
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর দুটি শব্দ তাদের ক্রমাগত তাড়া করে ফিরছে একটা "মব" অন্যটা "তৌহিদী জনতা"। সাম্প্রতিক সময়ে মানিকগঞ্জে বাউল সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর হামলার ঘটনায় তৌহিদী জনতা আবার হেড লাইন নিউস হয়েছে । এর আগেও নানা রকম ক্যারিকেচার এর কারণে তারা পত্রিকার হেড লাইন হয়েছে কিছু দিন আগে বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে তার পোশাক নিয়ে হেনস্তা করেছে তারপর জাতীয় গ্রন্থ মেলায় নারীদের সেনেটারি নেপকিনের দোকান বন্ধ করে দিয়ে আরেকবার নিউজ হয়েছে । সাধারণ মানুষ এদের কর্মকান্ডে খুব বিরক্ত সবার মুখে একই প্রশ্ন, এই সব কাঠ মোল্লাদের সমাজের দেখভালের দায়িত্ব কে দিয়েছে ?
তৌহিদী জনতা” শব্দটি দুটি পৃথক আরবি ও বাংলা শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। "তৌহিদ" শব্দের অর্থ আল্লাহর প্রতি একত্ব। "তৌহিদ" থেকে এসেছে "তৌহিদী"। এর অর্থ যিনি আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করেন। জনতা শব্দটি বাংলা ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ সাধারণ জনগণ বা জনগোষ্ঠী। এই দুটি শব্দ একত্রে "তৌহিদী জনতা" বাক্যাংশ গঠন করেছে যার অর্থ দাঁড়ায় "একত্ববাদের পক্ষের জনগণ"।
"তৌহিদী জনতা" মূলত বাংলাদেশে স্বতন্ত্র পরিচয় বিহীন ক্ষুব্ধ মুসলিম গোষ্ঠী গুলোর যে কোনো দলকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ, আন্দোলন ও সংঘর্ষ ঘটেছে, তাতে বিভিন্ন দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ মূলক কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা গেছে। এসব ঘটনার বেশ কিছু ক্ষেত্রে দলগুলো নিজেদের পরিচয়ে “তৌহিদী জনতা” নামটি ব্যবহার করেছে। এছাড়াও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে “তৌহিদী জনতা” পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিনোদন জগতের নারী তারকা ও ব্যক্তিত্বদের অংশ গ্রহণে বাধা দেওয়ার ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তৌহিদী জনতার হামলার ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করলে একটা পেটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়। একেক এলাকাতে একেক সময় গ্রুপ গুলো গজিয়ে উঠে তারা কোনো একটা ইস্যু কে কেন্দ্র করে দুই তিন দিন গোলযোগ সৃষ্টি করে তারপর সবাই এক সাথে গায়েব হয়ে যায় । হামলার সময় এরা কোনো সামাজিক সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দলের ব্যানার ব্যবহার করে না। এদের নেতৃত্বের কোনো কেন্দ্রীয় কাঠামো নেই সমষ্টিগত ভাবে দল বেঁধে হামলা চালানো এদের কৌশল। হামলার লক্ষবস্তু নির্ধারণে রয়েছে বিশেষ মানদণ্ড সব জায়গায় এরা হামলা করে না। জাতীয় গ্রন্থ মেলা ,জেলা বা থানা পর্যায়ের স্থানীয় মেলা ,সিনেমা কিংবা নাটকের নায়িকাদের শো রুম উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ,সংগীত শিল্পীদের কনসার্ট , বাউল শিল্পীদের আখড়া , স্কুল পড়ুয়া মে দের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ,যাত্রা পালা ,ভাস্কর্য সহ বিভিন্ন মাজারের স্থাপনা হচ্ছে এদের মূল টার্গেট। বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় এরা কখনো চিন্নিত সন্ত্রাসী ,মাদক ব্যাবসায়ী , গুন্ডা ,চাঁদাবাজ ও রাজনৈতিক গডফাদারদের টার্গেট করে হামলা চালায় না।
তৌহিদী জনতার রবিন হুড হওয়ার ইচ্ছা থাকলে তারা এলাকার রাজনৌতিক গডফাদার ,চাঁদাবাজ ও চিন্নিত সন্ত্রাসীদের পিটিয়ে বিসমিল্লাহ করতো অবলা নাটকের নায়িকাদের টার্গেট করতো না। হামলার ধরণ ও লক্ষবস্তু দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় এদের প্রয়োজন মিডিয়া কাভারেজ। এখন প্রশ্ন হলো নেতৃত্বে কারো নাম নেই আবার কোনো রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে তারা হামলা চালায় না তে হলে মিডিয়া কাভারেজের কেনো প্রয়োজন হবে ?
তার মানে পিছন থেকে যারা এদের পরিচালনা করছে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চায়। তারা চাচ্ছে পাঞ্জাবি পরিহিত দাড়ি টুপি ওয়ালা কয়েক শত বিক্ষুব্দ মুসুল্লি লাঠি দিয়ে আঘাত করে বাউলের সম্প্রদায়ের লোকজনের মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে কিংবা মাজারে হামলা করে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে এমন নীতিবাচক খবর। যা তারা ব্রেকিং নিউস হিসাবে টিভি চ্যানেল এর নিউজ ও পত্রিকার পাতায় প্রচার করতে পারবে । এই সব নীতিবাচক খবর মিডিয়াতে আসলে কোন গোষ্ঠী লাভবান হয় সেটি খুঁজে বের করতে পারলে আমরা আমাদের প্রাইমারি সাস্পেক্ট খুঁজে পাবো।
পশ্চিমা রাষ্ট্র ও থিঙ্ক টেংক সংস্থা গুলোর সামনে যখন বিক্ষুব্দ মুসলিমদের হামলার ভিডিও ফুটেজ প্রচার করা হবে তখন তারা ভাববে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে ,ইসলামী দল গুলোর মদদে এমন নেক্কারজনক হামলা পরিচালিত হচ্ছে। বিক্ষুব্দ মুসলিম জনগোষ্টি আর ইসলামী দল যে এক নয় সেটা বুঝার জন্য স্থানীয় রাজনীতির জ্ঞান থাকা প্রয়োজন যেটা তাদের নেই। তাদের কাছে সব দাড়ি টুপি ওয়ালা লোকজন এক মনে হবে। তারা তো জানে না এমন পাঞ্জাবি পরিহিত দাড়ি টুপি ওয়ালা লোকজন খুনি হাসিনাকে এক সময় কওমি জননী উপাধি দিয়েছে ।
আপাতদৃষ্টিতে বিক্ষুব্দ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে তৌহিদী জনতার ব্যানারে যে হামলা গুলো হচ্ছে তাতে ফ্যাসিবাদী সংগঠন আওয়ামীলীগ ও ভারত লাভবান হচ্ছে । আগেই ভালো ছিলাম কিংবা আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে সেই বয়ান প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ তারা পাচ্ছে । বিক্ষুব্দ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পনা মাফিক ব্যবহার করে নিজেদের বয়ান প্রতিষ্ঠা করানো গোয়েন্দা সংস্থার পুরোনো কৌশল। ইরাক ও ইরান এর শক্তিশালী রেজিম পরিবর্তনের সময় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এন্ড সিরিয়া) জঙ্গী গোষ্ঠীকে প্রতিহত না করে উলটো অস্ত্র ,গলা বারুদ ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে বিনিময়ে তারা মার্কিন বয়ান প্রচার করেছে । একই ভাবে আইএসআইএস এর আরেকটি ভাগ রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেছে বিনিময়ে তাদের বয়ান প্রচার করেছে ।
ভারতের মতবাদ প্রচারে ব্যাবহৃত কিছু ডেডিকেটেড পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল এই ইস্যু নিয়ে খুব সোচ্চার। ভারতের পেইড কিছু ইউ টিউবার আছে তারা ইতিমধ্যে এই টপিক নিয়ে ভিডিও ব্লগ বানানো শুরু করে দিয়েছে ,কিছু দালাল রাজনৈতিক দল আছে যারা ভারত থেকে পাঠানো মাসোহারা দিয়ে অফিস ভাড়া দেয় তারাও ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ জানাচ্ছে ,কিছু মার্কা মারা সুশীল দালাল আছে তারা প্লেকার্ড ও ব্যানার নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছে। এই দেশদ্রোহী সেটআপ অনেক আগে থেকে ভারতের বয়ান প্রচার করে দেশের মানুষ কে খাওয়াচ্ছে। দেশের লোকজন এদের দালাল বলে গালি দেয়। তারা যখন সবাই এক সাথে মাঠে নামছে তার মানে এর সাথে অবশ্যই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত।
মানিকগঞ্জের মতো ছোট শহরে দুই দিন ধরে এই চক্রান্ত চলছে এলাকার ডিসি ,ইউ এন ও ,টি এন ও ,মেজিস্ট্রেট ,এসপি ,ওসি ,এন এস আই ,ডিবি ,এসবি কেউ কিছু বলতে পারে না। এমন কখনো হতেই পারে না এই সব এলাকায় একটা মশা ঢুকলেও প্রশাসন খবর পায়। আবার দায়িত্ব প্রাপ্ত এক উপদেষ্টা নিজে সরকারে থেকে সরকারের বিপক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে যার বাবা ছেলে উপদেষ্টা হাওয়া সত্বেও একটি রাজনৈতক দলের স্থানীয় নেতা হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছে। ৮ ইসলামী দল একত্রে প্রেস কনফারেন্স করে তৌহিদী জনতার বিপক্ষে নিজেদের অবস্থা বেক্ত করা উচিত শুধু তাই না এমন হামলা প্রতিহত করার জন্য তাদের সার্বক্ষণিক মাঠে থাকার ঘোষণা দেওয়া উচিত। গা বাঁচিয়ে চলার অপসন নেই দিন শেষে যতো ব্লেইম আছে সব তাদের ঘাড়ের উপর বর্তাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





