লক্ষী মেয়ে আমি!!
মদের গেলাসে ঠোঁট ছোঁয়াইনি,
যাইনি রেস্তোরাঁয় বারে,
পাড়া-প্রতিবেশী, পরিবার-স্বজন, তুমি,
সংবাদ শিরোনাম, পত্র পত্রিকা বলেছিলো,
ওই সব মেয়েরা মদ খেয়ে বেলাল্লাপনা করে বলেই ধর্ষিত হয়েছে,
নেশায় বেহুঁশ ছিল বলেই ওরা ধর্ষিতা হয়েছিলো।
যদি তোমাকে বলি,
সম্পূর্ণ হুঁশে ছিলাম যখন জোর করে চুমু দিয়েছিলে আমায়,
আঁচড়ে কামড়ে ছিন্নভিন্ন করেছিলে,
মুখে পুরে দিয়েছিলে মদের গন্ধ মাখা ঠোঁট,
উন্মত্ত তুমি ছিড়ে ফেলেছিলে শাড়ি-ব্লাউজ,
নেশাতুর শরীরে পুরুষত্ব নাকি পশুত্ব জেগে উঠেছিল,
না না চিৎকার, কাকুতি মিনতি সব উপেক্ষা করে
ধর্ষণ করেছিলে এই লক্ষ্মী মেয়েটা কে?
জ্ঞানী পুরুষ আমার...
অবলা হলেও অবুঝ তো নই আমি,
বুঝিয়ে দাও আমাকে
নেশা কেন তোমার জন্য ধর্ষণের অজুহাত
আর আমার ক্ষেত্রে ধর্ষণের আমন্ত্রণ?
রাতে বিরাতে বাইরে যেতে বারণ,
অন্ধকারে নাকি দানবেরা ওঁত পেতে থাকে!!
সন্ধ্যা নামতেই তাই ঘরের দুয়ার এঁটে বসে থাকি আমি...
যদি তোমাকে বলি
ওইসব কদর্য আঙ্গুলেরা কিলবিল করে দিনের আলোতেও,
রৌদ্রালোকে দানবেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়,
ওই সব নপুংসকেরা রয়ে গেছে জনারণ্যে,
ফুটপাথে, বাসে-ট্রেনে, হাটে বাজারে সর্বত্র..
নারীখাদকেরা থাকে গদি আঁটা সুদৃশ্য অফিসে, স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে...
অযাচিত ঘিনঘিনে স্পর্শেরা আচমকাই হামলে পড়ে শরীরে,
ছুঁয়ে দেয় কাঁধ-বুক-গলা,
অলক্ষ্যে কি সবার সামনেই খামচে দেয় নিতম্ব, আমার কোমরের বাঁক!!
বুকের ভাজেঁর আভাস, অন্তর্বাসের ফিতের উকি,
শাড়ির ফাঁকে এক চিলতে কোমর,
কামনার উদ্রেক করে পুরুষের...
মেয়েরা তেতুঁল…
দেখলেই মুখে লালা, সামনে এলে শিশ্নে জল অবশ্যম্ভাবী…
ছেনালী নারীর ইশারার কাছে অসহায় পুরুষ আহা!!
কামনার লাগাম কি তার হাতে?
যদি তোমাকে বলি,
ছয় বছরের মেয়েটার আকাশ নীল স্কুল ইউনিফর্মের নীচে,
পা বেয়ে মাকড়শার মতো কিলবিলিয়ে
জানুসন্ধিতে উঠেছিলো তার শিক্ষকের আঙুলেরা,
নয় মাস বয়সী শিশুকে নির্জন দুপুরে তার প্রতিবেশী ধর্ষণ করেছিলো,
অশীতিপর অসহায় এক বৃদ্ধাকে পাড়ার ছেলের দল।
জ্ঞানী পুরুষ আমার...
এরা কি গিয়েছিলো রাতে বিরেতে অজায়গা কুজায়গায়?
কি ইশারা দিয়েছিলো কাজল মাখা চোখে?
ডেকেছিলো কি টকটকে লাল লিপ্সটিক মাখা পুরু ঠোঁটে?
আঁটোসাটো খাটো পোশাকে প্রকট ছিলো কি
ওই বোরখায় ঢাকা মেয়েটির যৌবনের ভাজঁ,
ভোগ শেষে আবর্জনার মতো রাস্তায় পড়েছিল যার মৃতদেহ?
জলখাবার খোলা রাখলে বিড়াল কুকুরে মুখতো দেবেই!!
লক্ষী মেয়ে আমি…
নির্দেশ মেনে ঘরের দুয়ার এঁটে
সমস্ত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছি নিজেকে।
যদি তোমাকে বলি,
কোন এক সাধারণ মেয়ের গল্প,
যাকে তার চাচারা দিনে রাতে পালা করে ভোগ করেছে;
কোন এক অসহায় মেয়ের কথা,
যাকে তার বাবা টাকার লোভে বিক্রি করেছে;
চানঘরে জলের নীচে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো
কোন এক কিশোরীর কথা,
যে মুছে ফেলতে চেয়েছে ঘিনঘিনে স্পর্শ
বুকে, জানুসন্ধিতে, সারা শরীরে;
অথবা কোন এক তন্দ্রাহারা তরুণীর গল্প,
যার দুঃস্বপ্নে হানা দেয় এক নপুংসকের হিসহিসে কন্ঠ,
তার শরীরের বিবমিষা গন্ধ...
জ্ঞানী পুরুষ আমার...
এখন বলে দাও কোথায় লুকাবো?
কোথায় নিরাপদ আমি?
বাক্সে নাকি তালা আঁটা সিন্দুকে?
সেই দুর্ভেদ্য লোহার ঘরেও কোন এক আঙুল
কিলবিলিয়ে ছুঁয়ে দেবে না তো আমায়?
আবার? তখনো? আরেকবার?
© শিখা রহমান
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫৩