মৌ লোভী সাবেক ভয়ঙ্কর এক গোয়েন্দা কর্তার বান্ধবী নাসরীন মৌ গার্মেন্টসকর্মী থেকে মাত্র চার বছরেই কোটি টাকার মালিক। ওয়ান-ইলেভেনের সাবেক এক গোয়েন্দার সাথে বিশেষ সম্পর্কের সুবাদেই তার ভাগ্য পাল্টে গেছে। তাকে নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে রহস্যের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। স্বামীকে নির্যাতন, মাদক ব্যবসা পরিচালনা, ভূমিদস্যুতাসহ মৌ ও তার সহযোগীদের অনেক অজানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার সাবিলপুর গ্রামের মেয়ে নাসরীন মৌয়ের সাথে ১৯৯৩ সালে মাহফুজ খন্দকারের বিয়ে হয়। সংসার চালাতে গিয়ে স্বামী মাহফুজ বাসের হেলপার ও মৌ গার্মেন্টসের সাধারণ শ্রমিক হিসেবে চাকরি নেন। এভাবেই অষ্টম শ্রেণী পাস মৌ গাজীপুরের কোনাবাড়ির রেডিয়েন্ট গার্মেন্টস, সাভারের ইয়াংওয়ান গার্মেন্টস ও এরোমেটিক কসমেটিকস লি.-এ চাকরি নেন।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোনো এক অনুষ্ঠানে ওই সময়কার ক্ষমতাশালী দাপুটে গোয়েন্দা কর্মকর্তার সাথে মৌ’র পরিচয় ঘটে। সে সময় ওই গোয়েন্দার সাথে দৈহিক সম্পর্কের সুবাদে মৌ বিভিন্ন ব্যবসায়ী, আমলা, মন্ত্রী-এমপিদের বিভিন্ন প্রকার হয়রানিমূলক মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের তদবির করতেন। কাকে কীভাবে বাঁচাতে হবে তার উৎকোচ কী পরিমাণ হবে এসব নির্ধারণ ও অর্থ গ্রহণ করতেন মৌ।
৫১ মধ্য আজিমপুর, দক্ষিণখান, উত্তরা ৫৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বাড়িতে মৌ ও তার স্বামী মাহফুজ ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকে। পরে মৌ বাড়ির মালিক নূর মোহাম্মদ, সুর মোহাম্মদ, দিল মোহাম্মদ ও শের মোহাম্মদকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
ডিআইটি প্রজেক্টের জমিটির মালিকানায় নিজাম উদ্দিনের নাম থাকলেও মৌ টিনের ঘর বানিয়ে ভাড়া নিচ্ছেন। বাড়ি নং-২/ডি, রোড নং-১৬, মেরুল বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্টের জমিটিতে মৌ’র ছোট ভাই টিনের ঘর তুলে ভাড়া নিচ্ছে। এভাবেই মৌ মেরুল বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্টের জমিসহ কয়েকটি বাড়ি দখল করে নিয়েছেন। এসব দখল প্রক্রিয়ায় ওই গোয়েন্দা কর্তার সহযোগী ল্যান্ড ডেভেলপার ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।
নাসরীন মৌ’র সাথে ওই কর্তার সুবাদেই পরিচয় হয় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রাক্তন পরিচালক ডেভেলপার ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ানের সাথে। আবু সুফিয়ান তার প্রতিষ্ঠান পারভীন প্রপার্টিজ লি.-এর এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার পদে ২০০৮ সালের ১ জুলাই ৪৬ হাজার ৮শ’ টাকা বেতনে মৌ’কে চাকরি প্রদান করেন।
মৌ চাকরিজীবী হিসেবে বেতন সার্কেল-৪, ট্যাক্সেস জোন-২ এর পক্ষ থেকে টিন নং-০৩৯-১২২-০২৬১/স্যালারি-৪ গ্রহণ করেন। পরের বছর বেতনের সরকারি করই প্রদান করেন এক লাখ সাতাশি হাজার পাঁচশত টাকা যা বেতনের টাকার সাথে কোনো সামঞ্জস্যতা নেই। স্বল্প সময়েই আবু সুফিয়ানের ছত্রছায়ায় গার্মেন্টসকর্মী থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান মৌ। জোরপূর্বক ভূমি দখলসহ বিভিন্ন তদবিরে উঠেপড়ে লেগে যান।
স্বামী মাহফুজ স্ত্রীকে জমিদখল, প্রতারণা ও অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে ফেরাতে প্রতিবারই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নিজের চোখের সামনে অবসরপ্রাপ্ত এক গোয়েন্দা কর্তা ও গুলশান থানার প্রাক্তন একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে মৌ’র দৈহিক মিলন দেখতে হয়েছে। থানায় অভিযোগ ও প্রতিবাদ করায় পোহাতে হয়েছে অবর্ণনীয় নির্যাতন, ডাকাতিসহ বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে মাহফুজের নামে। এ পর্যন্ত মৌ লিখিতভাবে পাঁচবার তালাক দিয়েছে মাহফুজকে। তালাকের নাটক করে মাহফুজের লাখ লাখ টাকা ও সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে আবার তালাক প্রত্যাহার করে নেন তিনি।