somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাব্বির আহমেদ সাকিল
আমার ব্লগে ঘুরতে আসায় আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আশা করছি আমার লেখালেখি, ফটোগ্রাফি আপনার ভালো লাগবে । ফেসবুকে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন— https://www.facebook.com/SA.Sabbir666

দুর্গাপূজা ও আমার শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো

১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্গাপূজার দিন অর্থ্যাৎ দশমীর দিনে ও পরেরদিনে সুলতানগঞ্জ-বনানী হাটে ও মাদলাতে মেলা বসে । একটাসময় বিশাল মেলা বসতো‚ সময়ের পরিক্রমায় এখন ছোট হয়ে গেছে । দহপাড়া দিয়ে লিচুতলার সেই পুরোনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে ছোটবেলায় দলবেঁধে মেলায় যেতাম । কত বাহারি রকমের খাবার‚ মিঠাই‚ মাছ‚ খেলনা‚ চুড়িফিতা‚ গাছ‚ তৈজসপত্র‚ পান-সুপারি আরও কত কি । মানুষের কত ভীড় হতো । মেলার জন্য টিফিনের টাকা জমাতাম । সব বন্ধুবান্ধব একত্রে আড্ডা‚ খাইদাই হতো । মেলা থেকে মাটির ব্যাংক কিনে আনতাম মা’র জন্য ।

আশেপাশের প্রতিমাগুলোকে করতোয়াতেই বিসর্জন দেয়া হয় । মাদলা‚ দহপাড়া‚ বেজোড়াঘাট । যেহেতু আমাদের পাশের পাড়াতেই হিন্দু ধর্মের মানুষদের বাস । স্কুল-কলেজ জীবনেও হিন্দু সহপাঠীরা ছিলো । হিন্দু স্যার ছিলো । সৌহার্দ্যের কোনো কমতি ছিলোনা । দাওয়াত দিতো অনেকেই‚ যেতাম । নানারকম নাড়ুর সমাহার‚ ফলমূল থাকতো‚ মিষ্টান্নের আয়োজন থাকতো ।

যেগুলো আমাদের খেতে দেয়া হতো সেগুলো বাড়িতে বানানো হতো । দেবতাদের উদ্দেশ্যে যেগুলো উৎসর্গ করা হতো সেগুলো কখনোই আমাদের খেতে দেওয়া হতোনা । মূলত পূজাকালীন সময়ে যে প্রসাদ দেওয়া হয় সেগুলো তখনই বিলিয়ে দেওয়া হয়‚ আর সেটা হাতে নিয়ে তখনই খেয়ে ফেলেন সেখানকার পূজা পালনকারীরা । কোনো হিন্দুকে দাওয়াত করলে আমরাও কিন্তু বাজার থেকে খাসি কিংবা মুরগি কিনে আনি । গরুর গোশত কিন্তু তাঁর পাতে দিইনা । কারণ আমরা তাঁর ধর্মকে সম্মান করি‚ তাঁরাও সম্মান করেই বাড়িতে বানানো খাবারগুলোই পরিবেশন করেন; দেবতার নামে উৎসর্গ করা খাবার পাতে দেননা । কারণ তাঁরাও সম্মান দিতে জানে ।

দেখতাম যখন প্রতিমাগুলোকে বিসর্জনের জন্য ট্রাকে তোলা হতো বা নিয়ে যাওয়া হতো তখন কত মধ্যবয়স্ক‚ বৃদ্ধা নারীরা কান্নাকাটি করতেন । মুখে নানারকম প্রলাপ করতেন । ক্ষণিক একটা সময়ের জন্য প্রতিমাগুলো এসে মানুষের হৃদয়কে কতটা নাড়িয়ে দিয়ে যায়‚ যাঁর কারণে মানুষ অশ্রু ঝরায় । কতটা মায়ায় কতটা ভালোবাসে বলে আবেগাপ্লুত হয়ে যায় । আবার পৃথিবীর সকল মানুষের শান্তি কামনায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকতেন ঠাকুরের পায়ের নিচে । কেউ তো ঠাকুরকে অশান্তি‚ হানাহানি বাঁধানোর জন্য আর্জি জানায়না । সবাই শান্তির জন্যই ভক্তি করে ।

শুধু আমার সাথেই নয় এখানে প্রায় সকলের সাথে অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে মেলাবন্ধন আছে । শিক্ষাজীবনে আছে‚ স্থানীয় সূত্রে আছে‚ চাকরিসূত্রে আছে‚ বাজার-হাটসূত্রে আছে । জীবনের কোনো না কোনো অংশে অন্য ধর্মের মানুষের সাথে সম্পর্ক আছেই ।

ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকেই আছে যাঁরা ব্লাড ডোনেট করে । কোন জাত-ধর্ম বিবেচনা করে ব্লাড ডোনেট করতে অপারগতা দেখায়না । আমিও করিনা‚ আমার ছোটভাইও করেনা । রাস্তায় কেউ এক্সিডেন্ট করলে তাঁর প্যান্ট খুলে চেক করার প্রয়োজন মনে করিনা যে সে হিন্দু নাকি মুসলমান । মুসলমান হলে হসপিটালে নিয়ে যাবো আর হিন্দু হলে নিয়ে যাবোনা । এরকম ধারণা কখনোই আমার মনে আসেনা ।

এই যে জীবনের একটা বড় সময় কেটে গেছে আমরা কি কখনও ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছি বা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছি? কোনো সহপাঠী কোনো বন্ধু বলতে পারবে? পারবেনা । সম্প্রীতি ছিলো বলেই তা সম্ভব হয়েছে । বা এরকম কখনও ঘটেনি যে সে অন্য ধর্মের তাই ওঁর সাথে কথা বলবোনা এরকম ঈর্ষাকাতরতাও কখনও কাজ করেনি ।

প্রাইমারী জীবনে একজন হিন্দু ম্যাম ছিলেন । হাইস্কুলে ছিলেন দু’জন হিন্দু স্যার । আমি তাঁদের সাথে মিশেছি । দেখেছি তাঁদের সততা‚ উদারতা‚ বন্ধুসুলভ আচরণ । যাঁরা ছিলেন নীতিবান মানুষ । তাঁরাও পাপ পূণ্য বোঝেন‚ মানেন । কই কখনও তো ধর্ম নিয়ে তাঁদের সাথে বিবাদে জড়াইনি আমরা । তাকে‚ তাঁর ধর্মকে গালি দেইনি । অন্য চোখে দেখিনি ।

বংশ পরম্পরায় ধর্ম পেলাম । এটি পরম সৌভাগ্য যে ইসলাম ধর্মের পরিবারে জন্মেছি‚ আল্লাহ চেয়েছেন তাই জন্মাতে পেরেছি । যদি আল্লাহ না চাইতেন তবে তো অন্য ধর্মের ঘরেও পাঠাতে পারতেন । তখন সেই ধর্মের মতাদর্শেই সারাটাজীবন কাটিয়ে দিতে হতো । কোন ধর্ম বিশ্বাসযোগ্য‚ খাঁটি‚ টেকসই সে সম্পর্কেওতো কখনও পড়াশোনা করা হয়নি । কখনও জাস্টিফাই করিনি আমরা‚ না মুসলিমরা না হিন্দুরা ।

অথচ পরম্পরায় পাওয়া এই ধর্মকে নিয়ে কত দ্বন্দ্ব কত বিভেদ । দু দিনে কয়েকজন তো মারাও গেলো । মন্দির ভাঙ্গা হলো‚ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হলো । কিন্তু তাতে করে কি পেলাম আমরা? কুমিল্লার সেই ঘটনায় হয়তোবা একজন দোষী কিংবা দুইজন দোষী । কিন্তু সেই দু-একজনকে দোষী সাব্যস্ত না করে পুরো একটা সম্প্রদায়ের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে হলো কেন আমাদের? আসল অপরাধীকে চিহ্নিত করে তাকে আইনের হাতে তুলে দিলেইতো হতো । কিংবা দেশের শাসনব্যবস্থাকে বলতেন যেন তাঁদের অন্ডকোষের সাথে ইট ঝুলিয়ে দেয়া হোক বা প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হোক । শাসনব্যবস্থা তো আর্জিগুলো শুনতো‚ মানতো ।

যাঁরা উগ্র তাঁরা মূলত জন্ম থেকেই উগ্র । অন্য ধর্মের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ । আর মনেপ্রাণে তীব্র ঘৃণা লালন করে থাকে । সেটা হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই এরকম অনেক আছে । সৃষ্টিকর্তা সম্প্রীতির পৃথিবী দিয়েছে আমাদের । ধর্মগ্রন্থ এসেছে মানুষের শান্তির জন্য । আর আমরা আজ অশান্তির বীজ বপন করছি । ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে জোরপূর্বক ‘জয় শ্রীরাম’ পড়ানো হয়েছে আবার এদেশে হিন্দু পরিবারের উপর হামলা চালানো হচ্ছে । ধর্মের উদ্দেশ্য কি আদৌ এসব? ধর্মগ্রন্থ কখনও কি এগুলো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বলেছে? বলেনি ।

জানিনা কবে আমরা মানুষ হতে পারবো । সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে থাকতে জানবো । কবে সভ্য হতে জানবো...কবে বলবো‚ “সবার উপরে মানুষ সত্য‚ তাঁহার উপরে নাই ।”



সাব্বির আহমেদ সাকিল
৩১ আশ্বিন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ‚ শরতকাল | ০৮ রবিউল আওয়াল ১৪৪৩ হিজরী | ১৬ অক্টোবর ২০২১ ইং | শনিবার | রাত্রি ১১ টা ১৪ মিনিট | ময়মনসিংহ

#সাব্বিরসাকিল #ধর্ম #দুর্গাপূজা #ধর্মীয়সংঘাত #মৃত্যু #দাঙ্গাহাঙ্গামা #ময়মনসিংহ
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×