তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ যে হিংসাত্মক কর্মকান্ড করেছে সেটি জনগণ হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন। তাদের স্মৃতিকে একটু দেখার জন্য আমরা নিকট অতীতে ফিরে যাচ্ছি। সেই নিকট অতীত হলো ’৯৪ থেকে ’৯৬ সাল।
ক্রনোলজিঃ ’৯৪-’৯৬
১. ১৯৯৪ সালের ৭ এপ্রিল সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল। এ সময় সংঘর্ষে নিহত হয় ৩ জন।
২. ১০ এপ্রিল দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হয়।
৩. ২০ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঢাকা অবরোধ করা হয়।
৪. ৯ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও করলে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে।
৫. ২৮ ডিসেম্বর বিরোধী দলীয় ১৪৭ জন সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
৬. ২-৩-৪ জানুয়ারি ঢাকায় ৩ দিনব্যাপী হরতাল পালন করা হয়।
৭. ২৩ জানুয়ারি টিভি ভবন ঘেরাও করা হয়।
৮. একই দিন অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারী অবরোধ কালে আদমজীতে ১ জন নিহত হয়।
৯. ২৪ জানুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে ফেরার পথে ফার্মগেটের কাছে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের গাড়ি লক্ষ্য করেও বোমা ছোঁড়া হয়।
১০. ১২ ফেব্রুয়ারি শ্রমিকদের ৯৬ ঘণ্টার হরতাল চলাকালে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়।
১১. ১২ মার্চ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করা হয়।
১২. ২৬ মার্চ ঢাকা অবরোধে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
১৩. ৯-১০ এপ্রিল সকাল-সন্ধ্যা দু’দিনের হরতাল পালিত হয়।
১৪. ২৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও করলে সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়।
১৫. ২৯ আগস্ট দিনাজপুরে থানা ঘেরাও করা হলে প্রশাসন কারফিউ জারি করে।
১৬. ২ সেপ্টেম্বর ৩২ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল দেয়া হয়। এদিন হরতালের শেষের দিকে ঢাকার মিরপুরে সংঘর্ষে ১ জন রিকশাচালক নিহত হয়।
১৭. এর প্রতিবাদে পরদিন অর্থাৎ ৩ রা সেপ্টেম্বর ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল ডাকা হয়।
১৮. ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, সংসদ বাতিল ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়।
১৯. ২-৩ অক্টোবর দেশজুড়ে হরতাল পালিত হয়।
২০. ৭ অক্টোবর পাঁচ বিভাগীয় শহরে ৩২ ঘণ্টার হরতাল পালন করা হয়।
২১. ১৬ থেকে ২০ অক্টোবর ৯৬ ঘণ্টাব্যাপী হরতাল ডাকা হয়।
২২. ৬ নভেম্বর সকাল-সন্ধ্যা সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ করা হয়।
২৩. ২৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ডিসেম্বর মাস জুড়ে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তা-ব চালায়।
২৪. ৪ ডিসেম্বর মীরপুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে ১১ জন যাত্রী পুড়ে কয়লা হয়ে যায়।
২৫. ৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বাস-কার-পিকআপসহ বহু গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
২৬. ৯-১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবারো লাগাতার ৭২ ঘণ্টার হরতাল পালিত হয়।
২৭. ১৯৯৬ সালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। ফেব্রুয়ারির ২৯ দিনের মধ্যে ২৩ দিনই রাজধানী অচল থাকে।
২৮. ১৩ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
২৯. ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকালে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে।
৩০. ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘দৈনিক সংবাদে’ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, শুধুমাত্র ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিন হরতাল ও গণকারফিউ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত এবং আহত হয় ৬ শতাধিক মানুষ।
৩১. ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ‘দৈনিক দিনকাল’ অফিস বোমা মেরে ও ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি করা হয়। নির্বাচন বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি দেয়া হয়।
৩২. ৯ মার্চ থেকে লাগাতার অসহযোগ দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। ১৭ মার্চ চট্টগ্রামে তেলবাহী জাহাজে বোমা নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। অবশ্য সেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তা না হলে পুরো বন্দর ভস্মীভূত হয়ে যেতো।
৩৩. ১৯৯৪-৯৬ সময়কালে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, ২টি ৭২ ঘণ্টা এবং ৫টি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়।
৩৪. ১৯৯৬ সালের ৩ জানুয়ারি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভেবেছেন রোজার মাসে হরতাল হবে না। ইচ্ছেমতো ভোট চুরি করে একদলীয় নির্বাচন করিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি জানেন না রোজার মাসেও যুদ্ধ হয়েছিল।’
৩৫. ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেখানেই নির্বাচনী সফরে গিয়েছিলেন সে জেলাতেই হরতাল ডাকা হয়েছিল। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক ভাংচুর, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ এবং গোলাগুলীর ঘটনা ঘটে এবং সহিংসতায় নিহত হয় ৫০ জন মানুষ, আহত হয় সহস্রাধিক। এর ব্যাপ্তি ছিল সর্বনিম্ন ১২ ঘণ্টা থেকে এক নাগাড়ে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিস্তৃত।
৩৬. ১৯৯৬-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের হরতাল ও ২২ দিনের লাগাতার অবরোধে সারা দেশ শুধু অচলই হয়নি, ৩৭ জন লোক এ জন্য প্রাণও দেয়।
৩৭. ১৯৯৪ সাল থেকে কেয়ারটেকার আন্দোলনে নিহত হয় মোট ১২২ জন লোক এবং আহত হয় ৮ সহস্রাধিক।
৩৮. ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয় এবং ২৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট এই বিলে স্বাক্ষর করেন।
আজ যখন আওয়ামী লীগ শান্তির ললিত বাণী শোনাচ্ছে, তখন সেটি ভূতের মুখে রাম নামের মতো শোনা যাচ্ছে। এবার আওয়ামী লীগ শাসকের ভূমিকায়। এবার তারা লেলিয়ে দিয়েছে পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি। পাখি শিকারের মতো গুলি করে তারা মানুষ মারছে। ডেইলি স্টারের রিপোর্ট মোতাবেক এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ২৬৮ ব্যক্তি।