"কৃষি-কৃষক" নিয়ে লিখতেই যেন কেমন লাগে | কারণ একটাই একদল জোচ্চরদের দখলে আমাদের কৃষিশিল্প | কৃষক খেঁটে মরে আর একদল হর্তাকর্তা মুখ কেলিয়ে হাসে | স্বাধীনতার ৪৯ বছরে কৃষকদের কোনো উন্নতি ঘটেনি[যা উন্নতি দেখানো হয় তা পত্রিকা-টিভিতেই বিদ্যমান; বাস্তবে উল্টো ঘটনা] | পত্রিকাতে মুখরোচক নিউজ করিয়ে বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আনা হয় নির্দিষ্ট কিছু লোকদের পেটপূজো করবার জন্য |
একদল সারের অভাব তৈরি করে কৃষককে মারে তো আরেকদল ফসলের দাম কমিয়ে কৃষক আত্নহত্যা করে মারে | সাধারণত এ-জাতীয় ঘটনা সরজমিনে না গেলে কারোরই চক্ষু খুলবেনা | আমাদের চোখ থাকে উর্ধ্বমুখী | প্রতিদিন পত্রিকায় ধর্ষণের সংবাদ, আর টিভিতে দালালদের ফাঁকা বুলি দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত |
সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করে দ্যায়, যেমন মেডিকেল-হাসপাতালে যেহেতু দুর্নীতির আখড়া সেহেতু অনুমতি ব্যতীত কোনো সংবাদমাধ্যম কর্মী কোনো নিউজ করতে পারবেনা | অফিসের বাহিরে ইয়া বড় করে ব্যানার লাগাতে হবে, "আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত" | আহাহাহা! কি সুন্দর সাধুরা সব বসে থাকেন সেখানে | আবার সরকারি দালালি বাদ দিয়ে কেউ সমালোচনা করলেই মামলা-মোকদ্দমা তো আছেই |
সব লেখকেরই দুরবস্থা | সস্তা প্রেমকাহিনী ছাড়া এদেশে আর কোনো বই, সংগীত, সিনেমা কোনোটাই আর তৈরি হচ্ছেনা | ঘুরেফিরে ঐ কেন্দ্রভিমুখী সবাই | কৃষিখাতে এত প্রনোদনা আসে যা দিয়ে পেট ভরে ঐ শ্রেণীর | নির্দিষ্ট করে তাঁদেরকে মেনশন করলে আবার মামলা-হামলা চলতে পারে | ভাষাচর্চা কিংবা সুস্থ বিনোদন বলতে তেমনকিছু আর নেই বললেই চলে |
সিন্ডিকেটের আওতায় কৃষিখাত সেই থেকেই শিকল পড়ে আছে | একদল যায় তো আরেকদল আসে কৃষকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই | সভা-সেমিনার কিংবা প্রশিক্ষণে কৃষির কথা কোটিবার উচ্চারণ হলেও যা অবস্থা তাই-ই, সকলেই জানে আসল সমস্যাটা কোথায় | সুবিধাভোগী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তো বসে আছে একটা ফাঁক-ফোকর খোঁজার জন্য, যাতে একটু সুযোগ পেলেই সরকারের কাছে থেকে হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নিতে পারে |
আমাদের রাষ্ট্রে কৃষকদের কোনো শক্ত অবস্থান নেই | কৃষকদল কিংবা কৃষকলীগ চালু থাকলেও তাঁরা নাম ভাঙ্গিয়ে প্রণোদনা প্যাকেজ নিতে ব্যতিব্যস্ত | মোড়ে মোড়ে অফিস করে বসে থাকেন তাঁরা আর এয়ারকন্ডিশনের হাওয়া খান | যেকারণে কৃষকরা কোনো সফল আন্দোলন করতে পারেননা | বছর শেষে যা দাম পান তাই নিয়েই ডাল-ভাত খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকেন | জোচ্চরগুলো এই কৃষিখাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নেয় আর সেকারণে কৃষকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনা |
সরকারি খাতায় ঠিকই হিসেবনিকেশ যায়, সরকার বোঝে যে টাকাগুলো ঠিকই ডিস্ট্রিবিউট হয়েছে | অথচ সরকারি অফিসগুলোতে ঠিকই লাঞ্চিত-বঞ্চিত হয়ে ফেরেন কৃষক |
...আমি জানিনা কৃষি নিয়ে কেন লিখছি, কি ফল এতে; শুধুশুধু সময় অপচয় মাত্র | নির্দিষ্ট করে কিছু বলারও স্বাধীনতা নেই, গড়পড়তায় তবুও লিখছি | জানি পরবর্তী প্রজন্ম কেটেছে, আমার প্রজন্ম কাটছে, ভবিষ্যত প্রজন্ম কাটবে এভাবেই; কৃষকের কোনো উন্নতি ঘটবেনা | এই নীতি আবহমানকাল থেকে হয়ে আসছে এই ধারা চলতেই থাকবে | যদি-না নতুন কোনো নেতৃত্ব এ-দেশের শিথিল হয়ে পড়া কৃষিখাতের হয়ে কাজ করে | নতুনদের দিয়েই শুধুমাত্র উত্তোরণ সম্ভব, নয়তো যাহাই লাউ তাহাই কদু আকারে চলছে-চলবে...
[ফুটনোটঃ কৃষি-কৃষক নিয়ে আমি অনেক জায়গাতেই বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছি । তাঁরাও সমস্যাটা জানেন, মানেন । সেকারণে কোনো সুরাহাও হচ্ছেনা কৃষকের ভাগ্যের । জানিনা এসব আলোচনার আর কত বিস্তৃতি ঘটবে, কৃষকের ভাগ্যের উন্নতির নামে কৃষকদের সাথে উপহাস আর কত যুগ চলবে! সত্যিই সে হিসেব অতি অজানা আমাদের । ভুলত্রুটি মার্জনীয়!]
⏭সাব্বির আহমেদ সাকিল
⛔০৭ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, হেমন্তকাল | শুক্রবার | ২৩ অক্টোবর ২০২০ ইং
#কৃষি #কৃষক #মাটি #কৃষিশিল্প #সিন্ডিকেট #রাষ্ট্রব্যবস্থা