা সবাই রাতের খাবারের জন্যে কেউ হােটেলে, কেউ অন্যান্য নির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার আয়ােজন করছি।
আমি তখন আমাদের দালানটির চার তলায় অন্যান্য সবার সঙ্গে মাসিক চুক্তি ভিত্তিক একবেলা অর্থাৎ শুধু রাতের খাবার খাই। ঠিক এসময়েই একটা গাড়ির আওয়াজ পেলাম এবং দেখি হন্তদন্ত হয়ে ওয়ারেস গরে যাত উচিয়ে আমাদের থামতে বললো। ইশারায় পানি খেতে চাইলো। পানি খাওয়ার পর সে এক হির হলো এবং বললো, সবার দোয়ায় ' জানে বেচে এলাম, তা না হলে কী যে হতো, হয়তাে এতক্ষণে রাস্তায় পড়ে থাকতাম। আমরা বললাম, কেন কী হয়েছিলো। ও বলতে শুরু করে। এখান থেকে যাওয়ার পর ও একমনে গাড়ি চালাতে চালাতে আজিমপুরের এক তারপর দুই নং গােরস্তান পার হয়ে ইপি আর গেটের দিকে এগুতেই দ্যাখে রাস্তায় কোন লোকজন নেই, সুনশান, এবং শীতকাল, গাড়ির কাচ উঠানাে। তার ভেতর দিয়ে দেখে যেন কিছু মানুষ এদিক ওদিক রাস্তার মাঝখানে। এবং দুপাশে শুয়ে আছে। ও তাদের ভেতর দিয়ে ওদের গা বাঁচিয়ে সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছে আর ভাবছে, কী ব্যাপার, এরা কারা? তবে কী এখানেই একটু আগে - শােনা সেই গুলির আওয়াজের জায়গা। হঠাৎ চিৎকার করে হট শােনা গেল, সঙ্গে সঙ্গে তীব্র সার্চ লাইটের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে গেল। গাড়ির কাচ নামানাে, শীতকাল এসবের জন্যে ওয়ারেস ভালো করে কিছু বুঝতেই পারেনি। এবং সঙ্গে সঙ্গে দু’জন পাক - সেনা ওকে গাড়ির ভেতর থেকে টেনে বাইরে আনে। ওর পরনে কোট - টাই। ও ভালো উর্দু বলতে পারে। খুলে সব বললো, আমি এখানেই থাকি, ওই যে আমার বাসা, পেশায় স্থপতি বাইরে কাজে গিয়েছিলাম, এখন ফিরে আসছি। কিন্তু কে কার কথা শােনে। এর ভেতর একজন কোটের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে যা টাকা - পয়সা ছিল সব বাগিয়ে নিয়েছে এবং তাই একটু নরম হয়েছে।
অন্যজন তাে খতম করো, খতম করো বলছে। ওর পিঠের দিকে তাক করে আছে। ট্রাইপয়েডেরাখা রাইফেল, ও যেদিকে ঘুরছে বা সরছে, সঙ্গে সঙ্গে রাইফেলও তাকে অনুসরণ করছে। ও বুঝলো তার আর বাচার উপায় নেই, ওর পিঠটা শির শির করছে, কখন গুলি এসে লাগবে। মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষের বােধহয় এরকম হয়, অতীতের যাবতীয় চিত্রাবলী খুব দ্রুত এক পলকের মধ্যে সব দেখা হয়ে যায়। কিন্তু রেহাই পাওয়ার জন্যে সব সময় তাদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করে যে সিপাইটা টাকা নিয়েছিলো, সে বললো, ঠিক হ্যায়, যাও নেকিন ইধার নেহী, উধার অর্থাৎ বাড়ির দিকে নয়, অন্য কোথাও। বাইরে অন্ধকার, টিম টিমে, আলোর ভেতর আমরা যেন হতভাগা বাংলাদেশের হাত ধরে সেই আলো আধারের ভেতর দিয়ে এগুতে থাকলাম। মানুষের জীবন নিয়ে এইভাবে যারা ছিনিমিনি খেলছে তাদের কী শাস্তি দিতে হয়। এখানে ক্ষমা যা মানবের মহত্ব প্রকাশ নাকি উপযুক্ত পাল্টা ব্যবহার, রক্তের বদলে রক্ত, যা মানবের বীরত্ব প্রকাশ কোনটি? দেশ ও দেশের মানুষের জন্যে ভালো? একবার রক্ত ঝরলে শেষােক্ত উপায়ই হয় একমাত্র হাতিয়ার। সারা দেশ আজ সেই রক্ত - ঝরার দিকেই মন দিয়েছে। আসলে বিচ্ছুরা অর্থাৎ মুক্তিযােদ্ধারা। হৃত মটর সাইকেল থেকে হ্যাণ্ড গ্রেনেড ছুড়ে দিলে ইপিআরের গেটে এই ঘটনা ঘটে। এইসব দুখএকটি বেঁচে যাওয়ার কাহিনীতে বীরত্ব খুঁজতে গেলে, কেউ কিছু খুঁজে পাবেনা। বরং চারদিকের শােকের পাহাড়ের ভেতর স্বচ্ছ জলাভূমি এগুলো। মানুষ মরতে মরতে বেঁচে যায়, এইসব খুব অস্বাভাবিক ঘটনা, সেই অস্বাভাবিক সময়ে, তাই এর এত গল্পসূলভ আকর্ষণ। ততদিনে আমাদের ফ্লাট মুক্তিযােদ্ধাদের একটা আস্তানা হয়ে গেছে। ইয়াফেস, রশীদ, আলমগীর, তাজু, মুজাহিদ। আকবর, ছােট বাবুল সবাই খুব গােপনে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে। নদীর ওপারেই আস্তানা, ঢাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ঐদিকে পাঠাতে হয়। একদিন দেখি রাত আট নয়টার সময় তাজুরা অনেক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলো পাটের বস্তার ভেতর। টয়লেটের ওপরে যে ছাদ আছে সেখানে রাখা হলো। আমি জানি। ব্যাপারটা কিন্তু হাবিবকে প্রথমে জানানাে হয়নি। ওইখান থেকে অস্ত্র নিয়ে জিঞ্জিরার ওপারে দিয়ে আসে। ইতিমধ্যে আলমগীর আকবর, রশীদ আর ইয়াফেস সরাসরি যুদ্ধে যােগদান করতে চলে গেছে। একদিন অনেক রাতে গাড়িতে করে একদল ছেলেসহ আতিক এসে হাজির।
কী ব্যাপার? তারা এই ঢাকা শহর কেন্দ্রিক একটা দল গড়েছে, তাদের কাজ বাইরে না গিয়ে এখানে। থেকেই পাক - সেনাদের সঙ্গে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া। আমি খুব উৎসাহ দিলাম ও পেলাম তবে আমি প্রধানত অস্ত্ৰযুদ্ধ ছাড়া অন্যান্য ব্যাপারে থাকবাে এটাই ওরা ঠিক করলো স্বাস্থ্যগত কারণে। সে সময় অধ্যাপক বােরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ওয়ারেসদের লালবাগের বাসায় আসতেন খুব। ওয়ারেসের বােন আজমিরীও মুক্তিযুদ্ধে অসমসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। এখন সে কবি ফজল শাহাবুদ্দিনের ঘরণী। একবার সে সাভার আরিচা থেকে গাড়িতে গর্ভবতী মহিলা সেজে অনেক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢাকায় এসেছিলো। সেসময় তিনি ওয়ারেসকে তেজগার পুরনাে পতেঙ্গা বিমানবন্দরের একটা ভূগর্ভস্থের মানচিত্র দিলেন। তার পরের দিন সকালে কপি করে তাকে প্রিন্ট করে দিতে হবে কয়েকটি। ওয়ারেস প্রায় সারারাত আপিসের সব জানালা দরজা বন্ধ করে কাজটা সম্পূর্ণ করেছিলো। মানচিত্রটা ছিল বিমানবন্দরের নিচে ভূগর্ভস্থ যাবতীয় বড় বড় সুড়ঙ্গের মতাে পয়ঃ প্রণালীর অবস্থান সংক্রান্ত। মুক্তিযােদ্ধারা বিমানবন্দর আক্রমণ করলে কোথায় কীভাবে অবস্থান নেবে তার জন্যে এই মানচিত্রের খুব প্রয়ােজন ছিল।। সেদিন গভীর রাতে কামানের গুম - গুম শব্দে সব দালান - কোঠা কেঁপে উঠলো। আমরা ভয়ে অস্থির। তাজু উঠে বাইরে বের হতে চায়। ওকে থামাই। অনেকক্ষণ ধরে তাণ্ডবলীলা চললো, দিনের বেলা পর্যন্ত।
পরে জানলাম, শালারা শহীদ মিনার ভেঙ্গে ওখানে মসজিদ। বানাতে চায়। মানুষজনকে ধরে নামাজও পড়াচ্ছে। দিন দিন বাঙালি বিচ্ছুরা ভীষণ তৎপর হয়ে উঠছে। আমাদের মোবাশ্বের একদিন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল আরেকদিন আমেরিকান লাইব্রেরীতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। সশস্ত্র সংগ্রাম শুধুমাত্র ঢাকা - কেন্দ্রিক নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি শহর ও বিস্তীর্ন গ্রামদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা শহর ও তার আশেপাশে প্রতিদিন একটা না একটা ঘটনা ঘটছে যা শুনে এই ভেবে মনে আনন্দ জাগে যে আগের চেয়ে দিন দিন তারা সুসংহত ও তৎপর হচ্ছে। বাংলা, জয় মুক্তিবাহিনী, জয় বঙ্গবন্ধু। ইতােমধ্যে শুনলাম বাঘা সিদ্দিকী একাই পাক সেনাদের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। একটা জাহাজ ভর্তি অস্ত্রশস্ত্র গােলাবারুদ দখল করে তারা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনাদের মনােবল ভেঙ্গে দিয়েছে। সমগ্র দেশের সাধারণ মানুষ দখলদার বাহিনী এবং রাজাকার শ্রেণীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হচ্ছে। তারাই জীবনের চরম মূল্য দিচ্ছে নীরবে, নিঃশব্দে, কেউ তাদের নাম জানছেনা, পরিচয় জানছেনা। শহর থেকে পালিয়ে আসা অসংখ্য মানুষ এবং তার সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের জন্যে যাবতীয় সমর্থন, সাহায্য, খাদ্য, আশ্রয় সব নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিচ্ছে কোনাে প্রশ্ন বা উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে। অকৃতজ্ঞ শহরের মানুষ এইসব মানুষের অমূল্য অবদান সম্পূর্ণভাবে ভুলে গিয়ে আবার আগের আদি রূপে ফিরে গিয়ে এদের কথা ঘুনাক্ষরেও মনে রাখবে না, এটা জেনে তারা অকৃপণ সেবা করছে। হঠাৎ একদিন আপিসে দেখি, আলমগীর এসে হাজির। বিধ্বস্ত চেহারা, খুবই স্বভাবিক। ফেরী পার হতে গিয়ে কপালের জোরে বেঁচে গিয়েছে, সঙ্গে গােপনীয় কাগজপত্রও চিঠি ছিল তাে বটেই। জয়বাংলা রেডিওর অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তা কয়েকটা মাত্র অনুষ্ঠান নিয়ে, তা ভাবলে বিস্ময় মানতে হয়। মুকুল ভাইয়ের চরমপত্র, জব্বার ভাইয়ের গান, রাজু ভাইদের জল্লাদের দরবার অনুষ্ঠানগুলোও নেপথ্যে মুক্তিযুদ্ধকে এবং মুক্তিযােদ্ধাদেরকে যেভাবে অসামান্য মানসিক উদ্দীপনা সাহস ও সত্যের জন্যে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার মনােবল জুগিয়েছে তা এক কথায় অনন্য সাধারণ। বহুদিন পর বাড়ির খবর পেয়েছি।
কুষ্টিয়া শহর থেকে তারা গ্রামে গ্রামে পালিয়ে পালিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের জায়গায় গেছে। প্রথমে বাধা পাওয়ার পর পরের বার দখলদাররা বিমান বাহিনীর ছত্রছায়ায় কুষ্টিয়া শহরকে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এমনকরে যে এরকম ক্ষতি ধ্বংস বাংলাদেশের অন্যান্য শহরে ঘটে নি। মা - বােনেরা যখন ক্ষ্যাপা পাক - সেনাদের ভয়ে আঁচলে এ্যাণ্ডিন বা র্যাটম বেঁধে ধানক্ষেত, পাটক্ষেতের আড়ালে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে সম্মান আর প্রাণের ভয়ে। তখন কুষ্টিয়া শহরে বিমান থেকে বােমা ফেলছে, ঢাকা শহরে শেরে বাংলা নগরের এতিমখানায় হেলিকপ্টপার থেকে বােমা ফেলছে। কিছু দিন পরে দেখা গেল ঢাকার আকাশে রাতে ভারতের মিরেজ জেটের বিরুদ্ধে বিমান বিধ্বংসী কামানের জন্যে ছোড়া বিমান বিধ্বংসী কামানের উজ্জ্বল গােলা নিক্ষেপে যাতে অন্ধকারে বিমান নজরে পড়ে, অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করেছে। ভীত সন্ত্রস্ত ঢাকার সেনানিবাসের আকাশ যেন উৎসবে মেতে উঠেছে। অন্ধকার ভেদ করে আতশ বাজি আর হাউই নিক্ষেপ এত ঘাের আঁধার সম বর্তমান ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে এক দৃষ্টিনন্দন অভিজ্ঞতা। প্রায় সারারাত ধরে এই বিমান আক্রমন চলতে থাকলো, এবং পরের দিনেও চললো। আমাদের ফ্লাটের ওপরের আকাশে দেখা গেল। বিমান যুদ্ধ বা কক - ফাইট। ভারতের মিরেজ এবং পাকদের স্যাবর জেটের যুদ্ধ খালিচোখে দেখা বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমাদের সামনে দেখা গেল সাদা মিরেজ কালো আহত ধুম্রজালে। জড়ানাে স্যাবরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে খুব নিচু দিয়ে বিরাট গর্জন করতে করতে এবং হঠাৎ স্যাবর থেকে পাইলট ছিটকে বেহিয়ে আকাশে প্যারাসুট মেলে ঢাকার ওপারের জিঞ্জিরার মাটিতে পড়ছে। এইসব দেখে মনে হচ্ছিল আমরা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কোন ছায়াছবি দেখছি। অথবা হলিউডের কোন যুদ্ধভিত্তিক ছায়াছবির সুটিং চলছে। একদিন বােরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর আমাদেরকে বললেন, ১৬ ই ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে, পাক - আমী আত্মসমর্পন করবে, জেনারেল নিয়াজী যুদ্ধ চালাবে না। ওই দিন বিকেলে ভাঙ্গা শহীদ মিনারের পাদদেশে এক বিশাল গণজমায়েত হবে, অনেক পােষ্টার লিখতে হবে এবং আপনারা শহীদ মিনারের দেয়ালে দেয়ালে ওগুলো লাগিয়ে দেবেন। আমি, ওয়ারেস, আজমিরী ডাক নাম মিরু, ছােট বাবুল সবাই মিলে অনেক রাত পর্যন্ত পুরোনাে খবরের কাগজে পােষ্টার কালার দিয়ে, জয় বাংলা বাংলার জয়, ১৬ ই ডিসেম্বর, আজ স্বাধীনতা (জয় বঙ্গবন্ধু ইত্যাদি নানান শ্লোগান দিয়ে পােষ্টার লিখে দুপুর বেলা থেকে সেগুলো দেয়ালে সাটাতে লেগে গেলাম। বিকেলে বিশাল ঘনজমায়েত হলো। শ্রদ্ধেয়া সুফিয়া খালাম্মার সভাপতিতে ) বেগম সুফিয়া কামালের সভাপতির ভাষণের সেই অবিস্মরণীয় আবেগময় কথাগুলো কখনাে ভুলবােনা।
উনি তখন গােরস্তান থেকে ফিরেছেন। ৩২ নং রোডে আমাদের বন্ধু বাবর চৌধুরীর এক ডাক্তার বােন স্বাধীনতা ঘােষণার অববহিত পর গাড়ি আর পতাকা নিয়ে সকালে রাস্তায় বের হলে, দূর থেকে লুকিয়ে থাকা এক পাক - সেনার গুলি সরাসরি মাথায় লেগে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাকে গােরস্তানে শুইয়ে দিয়ে তিনি এই সভায় এসেছেন। দুচোখে অবারিত বাধভাঙ্গা আনন্দ ও বেদনার অশ্রুধারা বইয়ে তিনি বলেছিলেন, দুটো শুকনাে মাটি মাখা হাত দেখিয়ে, মাটির দাগ এখনাে শুকোয়নি, এখনই এক বােনকে গােরস্তানে শুইয়ে দিয়ে এলাম। স্বাধীনতার মূল্য আর কত দিতে হবে? এই বলে তিনি হু হু করে কেঁদে ওেঠন। তার সঙ্গে আমরা সবাই। ১৬ ই ডিসেম্বরের পর থেকে গ্রামবাংলা থেকে মুক্তিযােদ্ধারা এবং জনসাধারণ ঢাকা শহরে যেভাবে আসতে শুরু করেছিলো, ঠিক তেম্নিভাবেই ২৫ শে মার্চের পর থেকে ঢাকার এবং অন্যান্য শহর ও গ্রামের মানুষেরা এদেশ ছেড়ে পাশের দেশে আশ্রয় নিতে চলে গিয়েছিলো। তখন শীতকাল, গায়ে কোট হঠাৎ দেখি ধূলিমলিন পােষাকে ইয়াফেস কাধে রাইফেল নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের মিছিলের ভেতর দিয়ে এগুচ্ছে। আমরা দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতেই বলে উঠলো, খুব আরামেই ছিলেন দেখছি, এইরকম কাপড়চোপড় পরে আমাদের দেখতে আসতে আপনাদের একটুও খারাপ লাগলোনা। খানিক পরেই দেখি আশরাফ। মেডিকেলে পড়তাে, ক্যাম্পে বন্দী পাক - সেনা আর রাজাকারদের ধরে সে বুকের ভেতর আমূল ছুড়ি বসিয়ে বুকের খাচা দুই হাত দিয়ে ফাক করে কলিজা হৃৎপিণ্ড ছিড়ে আনতাে। দূর থেকে দেখে ঝাপিয়ে জড়িয়ে ধরলো। চোখে পানি। কদিন পরে রশিদও এলো। সবাই আসেনি। নূরুল উলা স্যারের সঙ্গে দেখা, তিনি কখনাে বলেন নি, সারাটা যুদ্ধের সময় তিনি মুখ খােলেননি — এ এক অনন্যসাধারণ মনােবল তার। জগন্নাথ হলের সেই গণহত্যার সম্পূর্ণ দৃশ্য তিনি তার মুভি ক্যামেরায় ধরে রেখেছিলেন। এটিই ছিল পাকিস্তানী সৈন্য দ্বারা গণহত্যার প্রথম প্রামাণ্য দলিল। স্যার ভীষণ খুশী, তার শ্রম সার্থক এবং গৌরবােজ্জ্বল।
প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ২০৯ যেদিন চলে যায়, শত কষ্টের হলেও তা স্মৃতিময় মধুর। রাজনীতির নামে, ধর্মের নামে, ধর্মের নামে মানুষকে কষ্ট দেয়া, অত্যাচার নিপীড়ন করা কোনাে কালে কোনাে দেশে কখনাে সার্থক হয়নি। তবু ক্ষমতার অতীন্দ্রিয় আকর্ষণে সব ভুলে গিয়ে বার বার ভুল করে এবং ইতিহাসের কালো পাতায় সেইসব শাসক গােষ্ঠীদের নাম অবগুষ্ঠিত হয়। আর তার পাশে উজ্জ্বল করে লেখা থাকে মুক্তিকামী, স্বাধীনতাপ্রিয় অগনিত সাধারণ জনগণের নাম ও কর্মফল। দেশের সুখ ও সম্মানে তারাই রক্ষা করে আসছে যুগে যুগে চিরটাকাল।
রবিউল হুসাইনঃ কবি ও স্থপতি
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×