somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রেকআপ

২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন অন্যান্য দিনের মত সে তৈরী হচ্ছিল কলেজে যাবার জন্য এই সময় হঠাৎ তার মা তাকে বলল,থাক আজ তোকে কলেজে যেতে হবে না। ঘরেই থাক। সে মায়ের চোখ চোখ রাখতেই মা মুখটা ঘুড়িয়ে নিলেন। নিশ্চয়ই মা তার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছে। সে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে, কেন মা কলেজে যাবো না কেন? আর মাত্র কিছু দিন পরেই আমার পরীক্ষা শুরু।মায়ের গলাটা ভারী হয়ে আসে, তোমাকে আজ থাকতে বলা হয়েছে,থাকো। এত কথা বলার কোন কারণ তো দেখি না। বলেই মা অন্য ঘরে পা বাড়ায়।
তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সে তার নিজের রুমে ঢুকেই তার প্রিয় গানটা প্লে করে। সখী ভালবাসা কারে কয়, সেকি কেবলই যাতনাময়-কিছুক্ষন পরেই তার মনে হল তার বড় ভাইয়া জোড়ে জোড়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। সে খানিকটা উৎসুক হয়ে ওঠে, গানের ভলিউমটা একটু কমিয়ে দেয়। এরপর শুনতে পায় ভাইয়া বলছে- আচ্ছা শোন, পোলাডা বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে। ওরে হাল্কা একটা ছ্যাচা দিতে হবে। কাজটা করতে পারবি? হুম, ঠিক আছে-দেখিস বেশি না কয়খান হাড় ভাঙ্গলেই হবে। আমার মান সন্মান,আমার পুরা পরিবারটা ধ্বংস করে দিল শালা। ঠিক আছে, আমি এখন রাখলাম।মনটা খুবই খারাপ।
তার মনটা ধক করে ওঠে। কি হচ্ছে সকাল থেকে? মায়ের কণ্ঠ এমন আবার ভাইয়া কাকে মারার কথা বলছে?না-তার মাথাটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সে তার রুম থেকে বেরিয়ে যায় তার ছোট বোনের রুমে। সে হয়ত ফেইসবুক চালাচ্ছিল কিন্তু তাকে দেখেই বন্ধ করে দেয়।তারপর বলে, আপু-যা তো তুই। এখন তোর সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না।সে অনেকটা অবাক চোখে দেখতে থাকে তার আদরের ছোট বোনটাকে। যে বোনটা সারাটাক্ষন তার জন্য পাগল থাকত তার মুখে এই সুরটা অন্য রকম লাগে। সে তারপর ও কোন রকম আমতা করে বলে, কি করছিলি, ফেইসবুকে আজকাল বেশি থাকো মনে হয়। তার কথা শুনে বোনটা কেমন জ্বলে উঠল-আমি যা খুশি তাই করবো, তাতে তোমার কি? আপু শোন-তোর মুখে এই সব কথা মানায় না। এখন যা তো আমার রুম থেকে।
সে হতবাক হয়ে দেখতে থাকে তার প্রিয় বোনটার বদলে যাওয়া মুখ। এই তো গতকালও যে মানুষটা ছিল তার বড় আপন। এমন কি হল এক রাতের মধ্যে?
সে বুক ভরা অভিমান নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। চোখে এক নদী জল জমে আছে। সে চাচ্ছে না সেই জলে ভেসে যেতে।সে ক্লান্ত পায়ে ঘরের কাউকে কিছু না বলে ঘরের বাইরে পা বাড়ায়।কারণ ঘরে একা থাকলেই মনটা আরো খারাপ হবে। সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না ঘরের সবাই তার সাথে এমন ব্যবহার করছে কেন?
তাদের ঘরেই পাশেই একটা ছোট্ট বাজার। সেখানে সবাই চা খেতে খেতে জমিয়ে আড্ডা দেয়। সব বয়সের মানুষের আনাগোনা বাজারটাতে।এলাকাতে তাদের পরিবারের একটা সুনাম থাকায় তাকে কেউ কখনো বিব্রত করেনি। সে একটা চায়ের দোকানের সামনে বেশ কয়েকটা রিক্সা দেখতে পায়। সে হেটে রিক্সার সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পায় কয়েকজন অল্প বয়সী ছেলে গোল হয়ে বসে হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন এক গল্প করছে আর সবাই তাদের কথা শুনে হেসে ওঠে। তাদের মধ্যে কারো একজনের চোখ পড়ে তার উপর।এরপর মূহুর্তেই সবাই কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের ওরকম দৃষ্টির সামনে সে যেন জমে যায়, তার পায়ে শিকড় গজিয়ে ওঠে।
সে কোন রকম একটা রিক্সাতে উঠে পড়ে। তার গন্তব্য বেশি দূরে না। রিক্সাতে উঠে আবার নতুন করে ভাবে-এমন কি হল? চারপাশের মানুষগুলো তাকে এভাবে দেখছে কেন?ভাবতে ভাবতে রিক্সা এসে দাঁড়ায় তার প্রিয় বান্ধবী মিতার বাড়ীর সামনে। সে রিক্সা থেকে নেমে লোহার গেটা খুলে আরও একটু ভিতরে গিয়ে কলিংবেল চাপ দেয় আর মনে মনে আশা করে তার প্রিয় ব্ন্ধবী এসে দরজাটা খুলে দিক।
বেশকিছুক্ষন পর মিতার বড়ভাই দরজা খোলে কিন্তু তাকে দেখে কেমন যেন ভয় লাগে। এর আগেও তো সে তাকে দেখেছে,কেমন হেসে হেসে কথা ও বলেছে।অথচ আজ এমন কেন? বাড়ীতে কোন র্দুঘটনা ঘটল নাকি? সে যখন এই চিন্তা করছে তখন বড় ভাইয়া বলে ওঠে-শোন, মিতা ঘরে নেই। আর যখন তখন আমাদের ঘরে আসবে না তুমি। এই পরেই দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দেয়।তীব্র শব্দে আর তীব্র যন্ত্রনায় তার চোখে সত্যি সত্যি জল নেমে আসে। সে মাথা নিচু করে এগিয়ে চলে এল কিছুটা পথ, কিন্তু প্রিয় মুখটাকে দেখার জন্য পিছন ফিরে আবার তাকাল। সে দেখল-ঝড়ে পড়ে যাওয়া এক আহত পাখির মত করুন মুখে জানালা ধরে দাড়িয়ে আছে মিতা, তার সবচাইতে প্রিয় বান্ধবী।
সে যখন ঘরে ফেরে তখন বেশ সন্ধ্যা। এতটা সময় সে উদভ্রান্তের মত কাটিয়েছে।তার ভাগ্য ভাল ঘরে ঢুকেই তাকে কারো সামনে পড়তে হয়নি। সে সোজা তার রুমে ঢোকে। তার সমস্ত কষ্টগুলো ফুসে ওঠে, সে আবারও সেই গানটা শোনে-সখী ভালবাসা কারে কয়?গানটা আস্তে দিয়ে তার মনে হল কাল থেকে তার ফেইসবুকে বসা হয়নি। সে তার ল্যাপটপে তার প্রোফাইলটা অন করতেই ভয়ে পাথর হয়ে যায়। একি দেখছে সে? এখানে তো তাদের দুজনের একান্ত গোপনীয় কিছু ছবি। এই ছবি এখানে কেন? তাকে তো কথা দিয়েছিল –এই সব ছবি সে ডিলিট করে দেবে।কিন্তু এত বড় একটা ক্ষতি কিভাবে সে করতে পারলো?তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সে শুনতে পায় টুং টুং করে ম্যাসেজ আসছে। একটার পর একটা আসতেই থাকে, সে পাথরের মুর্তির মত শক্ত হয়ে থাকে। আর জল ভরা চোখে একটা ম্যাসেজ ওপেন করে দেখে- বলছিলাম আমার সাথে ব্রেকআপ করো না, আজ আমি তোমার লাইফটাই ব্রেকআপ করে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×