৩০/০৮/২০০৭
আজও আমি সারাটা দিন বাহিরে খাটালাম। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। এই একটি দিন আসলেই এ জীবন বাচিয়ে রাখার কোন অর্থ আমি খুঁজে পাই না।
.
০৩/০৯/২০০৭
প্রথম যেদিন আমাকে ওরা দেখতে আসলো। সেজেছিলাম খুব। কত্তো স্বপ্ন ছিলো মনে। দুরু দুরু বুকে বসেছিলাম তার সামনে। আর চোখে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। মেয়েরা নাকি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। আমারতো আর তা হবার উপায় ছিলো না। তাই হয়তো ওরা আমাকে না, পছন্দ করেছিল আমার পাশে বসে থাকা ছোট বোনকে! চার চারটা বোন আমরা। তিনজনই প্রায় পিট্টাপিট্টি। বাবার ঘাড়ে বুঝা হয়ে জন্মেছি। আসলে সবাই তাই বলে। কত্তো প্রচেষ্টাটাই না করলো আব্বা। শুধু একটা ছেলের আশায়। ডাক্তার থেকে কবিরাজ। তাবিজ-কবচ, পানি পড়া আরো কতো কি! বংশে বাতি জ্বালাতে হবে যে! মেয়েরাতো আর বাতি না। কেবলই অন্ধকার! বাবার সব প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়ে জন্ম নিয়েছিল চতুর্থ কন্যা সন্তান। সেদিন বাবার চেহারা দেখে নিজেকে খুব অপরাধী লাগছিল। কেন মেয়ে হয়ে জন্মালাম !
.
০৭/০৯/২০০৭
শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিবার থেকে রাজিই হলো। ঘাড়ের বুঝাতো কমাতে হবে! তার বড় মেয়েটাতৈ কালো। কি করা বাকীদের তো আর বসিয়ে রাখা যাবে না!
.
১৫/০৯/২০০৭
বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়েছে। যৌতুক লাগেনি। তাদের কোনো চাহিদা ছিলো না! শুধু একটা ফ্রিজের দাবি ছিলো। এইটা যৌতুক না! মেয়েকে দেয়া উপহার! বড় বোন হিসেবেতো আমার একটা দায়িত্ব আছে। তাই খালার বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। অবিবাহিত বড় বোন থাকাতে ছোট বোনের বিয়ে! একটা ইজ্জতের ব্যাপার-স্যাপার। আমি কষ্ট পাইনি। একটুও না। কালো মেয়েদের কষ্ট থাকতে নেই।
.
১৬/০৯/২০০৭
কলেজে আমি ভালো ছাত্রী ছিলাম। স্যারেরা আমায় খুব ভালোবাসতো। আপনজনের কাছে প্রতিনিয়ত কটু কথা শুনতে শুনতে এখন স্যারদের ভালোবাসাটাকেও করুনা মনে হয়। ও আরেকটা কথা- কালো মেয়েদের জীবনে ভালোবাসা থাকে না। তাদের ভালোবাসা থাকতে নেই। যা থাকে শুধুই বঞ্চনা . . . . ।
.
২১/০৯/২০০৭
আজ পাঁচদিন হলো আমি খালার বাসায়। আব্বা-আম্মা খালার সাথে আমাকে পাঠাই দিছে। তাদের নতুন জামাই আসবে বাড়িতে। অবিবাহিত বড় বোন যার সাথে এই জামাই এর ই বিয়ে নিয়ে প্রথম কথা হয়েছিলো- সে আসলে আমি কি করে থাকি!
.
২২/০৯/২০০৭
কষ্ট লাগে। খুব। খুব কষ্ট লাগে। একা থাকলেই সব গুলা বিষয় মাথায় ঘুর ঘুর করে। যন্ত্রনা হয় খুব। কাছের মানুষগুলোকে এখন ঐ দূর আকাশের তারা মতো লাগে। তাদের আর আমার মধ্যে এখন গভীর কুঁয়াশার চাদর। আচ্ছা, কালো মেয়েরা কি মানুষ ইতো ?
.
২৩/০৯/২০০৭
নতুন বরের বন্ধু তৃতীয়টাকে দেখছে। আমার তৃতীয় বোনটাকে। হয়তো বিয়েও হয়ে যাবে। কি মজা!- নতুন বরের আত্বীয় স্বজন জানেই না আমার ছোট তিনটার বড় কোনো বোন আছে। দ্বিতীয়টার বরের আত্বীয় আত্বীয় স্বজনও নিশ্চয় জানবে না! না জানুক। জীবিত থেকেও অনেকের কাছে মৃত থাকার মধ্যে একটা মজা আছে! হয়তো তা বড়ই কষ্টের ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৮