somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগামী দিনের কৃষি হবে এআই ও ড্রোন নির্ভর

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ, যেখানে মোট শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত এবং এটি জিডিপিতে প্রায় ১৩.৬ শতাংশ অবদান রাখে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা এবং কৃষি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে কৃষি খাতের ভূমিকা অপরিসীম।
তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কৃষি আগামী দিনের কৃষি হবে এআই ও ড্রোন নির্ভরউৎপাদনে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

এআইভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে উন্নয়ন সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, ড্রোনের মাধ্যমে অথবা আইওটির (ইন্টারনেট অব থিংস) সাহায্য নিয়ে ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, মাটি ও আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে বীজ বপনের সঠিক সময় নির্ধারণ, সেচ দেওয়া এবং রোগবালাই শনাক্তকরণে এআই কার্যকর হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে এআই ব্যবহার করে কৃষিতে প্রডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করেছে আগের তুলনায়।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে Duo Duo Smart Agriculture Competition, যেটি Pinduoduo ও চায়না অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ফলন, স্বাদ ও খরচ কার্যকারিতা ছিল এর প্রাথমিক লক্ষ্য। এআই দলগুলো ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতির তুলনায় স্ট্রবেরি উৎপাদনে ১৭৫ শতাংশ বেশি বৃদ্ধির হার নিবন্ধন করেছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এটি অর্জন করা হয়েছিল।

শুধু বহির্বিশ্বে নয়, বাংলাদেশেও এআই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট যৌথভাবে নেদারল্যান্ডসের টুয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রের সঙ্গে অংশীদারিতে ‘স্টারস’ প্রকল্পের আওতায় ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ড্রোন প্রযুক্তিকে কৃষি গবেষণার একটি উন্নত, কার্যকর ও আধুনিক মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও ই-ভিলেজ নামক প্রজেক্টে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখছে। এ ছাড়া স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে আধুনিক চাষাবাদের তথ্য ও পরামর্শ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

এআইভিত্তিক সরঞ্জাম ব্যবহারে প্রশিক্ষণের অভাব এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের খরচ অনেক কৃষকের জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ ছাড়া উচ্চগতির ইন্টারনেটের সীমিত প্রসার এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতিও এআই ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা, প্রযুক্তি সহজলভ্য করা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে এআইকে কৃষি খাতে আরো কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এআইভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে এআই কৃষি খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

সামনের দিনে সম্ভাবনাময় হতে পারে ড্রোন। সব ধরনের কাজে ব্যবহারের উপযাগী যন্ত্র হিসেবে ড্রোনের ব্যবহার বিশ্বে বাড়ছে। যদিও দেশের কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহারে আমরা পিছিয়ে রয়েছি, তবে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ কৃষি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে দ্রুততার সঙ্গে কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে সব কৃষকের জন্য বাজারসংক্রান্ত তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত দিতে হবে। অত্যাধুনিক ডিজিটাল এবং সঠিক ও দক্ষ কৃষি-প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী কৃষির যান্ত্রিকীকরণ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। কৃষিতে ড্রোন ব্যবহার করে ফসলের ক্ষেতের সার্বিক অবস্থার মনিটরিং, বালাইনাশক স্প্রে, ড্রিপ ইরিগেশনসহ অনেক কিছু করা সম্ভব। ড্রোনের সঙ্গে কাস্টমাইজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইন্টিগ্রেট করলে ড্রোন একবার কোনো এলাকার ফসলের ক্ষেতের ওপর দিয়ে উড়ে গেলে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশসহ ওই এলাকার সার্বিক অবস্থা জানান দিতে সক্ষম। মাটির আর্দ্রতা নির্ণয়, বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি যাচাই, জমির পরিমাণ অনুসারে শস্য রোপণের ডিজাইনও ড্রোনে করা যায়। অনেক সময় বড় আকারের জমিতে শস্য রোপণের সময় প্রচুর জায়গার অপচয় হয়। ড্রোনের মাধ্যমে আগে থেকেই যদি কোথায়, কিভাবে, কী পরিমাণ রোপণ করা হবে সেটা হিসাব করে নেওয়া যায়, তাহলে জায়গার অপচয় কমানো সম্ভব। জমি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের পর বীজ রোপণেও ড্রোনের ব্যবহার রয়েছে। বর্তমানে বীজ রোপণের প্যাটার্ন ঠিক রেখে ড্রোনগুলো ৭০ শতাংশের বেশি বীজ নির্ভুল জায়গায় রোপণ করতে সক্ষম বলে জানা যায়।

সামনের দিনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ড্রোন ও এআই অন্যতম ভরসার প্রযুক্তি হতে পারে। সব মিলিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি পানি, সার ও কৃষি উপকরণের সঠিক ব্যবহার বাড়ানো এবং কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে এ দুটি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×