somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি শিক্ষা সনদ, সংস্কার, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতীয় সংঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা সম্পর্কে ছাত্রদের বক্তব্য

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হেফাজতে ইসলামের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ১০০০ মাদ্রাসায় তদন্ত করতে গিয়ে গণকমিশনের প্রতিনিধিরা ৪ হাজারেরও বেশি ছাত্র সঙ্গে কথা বলেছেন। হেফাজত প্রভাবিত হলেও কওমি মাদ্রাসার ৮০ ভাগ ছাত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতীয় সংঙ্গীত গাওয়া ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। মাদ্রাসার শতকরা ৯০ ভাগ ছাত্র কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি এবং পাঠ্যসূচির সংঙ্কার চায়। নিন্মে কয়েকজন ছাত্রের বক্তব্য তুলে ধরা হলো
আল জামিয়া নছিরুল ইসলাম নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার (জামাতে কামেলাইন) এর ছাত্র মুহাম্মদ সেলিম, পিতাঃ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, গ্রামঃ দাঁতমারা, থানাঃ ভূজপুর, জেলাঃ চট্টগ্রাম, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন বর্তমান কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সংস্কারের প্রয়োজন মনে করি। এ শিক্ষা আধুনিক ও যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি। যত দ্রুত সম্ভব সরকারের নিকট দাবি এ শিক্ষাকে পরিবর্তন করে আধুনিকায়ন করা হোক।
কওমি সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের কওমি শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় আমরা আজকে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও শিক্ষা শেষে সেই শিক্ষার কোন মূল্যায়ন করা হয় না স্বীকৃতি না থাকার কারণে। কওমি মাদ্রাসা পাঠ্যসূচিতে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না থাকা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যে দেশের নাগরিক বলে দাবি করি, সেই দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার কোন ব্যবস্থা না থাকার কারণে দেশপ্রেম আমাদের কার্যক্রমে প্রকাশ পায় না। আমি মনে করি, পাঠ্যসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
মুহম্মদ সেলিম জাতীয় সংগীত গাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের শিক্ষকগণ জাতীয় সংগীত গাওয়া হারাম মনে করেন তাই আমি জাতীয় সংগীত গাওয়ার পক্ষে নই।
তিনি জাতীয পতাকা উত্তোলন বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, জাতীয় পতাকা হচ্ছে এই দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। জাতীয় পতাকা উত্তোলন মানে স্বাধীনার পক্ষে কথ বলা। পতাকা একটি দেশের পরিচিতি বহন করে। সুতরাং আমি জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পক্ষে শতভাগ মত পোষণ করি।
আল-জামিয়া ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমূল উলুম পটিয়া মাদ্রাসার ২০১২ শিক্ষাবর্ষের দাওয়ায়ে হাদিস (টাইটেল) এর ছাত্র হাফেজ মুহাম্মদ আবদুল মুবিন, পিতাঃ মুহাম্মদ ইউছুফ, গ্রামঃ কোদালা ধোপাঘাট, থানাঃ রাঙ্গুনিয়া, জেলাঃ চট্টগ্রাম, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার বিষয়ে বলেন, কওমি শিক্ষা সংস্কার পরিবর্তন অপরিহার্য। কিছুটা সংস্কার আমাদের পটিয়া মাদ্রাসায় হয়েছে। তা কিন্তু খুব বেশি না। আরো ব্যাপক হারে পরিবর্তন এনে যুগোপযোগী করতে হবে। কওমি মাদ্রাসার সার্বিক বিষয়ে বলেন আমি এখানে দু’একটা বিষয় খুব সমস্যা বলে মনে করি, তা হলো আমাদের থাকা-খাওয়ার যে ব্যবস্থা আছে তা পরিবর্তন করতে হবে। যেমন ছাত্রদের ফ্লোরে ঘুমানো এবং ছাত্রদের ডাল ভাত আর শিক্ষকদের মাছ-মাংস এসব আমার ভালো মনে হয় না।
তার কাছে কওমি সনদের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, সরকারি সনদ অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন। স্বীকৃতি না থাকার কারণে আমরা কিন্তু সমাজে পিছিয়ে আছি, আমরা দেশ ও জনগণের কোন কাজে আসছি না। আমাদের নেতাদের দলাদলির কারণে আমরা সনদের স্বীকৃতি পাচ্ছি না। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়া হোক।
মোহাম্মদ আব্দুল মুবিন কওমি মাদ্রাসার পাঠসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংকলনের প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যে দেশের নাগরিক সে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের সাঠিক ইতিহাস অবশ্যই থাকতে হবে একটি স্বাধীন দেশের ইতিহাস পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি বলে মনে করি। জাতীয় সংগীত গাওয়ার বিষয়ে বলেন, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের একটি জনপ্রিয় গানকে সরকারিভাবে জাতীয় সংগীত ঘোষণা করেছে বিধায় আমাদের উচিত জাতীয় সংগীত গাওয়া। জাতীয় পতাকা উত্তোলন বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আর পতাকা হচ্ছে তার একটি অনন্য প্রতীক। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে বাধ্য করতে হবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে।
আল-জামিয়া ইসলামিয়া কাসেমূল উলূম চারিয়া মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন কওমি মাদ্রাসার প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক পুরনো। এই শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এই সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার সাথে সমন্বয় করা সময়ের চাহিদা। শত বছর আগের এই শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করা অনেক আগেই দরকার ছিল। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সংস্কারতো দূরে থাক; সংস্কারের কথা বললেই অনেকের গায়ে জ্বালা শুরু হয়।
সরকার যদি এ শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তাহলে আমরা জাতির কল্যাণে অবদান রাখতে পারবো। কওমি শিক্ষার সনদের সরকারি স্বীকৃতি না থাকার দরুন দীর্ঘ এক যুগ শিক্ষা সমাপ্ত করে সেই শিক্ষা আমার আজ কোন কাজে আসেনি। আমরা সমাজের সকল স্তরে অবহেলিত। কওমি পাঠ্যসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার কোন রকম সুযোগ নেই। আমি সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে, এ-বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এটা ভাবতেও অবাক লাগে যে, একটি স্বাধীন দেশে বিভিন্ন রকমের শিক্ষা বিদ্যামান। সুতরাং আমি মনে করি, কওমি শিক্ষার প্রতি অবহেলা করা ঠিক নয়। এখনি এ-শিক্ষা সংস্কার করে যুগোপযোগী ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমি জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পক্ষে।
আল-জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসা ফটিকছড়ির ছাত্র হাফেজ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন যুগ যুগ ধরে যেভাবে কওমি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে আধুনিক সেটা সমাজে এটা মানানসই নয়। কেননা কওমি মাদ্রাসার হাল হকিকত অত্যন্ত নাজুক। ছাত্রদের থাকা-খাওয়া এবং শিক্ষার কোন মানসম্মত পরিবেশ বলতে কিছু নেই। শিক্ষা সংস্কারের বিষয়ে বলেন কওমি শিক্ষার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। উর্দু, ফার্সি ও আরবি ছাড়াও মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষা পাঠদানের ব্যবস্থা করা দরকার। আমরা মাতৃভাষায় অনেক দুর্বল।
কওমি শিক্ষার সরকারি কোন স্বীকৃতি নাই শত বছর যাবৎ। আমি মনে করি এ-শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করে সরকারি স্বীকৃতি দেয়া জরুরী। বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা অর্জন করে দেশ ও সমাজের কোন উপকার হচ্ছে না। মাদ্রাসা-মসজিদ ছাড়া কোথাও চাকরির কোন বন্দোবস্ত নেই।
এক কথায় বলতে গেলে, কওমি মাদ্রাসা পাঠ্যসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান সংযোজন করা খুবই প্রয়োজন। জাতীয় সংগীত গাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন আসলে আমি নিজেও জানি না কেন আমাদের কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। আমি মনে করি না জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্যে কোন অসুবিধা রয়েছে। আমি অবশ্যই এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।
আল-জামিয়া ইসলামিয়া জামিরিয়া কাসেমূল উলূম, পটিয়া, চট্টগ্রাম মাদ্রাসার ২০১২ শিক্ষাবর্ষের দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) এর ছাত্র হাফেজ আজগর হোসাইন (রাজী) বলেন কওমি এ শিক্ষা শত বছর পুরনো। এই শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সময়ের দাবি। এটা শুধু আমার দাবি নয়, এই শিক্ষা সংস্কার করা কওমির ৮৫% ছাত্রের দাবি। এ দাবি হযরত খতিবে আজম সিদ্দিক আহমদ সাহেব অনেক বছর আগে রেখে গেছেন। আমাদের এ পটিয়া মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক মরহুম হারুণ ইসলামাবাদী এ শিক্ষা সংস্কারের জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি শুরু করলেও পরিপূর্ণতা দিয়ে যেতে পারেননি। এটা দুঃখের বিষয়। এই পুরনো শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করে দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে সিলেবাস গঠন করা খুব দরকার বলে মনে করি। সেই সঙ্গে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি দিয়ে কওমি বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে সরকার এবং দেশের জনগণের গুরুত্বপূর্ণ কাজে আনার ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি।
কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আসলে আমাদের এখানে বিশেষ দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু প্রত্যেকদিন উঠানো হয় না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতে কিছুই আমাদের সিলেবাসে নেই। অথচ আমরা অনেকবার শুনেছি। আমাদের শিক্ষকরা গর্ব করে বলেন, পটিয়া মাদ্রাসায় নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান এসেছিলেন। এটা যদি গর্ববোধের হয়, তাহলে আমার অভিযোগ কেন কওমি সিলেবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকবে না? শুধু সিলেবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নয়, এই কওমি সিলেবাসে বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, ইংরেজি, অংক সহ সব বিষয়ে আমাদের জানা থাকা দরকার। আমরা এদেশের নাগরিক হয়েও অনেক পিছিয়ে পড়েছি। দেশ ও দশের কোন কাজে আসতে পারছি না। সুতরাং আমি চাই, হুসাইন আহমদ মাদানী, খতিবে আজম সিদ্দিক আহমদ, সামশুল হক ফরিদপুরী সহ যারা কওমি সংস্কার এবং সিলেবাসের পরিবর্তন চেয়েছেন, তাঁদের অসম্পূর্ণ কাজকে বর্তমানে আমাদের মুরুব্বি যারা আছেন, দলাদলি না করে সংস্কার এবং সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।
জামিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম ২০০৫-২০০৬ ইং দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) এর ছাত্র হাফেজ মুহাম্মদ নেজামূল করিম বলেন কিছু কিছু বিষয় পরিবর্তন করলে ভালো হয়। বাংলা, ইংরেজি ও অংকের সঙ্গে বিজ্ঞানের সংযোজন করা দরকার। আমরা বাংলা, ইংরেজির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে নিজেরা চেষ্টা করেছি কিছু শিখার। কিন্তু আমাদের মাদ্রাসায় বিষয়গুলো কোন গুরুত্ব বহন করে না। সনদের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাঁর কছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সনদ না থাকার কারণে কওমি হাজার হাজার ছাত্র আজ অবহেলিত। আমার বাবা আমাকে সনদের প্রয়োজন আছে বলে, বাহিরে সরকারি মাদ্রাসায় ফরম ফিলাপ করিয়েছিলেন। আমি যথারীতি দাখিল-আলিম পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিন্তু আমার খুব কষ্ট হয়েছিল, কওমি মাদ্রাসা থেকে চুরি করে সরকারি পরীক্ষা দেয়া খুব কষ্টের। জানতে পারলে কওমি মাদ্রাসা থেকে নাম কেটে দেয়া হয়।
এরপরও অনেক চেষ্টা করে পরীক্ষা দিয়েছিলাম এবং যথারীতি আমার রেজাল্ট ভালো হয়েছিল। এটা বলার কারণ হলো আমার মত অনেক ছাত্ররা চায় কওমি সংস্কার এবং সনদের স্বীকৃতি। কওমি ছাত্ররা খুব মেধাবি। কিন্তু আজ আমাদের কিছু নেতারা এটা নিয়ে অনেক দলাদলি করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় কিনা জানতে চাইলে, বলেন আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর কাছে যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কথা শুনতাম তখন আমার অনুভব হতো আজ যদি আমাদের কওমি সিলেবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকতো এবং পড়ানো হতো তহলে ভালো হত। কিন্তু আমাদের তো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় না। ইতিহাস না শুধু, এমন কি জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় না, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। আমি জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পক্ষে।
আল-জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসার ফটিকছড়ি দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) এর ২০০৫ সালের ছাত্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন থাকা খাওয়া একটু সমস্যাতো আছেই। এরপরও আমরা মেনে নিই। কিন্তু আর একটু পরিবর্তন হলে ভালো হয়। যেমন প্রত্যেক বেলায় ডাল ভাত দিয়ে কি চলে? শিক্ষা সংস্কারের ব্যাপারে তিনি বলেন আমরা কওমি শিক্ষার সংস্কার চাই। যে উদ্দেশ্যে এ-কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত তা যেন হারিয়ে না যায়। সনদের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন কওমি মাদ্রাসা সরকারি সনদের স্বীকৃতি অবশ্যই প্রয়োজন। আজ কওমি সনদ না থাকার কারণে আমরা কোথাও সরকারি কোন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছি না। আজ যদি সরকারি সনদের স্বীকৃতি থাকতো আজ দ্বীনের বাণী আমরা সেখানে পৌছিয়ে দিতে পারতাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের এখানে পড়ানো হয় না। পড়ানো উচিৎ বলে মনে করি আমি। জাতীয় পতাকা বিভিন্ন দিবসে উত্তোলন করা হয়। প্রত্যেক দিন হয় না।
আল-জামিয়া কুরআনিয়া তালিমুদ্দিন মাদ্রাসা, বিবিরহাট, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম জামাতে কামেলাইন (ফাজিল ১ম বর্ষ) ২০০৪-এর ছাত্র হাফেজ তৈয়ব বলেন আমি আমার ছাত্রজীবনে অনেক কিতাব বুঝিনি। সুতরাং আমি চাই কিছু কিতাব পরিবর্তন অপরিহার্য। আমি বুঝিনি তা না, আমার মত অনেক ছাত্র আছে তারা আদৌ ঐ কিতাবের প্রয়োজন আছে মনে করেন না। শিক্ষা সিলেবাস সংস্কার করে সনদের স্বীকৃতি অবশ্যই বাধ্যতামূলক, কারণ আমার একটা অভিজ্ঞতা আছে, আমি আমেরিকায় ডিভি ভিসা পেয়েও যেতে পারিনি সনদ না থাকার কারণে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জানা থাকা ভালো, না হয় আমরা এ দেশের নাগরিক হলাম কিভাবে। জাতীয় সঙ্গীত আমি সমর্থন করি না, কিন্তু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা প্রয়োজনএ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে।
আল-জামিয়া এমদাদুৃুল ইসলাম কাজির হাট মাদ্রাসা ভুজপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম, জামাতে কামেলাইন (ফাজিল ১ম বর্ষ)- এর ছাত্র মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন বলেন আমার মতে কিছুটা সংস্কার প্রয়োজন। যদি আমাদের নেতারা ভালো মনে করেন তাহলে তাঁরা সংস্কার করবেন। আমি সংস্কারের কথা বলেই বা কি লাভ? সনদের স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে তার উত্তরে তিনি বলেন, স্বীকৃতির জন্য স্বীকৃতি দিয়ে লাভ কি বলেন, হাজার হাজার কলেজ-ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা আজ বেকার। এখানে আমাদের স্বীকৃতির কাজে আসবে বলে আমার মনে হয় না। আমরা এখানে লেখা পড়া করি আল্লাহকে পাওয়ার জন্য। এরপরও দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতিটা দিলে ভালো হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো আমাদের জানা দরকার। কওমি সিলেবাসে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি। জাতীয় সঙ্গীত কেন গাইবো? এটা তো একটা গান মাত্র। আমরা কুরআন হাদিস শিক্ষা করি, গান বাদ্য নয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যেতে পারে। এতে আমার কোন আপত্তি নেই।
আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাদানিয়া শোলকবহর মাদ্রাসা, পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম জামাতে উলা (দাখিল ১ম বর্ষ)-এর ছাত্র ২০০৪ বলেন সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার আগে কওমি ওলামায়ে কেরামরা এক হয়ে শিক্ষা সিলেবাসের কিছু অংশ সংস্কার করতে হবে। এখন স্বীকৃতি দিয়ে লাভ নাই। এ সিলেবাসে মায়ের ভাষা বাংলা নাই, আন্তজার্তিক ভাষা ইংরেজি নেই। হিসাব নিকাশের বেলায় যে জিনিসটা খুব বেশি দরকার সে অংক। যা আছে অল্প, তা দিয়ে কি হয়? অভিযোগ করতে গেলে অনেক। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানি না। এটা খুর লজ্জার বিষয়। জাতীয় পতাকা বিশেষ দিবস ছাড়া উঠানোই হয় না।
জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল মাআরিফ চাঁদগাও, চট্টগ্রাম দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল/টাইটেল)-এর ছাত্র মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন বলেন কওমি শিক্ষা সংস্কার এটা শুধু আমার দাবি নয়। এ সংস্কার বাংলাদেশের অধিকাংশ ছাত্রের প্রাণের দাবি। এ দাবির জন্য আমাদের অত্র মাদ্রাসার মহাপরিচালক সুলতান যওক নদভী সাহেব শিক্ষা সংস্কারের ডাক দিয়েছিলেন, তখন আমার জানামতে উনাকে কাফের ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল। তিনি তথাকথিত কওমি শিক্ষা সংস্কার করার লক্ষে উজ্জ দারুল মাআরিদ প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের এ-মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ে শিক্ষা দান পদ্ধতি চালু আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সহ আরো কিছু পরিবর্তন করলে আমার মতে ভালো হয়। আমি চাই দারুল মাআরিফের মত প্রত্যেক কওমি মাদ্রাসায় বর্তমান শিক্ষা সিলেবাস পরিবর্তন করা হোক।
এরপরে আমরা সনদের স্বীকৃতি চাইতে পারি সরকারের কাছে। কওমি শিক্ষা সনদের এমন ভাবে প্রয়োজন যেমন একটা চোখ না থাকা মানুষের চোখের প্রয়োজন। চোখ না থাকলে যেমন মানুষ দেখতে পায় না তেমনি ভাবে কওমি সনদের স্বীকৃতি না থাকাতে আমরা সমাজের কোন কাজে আসতে পারছি না। শুধু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলে মসজিদে ইমামতি করলে কি ইসলামের দ্বায়িত্ব শেষ? রাষ্ট্র পরিচালনা হতে সমাজের প্রত্যেকটি কাজে কওমি আলেম ওলোমা ছাত্র-সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আগের আলেমরা কি করেছিলেন সেটা উদাহরণ দিলে চলবে না। বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। অতীব দুঃখের বিষয় আমাদের নেতারা সেটা কানেও নিচ্ছে না। কওমি ওলামাদের দলাদলির কারণে যদি কওমি শিক্ষা সংস্কার এবং সনদের স্বীকৃতি আমরা কওমি ছাত্ররা না পাই; তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। আমরা এদেশের নাগরিক বলে দাবি করি তাহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে আমাদের অসুবিধা কোথায়।
মজাহেরুল উলুম মাদ্রাসা বাকলিয়া, চট্টগ্রাম জামাতে কামেলাইন-এর ছাত্রঃ (ফাজিল ১ম বর্ষ) মুহাম্মদ আতাউল্লা কুতুবী বলেনÍ সংস্কার বলতে তেমন বেশি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি না, কারণ আমাদের কওমি শিক্ষাটা হলো প্রকৃত কুরআন হাদিসের শিক্ষা এটা যদি বেশি পরিবর্তন হয় তাহলে আমার মনে হয় কওমি স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে যাবে। তবে নেতারা যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে অন্য কথা। আমাদের সনদের স্বীকৃতি তো খুব প্রয়োজন, কারণ সরকারি স্বীকৃতি না থাকলে আমাদের লেখা পড়ার মূল্যায়ন হবে কিভাবে? কওমি সিলেবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকতে পারে কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত নয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার মধ্যে আমি কোনো অসুুবিধা দেখি না।
আল-জামেয়াতুল ইসলামীয়া কাছেমুল উলুম মাদ্রাসা, চারিয়া, হাটহাজারী চট্টগ্রাম- এর ছাত্র মুহাম্মদ শাহাবউদ্দীন বলেনÍ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার ও সনদের সরকারি স্বীকৃতি বর্তমান সময়ের জন্য কেবল প্রয়োজন নয়, আমি মনে করি ফরজে আইন। বর্তমান প্রচলিত কওমি শিক্ষা কার্যক্রম পাঠ্যসূচি অতি পুরনো, যুগের সাথে কিছুতেই মিলছে না। যার কারণে আমরা কওমি শিক্ষিতরা খুব পিছিয়ে পড়ছি। শুধু মসজিদ-মাদ্রাসায় চাকরি করা ছাড়া আমাদের কোন সুযোগ নেই। সমাজে আমরা সবার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছি। আমি মনে করি বর্তমানে কওমি পাঠ্যসূচি সম্পূর্ণ পরির্বতন করে নতুন নতুন বিষয়বস্তু সংযোজন করে সরকারিভাবে সনদের স্বীকৃতি দিলে অনেক উপকারে আসবে।
কওমি পাঠ্যসূচিতে ইসলামের ইতিহাস যেমন স্থান পাবে ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও স্থান দিতে হবে। একটি স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার মধ্যে আমি মনে করি দেশপ্রেম জড়িত। আশা করি এ ব্যাপারে সরকার ও আমাদের কওমি ওলামায়ে কোরামগণ সজাগ হবেন।
আল-জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা জিরি, পটিয়া, চট্টগ্রাম- এর ছাত্রঃ মুহাম্মদ জাফর আলম, পিতাঃ আবুল মুনছুর, গ্রামঃ মালিয়া পাড়া, জিরি, চট্টগ্রাম। তিনি বলেন কেবল কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার নয়, পুরো কওমি মাদ্রাসার সকল দিক পরিবর্তন করা অব্যস্ত প্রয়োজন মনে করি।
কওমি শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি না থাকার অভাব আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যার কারণে শিক্ষা শেষে অে কে অকেজো ও বেকার হয়ে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক কিতাব সমূহের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় না। যেমন উর্দু, ফার্সি ভাষার বহু কিতাব রয়েছে যেগুলো পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দিয়ে আধুনিক বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থ তালিকাভুক্ত করা দরকার এসে গেছে মনে করি। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে পড়ার ব্যবস্থা রাখলে আরো ভাল হবে।
হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাহ) মাদ্রাসা, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার-এর ছাত্র মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেনÍ শিক্ষা সংস্কার ও পরিবেশের পরিবর্তন এমুহূর্তে প্রধান কাজ মনে করি। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমার বাবা ও বড় ভাইয়েরা সমাজের কোথাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এটা দেখে আমি খুবই মর্মাহত, যার কারণে আমি চাইবো, এ শিক্ষা শেষে আমার অবস্থা যেন তাদের মত না হয়। সরকার যদি কওমি সনদের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করে তাহলে আমরা যারা বর্তমানে লেখা পড়ায় নিয়োজিত রয়েছি আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে বলে মনে করি। বিশেষ করে আমার চাওয়া-পাওয়া হলো, বর্তমান কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার সুযোগ করে দেওয়া। আরো একটি বিষয় দেখে খুবই মর্মাহত হই সেটা হল, এখনো আমাদের কওমি মাদ্রাসায় উর্দুর মাধ্যমে পাঠদান দেওয়া হয়। বাংলা হোক আমাদের পাঠদানের প্রধান ও একমাত্র ভাষা।
আল-জামিয়াতুল আরবিয়া নছিরুল ইসলাম (নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা), ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম এর ২০১৩ সালের দাওরায়ে হাদিসের ছাত্র মুহাম্মদ আবু মনছুর বলেন আমাদের মাতৃভাষা হল বাংলা। কিন্তু আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে কওমি পাঠ্যসূচিতে বেছে নিয়েছি উর্দু ভাষাকে। দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের শিক্ষকরা, এখনো সচেতন হননি। আমি চাই আমাদের পাঠ্যসূচির ভাষা এবং কিছু সিলেবাস যেন পরিবর্তন হয়। যে সিলেবাস আদৌ আমাদের প্রয়োজন বলে আমি মনে করি না। সিলেবাস পরিবর্তন করে এখানে সংযুক্ত করতে হবে বাংলা, ইংরেজি এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তারপর আমরা দাবি করতে পারি কওমি সনদের স্বীকৃতি এবং স্বীকৃতি প্রয়োজনও বটে। সরকারের উচিৎ হবে কওমি শিক্ষা সিলেবাস সংস্কার করে সনদের স্বীকৃতি দেয়া। যেমন স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত-পাকিস্তান। জাতীয় সঙ্গীতের কিছু সমস্যা থাকলেও জাতীয় পতাকা প্রত্যেক দিন উত্তোলন করতে হবে। যদিও কিছু কিছু দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। আমরা যেহেতু এই দেশের নাগরিক, তাহলে আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে অসুবিধা কোথায়? জাতীয় পতাকাতে আমি কুরআন হাদিস বিরোধী কিছু দেখছি না। এটা আসলে একটা দেশের প্রতীক।
আল-জামিয়াতুল আরবিয়া নছিরুল ইসলাম (নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা), ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম দাওরায়ে হাদিস (মাষ্টার্স) এর ছাত্র মুহাম্মদ মাহফুজুল করিম (মাসুম) বলেন শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে, আমরা যে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করছি, এ-শিক্ষা শত শত বছর পুরনো। আমার জানতে ইচ্ছা হয় দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন ছিল। যদি যুগের চাহিদা অনুযায়ী তখন শিক্ষা সিলেবাস পরিবর্তন করা যায়, তাহলে এখন কেন নয়?
সনদের বিষয়ে বলেন সনদের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু সরকারতো আমাদের সনদের স্বীকৃতি দিবে না। তাদের কিছু দাবি দাওয়া থাকবেÑ আমাদেরও কিছু ছাড় দিতে হবে। যেমন সরকারের একটা দাবি হলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কওমি সিলেবাসে সংযোজন করা। এ দাবির সাথে আমি একমত। আজ আমরা বাঙালী হিসেবে নিজেকে দাবি করি; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা থাকবে না এটা কেমন করে হয়! জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত দু’টাই কওমি মাদ্রাসায় থাকা দরকার। কারণ আমরা যেহেতু এ দেশের নাগরিক। যদিও জাতীয় সঙ্গীতের ব্যাপারে আলেম ওলামাদের দ্বিমত আছে।
আল-জামিয়া আল ইসলামিয়া জামিরিয়া কাসেমুল উলুম, পটিয়ার দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) এর ছাত্র মুহাম্মদ হানিফ বলেন আমি চাই আমাদের বর্তমান সিলেবাস থেকে উর্দু, ফার্সী বাদ দিয়ে তার জায়গায় যেন বাংলা, ইংরেজিকে স্থান দেয়া হয়। এ ছাড়া অনেক বিষয় পরিবর্তন করা যেতে পারে। অবশ্যই প্রশংসনীয় বিষয় হলো পটিয়া মাদ্রাসাসহ কিছু কিছু মাদ্রাসায় কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। আরো সংস্কার ও পরিবর্তনের দরকার, তবেই আমরা উপকৃত হবো। এখন আমরা শিক্ষায় এবং ভাষাগতভাবে সাধারণ শিক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। কওমি আলেম ওলামারা, ছাত্র-শিক্ষকরা কিন্তু প্রত্যেকদিন আন্দোলন করছে কওমি সনদের স্বীকৃতির জন্য। সনদ দিয়ে কি করব? যদি শিক্ষার মান উন্নয়ন না হয়। আগে মান উন্নয়ন তারপর সনদের স্বীকৃতি, জাতীয় পতাকা কিন্তু উঠানো হয়। তবে প্রত্যেকদিন নয়। প্রত্যেকদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলনে কেনো সমস্যা আমি দেখি না। আমরা এ দেশের নাগরিকÍ কওমি বলেন আর যাই বলেন সবাই এ দেশের নাগরিক, সুতরাং কওমিদের উচিৎ হবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো সবার জানা থাকা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হলে তো, ইতিহাসের বই পড়তে হয়। আমাদের কওমি মাদ্রাসায় সিলেবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় না। কওমি সিলেবাস সংস্কারের করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংযুক্ত করা অপরিহার্য।
আল-জামিয়াতুল কুরআনিয়া তালিমুদ্দীন মাদ্রাসা বিবিরহাট, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রামএর ছাত্র ক্বারী নিজামুদ্দীন বলেন কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের থাকা-খাওয়া খুব বেশী সমস্যা, যেমন ফ্লোরে থাকতে হয়। খেতে হয় শুধু ডাল ভাত, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন যাপন করতে হয়। এখানে প্রতিবাদ করার কেনো সুযোগ থাকে না। সনদের ব্যাপারে তিনি বলেন, কওমি সনদের স্বীকৃতি আমি কেন সব ছাত্ররা চাই। কিন্তু তার আগে আমি মনে করি, কওমি সিলেবাস সংস্কার। যেখানে থাকবে যুগোপযোগী শিক্ষা, থাকবে বাংলা, ইংরেজি, থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। উত্তোলন করতে হবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। জাতীয় সঙ্গীতের বিষয়ে অবশ্য আলেমদের দ্বিমত আছে। তবে আমরা অবশ্যই চাইতে পারি আমাদের সনদের সরকারি স্বীকৃতি, যাতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা দেশের কাজে আসতে পারে। অন্যথায় স্বীকৃতির কেনো কাজে আসবে বলে আমার মনে হয় না।

মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশনের শ্বেতপত্র- বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ৮০০ দিন
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×