somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শিখা রহমান
কবিতা প্রেমী; একটু এলোমেলো; উড়নচণ্ডী; আর বই ভালবাসি। শব্দ নিয়ে খেলা আমার বড্ড প্রিয়। গল্প-কবিতা-মুক্ত গদ্য সব লিখতেই ভালো লাগে। "কেননা লেখার চেয়ে ভালো ফক্কিকারি কিছু জানা নেই আর।"

বাকী রইলো আটটা

২৪ শে মে, ২০২০ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈদ মোবারক!! ঈদ উপলক্ষ্যে একটা হাসিখুশী গল্প দিলাম। ভালো থাকুন। সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন পরিবারের সবাইকে নিয়ে।

বাকী রইলো আটটা
*******************
ঘড়ির দিকে তাকালো মন্টু। এক ঘন্টার ওপরে ও এই ঘরে বন্দী। দরজা ধাক্কানোর চেষ্টা করেনি। জানে খুলতে পারবে না। আর কেউ খুলেও দেবে না।

মন্টুর মনটা আজ সকাল থেকেই ভালো নেই। অথচ আজ শুক্রবার। ছুটির দিনে ভালমন্দ রান্না হয় ভেবে ঘুম ভাঙ্গতে মন্টু আনন্দে ছিলো। সকালের নাস্তা সেরে, দুধ খেয়েই পাশের বাসায় খেলতেও গিয়েছিলো।

মন্টু একটু চুপচাপ। খুব বেশী বন্ধু নেই। সমস্যা ওর নিজেরই। কাউকে যে সহজে ভালোই লাগে না। তবে পাশের বাসার মিনিকে ওর পছন্দ। মাঝে সাঝে ওর সাথেই খেলে। আজ গিয়ে শোনে মিনিরা নাকি পাড়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যাচ্ছে তো যাচ্ছে তাও আবার অনেক দুরে। এই ধানমন্ডি থেকে সেই গুলশান। আর হয়তো দেখাই হবে না। পাশের গলির ওই হুতকো ছেলেটা, ঝন্টু, আবার মিনির গা ঘেঁষে পাশে বসে গল্প করছে। মেজাজ চড়ে গেলো মন্টুর।

বাসায় ফিরে সোফায় বসে টিভি দেখছিলো। চাচ্চু বাজার নিয়ে এসে চাচীমাকে ডাকলেন “শোন...ইলিশ এনেছি!! সস্তায় পেয়ে গেলাম!!” “ওমা!! কতো দাম পড়লো। পচা মাছ নয়তো?” “আরেহ না!! তাজা তাজা কয়েক টুকরো ভেজে ফেলো। দুপুরে খাবো...” ইলিশ মাছ মন্টুর খুব প্রিয়। তারপরেও মনভার কাটল না। কি একঘেয়ে একটা ছুটির দিন!!

টেলিভিশনে কার্টুন চলছে। টম আর জেরি!! সেটাও বড্ড বোরিং!! টমটা এমন উজবুক...একটা সামান্য নেংটি ইঁদুরের কাছে বার বারই মার খেয়ে যায়। মন্টুর মেজাজটা আবারো খারাপ হয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছিলো। দাদু এসেই হুট করে ওকে কোলে নিয়ে বসলেন। চ্যানেল বদলে এখন খবর শুরু হলো। খবর গুলোও সেই গতানুগতিক...নির্বাচন সামনে রেখে নেতাদের পাল্টাপাল্টি কথা, দেশে কয়েকটা একসিডেন্টের খবর, বিদেশে বন্যা-ভূমিকম্প-প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ক্রিকেট খেলা...এই সব ছাড়া আজকাল আর খবর কোথায়?

খবর শুনতে শুনতে দাদুর ওপরেও একটু রাগ হলো মন্টুর। দেখতে দেখতে তো বয়স কম হলো না ওর...প্রায় পাঁচ বছর!! এখন বুঝি এভাবে হুটহাট কোলে বসতে ভালো লাগে। সুন্দর গন্ধে হঠাত ঝিমুনি কেটে গেলো মন্টুর। ইলিশ মাছ ভাজার ঘ্রাণ!! দাদুর কোল থেকে নেমেই রান্নাঘরের দিকে ছুট দিলো মন্টু।

আর তারপরেই ঝনাত ঝন ঝন!! কাঁচের ফুলদানী টুকরো টুকরো। যাওয়ার পথে তাড়াহুড়োতে ধাক্কা লেগে ফুলদানী শেষ!! অমন সরু করিডোরে তারের টেবিলে আবারো কাঁচের জিনিষ রাখার কি দরকার বাপু!! আর কি...বাসার সব্বাই সব কাজ ফেলে দৌড়ে এলো। সবাই মিলে খুব বকাঝকা...কি হম্বিতম্বি! চাচ্চু খুবই রেগেছে। এই লাল ক্রিস্টালের ফুলদানী নাকি তার কোন বন্ধু বিদেশ থেকে এনে দিয়েছিলো...অনেক দাম! চাচ্চুই মন্টুকে শাস্তি দিয়ে এই ঘরে আটকে রেখেছে।

মন্টু কি আর বোঝে না!! সবই বোঝে...কাজল যদি ফুলদানী ভাঙ্গতো, তাকে কি আর বাসার সবাই এতো বকতো, নাকি ঘরে এমন আটকে রাখতো। মন্টুর চোখে কষ্টে অভিমানে জল চলে এলো। বাবা মা নেই। কাকুর সংসারে আছে বলেইতো সামান্য ভুলেই শাস্তি, আর বকুনি। মন্টু কি ইচ্ছে করে ফুলদানী ভেঙ্গেছে? দৌড়ুতে গিয়ে সময় মতো থামতে পারেনি বলেই না...ওর গায়েও তো খুব ব্যথা লেগেছে...কেউ জিজ্ঞেসও করলো না।

জানালার বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে মন্টুর ভারী মন খারাপ হয়ে গেলো। মিনিও চলে যাচ্ছে। বাড়িতে কেউ ওকে ভালোবাসে না। ও না থাকলেও কারো কিচ্ছু আসে যায় না। বিছানা ছেড়ে জানালার কাছে যেতেই দেখে নেট খোলা। মরে যাওয়াই ভালো। দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়লে কেমন হয়? কিন্তু খুব কি ব্যথা লাগবে? হাত পা ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে যাবে না তো আবার?

পড়ন্ত দুপুরের ঝকঝকে আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘ। একটা মেঘ দেখতে ঠিক মাছের মতো। ইলিশ মাছের কথা মনে পড়লো। কেউ মন্টুকে খেতেও ডাকলো না। ও জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে নীচে দেখলো। বাসার সামনে একটু খানি সবুজ ঘাসের গালিচা। বাসার দেয়াল ঘেঁষে গোলাপের গাছ...গোলাপের ঝোপের ওপরে পড়লে কাঁটায় খুব ব্যথা পাবে। একটু হিসেব করে ঘাস তাক করে জানালা থেকে ঝাঁপ দিলো মন্টু।

বাহ!! ঝাঁপ দেবার পরে ভয় লাগছে না তো। মনে হচ্ছে বাতাসে ভেসে ভেসে নামছে। মাটিতে পড়ার আগেই চোখ বন্ধ...ছোট্ট শরীরটা ঝুপ করে ঘাসের সবুজে আছড়ে পড়লো। কই!! মন্টুর কোন ব্যথা লাগছে না তো!! তবে কি ও মরে গেছে...ভূতেদের কি ব্যথা লাগে? ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো মন্টু। হাত পা চেটে নেড়েচেড়ে দেখলো...নাহ!! ব্যথা নেই শরীরের কোথাও...কোথাও কাটেওনি।

মন্টু বেশ বিভ্রান্ত...ও কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে? এমন সময় পাশে থেকে কে যেন খুব মিষ্টি স্বরে মিউ করে ডাকলো “এইইই শোন!!” তাকিয়ে দেখে মেঘের মতো নরম, ধবধবে শাদা একটা মেয়ে। চোখজোড়া সবজেটে...কি সুন্দর আর মায়াবী!!

ওর ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা দেখে সে বললো “আমি এ পাড়ায় নতুন। আমার নাম তুলতুল...”

“ওহ!! আমি মন্টু...তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো?”

মেয়েটা এমন অবাক “ওমা!! দেখতে পাবো না কেন? তোমাকে দেখেইতো ভাব করতে এলাম...”

মন্টু একটু অপ্রস্তুত “না মানে...দোতলা থেকে ঝাপিয়ে পড়েছিতো...মরে গেছি কিনা বুঝছিলাম না...”

“আমাদের নয়টা জীবন...এতো সহজে তো মরে যাওয়ার কথা নয়...” তুলতুল খিলখিলিয়ে হাসছে।

আচমকাই মন্টুর মনটা খুব ভালো হয়ে গেলো। ভাগ্যিস নয়টা জীবন!! আরো বার আষ্টেক আত্মহত্যা করা যাবে।

© শিখা রহমান
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২০ রাত ১০:০৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×