অবিরাম পানি পড়ছে। হ্রিদিতা ঝরনার নিচে দাড়িয়ে আছে। পানি ছিটকে আয়নায় পড়ছে। সে আয়না থেকে চোখ সরাতে পারছে না। আয়নায় তার ছবি নয়। সেখানে একটি বাচ্চা মেয়ে দেখা যাচ্ছে। বয়স কত, হ্রিদিতা বুঝতে পারছে না।আয়নায় বিন্দু বিন্দু পানি জমছে। হ্রিদিতার মনে হচ্ছে পানি গুলো মেয়েটির চোখ থেকে পড়ছে। হ্রিদিতা ভয় পাচ্ছে। ছোট্ট মেয়ে টিকে ভয় পাচ্ছে। মেয়েটির চোখের দৃষ্টি ভয়ঙ্কর। মনে হচ্ছে, মেয়টি যেকোন সময় আয়না থেকে বের হবে। হ্রিদিতাকে কামড়ে খাবে। হ্রিদিতা স্পষ্ট দেখল, মেয়েটির হাত দুটো বের হয়ে এসেছে। হ্রিদিতার গলা চেপে ধরেছে। হ্রিদিতা চিৎকার দিল, কিন্তু কোন শব্দ হল না। সে দৌড়াতে চাইল, তার পা-দুটো নড়ল না। এক মুহূর্তের জন্য মনে হল, সে দুঃস্বপ্ন দেখছে। এখনি ঘুম ভাঙবে। কিন্তু না, স্বপ্নে রং থাকে না। পানির বিন্দু গুলো লাল হতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে তাজা খুনের রক্ত।
হ্রিদিতা ঘোরে আচ্ছন্ন। তখনই তার চোখে ভেসে উঠল। সেই রাতটির কথা।আজ থেকে তিন বছর আগে, সে বাড়ির ছাদে বসে আছে। আকাশ ভেঙ্গে জোছনা নেমেছে। পাশেই জাম্বুরা গাছে ফুল ধরেছে। জোছনার আলোয় ফুল গুলোকে তারা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে পাতায় পাতায় তারা গুলো লুকোচুরি খেলছে। পাশেই বসা ছিল রিহান। হ্রিদিতার প্রেমিক। উষ্ম স্পর্শ, কমনীয় আলিঙ্গনে দু'জনই হারায় অনুভূতির স্বর্গে।
হ্রিদিতার ঘোর কাটল। তার হটাৎ করে মনে হোল, তার সন্তানের এখন দুই বছর হওয়ার কথা ছিল। যাকে সে খুন করেছে। নিজ গর্ভে খুন করেছে। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে খুন করেছে। টাকাটা রিহান দিয়েছে।
এইতো,আয়নায় যে তারই মেয়ে।বয়স দুই বছর। অবিকল তার চেহারা। মেয়েটি ডাকছে মা, মা !!!!