আমাদের পুরনো সময়টা একটা ডায়রির মতো । পাতায় পাতায় সযত্নে সাজানো সকাল , দুপুর , রাতের হরেক রকম সময় ! কি দুর্দান্ত ! কি রঙিন ! এক একটা শব্দ যেন এক একটি কবিতা কিম্বা অপূর্ব কোন সুর ! অনেকটা ট্রেনের হুইসেলের মতো ! বুকের ভিতর ছিঁড়ে নিয়ে যায় , এমন এক সুর ! ডায়রির পাতায় শুকিয়ে যাওয়া গোলাপের মতো লেপটে আছে আদর ভরা মুহূর্তগুলো ! আমি এখনো তার সুগন্ধ পাই ! আচ্ছা , ভালোবাসার কি সত্যি কোন সুগন্ধ আছে ?
এক একটা পাতা উল্টাই আর ফিরে যাই তোমার কাছে । হুট করেই এলোমেলো বাতাসে কতোগুলো গোলাপ পাতা উল্টে যেয়ে আমাকে থামালো এক স্যাঁতসেঁতে পাতায় । এখনো কেমন ভেজা ! সোঁদা গন্ধ ! ঠিক প্রথম বৃষ্টি নামতেই মাটি ফুঁড়ে যে যে গন্ধ বাতাস ছোঁয় , পৃথিবীর আলো দেখে ঠিক তেমন ! ওখানেও একদিন বৃষ্টি নেমেছিলো ! বাঁধভাঙ্গা বৃষ্টি ! তোমার চলে যাবার দিনে , মেঘলা হয়ে থাকা চোখের হাহাকারে তুমুল বৃষ্টি নেমেছিলো ! আমি হাত দিয়ে কতবার যে ছুঁলাম ডায়রির ভেজা পাতা ! আমার হাত ধরে থামাবার কেউ নেই তাই অনেক অনেক সময় ধরে বৃষ্টি ছুঁয়ে ছিলাম ।
তারপর একসময় পৃষ্ঠা উলটালাম । আমি বেশিক্ষণ কাঁদতে পারি না তা তুমি ভালোই জানো ! অবাক আমি একের পর এক পাতা উল্টে চলেছি । একের পর এক ! পাতাগুলো যেন বিশাল মরুভূমি ! শূন্য এক বিষাদ ভরে রেখেছে সবটা ! এতো সাদা লাগছিলো পাতাগুলো ! মনে হচ্ছিলো সদ্য বিধবা কোন কিশোরী বঁধু মুখ গুঁজে পড়ে আছে সব হারানোর অভিমানে ! প্রিয়জন চলে গেছে অসীমে ! কার উপর এতো অভিমান ,জানে না কিশোরী , শুধু জানে তার জীবনের সব রঙ সাদা হয়ে গেছে ! সাদা ! ঠিক আমার ডায়রির পাতাগুলোর মতো ! কিশোরীর সাদা থান হয়তো আর রঙিন হবে না কিন্তু আমার ডায়রির পাতারা একদিন রঙিন হবেই । যেদিন তুমি তোমার অভ্যস্ত হাসি হেসে বলবে , কেমন আছো তুমি ? সেদিন আবার ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে ছুটে যাবে দূরে !
তোমার হাসিটা বড় সুন্দর ছিলো ! শিশুর মতো পবিত্র ! বাবু , এখনো কি তুমি কারো দিকে তাকিয়ে সেই অবাক হেসে প্রশ্ন করো , কেমন আছো তুমি ?