সন্ধ্যা নেমেছে অনেক আগেই।পুরো শহরটাতে কুয়াশা মোড়ানো।নানা রংএর আলো আর কুশায়ার আলিঙ্গন দুটো মিলেই একটা ঘোরলাগা পরিবেশের সৃষ্টি। এরই মধ্যে একটা মেয়ে অনেকক্ষন রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে। তার একটু দূরেই শাওন আর রিয়া বসে বসে গল্প করছে।মাঝে মাঝে রিয়ার চোখ চলে যাচ্ছে দূরে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে। তাতে শাওন একটু বিরক্ত হয়েই বললো- আরে এত কি দেখ, বুঝতে পারছো না। একটা নষ্ট মেয়েছেলে। নষ্ট মেয়েছেলে,নষ্ট মেয়েছেলে কথাটা ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বাজতে থাকে তার মাথায়।শাওন কত সহজেই বলে ফেললো কথাটা। রিয়া আর মন বসাতেই পারছেনা।সে উঠে দাঁড়ায়, আরে কই যাও সন্ধ্যা তো কেবল হল। না- মা অনেক চিন্তা করবে।বাবা আসার আগেই আমাকে ঘরে যেতে হবে। আরে ধূর সবাই তো জানেই তুমি আমার সাথে আছো।আর আজ বাদে কাল আমাদের বিয়ে। সমস্যা কি?শোন আজ ঠিক করেছি তুমি আমার বাসায় রাতের ডিনার খেয়ে আসবে।আমি মোটামুটি ঠিক করেছি আর এখন গিয়ে আমরা দুজন বাকীটা ঠিক করে নেব।রিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল,আরে এইসব কি বলছো?তাহলে তো ঘরে ফিরতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। ধূর-তুমি এত ভেব নাতো,চল যাওয়া যাক।
রিয়া অনেক অনিচ্ছা সত্বেও রওনা হল শাওনের সাথে।শাওনের গাড়িটা এসে থামলো তাদের প্রাসাদসম বাড়ীর সামনে। রিয়া আগেও এসেছে দুই-এক বার। কিন্তু সন্ধ্যারাতে এভাবে নয়। বাড়ীটাতে আলো ঝলমল করছে, কি অসাধারণ সুন্দর লাগছে।রিয়া বাড়ীর ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে একটু অবাক হয়। আচ্ছা-তোমার বাড়ীর লোকজন সব কোথায়? কাউকেই যে দেখতে পাচ্ছি না।আর বলো না,মা-বাবা একটু নানার বাড়ীতে গেছেন।কাল/পরশু চলে আসবে।আর বুয়া ওদেরকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। আমার একা থাকতেই ভাল লাগে। আর তাছাড়া সব সময় মাথার ভেতরতো তুমিই থাকো। আমি আর একা হতে পারি কই?বলেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে রিয়ার গায়ে। রিয়ার কাছে স্পর্শটা কেমন অন্যরকম লাগে। সে একটু দূরত্ব নিয়ে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু শাওন বদলাতে থাকে তার খোলস। আরে তুমি তো কাল/পরশুর মধ্যেই আমার রেজিষ্ট্রি করা বউ হয়েই যাবা,এত ন্যাকা ন্যাকা ভাব দেখাবা নাতো।কথা বলতে বলতে শাওনের হাত এঁকেবেঁকে চলতে থাকে রিয়ার সমস্ত শরীর জুড়ে।
শাওন যখন রিয়াকে ঘরে পৌছেঁ দেয়- তখন তার নিজের উপরেই ঘেন্না ধরে যায়।সে সোজা চলে যায় তার রুমে।শাওয়ারের নিচে যখন সে দাঁড়ায়,জলের সাথে এক তালে চলে যায় অনেক রক্ত।আর মাথায় ঘুরতে থাকে নষ্ট মেয়েছেলে, নষ্ট মেয়েছেলে, নষ্ট মেয়েছেলে......
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১২