সিদ্দিক । বাবার নাম খতিব । বাড়ি গাইবান্ধা জেলার তুপকোলা গ্রামে ।
সিদ্দিক একটা বাড়িতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আপা তোমার মামা ৫০০ টাকা চাইছে...দাও’ । তারপর সিদ্দিক সেই টাকাটা হাতে পেয়েই ভোঁ দৌড় মারে । তখন সেই ভদ্রমহিলা, 'চোর...চোর' বলে হাঁক ছাড়লে কয়েকজন ছেলে তাকে ধাওয়া করে । হাঁপাতে হাঁপাতে সিদ্দিক অপরিচিত একটা বাড়ির চৌকির নিচে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে । কিন্তু সিদ্দিকের আর শেষ রক্ষা হয়না । চার-পাঁচজন ছেলে তাকে ধরে ফেলে ।
সিদ্দিকের চেহারাটাকে ফোকাস করে একজন ভিডিও করছিলেন এবং তাঁর থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাচ্ছিলেন । সিদ্দিক সরলমনে তাঁর নাম, পিতার নাম, ঠিকানা বলে দেয় । সে যেগুলো কথা বলে সবগুলো সত্যি কথা বলে । এবং সে দোষ না করার পরেও লোকজনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, ভুল স্বীকার করে ।
সিদ্দিকের চেহারা, বেশভূষা এবং কথা বলার ধরণ দেখে অনেকেই আন্দাজ করে নিয়েছেন এরকম চেহারা সাধারণত কাদের হয় । হ্যাঁ! ঠিকই ধরেছেন যাঁরা আধা পাগল মানুষ তাঁদের ।
ভিডিওর এক পর্যায়ে দেখা যায় সিদ্দিকের হাতে বেশ কয়েকটি সুঁই । তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তাঁর হাতে এতগুলো সুঁই কেন । তখন সিদ্দিক খুব সরল ও সোজাভাবে বলে দেয়, তাঁর বউ এই সুঁইগুলো দিয়ে লেপ সেলাই করে । অর্থ্যাৎ সিদ্দিক একজন বিবাহিত মানুষ । তাঁর ঘরে সন্তানসন্ততি আছে কি-না সেটি সেই ভিডিওতে জানা যায়নি ।
ভিডিওর শেষে ভিডিও ধারণকারী বলেন, “দেখেন চোরের কি অবস্থা । আমরা চোরের সাথে মজা করতেছি ।” এতটুকুই ছিলো ভিডিওটি ।
এই যে সিদ্দিক একজন গ্রাম্য সহজ-সরল সত্যবাদী প্রকৃত মানুষ । যিনি চুরি না করেও, ভুল না করেও ভুল স্বীকার করার মতো সৎ সাহস রাখেন । যিনি স্ত্রীর কথা ভাবেন, পরিবারের কথা ভাবেন ।
আপনি আমাকে কমেন্ট থ্রেডে জানান আপনার জীবনের বিগত এক যুগে(১২ বছর) এরকম কয়টা সত্যবাদী মানুষ দেখেছেন । এরকম সহজ-সরল ভালো মানুষ দেখেছেন । যিনি চুরি না করেও, ছিনতাই না করেও ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন । প্লিজ জানাবেন...
এই ভিডিওটা যখন প্রথমে দেখেছি, তখন আমিও হেসেছি । ভিডিওর সেই পোস্টে হাহা রিয়্যাক্ট দিয়েছি, কারণ মজা পেয়েছি । কিন্তু গত দু-তিন দিন হলো আমি ভাবছি যে আরে এরকম মানুষ এই বঙ্গদেশে ক’জন আছে । যে দেশে বছরে প্রায় এগারো লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয় । একটা রাস্তার প্রকল্পের প্রায় তিন চতুর্থাংশ বরাদ্দ নির্দিষ্ট একটা মহলের পকেটে ঢুকে যায় । সিন্ডিকেট তৈরি করে ৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ২৫০ টাকা হয়ে যায় । যে দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অন্য দেশের গবেষণাপত্র চুরি করে(চৌর্যবৃত্তি) ডক্টরেট বনে যায় ।
সে দেশে সিদ্দিক তো একজন সততার প্রতীক । উই মাস্ট স্যালুট টু হিম । হি ইজ আ ট্রু ম্যান । উই মাস্ট সে হি ইজ মোস্ট রেস্পেক্টেবল এন্ড অনেস্ট পার্সন ।
এই সিদ্দিকের প্রতি শ্রদ্ধা । এই সিদ্দিক সম্মানের যোগ্য আপনার-আমার দেশে । কিন্তু আমরা তাকে তা দিতে পারিনি বা শিখিনি । কোটি কোটি শূয়োর শাবক জন্ম দেয়ার চাইতে এরকম সিদ্দিকের জন্ম দিন, যে অকপটে সত্য স্বীকার করতে জানে, পরিবারের কথা ভাবে । মারপিটের ভয় থাকলেও এক মুহূর্তের জন্য সত্য থেকে দূরে সরে যায়না ।
‘সিদ্দিক’ আপনাকে স্যালুট । আপনি আমার কাছে শিক্ষিত দলকানা এবং দুর্নীতিবাজের চাইতেও কোটি গুণ বেশী শ্রদ্ধার পাত্র । আপনাকে লাল সেলাম ।
সাব্বির আহমেদ সাকিল
১৮ শ্রাবণ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, বর্ষাকাল | মঙ্গলবার | ০২ আগস্ট ২০২২ ইং | পূর্বধলা, নেত্রকোনা
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:০১