সন্ধ্যা নামার পরপরই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামছিলো । জানালার কাঁচের বাহিরে বৃষ্টি দেখছিলাম । সবাই কাজে হরদম ব্যস্ত, কাজ শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে বলে । বৃষ্টি থামার পরপরই অফিস থেকে বের হয়ে বাড়ির পথে ।
বৃষ্টির কারণে ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেশ চমৎকার লাগছিল । পুলিশ লাইন্স পার হতেই বৃষ্টি নামলো, বনানী পৌঁছুতে পৌঁছুতে শুরু হলো তুমুল ঝড় সেইসাথে মুষলধারে বৃষ্টি ।
তড়িঘড়ি করে বনানীতে একটা ভ্রাম্যমান পান-সিগারেটের দোকানে ঢুকে পড়লাম । দোকানের সামনে কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছেন । কোনোমতে সেখানে ঠাঁই নিলাম ।
ঝড়ের বেগ ও বৃষ্টির তোড় বাড়তেই থাকলো, সাথে বিকট শব্দে বজ্রপাত । যেন আকাশটা এখনই ভেঙ্গে পড়বে । সবাই নিজের মতো করে দোয়া-দরুদ পড়তেছিলো । প্রার্থনা করছিলো, আল্লাহকে ডাকতেছিলো ।
আমার সামনে একজন নারী তাঁর কিশোরী মেয়েকে বুকের মধ্যে জাপটে ধরেছিলেন । তাঁদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় । বগুড়াতে এসেছিলেন অসুস্থ মেয়েটিকে ডাক্তার দেখাতে । কিন্তু ডাক্তারকে দেখাতে পারেননি বলে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন ।
আশেপাশে আরও কয়েকজন । তারমধ্যে একজন চাকরিপ্রার্থী, যিনি ঢাকায় যাবেন পরীক্ষা দিতে, বাড়ি গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জে । আরেকজন যাবেন ফেনীতে । আর দু’জন যাবেন ঢাকায় ।
প্রায় কুড়ি মিনিটের মতো ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মধ্যে সময় কেটে গেলো । বৃষ্টির তোড়ে প্রায় সকলেরই অর্ধেক গা ভিজে একাকার । সেই ফাঁকে পরস্পরের মধ্যে আলাপন ।
বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর সবাই যে যাঁর মতো রাস্তায় নেমে পড়লাম বাড়ি ফেরার বাহনে চড়বার জন্য । কিন্তু বাহনের সংকটে প্রায় সবাই অস্থির হয়ে উঠলেন । বেশ খানিকটা সময় অতিবাহিত হলেও কোনো গাড়ি পাচ্ছিলামনা ।
তারপর দেখি এলাকার ছোটভাই বনানীর মোড়ে বাইক ঘুড়াচ্ছে, আমাকে দেখে সে বাইক থামিয়ে বললো, ‘আরে ভাই, চলো তোমাকে নামিয়ে দিই’ । অতঃপর তাঁর বাইকে চেপে বাড়ির পথে ।
ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মাঝে যখন বনানীতে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন ভাবছিলাম হয়তোবা আমরা আর বাড়ি ফিরতে পারবোনা । বজ্রপাতে আজ গাবতলীতে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাঁর মতোই হয়তো আমরাও মারা পড়ে যাবো ।
আরও ভাবছিলাম যে জীবনকে অনুভব করবার মতো আসলেই কিছু মুহূর্তের দরকার আছে । যা মানুষকে গভীরভাবে নাড়া দেবে, মনে লালন করতে শেখাবে । জীবনর বাস্তবিকতায় যেগুলো একপ্রকার অ্যাসেট । আজ যে গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম, বাস্তবতার মুখোমুখি না হলে তো এমন ঘটনা লিখতে পারতামনা ।
বৈশাখের শেষে কালবৈশাখী ঝড়কে এমন প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পাবো তা ভাবতেই পারিনি ।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি যে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছি । কৃতজ্ঞতা সেই রবের প্রতি যিনি বৃষ্টি ও ঝড়-ঝাপটাকে শিথিল করে দিয়ে আমাকে-আমাদেরকে নিজ ঠিকানায় পৌঁছাবার তৌফিক দিলেন । নিশ্চয়ই আমার রব মহান এবং পরম দয়ালু ।
সাব্বির আহমেদ সাকিল
২৭ বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | বৃহস্পতিবার | ১১ মে ২০২৩ ইং | কৃষ্ণ ষষ্ঠী | আপন নীড়, বগুড়া
#অভিজ্ঞতা #ঝড় #বৃষ্টি #বজ্রপাত #কালবৈশাখী #ভাবনা #বাস্তবতা #বনানী #বগুড়া