ছোট্ট আরিয়ানের মনটা অনেক খারাপ। সে বার বার চেষ্টা করছে তার ছোট্ট হাতদুটো দিয়ে তার ভিজে চোখদুটো মুছতে। আরিয়ান দাড়িয়ে আছে একটা ঝকঝকে সুন্দর হাসপাতালের বারান্দায়। সে যেখানে দাড়িয়ে আছে তার থেকে মাত্র কিছুটা দূরে তার মায়ের কেবিন।আরিয়ান দেখতে পাচ্ছে মৃদু বাতাসে উড়ে যাচ্ছে দরজায় লাগানো সাদা পর্দাটা তারই মাঝখান থেকে একটু একটু করে দেখা যাচ্ছে তার প্রিয় মায়ের সুন্দর মুখখানা।
এইতো মাত্র কয়েকদিন আগেও মা আরও বেশি সুন্দর ছিল-এখন কেমন যেন ফ্যাকাশে একটা মুখ।তারপর আবার মাথায় বিশাল একটা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে।ছোট্ট আরিয়ান মনে মনে ভাবে তার মা কেন এত বেশি সময় চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে?কেন মা তাকে কাছে আসতে বলছে না?কেন মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করছে না?
বিশাল এক হাসপাতালের বারান্দায় একা একা দাড়িয়ে ছোট্ট একটা মানুষ চোখ মুছছে এই দৃশ্যটা অনেকেই বেশ অবাক চোখে দেখছে।কিন্তু আরিয়ান এর কোন দিকেই কোন মনোযোগ নেই। তার সমস্ত চিন্তা রয়েছে তার মাকে নিয়ে।
আরিয়ানদের বিত্তশালী পরিবার। যাকে বলে অর্থ বিত্ত সব দিক দিয়েই তারা পরিপূর্ন। আরিয়ান এর একমাত্র উত্তরাধিকারী। সবাই জানে একদম পারফেক্ট হ্যাপী ফ্যামিলী তারা। আর যাদের এত খ্যাতি, যশ, সম্পত্তি তাদের আবার দু:খ কষ্ট কিসের?
অনেকটা সময় পর অরিয়ান দেখতে পেল তার বাবা কেবিন থেকে বেরিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।যদিও বাবা তাকে অনেক আদর করে তারপরও বাবাকে একটু ভয় পায় ছোট্ট আরিয়ান। বাবা এসেই আরিয়ানকে বলল,চল তোমার মামনির জ্ঞান ফিরেছে, মা তোমাকে দেখতে চেয়েছে। ছোট্ট আরিয়ানের মনটা খুশিতে নেচে উঠল, সে তার বাবাকে ফেলে রেখেই এক দৌড়ে চলে গেল তার মায়ের রুমের ভিতরে।
পুরো রুমটাই সাদা রংএ মোড়ানো তারই মধ্যে মা সাদা চাদরে নিজেকে ঢেকে রেখেছিল।আরিয়ান ছুটে যেতেই মা তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় আর সেও ঝাপিয়ে পড়ে মায়ের বুকে। এতসময় সে খেয়ালই করেনি রুমে সে আর মা ছাড়াও আরো বেশ কিছু লোকজন আর ডাক্তার রয়েছে।
এমন সময় একজন মহিলা আরিয়ানের বাবাকে প্রশ্ন করল, কেমন করে ঘটল এই র্দুঘটনা? মহিলার এই প্রশ্ন শুনে তার বাবার গলাটা যেন একটু কেঁপে উঠল, সে বড় একটা দীর্ঘনি:শ্বাস ছেড়ে বলল,বেশ কিছুদিন ধরেই তার স্ত্রীর শরীরটা ভাল ছিল না। এরপর যখন সে বাথরুমে যায় তখন মাথা ঘুরে নিচে পড়ে এই করুন অবস্থা ঘটে। ভাগ্য ভাল যে তিনি সেই সময় রুমেই ছিলেন এরপর বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করেন।
সবাই তখন বলে উঠল যে, শুধুমাত্র আরিয়ানের বাবার কল্যানে তার মা এখনও বেঁচে আছে। ছোট্ট আরিয়ান সবই শুনছিল, দেখছিল লোকজন অনেক ফুল আর বিভিন্ন ধরনের খাবার এনে সাজিয়ে রাখছে তার মায়ের রুমে।কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের স্বান্তনার কথাও বলছে মাকে।বাবা অনেক যত্ননিয়ে মাকে কিছু খাইয়ে দিচ্ছে আর মা হাসি হাসি মুখে সেগুলো শুনছে আবার মৃদু স্বরে কারও কারও সাথে কথা বলছে।
একটা সময় ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে যায়-ডাক্তার এসে সবাইকে অনুরোধ করে চলে যাওয়ার জন্য।আরিয়ানের বাবা সব বিশিষ্ট লোকজন নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আর ছোট্ট আরিয়ানকে বলে-বাবা একটু অপেক্ষা কর,আমি ওনাদের একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।
বাবা বাইরে যেতেই আরিআন মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল- মা তোমার অনেক ব্যাথা লেগেছে তাই না? বাবা যখন তোমাকে মারছিল, তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল?তোমার সব প্রপার্টি বাবাকে লিখে দাও না মা। তখন বাবা আর তোমাকে মারবে না। বাবা যখন তোমাকে মারে আমার খুব কষ্ট হয় ।কথাগুলো বলতে বলতে আরিয়ানের চোখদুটো আবারও ভিজে গেল।সে দেখতে পেল না তার মাও তার মত করে কাঁদছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১০