somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহস্যে ঘেরা পিরামিড

০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাজার হাজার বছর ধরে পিরামিড ছিল মানুষের তৈরী সব চেয়ে বড় স্থাপনা। সকল ধরণের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও বর্তমান যুগে এত বড় নির্মাণ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের সব চেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পিরামিড সম্পর্কে জানবো আজ।

আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর আগে মিশরীয় শাসকরা কিছু অপূর্ব কারুকার্য নির্মাণ করেছিল আর এই নির্মাণ কারুকার্যের সাথে সাথে তারা কিছু রহস্য রেখে গেছে , এলিয়েনের অস্তিত্ব, পিরামিডের আকাশের তারার সাথে শ্রেণীবিন্যাস , পিরামিডের ভিতরে প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনার যার তাপমাত্রা সব সময় ২০ ডিগ্রী থাকে, এ সমস্ত ঘটনা যা আজও বিজ্ঞানীদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয় না।

ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রাচীন মিশরের শাসকদের নাম ফারাও। আর পিরামিড হলো ফারাওদের পুনর্জন্মের প্রবেশদ্বার। মিশরীয়রা মনে করতো ফারাওরা মৃত্যুর পর মৃতদের রাজা হিসেবে নতুন দায়িত্ব পালন করেন। ফারাওদের মৃত্যুর পর যতদিন তাদের মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যাবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। সেজন্যই মৃত ফারাওদের দেহ মমি করে পিরামিডে সংরক্ষণ করা হতো।

পিরামিডকে নিয়ে অনেক রহস্য রয়েছে যার মধ্যে ধারণা করা পিরামিড নির্মাণে এলিয়েনের সহায়তা রয়েছে। পিরামিডকে নিয়ে একটা তত্ত্ব রয়েছে যা হলো "Orion Co-relation Theory", যদি আপনি রাতে পিরামিডকে দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন পিরামিড তারা-নক্ষত্রের সাথে শ্রেণীবদ্ধ ভাবে রয়েছে। আকাশে তারাদের এই শ্রেণীবদ্ধ ভাবে থাকাকে বলা হয় "Orion Belt" , আর এই তিনটি প্রধান তারার নাম Alnitak, Alnilam, Mintaka .



এই তিন তারা পিরামিডের উপর থেকে শ্রেণীবদ্ধ ভাবে দেখা যায়। এই শ্রেণীবিন্যাস দেখে ধারণা করা হয় ওই সময় পৃথিবীতে এলিয়েন এসেছিলো এবং তাদের সাথে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছিলো। পিরামিড নির্মাণে এলিয়েনদের হাত ছিল কিনা প্রমান না হলেও পিরামিডের সাথে যে তারাদের কিছু না কিছু সংযোগ আছে ধারণা করা হয় । অনেক বিজ্ঞানীদের মতে এই এলিয়েনগুলো ওই তিন তারাতেই থাকে।

মিশরে ছোট বড়ো মিলিয়ে প্রায় ৮০টি পিরামিড রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বড় পিরামিড হলো গিজা মালভূমিতে অবস্থিত খুফুর পিরামিড, এটি ৪৭০০ বছর আগে নির্মিত। খুফুর পিরামিডের আয়তন ৬টি ফুটবল মাঠের সমান এবং উচ্চতায় ৪২তলা বিল্ডিংয়ের সমান উঁচু। ১৮৮৯ সালে আইফেল টাওয়ার নির্মাণের আগ পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ বছর ধরে পিরামিডই ছিল মানুষের তৈরী সব চেয়ে উঁচু স্থাপনা। পিরামিড তৈরী করতে ২০ লক্ষ পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে , এই ব্লক গুলো প্রায় ৫০০ মাইল দূর থেকে পিরামিডের নির্মাণ স্থলে আনা হয়েছে। ২.৫-৫০ টন ওজনের প্রায় ২০ লক্ষ ব্লক তারা মরুভূমির ভিতর দিয়ে কিভাবে পরিবহন করে নিয়ে এসেছে তা সত্যিই এক বিস্ময়।

চুনা পাথরের ব্লক দিয়ে বাইরের দেয়াল আর মূল্যবান গ্রানাইট পাথর দিয়ে পিরামিডের ভিতরের দেয়াল তৈরী করা হয়েছে। বাইরের একটি ব্লকের নূন্যতম ওজন একটি প্রাইভেট কারের আর ভিতরের এক একটি ব্লকের নূন্যতম ওজন ৪০টি প্রাইভেট কারের সমান। বর্তমানে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় ক্রেন দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ টন ওজন ৫০-১০০ মিটার পর্যন্ত তোলা যায়, অথচ তারা এত ভারী পাথর ১৫০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় তুলে অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে জোড়া দিয়েছেন।

খুফুর পিরামিডের ভিতরে তিনটি চেম্বার রয়েছে , ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থে নিরেট পাথর কেটে এই চেম্বার গুলোর প্রবেশ পথ তৈরী করা হয়েছে। পিরামিডের কেন্দ্রীয় চেম্বারে ফারাওদের মৃতদেহ রাখা হয়। এই চেম্বারে পৌঁছাতে ১৫০ ফুট সিঁড়ি পার হয়ে যেতে হয়। আধুনিক মেশিন দিয়ে পাথর কাটার প্রযুক্তির সাথে পিরামিডের পাথর কাটার অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে। তবে বর্তমান যুগের মেশিন দিয়েও এতো সুন্দর আর নিখুঁত ভাবে পাথর কাটা সম্ভব নয়।

পিরামিডের সর্বত্রই সুড়ঙ্গতে ভরা , প্রথম দিকে ধারণা করা হতো এই সব সুড়ঙ্গ বায়ুপ্রবাহের জন্য তৈরী করা হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে এই সুড়ঙ্গে একটি ক্যামেরাসহ রোবট পাঠিয়ে দেখা যায় শেষ মাথায় কংক্রিট দিয়ে বন্ধ।
পিরামিডের ভিতরে মূলত ৩টি চেম্বার রয়েছে যার একদম নিচেরটি হলো "Base Chamber ", মাঝে "Queens Chember" এবং সবার উপরে "Kings Chember"। তবে এই তিনটি চেম্বারে প্রবেশ করা আজও সম্ভব হয় নি। এমনকি ধারণা করা হয় এর ভিতরে আরো অনেক চেম্বার রয়েছে যা আজও আবিষ্কার করা হয়নি।
এটাও ধারণা করা হয় ওই সময় মানুষ মনে করতো রাজার মৃত দেহ মমি করে ওই চেম্বারে রাখা হয় তাহলে রাজার আত্মা Shaft করে ওই তারার সাথে সংযুক্ত থাকবে। এটাই পিরামিডের "Star Shaft Theory " বলা হয়।

কুইন্স চেম্বারের মধ্যে এক সময় একটি রোবট পাঠিয়ে দেখা যায় ভিতরে একটি কংক্রিটের দরজা, সেই দরজায় নতুন এক অ্যাডভান্স টুলের মাধ্যমে ড্রিল করে একটি ক্যামেরা পাঠানো হয় তবে তা কোনো কিছু ধারণ করার আগে অপ্রত্যাশিত ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এর পর থেকে সেখানকার সরকার আর কোনো গবেষণা করার অনুমতি দেয়নি।

তাই বিজ্ঞানিক কোনো প্রমান না থাকায় ধারণা করা হয় রাজাদের মৃতদেহ মমি করে রাখার জন্যই এইসব পিরামিড বানানো হয়েছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, আজ পর্যন্ত কোনো মৃতদেহ পিরামিডের ভিতর পাওয়া যায়নি। পিরামিডকে এখনো সম্পূর্ণ ভাবে আবিষ্কার করা হয়নি তবে যেটুকু আবিষ্কার করা হয়েছে তাতে কোনো মৃতদেহের সন্ধান মিলেনি। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা এটি এলিয়েনদের কোনো কাজের জন্যই বানানো হয়েছিল।

মিশরের মরুভুমি যা কিনা পিরামিডের অনেক কাছে, সেখানে সব সময় গরম বাতাস চলতে থাকলেও পিরামিডের ভিতরের তাপমাত্রা সব সময় ২০ডিগ্রী থাকে।
রহস্যে ঘেরা পিরামিডের আরো একটি অন্যতম রহস্য হলো পিরামিডের গায়ে এলিয়েনের ছবি। পিরামিডের গায়ে অনেক জায়গায় বিমানের ছবি এবং অনেক জায়গায় সরাসরি এলিয়েনের ছবি রয়েছে যা থেকে এলিয়েনের উপস্থিতি ধারণা করা হয়।

পিরামিডের আরো একটি রহস্য দেখা যায় ২১ জুন , যেদিন পৃথিবীর সব চেয়ে বড় দিন এবং সব চেয়ে ছোট রাত। এদিন বিকেলের দিকে দেখা যায় অন্যরকম একটি দৃশ্য।



এই সব কিছু হয়তো কাকতালীয় হয়তোবা নয়, তবু পিরামিডের সাথে আকাশের তারার অথবা ভিন গ্রহের কিছুর যে সংযোগ রয়েছে তা ধারণা করা হয়।

এছাড়া মিশরে Dender নাম একটি জায়গা রয়েছে, সেখানে Dender নামে রয়েছে একটি মন্দির। মিশরে সেই সময়ে থাকা লোকগুলো তাদের প্রভুকে উপাসনা করার জন্য এই মন্দির বানিয়েছিলো যার নাম ছিল Hathor। আর এই মন্দিরই মিশরের সব চেয়ে রহস্য ঘেরা মন্দির। এই মন্দিরের অর্ধেক অংশ আগে ঢাকা পরে ছিল , কিন্তু ১৮৫০ সালে এই মন্দিরকে পরিষ্কার করা হয়। ওই সময় প্রচুর অবাক করা তথ্য বেরিয়ে আসে। এ সময় বিজ্ঞানীরা দেখতে পায় পিরামিডের দেয়ালে Dender Light-এর ছবি যা মিসরীয়রা বানিয়েছিলো। এখানে এমন এক প্রশ্ন সামনে চলে মিশরীয়রা কত অত্যাধুনিক ছিল। এই ছবিটি মনোযোগ দিয়ে দেখলে দেখা যায় একটি লাইট বাল্বের মতো , অবাক করা বিষয় হচ্ছে এটি ৪০০০ বছর আগের ঘটনা, যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়নি।



পিরামিডকে নিয়ে লিখতে গেলে শেষ হবার হয় কেননা আজও পিরামিডকে আবিষ্কার করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। তবে রহস্যে ঘেরা এই পিরামিডের মাঝে লুকিয়ে আছে হাজারো অজানা তথ্য।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×