বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ১৯৯৯।
♠ আয়োজক : মূলত ইংল্যান্ড তবে কিছু খেলা স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস এবং নেদারল্যান্ডসে হয়েছিল।
♠ সময় : ১৪ই মে থেকে ২০ই জুন, ১৯৯৯
♠ অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা : ১২
♠ দল সমূহ : অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে, সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কেনিয়া, বাংলাদেশ এবং স্কটল্যান্ড (যার মধ্যে শেষ তিন সহযোগী দল আইসিসি ট্রফি-১৯৯৭ তে অংশগ্রহণ করে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে)
♠ সর্বমোট ম্যাচের সংখ্যা : ৪২ (ফাইনাল সহ)
♠ ম্যান অব দা সিরিজ : Lance Klusener (সাউথ আফ্রিকা)
♠ সর্বাধিক রান করেন : Rahul Dravid (ভারত), ৪৬১ রান
♠ সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহ করেন : Geoff Allott (নিউজিল্যান্ড) এবং Shane Warne (অস্ট্রেলিয়া), ২০ উইকেট
প্রথম সেমি ফাইনাল : নিউজিল্যান্ড বনাম পাকিস্তান
♠ তারিখ : ১৬ই জুন, ১৯৯৯
♠ নিউজিল্যান্ড টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়।
♠ স্কোরকার্ড : নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪১ রান এবং পাকিস্তান ৪৭.৩ ওভারে ১ উইকেটে ২৪২ রান করে।
♠ পাকিস্তান ৪৭ রান অতিরিক্ত দিয়েছিল।
♠ নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে Roger Twose সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন।
♠ পাকিস্তানের ইনিংসে Saeed Anwar ১৪৮ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ১১৩ রান করেন।
♠ পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয় লাভ করে।
♠ পাকিস্তান Shoaib Akhtar ১০ ওভারে ৫৫ রানে ৩ উইকেট তুলে নেন।
♠ প্লেয়ার অব দা ম্যাচ : Shoaib Akhtar (পাকিস্তান)
০১. ১ম সেমি ফাইনালে Nathan Astle-কে বোল্ড আউট করেন Shoaib Akhtar
০২. ১ম সেমি ফাইনালে Saeed Anwar ১৪৮ বলে ১১৩ রানে অপরাজিত থাকেন
দ্বিতীয় সেমি ফাইনাল : অস্ট্রেলিয়া বনাম সাউথ আফ্রিকা
♠ তারিখ : ১৭ই জুন, ১৯৯৯
♠ সাউথ আফ্রিকা টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়।
♠ স্কোরকার্ড : অস্ট্রেলিয়া ৪৯.২ ওভারে ২১৩ রানে অল আউট এবং সাউথ আফ্রিকা ৪৯.৪ ওভারে ২১৩ রানে অল আউট।
♠ ম্যাচটি টাই হয়।
♠ সুপার সিক্স টেবিলে অস্ট্রেলিয়ার রান-রেট সাউথ আফ্রিকার চেয়ে বেশী থাকায়, অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে অংশগ্রহণ করে।
♠ অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে Michael Bevan সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেন।
♠ সাউথ আফ্রিকার ইনিংসে Jacques Kallis সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন।
♠ অস্ট্রেলিয়ার Shane Warne ১০ ওভারে ৪টি মেডেন সহ ২৯ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন।
♠ প্লেয়ার অব দা ম্যাচ : Shane Warne (অস্ট্রেলিয়া)
০৩. ২য় সেমি ফাইনালে Michael Bevan সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেন
০৪. ২য় সেমি ফাইনালে Lance Klusener ১৬ বলে ৩১ রান করেন
০৫. ২য় সেমি ফাইনালে Hansie Cronje-কে আউট করেন Shane Warne
০৬. ২য় সেমি ফাইনালে জয়ের পর একই ফ্রেমে অস্ট্রেলিয়ার ১১ জন খেলোয়াড়
ফাইনাল : অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তান
তারিখ : ২০ই জুন, ১৯৯৯
মাঠ : লর্ডস, লন্ডন, ইংল্যান্ড
দর্শক : ৩০,০০০
♠ পাকিস্তান টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়।
♠ স্কোরকার্ড : পাকিস্তান ৩৯ ওভারে ১৩২ রানে অল আউট এবং অস্ট্রেলিয়া ২০.১ ওভারে ২ উইকেটে ১৩৩ রান করে।
♠ অস্ট্রেলিয়া ২৫ রান অতিরিক্ত দিয়েছিল।
♠ পাকিস্তানের ইনিংসে Ijaz Ahmed ৪৬ বলে ২টি চারের সাহায্যে ২২ রান করেন।
♠ অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে Adam Gilchrist ৩৬ বলে ৮টি চার এবং ১টি ছয়ের সাহায্যে ৫৪ রান করেন।
♠ অস্ট্রেলিয়ার Shane Warne ৯ ওভারে ১টি মেডেন সহ ৩৩ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন।
♠ অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয় লাভ করে।
♠ প্লেয়ার অব দা ম্যাচ : Shane Warne (অস্ট্রেলিয়া)
০৭. ফাইনালে Ijaz Ahmed-কে ২২ রানে বোল্ড আউট করেন Shane Warne
০৮. ফাইনালে Mark Waugh স্লিপে এক অসাধারণ ক্যাচ ধরেন
০৯. Adam Gilchrist ফাইনালে ৩৬ বলে ৫৪ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন
১০. ফাইনালে জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার Mark Waugh এবং Darren Lehmann এর উল্লাস
কিছু তথ্য:
✪ ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপের পর ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারমানে তখন এক বছর সময় বেশী লেগেছিল। তাই বিলম্ব সময় পুষিয়ে নেবার জন্য ১৯৯৬ সালের পর এক বছর আগে অর্থাৎ তিন বছর পরই ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া আইসিসি ১৯০০ শতকের শেষ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চেয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
✪ ১২টি দল দুই গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি গ্রুপ থেকে প্রথম তিনটি করে মোট ছয়টি দল নিয়ে সুপার সিক্স পর্বটি হয়। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সুপার সিক্স পর্বটি চালু হয়। যেখানে গ্রুপ 'এ' থেকে উঠে আসা প্রতিটি দল, গ্রুপ 'বি' থেকে উঠে আসা প্রতিটি দলের সাথে মুখোমুখি হয়। এক্ষেত্রে একই গ্রুপ থেকে উঠে আসা দলের বিরুদ্ধে জয়ের পয়েন্ট ধরা হয়। যাকে PCF (Points Carried Forward) বলা হয়েছিল। তবে PCF সুপার সিক্সে একবারও পরিবর্তন করা হয়নি।
✪ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সাদা ‘Duke’ বল ব্যবহার করা হয়। যা নিয়ে পরে কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কারণ হিসাবে বলা হয়, এ বল ওজনে ভারী এবং বেশী সুইয়িং নেয়।
✪ ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ২য় ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক Hansie Cronje এবং Allan Donald ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সময় কোচ Bob Woolmer এর সাথে যোগাযোগের জন্য earpiece ব্যবহার করেন। যা Saurav Ganguly লক্ষ্য করে এবং পরবর্তীতে প্রথম ড্রিঙ্ক ব্রেকে তা সরিয়ে নেয়া হয়।
১১. ১৯৯৯ বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক Hansie Cronje কোচের সাথে যোগাযোগের জন্য earpiece ব্যবহার করেন
✪ চতুর্থবারের মতো (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯) ইংল্যান্ডের লর্ডসে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।
✪ বৃষ্টির কারণে ফাইনাল খেলাটি নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট পর শুরু হয়।
✪ ফাইনাল খেলাটির আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন ইংল্যান্ডের David Shepherd এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের Steve Bucknor।
✪ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভারতের Sachin Tendulkar তার পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ফিরে এসে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ১০১ বলে অপরাজিত ১৪০ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলে। ওয়ানডের ইতিহাসে তৃতীয় উইকেটে তিনি রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে অপরাজিত ২৩৭ রানের পার্টনারশীপের রেকর্ড করেন। রাহুল দ্রাবিড় ১০৯ বলে ১০৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
১২. Sachin Tendulkar তার পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ফিরে এসে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ১৪০ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন
✪ ১৯৯৯ বিশ্বকাপের আগেই অস্ট্রেলিয়ার Shane Warne অবসর নিতে চেয়েছিল বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু Steve Waugh এর অনুপ্রেরণার কারণে তিনি খেলা চালিয়ে যান এবং বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেন।
✪ জিম্বাবুয়ের Neil Johnson অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওপেনিং নেমে ১৩২ রানে অপরাজিত থেকেও ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ১৬ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় লাভ করতে পারেনি।
১৩. Neil Johnson অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওপেনিং নেমে ১৩২ রানে অপরাজিত থাকেন
✪ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে, যে কোন পর্যায়ে তাদের প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে প্রথম জয় লাভ করে। এছাড়া জিম্বাবুয়ে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভারতকে প্রথমবারের মতো পরাজিত করে।
১৪. জিম্বাবুয়ের Neil Johnson সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখেন
✪ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার Shane Warne, সেমি ফাইনাল এবং ফাইনালে প্লেয়ার অব দা ম্যাচ হয়।
✪ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে Lance Klusener পরপর তিনবার প্লেয়ার অব দা ম্যাচ হন।
✪ বিশ্বকাপে Viv Richards এর ১৮১ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরটি ভারতের Saurav Ganguly ভেঙ্গে ফেলেন। গ্রুপ পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮৩ রান করে বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করেন।
১৫. সেমি ফাইনাল এবং ফাইনালে প্লেয়ার অব দা ম্যাচ হয় Shane Warne
১৬. Lance Klusener পরপর তিনবার প্লেয়ার অব দা ম্যাচ হন
১৭. ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভারতের Saurav Ganguly ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর (১৮৩) করেন
✪ বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে স্কটল্যান্ড এবং পাকিস্তানকে পরাজিত করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের জয় যেন এক বিশাল অর্জন। পাকিস্তানের নবম উইকেট যাবার পর, Saqlain Mushtaq রান আউটের জন্য টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তার আগেই বাংলার দর্শকরা মাঠে নেমে আসে এবং ইংল্যান্ডের Northampton মাঠ ঢাকায় রুপান্তরিত হয়।
১৮. পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের Akram Khan সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন
১৯. পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ের পর দর্শকরা মাঠে নেমে আসে
✪ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া এবং সাউথ আফ্রিকার মধ্যকার সেমি ফাইনালটি ক্রিকেট ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ম্যাচ। জয়ের জন্য সাউথ আফ্রিকার চার (৪) বলে এক (১) রানের দরকার ছিল। Allan Donald-কে রান আউট করার পর ম্যাচটি টাই হয় এবং সুপার সিক্স টেবিলে অস্ট্রেলিয়ার রান-রেট সাউথ আফ্রিকার চেয়ে বেশী থাকায়, অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে অংশগ্রহণ করে। ভালো খেলা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ফাইনালে অংশগ্রহণ করা, সাউথ আফ্রিকার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
২০. Allan Donald এর সেই ঐতিহাসিক রান আউট !
২১. Steve Waugh সুপার সিক্স পর্বে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১২০ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন
২২. ফাইনালে জেতার পর অস্ট্রেলিয়ান দলের খেলোয়াড়দের উল্লাস
২৩. লর্ডসের বারান্দায় বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে অস্ট্রেলিয়ান দলের খেলোয়াড়রা
২৪. সপ্তম বিশ্বকাপ হাতে অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক Steve Waugh
অাগের পর্বসমূহ:
০১. বিশ্বকাপ ক্রিকেট সিরিজ পর্ব : এক।
০২. বিশ্বকাপ ক্রিকেট সিরিজ পর্ব : দুই।
০৩. বিশ্বকাপ ক্রিকেট সিরিজ পর্ব : তিন।
০৪. বিশ্বকাপ ক্রিকেট সিরিজ পর্ব : চার।
০৫. বিশ্বকাপ ক্রিকেট সিরিজ পর্ব : পাঁচ।
০৬. বিশ্বকাপ ক্রিকেট সিরিজ পর্ব : ছয়।
তথ্য সূত্র:
০১. www.espncricinfo.com
০২. 1999 Cricket World Cup
০৩. অারো বিভিন্ন সাইট।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১১