পশ্চিমবঙ্গে লেখালেখি করেন এমন যে কয়জনের সাথে পরিচিত তার মধ্যে কবি ও সম্পাদক এবাদুল হক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এবাদুল দা-র সাথে খুউব অল্প সময়ে মধুর সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। প্রায় আড়াই গুণ বেশি বয়সের একজন মানুষের সাথে এত অল্প সময়ে এত গভীর বন্ধুত্ব হবে কখনও ভাবিনি।
প্রায়-ই এবাদুল দা-র সাথে ফোনালাপ হত। কবিতা বিষয়ে খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনতাম। কিভাবে কবিতা লিখতে হয়, এবাদুল দা বুঝিয়ে বলতেন।
"এবং পুনশ্চ" ও "আবার এসেছি ফিরে" নামদ্বয়ে দুটি সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা ও প্রকাশ করতেন। একদিন জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা দাদা, আপনার অ...
এতটুকু বলতেই দাদা বুঝে নেন কি বলতে চাইছি। দাদা বলেন, না। কেউ নেই। আমার অবর্তমানে পত্রিকা দুটো প্রকাশ করার মত তেমন কেউ নেই।
এবাদুল দা ভালোবেসে আমাকে সুজন বলতেন। আমি বলতাম গুরু।
একদিন কথায় কথায় তার বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। দাদা বলেন, তোমাদের রাজশাহী থেকে আমার বাড়ী বেশি দূরে নয়। আমাদের ভগবানগোলা থেকে রাজশাহী দেখা যায়। কখনও পশ্চিমবঙ্গ গেলে আমাকে শান্তিনিকেতন নিয়ে যেতেও রাজি হয় দাদা।
ফোনালাপে ঢাকার বইমেলার খুব প্রসংশা করতেন। প্রায়-ই ঢাকার বইমেলায় আসতেন। এবারও আসতে চেয়েছিলেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে আসতে পারেননি।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মুর্শিদাবাদ যাব বলে জানাই। দাদা বলেন, অনেক দিন থেকেই তো আসবে আসবে করছো। তা কবে আসবে? আমি মারা যাওয়ার পরে?
দাদার সাথে কথা বলতে গেলে কখন যে ঘন্টা পাড় হয়ে যেত বুঝতেই পারতাম না।
এইতো সেদিনও আলাপ হয় দাদার সাথে। দীর্ঘ আলাপ। নির্জন ফসলের মাঠে সমস্ত বিকেলটা সেদিন দাদার সাথে ফোনালাপে কাটে। একথা সেকথা, কত কথা! আলাপের ক'দিন পরেই শুনি দাদা অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। অবস্থা খুব একটা ভালো না।
অসুস্থতার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে মনটা খারাপ হয়ে যায়। কয়েক দিন পরে দেখি ফেসবুক গ্রুপে একজন পোস্ট করেছেন, দাদার অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত। মনটা ভালো হয়।
হঠাৎ খবর আসে দাদা আর নেই। বুকের মধ্যে কেমন যেন করে ওঠে।
সত্যি সত্যি চলে গেলেন দাদা! এখন মুর্শিদাবাদ যাব কার টানে! কে আমাকে ভালোবেসে সুজন বলবে!
দাদা-কে চর্মচোখে সরাসরি না দেখার আফসোস রয়ে গেল।
-সোহাগ তানভীর
কথাসাহিত্যিক
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:৫৬