ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মৃদুলা। ছোটবেলায় হাঁ হয়ে গিলতেন টেলিভিশনের অ্যাডভেঞ্চার শোগুলো। একটু বড় হলে ট্রেকিং বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। স্কুলের গণ্ডি শেষ করার আগেই নেপাল ছুটেছিলেন প্যারাগ্লাইডিং ও রাফটিং করতে। সেটা ২০১১ সালের ঘটনা।
কলেজে ছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) ক্যাডেট সার্জেন্ট। পাহাড় দাপিয়ে বেড়ানোর মানসিক শক্তিটা সেখান থেকেই কুড়িয়েছেন। মৃদুলা বলেন, ‘ট্রেকিংয়ে মানসিক শক্তি খুব জরুরি। বিএনসিসিতে থাকার সময়ই নিজেকে তৈরি করার ধাপটা সম্পন্ন করেছি।’
পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো মৃদুলার কাছে দারুণ এক রোমাঞ্চ। মৃদুলা বললেন, ‘নেপাল ও ভারতে আমার বেশ কিছু অভিযানপ্রিয় বন্ধু আছেন। তাঁদের টানে আর আমন্ত্রণেই পাহাড়ে ছুটে যাই।’
এ ধরনের বিপৎসংকুল অ্যাডভেঞ্চারে যেতে চাইলে মেয়েদের বেলায় প্রধান বাধা আসে পরিবার থেকে। মৃদুলার ক্ষেত্রেও তা-ই। চাকরিজীবী মা-বাবা রাজিই হচ্ছিলেন না একমাত্র মেয়ের এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সমর্থন দিতে। তাঁদের কথা, ‘ডাক্তারি পড়া কঠিন, তার সঙ্গে অন্য আরেকটি কঠিন কাজে যুক্ত হওয়া যাবে না।’
কিন্তু মৃদুলার মন পড়ে থাকে পাহাড়ে। মেয়ের একাগ্রতা আর প্রবল ইচ্ছার কাছে হার মানে পরিবার। পদে পদে বিপদ আর মৃত্যুঝুঁকি থাকার পরও অনুমতি মেলে ট্রেকিংয়ের। মৃদুলাও নিজের পেশা আর শখকে এক করতে হতে চান ‘অ্যালপাইন চিকিৎসক’, যাঁরা পর্বতারোহীদের চিকিৎসাসেবা দেন।
‘এতে আমার পড়া এবং ভালো লাগা দুটোরই বাস্তবিক ব্যবহার হবে। ইতিমধ্যে এ ধরনের চাকরির আমন্ত্রণ পেয়েছি। তবে এমবিবিএস শেষ করার আগে যোগ দেব না।’ বললেন মৃদুলা।
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় চৌকস মৃদুলা। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। গত বছর ভারতের অটল বিহারি বাজপেয়ি ইনস্টিটিউশন অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণের বিষয়ে ২৬ দিনের কোর্স শেষ করেছেন। এখানে তিনি পাথরে, দড়িতে ও বরফে আরোহণের পাশাপাশি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও প্রতিকূল-ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ায় টিকে থাকার কৌশলগুলো রপ্ত করেছেন।
এই কোর্সের অংশ হিসেবে ভারতের বেশ কিছু পাহাড়ে আরোহণ করেন। গত অক্টোবরে সাড়ে ১৫ হাজার উচ্চতার শিতিধার চূড়ায় ওঠেন। এ ছাড়া নেপাল ও বাংলাদেশের বেশ কিছু পাহাড়ে উঠেছেন। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সার্ফিং এবং স্কুবা ডাইভিংয়েরও।
মানুষের জন্য কাজ করতেও ভালোবাসেন মৃদুলা। তিনি এখন ‘হার্ট টু হার্ট ফর হিউম্যানিটি বাংলাদেশ’ সংগঠনের দূত হিসেবে কাজ করছেন। গত বছর জুলাইয়ে সেন্ট মার্টিনে সেবা দিয়ে ফেরার সময় দলের অন্য সবার সঙ্গে বিপদে পড়েন মৃদুলা। সমুদ্রের মাঝপথে ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পথ হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যেই জিম্মি হন জলদস্যুদের হাতে। মৃদুলা বলেন, ‘বেঁচে থাকার কোনো আশাই ছিল না।
http://www.prothom-alo.com/we-are/article/1264476/পাহাà§-দাপিà§à§-বà§à§à¦¾à¦¨-মà§à¦¦à§à¦²à¦¾
তবুও আজীবন মানুষের পাশে থাকতে চান। পাহাড়ে পাহাড়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান। পর্বতারোহণের জন্য ছেড়ে দিতে হয়েছে পছন্দের খাবার বিরিয়ানি।
মৃদুলা বলেন, সামাজিক কাঠামোর কারণে এ দেশের নারীরা চ্যালেঞ্জিং কাজে জড়াতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এসব ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে। ইচ্ছাশক্তি আর মনোবল নারীকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেই।
আর মৃদুলার আপাত লক্ষ্য, আগামী বছর থেকে সাত মহাদেশের সাত শীর্ষ পবর্তশৃঙ্গ জয়ের (সেভেন সামিট) অভিযান শুরু করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:১৩