আজ N.E 350 সাল। আরিফ হোসাইন সাহেব আজ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না খেয়েই অফিসের পথে পা বাড়িয়েছেন। আমেরিকার বায়াররা তার জন্য অপেক্ষায় আছে। আজ তাদের সাথে একটা চুক্তি হবার কথা। তা প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের। ৮ম প্রজন্মের ৭০০ রোবট সাপ্লায় দিতে হবে। চুক্তি করাটা খুব গুরত্বপূর্ন কারন এই চুক্তিটা হলে তিনি প্রায় আরো ৭০
বিলিয়ন ডলার মূল্যের কাজ পাবেন। আরিফ সাহেবই পৃথিবীতে প্রথম পরিপূর্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবটের আবিস্কারক। ৭ম প্রজন্মের রোবট তৈরির পর এখন তিনি ৮ম প্রজন্মের রোবট তৈরির কাজে
মনোনিবেশ করছেন। ৭ম প্রজন্মের রোবট প্রায় মানুষের সম বুদ্ধি সম্পন্ন। বর্তমানে বাসা- বাড়িতে কাজ করা প্রায় সব রোবট ৭ম প্রজন্মের।
.
আরিফ সাহেব তখন মিটিং এ ব্যস্ত। সকাল ১০:২০ মিনিট।
আরিফ সাহেবের কব্জিতে লাগানো অদৃশ্য ফোনটার স্ক্রিন লাল হয়ে গেছে। অর্থাত্ চরম বিপদ মাত্রা ৭ স্তর অতিক্রম করেছে। তিনি ঘড়ির ডিটেইলস বাটনে ক্লিক করলেন। মিটিং রুমের পিছনের দিকে ৪০ ইঞ্চির একটা স্ক্রিন ভেসে উঠলো। তিনি ওনার স্ত্রীর ভয়ার্ত মুখ দেখতে পেলেন। আরিফ সাহেব উত্কন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাস করলেন:
- কি হয়েছে? (আরিফ সাহেবের হ্যান্ড রিস্টের কমিউনিকেট সিস্টেম অনলি মি করে রাখায় কেউ তার কথা শুনলো না এবং স্ক্রিনে ভেসে উঠা কিছুই তারা দেখলো না)
- রোবট বিদ্রোহ . .
- হোয়াট দ্য হেইল আর ইউ টকিং ?
- হে আমি সত্যি বলছি।
স্ত্রীর কথা শুনে আরিফ সাহেব মিটিং ক্লোজ করে বাড়ি চলে আসার জন্য তার জন্য স্পেশাল ভাবে তৈরি S-A25 ফ্রাইং সুপার কারে চড়ে বসলেন । পথে দেখতে পেলেন পুরুষ রোবট গুলো গাড়ি না চালিয়ে বাস- ট্রাক-
প্রাইভেট কারইত্যাদি ভাংছে। মানুষ ভয়ার্ত মূখে দৌড়াচ্ছে, যে যেদিকে পারে পালাচ্ছে। ফ্লাইং কারে চড়ে আরিফ সাহেব তার বাড়ির দিকে ছুটছেন।
.
আরিফ সাহেব কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না কারনটা। ৭ম প্রজন্মের প্রত্যেকটা রোবট খুব যত্ন করে তৈরি করা হয়েছে। এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র আরিফ সাহেব ছাড়া কেউ এর সিস্টেম চেঞ্জ করার পাসওয়ার্ড জানে না। এরকমতো হবারই কথা না। পুরো পৃথিবী এখন ৭ম প্রজন্মের রোবটের হাতে জিম্মী। মহিলা রোবটরা বাসা বাড়ি দখল করে আছে, পুরুষ রোবটরা এদিক ওদিক ঘুরছে ভাংচুর করছে, একটা ভয়ানক অবস্থা বিরাজ করছে চারদিকে। মনে হচ্ছে নরকে পরিনত হচ্ছে চারদিক . . .
.
বিভিন্ন চিন্তা যখন আরিফ সাহেবের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক সেই সময় হঠাত্ একটা মিসাইল এসে আরিফ সাহেবের ফ্লাইং কারে আঘাত হানে। ঘন্টায় ২৭০০ মাইল বেগে চলতে থাকা ফ্রাইং কার প্রচন্ড গতিতে নিচে থাকা কৃত্রিম বনের পশ্চিম পাশের লেকে মূখ থুবড়ে পরে। অল্পের জন্য রক্ষা পান আরিফ সাহেব। বুঝতে পারলেন সেনা রোবটের কাজ এটা।
চিন্তাহ্নিত আরিফ সাহেব ভাবলেন বাসায় যাওয়া যাবে না, একটা না একটা উপায় অবশ্যই পাওয়া যাবে। হঠাত্ আরিফ সাহেবের মনে হলো- আরে এই বনেইতো 'তথ্য ভান্ডার কেন্দ্রে'র অবস্থান। হাজার হাজার বছরের তথ্য এখানে সংরক্ষিত থাকে। এটাও আরিফ সাহেবের কোম্পানির তৈরি। নারী ও পুরুষ রোবটের মগজ যেহেতু এখন অদৃশ্য কারনে মানুষের সমতুল্য, তাই এদের কন্ট্রোল করার কোন একটা ব্যবস্থা
অবশ্যই এখানে পাওয়া যাবে।
.
সিকিওরিটি গ্লাসে হাত রাখতেই তাতে আরিফ সাহেবের মুখ ভেসে উঠলো। বিজ্ঞানী হওয়াই সহজেই প্রবেশ করতে পারলেন তিনি। তথ্য ভান্ডার কেন্দ্র প্রবেশ করে তিনি দেরি না করে 'তথ্য ভান্ডার'কে প্রশ্ন করলেন-
- নারীদের আগের দিনে কিভাবে নিয়ন্ত্রন করা হতো ?
- ১।পিটানো হতো,
২। আদর করা হতো
¤ আরিফ সাহেব মনে মনে বললেন এভাবেতো হবেই না,
আচ্ছা আর কোন
প্রসেস আছে ?
- তথ্য ভান্ডার থেকে কর্কশ কন্ঠ বেরিয়ে এলো- হা, ষ্টার জলসা নামক টিভি প্রোগ্রাম দিয়েও শান্ত রাখা যেতো।
- বুঝলাম না . . .
- এটা একটা অনুষ্টান। এখানে নারীরা একে অপরের দুষ ত্রুটি ধরে, নেকামু-টেকামু দেখিয়ে নারীদের ভোড় করে রাখতো। নারী জাতিও শান্ত থাকতো।
.
আর পুরুষ? পুরুষদের শান্ত রাখতো কি উপায়ে?
- হঠাত্ 'তথ্য ভান্ডার' থেকে হাহাহাহা শব্দ বেরিয়ে আসলো . .
- যন্ত্রের যান্ত্রিক হাসি শুনে আরিফ সাহেব অবাক না হয়ে পারলো না। আরিফ সাহেব জিজ্ঞাস করলেন: হাসির কি হলো ?
- হাসি থামিয়ে 'তথ্য ভান্ডার' উত্তর দিলো: সুন্দরী নারী পাইলে পুরুষও ভোড় হয়ে থাকতো।
.
আরিফ সাহেবের মুখে খুশির রেখা দেখা দিলো। দেরি না করে তিনি 'বুঝে না সে বুঝে না' প্রোগ্রাম খানা চালিয়ে দিলেন। অন্য দিকে নতুন ভাবে প্রোগ্রাম করে
প্রেমিকা রোবট বানিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিলেন।
.
এখন সন্ধা ৭টা বাজে। আরিফ সাহেবের স্ত্রী ফোন দিয়ে বলছে- সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। তবে রোবটি টিভির সামনে থেকে উঠতে চাচ্ছে না। অন্য দিকে সমস্ত পুরুষ রোবটও প্রেমিকা রোবট নিয়ে ব্যস্ত। আর এই অভিনব দৃশ্য 'নতুন যুগে'র মানুষ পূর্বে কখনো দেখেনি। চারদিক শান্ত হওয়াতে আরিফ হোসেন সাহেবও হাফ ছেড়ে বাচলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৭