সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে, কলে-কারখানায় শ্রম দেওয়া মানুষগুলো দুইশো টাকার মূল্য হারে হারে টের পান | যাঁদের ঘামের, রক্তের নির্যাস থেকে একটি রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি তৈরি হয় | মাসের মধ্যে দুই দিনও গোশত না খেতে না পারা মানুষগুলো গোশতের স্বাদের মর্ম ভালোমতোই বোঝেন | তাঁদের জিহ্বাও লকলক করে গোশতের দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় | যাঁদের সুষম খাবারের অভাবে রোগ-শোক লেগেই থাকে | সবার স্টমাক-ই তো ভালোকিছু খেতে চায় |
সোনা লুট, কয়লা হুট, রিজার্ভ ব্যাংক লুট, চাল চুরি, শেয়ার বাজার চুরি; কোনো ঘটনাই ভুলতে পারিনা | এসকল নিউজগুলো অটোমেটিক্যালি কিভাবে যেন রমে সেটআপ হয়ে যায় | যাঁকে চিরতরে ডিলেট করে দেয়া যায়না |
রাষ্ট্রের উচ্চ আসনে বসে থাকা অনেক কর্তাবাবুরা খুব সহজেই নিজের ইচ্ছেমত অ্যামাউন্ট বসিয়ে বিল পাস করিয়ে নিতে পারেন | করোনা মহামারীতে অনেকের পেটে দু'বেলা দুমুঠো ভাত ঠিকমত না জুটলেও অনেক কর্তাবাবুর তিন প্রজন্ম চালানোর মতোন খোরাক ঠিকই জোগাড় হয়ে গেছে | বিলি-বণ্টনের নামে সামান্যকিছু ফটোসেশান করে উপর লেভেলে দেখিয়ে বাকিটা ঢুকিয়েছেন নিজের ঝোলায় |
আবার বিভিন্ন স্থানে বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে | তারমানে দুর্নীতির নতুন একটা পথ যেন বেরুলো | যখন সংসদে বিল পাস হয় তখন মানুষ টিভির সামনে খবর দেখে খুশি হয়, সকালে পত্রিকাটা হাতে নিলে আপ্লুত হয়ে পড়ে, ফেসবুকে হাজার হাজার শেয়ার হয় সেসব নিউজ | অথচ অন্যদিকে দজ্জালগুলো আড়াল থেকে দাঁত কেলিয়ে হাসে, যে তাঁদের এবার ভালোমতো পকেট ভরবে হয়তো |
ভবিষ্যতের পানে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা একজন যুবকের রাষ্ট্রের প্রতি কতটা ভাবনা থাকা উচিত? কতখানি ভয় থাকা উচিত? কতটা প্রতিবাদ করা উচিত? অথচ মামলা-মোকদ্দমার ভয়ে কত চুপিসারে কেটে দিচ্ছি কত সকাল-বিকাল-রাত | অথচ আমি খেয়াল করি ভাষা আন্দোলনে রক্ত দেয়া রফিক, শফিক, সালাম, বরকতকে যাঁরা তখন আমার মতো যুবক ছিলেন | আমার মতই অনার্স লেভেলে পড়ালেখা করতেন | রক্ত যাঁদের টগবগ করে উঠতো অন্যায় দেখলেই | ইশ! আমি যদি তাদের মতো হতে পারতাম...
...আমি ভাবি, রক্তচোষারা কখনও কি স্ত্রী'র শরীর ছোঁয়ার আগে নিজে অনুতপ্ত হন? সন্তানের কপালে চুমু দেয়ার আগে কি কখনও কি অনুতপ্ত হন? নিজের অবৈধ পয়সায় কেনা দামী মোবাইলটি পকেট থেকে বের হওয়ার সময় কখনও সাপ হয়ে যায় কি-না? হাতে থাকা রোলেক্স ঘড়িটি কি কখনও জোঁক হয়ে আটকে থাকে?...থাকেনা হয়তো...
[ফুটনোট: রক্তচোষা দুর্নীতিবাজদের নিয়ে লিখতে গেলে অনেকেই ওঁৎ পেতে থাকেন মামলা করার জন্য, ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য | এই সংখ্যা নেহায়েত কম নয়! তবুও যেন কিছু কথা বলতেই হয় | নতুবা নিজেই নিজেকে ক্ষমা করা যায়না!]
—সাব্বির আহমেদ সাকিল
০৯ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল | শুক্রবার | ২৪ জুলাই ২০২০ ইং | রাত্রি ০২ টা ২১ মিনিট