ফেসবুকে লাইফের অর্থ কিব্জানতে চেয়ে করা একজনেরর স্টেটাসে নিচের লম্বা মন্তব্যটি করেছিলাম। ব্লগার ভাইদের জন্য শেয়ার দিলাম।
আমাজন মিনিং অব লাইফ ক্যাটাগরিতে একলক্ষ পঞ্চাশ হাজারে বেশি বই লিস্টেড করছে, লাইফের মিনিং বের করা এতো সহজ হইলে এতো এতো বই এই টপিক নিয়া লেখা হইতোনা। আমিও নিজের মতো চেস্টা করলাম।
বিজ্ঞান বলে শক্তির বিনাশ নাই, শক্তি শুধু তার ফর্ম চেঞ্জ করে। আমাদের বাপেরা ভাত খাইছে, আম খাইছে, মাছ খাইছে , এইগুলা তার শরীরে শুক্রাণু জন্মাইতে সাহায্য করছে পরে সেই শুক্রাণু থেকে আমাদের জন্ম হইছে, মানে আমরা একসময় ভাতে আমে মাছে ছিলাম পরে মানুষ হইছি একসময় মইরা যাইমু, পইচা সার হইয়া আরেকটা আমগাছরে বড় হইতে সাহায্য করমু। মানে আমি এই মহাবিশ্বের এক অংশ, আমার বিনাশ নাই। তো এই মহাবিশ্বের অংশ হিশেবে এর প্রতি আমার প্রধান দায়িত্ব হইলো আমার সহযাত্রীদের সাহায্য করা, তার ঠিকে থাকায়, বেড়ে উঠায় এছাড়াও আরও দায়িত্ব আছে।
আমার শরীরকে আমার রুহ বা আত্মা ২০/৪০/৬০ বছরের জন্য এই দুনিয়ায় ঠিকে থাকার জন্য "ভাড়া" নিছে, যখন আত্মার কাম শেষ তখন এই শরীর ছেড়ে আত্মা চলে যাবে। তো লাইফ বলতে এই ২০/৪০/৫০ বছর ধরলে এইটার মিনিং নাই, আর আত্মারে লাইফের অংশ মনে করলে মরার মধ্যে দিয়া লাইফের ইতি না, কারণ আত্মার বিনাশ নাই, মৃত্যু এই দুনিয়া ছেড়ে আরেক দুনিয়ায় যাওয়ার রাস্তা মাত্র। আমি যখন জানি যে কালকে আবার এই অফিসে কাজে আসতে হবে তখন আমি বসের সাথে দুর্ব্যবহার করবো না, কিন্তু যখন আমি কাজ ছেড়ে দেই তখন বসকে দুয়েকটা কথা শুনিয়ে আসাই যায়, কারণ কাল থেকে আমি আর কাজে যাচ্ছি না। তো মইরা যাওয়া মানে "কাজ" শেষ তা না। পরদিন আবার কাজে যেতে হবে, অফিস তার বিল্ডিং বদলাইছে, বস আগেরজনই আছে। তো মিনিং হইতেছে বসরে খুশি রাখা।
আমরা সবাই একেকটা দায়িত্ব নিয়া জন্মাইছি, সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করাই আমাদের কাজ, এখন প্রশ্ন হলো আমি কোন দায়িত্ব নিয়া জন্মাইছি বা আমারে কি দায়িত্ব দেওয়া হইছে সেটা বুঝবো ক্যমনে? অনেকে বলবে সে কি দায়িত্ব নিয়া জন্মাইছে তা খুইজা পাইতেছে না, অনেকে বলবে তার উপর একাধিক দায়িত্ব পড়ছে, যা অন্যায়।
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বাইর করা খুবই কস্টের। যা একেবারে পানির মতো সহজ হয়ে যায় যদি আপনি বিশ্বাসী হন। বিশ্বাসীদের কাছে "লাইফের মিনিং" তো সহজই "লাইফ" জিনিসটা কি সেটাও পানিভাত। অবিশ্বাসীদের কাছে জন্মের মাধ্যমে লাইফের শুরু আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি । কিন্তু বিশ্বাসীরা মনে করে অবিশ্বাসীদের এই "লাইফ" বা "আয়ুস্কাল" আসলে জার্নির একটা অংশ মাত্র। জার্নির শুরু হইছে যেদিন ইশ্বর এঞ্জেলদের কইছিলো যে আমি মানুষ পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি পাঠাইতে চাই (মানুষ বলেনাই কিন্তু)। এক হাদিসে আছে "আল্লাহ আদমরে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করছে", আরেক হাদিসে আছে "তোমরা আল্লাহর গুনে গুণান্বিত হউ"। তো আমরা দুনিয়াতে ইশ্বরকে রিপ্রেজেন্ট করতেছি, কাজগুলোও ইশ্বরের রিপ্রেজেনটেটিভের মতো হওয়া উচিত, শুয়োর বানর গরু ছাগল ইশ্বরের রিপ্রেজেনটেটিভ না, আমাদের কাজ তাদের মতো হলে হবেনা।
তো রুহ বা আত্মা বানাইয়া পরে আদমের মাধ্যমে বলেন আর আম জাম কাঠালের মাধ্যমে বানানো শরীরে সেই রুহ স্থাপন করছে। এখন লাইফ বলতে যদি শরীর বুঝি তাইলে তো মরার পরে খেল খতম । আর আত্মা বা রুহের কনসেপ্ট মানলে শুরু হইছে অনেক আগে, আল্লাহ রুহ বানাইছে, বানাইয়া ওয়াদা করাইছে দুনিয়ায় গিয়া ফ্যাসাদ সৃষ্টি না করার, পরে সময়মতো পয়দা হইছি, সারাজীবন ভালো মন্দ কাম কইরা শারীরিক মৃত্যুর পর আরেক জগতে প্রবেশ করছি, এই জগতে আর কোনো দায়িত্ব নাই, এই জগত ফলাফলের । আগের জগতে যা যা করছি তার উপর ভিত্তি করে ফেরদাউস আর নাহয় হাবিয়া। লাইফ হইতেছে পরিক্ষা ।
এইটাই মিনিং, পরিক্ষা, এইভাবে ভাবলে জীবন সহজ লাগে, স্ট্রেস ফ্রি থাকা যায়, চিল করা যায়। নিকটাত্মীয় কেউ মরলে খুববেশী খারাপ লাগে না, নিজের মৃত্যু নিয়া ভয় লাগেনা । মনেহয় আরও ২০/৩০ বছর (হতে পারে কালকেও) পর তো তাদের সাথে দেখা হবেই, তার জার্নি বাই প্লেন হইছে, আমি বাসে আছি, যাইতে টাইম লাগতেছে। এখন প্রশ্ন হইতেছে তার সাথে দেখা কোন সারকামস্ট্যান্সে হবে। আমি চাইবোনা হাবিয়াতে দুইজনের সাক্ষাৎকার হোক। তাই তার বেহেশতের জন্য দোয়া করি, আর নিজের বেহেশতেরও, যাতে সেখানে আবার দেখা হয়, আর ইশ্বরের প্রতিনিধি হিশেবে যা যা দায়িত্ব আছে পালন করার চেষ্টা করি, অন্যের ক্ষতি না করা, যত সম্ভব অন্যকে সাহায্য করা । এই যা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৩৩