somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদশে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ভয়াবহতা,ব্যাপ্তি এবং এর চিকিৎসা নিয়ে কিছু কথা

২৫ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রেষ্ট ক্যান্সার কি?
ব্রেষ্টের কোন টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যা পার্শ্ববতী স্বাভাবকি টিস্যুর সঙ্গে অসগিতিপূর্ণ এবং প্রারম্ভিক স্টিমুলেশন বন্ধ হয়ে গেলেও ঐ টিস্যুর আগ্রাসীমূলক বৃদ্ধি বন্ধ হয় না এমন কোন টিউমার কে ব্রেষ্ট ক্যান্সার বলা হয়।


পৃথিবীতে এবং আমাদের দেশে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ব্যাপ্তি --
প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২ লক্ষ মহিলা ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার মহিলা প্রতি বছর মৃত্যুবরণ করছন। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২২০০০ মহিলা ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছন। জরায়ু মুখের ক্যান্সারের পরই এর স্থান। ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পযন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৬.৭৪% ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। ১৯৯৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ২৪.৪৩% ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। একই ভাবে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পযন্ত ৫ বৎসরে আগত ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৫.০৫% ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত । ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পযন্ত ১০ বৎসরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৮.২২% ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী। এতে করে সহজেই বোঝা যায় আমাদরে দেশে এর ভয়াবহতা কত।

সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসায় ব্রেষ্ট ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা প্রায় ১০০ ভাগ কিন্তু চিকিৎসা না করালে মৃত্যুর ঝুঁকিও ১০০ ভাগ।

ব্রেষ্ট ক্যান্সারের কারণ কি?
ব্রেষ্ট ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ এখনও জানা যায় নি। তবে বেশ কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর জানা গেছে এবং সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয়ের জন্য গবেষণা চলছে। সম্প্রতি নির্দিষ্টি একটি জিন আবিষ্কৃত হয়েছে ফলে আশা করা যাচ্ছে অচিরেই এই রোগের আরও উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হবে।

রিস্ক ফ্যাক্টর কাকে বলে?
রিস্ক ফ্যাক্টর হলো এমন কতগুলো ঘটনা যা মানুষের রোগাক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

ব্রেষ্ট ক্যান্সাররে রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো কি কি?

ব্রেষ্ট ক্যান্সাররে রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়

১) অপর্রবতিনীয় রিস্ক ফ্যাক্টর -

ক) আনুমানকি শতকরা ১০ ভাগ ব্রেষ্ট ক্যান্সারের কারণ কোন জিনের মিউটেশন।
খ) জেন্ডার বা লিঙ্গ - পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা ১০০ গুণ বেশী।
গ) বয়স - ২৫ বৎসর এর নীচে সাধারণত হয় না ।
২৫-৩০ ---- ০.৫%
৩০-৪০ ---- ৭.৫%
৪০-৫০ ---- ১৫%
৫০ বৎসরের উপরে ৭৭%।
ঘ) পারিবারিক - মহিলাদের মধ্যে যাদের মা, খালা বা মেয়ে এদের একজন ব্রেষ্ট ক্যান্সারে ভুগছেন সেইসব সুস্থ মহিলাদের ব্রেষ্ট ক্যান্মারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ১.৫%-২%।
যাদরে মা, খালা বা মেয়ে এদের দুই জন ব্রেষ্ট ক্যান্সারে ভুগছেন তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্মারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৪% - ৬%।
ঙ) মেনস্ট্রুয়াল পিরিয়ড -- যাদের ১২ বৎসর বয়সের আগেই মাসিক শুরু হয় (মেনারকি) এবং ৫০ বৎসর বয়সের পরে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় (মেনোপজ) তাদরে ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশী।
চ) হরমোনাল ইমব্যালান্স -- যারা দীর্ঘ দিন অতিরিক্ত এস্ট্রোজেন হরমোনের এক্সপোজারে থাকেন এবং পোষ্ট মেনোপজাল মহিলা যাদের এস্ট্রোজনে রিসেপটর পজেটিভ তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশী। এমন কি আগে একটি ব্রেষ্টে ক্যানসার থাকলে অন্যটিতেও ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা থাকে।

২) পরিবর্তন যোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টর -
ক) সন্তান সংখ্যা - সন্তানহীন মায়েদের চেয়ে এক বা একাধিক সন্তান আছে এমন মায়েদের ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কম ।
খ) প্রথম সন্তানের বয়স - ৩০ বৎসর বয়সের পর গর্ভ ধারণ ব্রেষ্ট ক্যান্সাররে ঝুঁকি বাড়ায়।
গ) যারা জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়ি খান তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সাররে ঝুঁকি কিছু বেশী।
ঘ) খাদ্য তালিকা - প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চর্বি জাতীয় খাবার যেমন তৈলাক্ত মাংস, অতিরিক্ত ঘি জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড বেশী খেলে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
ঙ) ওজন - যে সব মহিলাদের তলপেটে পুরুষ দের মত চর্বি জমে তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সাররে ঝুঁকি বেশী। পোস্ট মেনোপজাল মহিলাদের মধ্যে যাদের ওজন বেশী তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশী।
চ) মদ্য পান -- যারা মদ্য পান করেন তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশী।
ছ) ব্রেষ্ট ফিডিং - এটা ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনকে কমায়।
জ) রেডিয়েশন - যে কোন কারনে যারা বিকিরণ এর শিকার হয়েছেন তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশী।
ঝ) শরীর চর্চা -- যারা সপ্তাহে অন্তত ৩/৪ দিন শরীর চর্চা করেন তাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কম।

ব্রেষ্ট ক্যান্সারের লক্ষণ -
ক) ব্রেষ্টের আকৃতির পরিবর্তন।
খ) ব্রেষ্টে এবং বগলে কোন গোটা বা চাকা হওয়া।
গ) ব্রেষ্টের চামড়ার রং ও নিপল এর পরিবর্তন।
ঘ) ব্রেষ্টের উপররে চামড়া কমলা লেবুর খোসার মত কুঁচকে যাওয়া এবং টোল পড়া।
ঙ) ব্রেষ্টের নিপল থেকে রস নির্গত হতে থাকা।
চ) নিপলের চারপাশে ফুসকুরি দেখা দেয়া।
ছ) নিপল ধীরে ধীরে ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।

ব্রেষ্ট ক্যান্সার র্সম্পকে নিজে সচতনে হন --

ক) অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করুন।
খ) নিজের উচ্চতা অনুপাতে ওজন জেনে নিন।
গ) নিয়মিত শরীর চর্চা করুন।
ঘ) ৩০ বৎসর বয়সের আগেই গর্ভ ধারনের পরিকল্পনা করুন।
ঙ) শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান।
চ) ২০ বৎসর বয়স থেকে পিরিয়ড শেষ হবার পর পরই নিজে নিজে ব্রেষ্ট পরীক্ষা করুন (ব্রেষ্ট সেলফ একজামিনেশন)। ৩ বৎসর পর পর ক্লিনিক্যাল ব্রেষ্ট একজামিনেশন করান।
ছ) ৪০ বৎসর বয়স থেকে ১-২ বৎসর অন্তর অন্তর ম্যামোগ্রাফি করুন। ১ বৎসর পর পর ক্লিনিক্যাল ব্রেষ্ট একজামনশিনে করান।

ব্রেষ্ট ক্যান্সার সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা --
ক) ব্রেষ্টের সব টিউমার বা গোটা বা চাকাই ক্যান্সার নয়।
খ) পিরিয়ডের আগে ব্রেষ্টে ব্যথা হতে পারে বা চাকা/গোটা অনুভব হতে পারে কিন্তু এটা ক্যান্সারের কোন পূর্ব লক্ষণ নয়।
গ) ব্রেষ্টের আকৃতির সঙ্গে ক্যান্সারের কোন র্সম্পর্ক নাই।

ব্রেষ্ট সেলফ একজামিনেশন করে আপনি যদি কোন চাকা বা গোটা পান তাহলে
কোন অনকোলজিষ্ট, সার্জন, গাইনোকোলজিষ্ট, অভিজ্ঞ জেনারেল প্র্যাকটিশনার বা আপনার ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান কে দেখান।


মনে রাখতে হবে ব্রেষ্টের বেশীর ভাগ চাকা বা পিন্ডের কারণ ক্যান্সার নয়।

মনে রাখবনে ক্যান্সার কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়।

ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু নয়।

প্রাথমিক অবস্থায় সু-চিকিৎসা করালে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের নিরাময় সম্ভব।

১০ বৎসর পূর্বের তুলনায় বর্তমানে অনেক উন্নত চিকিৎসা নেয়া সম্ভব এবং দীর্ঘ দিন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব।
প্রয়োজন শুধু একটু সচতনেতা।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১১:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"

এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমূদ্র-সৈকতে - ১৬

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯



ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁআআআচ্চুউউউ! :) :D ;)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৩৩



হাঁচতে নাকি জানে না কেউ,
কে বলেছে বোন
এই দেখোনা কত্ত হাঁচির
ওজন শত টন।

কিম হাঁচে বাড়া ভাতে,
বাইডেন হাঁচে তার সাথে সাথে,
লালচে চীনের জোরসে হাঁচি,
কাঁদে সবুজ ঘাস।
মাদার রুশের হাঁচি দেখে
হয় যে বনবাস!!

বনবিবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×