কলেজের ক্লাসে বসেই ভাবছি আজ একটা গল্প লিখেই ফেলব । একটা কলম নিলাম ব্যাগ থেকে । কলমটা বেশ দামী ! ভালই কালি দিত বাট কিছুদিন ধরে কি যেন সমস্যা দেখা দিচ্ছে । কালি মাঝ থেকে কেটে যায় সমস্যাটা কি বুঝতে পারছি না । এটা দিয়ে হয়ত স্যারের কাছে ব্যাচে পড়ার টাইমে লেখা যাবে না । তাই চিন্তা করলাম গল্পটা লিখেই এটাকে জাদুঘরে পাঠাবো । খাতায় গল্প লেখা শুরু করলাম । বিষয়বস্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার পরের সময়টা কেমন আউলা ঝাউলা কেটেছিল তাই । কিছুক্ষণ পরেই আবিষ্কার করলাম যে আমি নতুন কিছুই লিখছি না । আমি যা যা করেছিলাম অনেকটা সেরকম হয়ে যাচ্ছে । প্রথম গল্প লিখছি তাই আনন্দ স্বভাবতই বেশী হচ্ছে । হাসছি আর লিখছি । কেউ দেখে নিশ্চিতভাবেই বলবে আমি এখন যে কাজ করছি সেটা করে আসলেই খুব আনন্দ পাচ্ছি। আমাকে চিরসুখী হতে হলে আমাকে এ কাজই আজীবন করে যেতে হবে , ডাক্তাররাও হয়ত এমন প্রেস্ক্রিপ্সন লিখবেন । লিখতে লিখতে মনে হচ্ছিল এই বারের সাহিত্যের নোবেল বোধধয় তৃতীয় বিশ্বের এখন যে লোকটা গল্প লিখছে সেই পাবে । আর বুকার পুরস্কার যদি আমাকে না দেয় তাহলে আর পুরস্কার কি ! কয়েক দিনের মধ্যে এই গল্প প্রকাশ করলেই হয়ত সব শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা আমাকে হেডলাইনের বিষয়বস্তু বানিয়ে লেখা-লেখি শুরু করবে । এরই মাঝে এক বন্ধু এসে বলল বসে বসে কি কর ? প্রেমপত্র লিখস নাকি ? নতুন বন্ধু তো তাই কখনো তুই আবার পরক্ষনেই তুমি এই নিয়েই চলছে । তার পর বলল বাসায় যাবি না ? গেট খোলা কিনা জিজ্ঞেস করার পর হ্যা সুচক উত্তর পাওয়ার পর বললাম না যাবনা তুই যা ।সরকারী কলেজে এইটা ভালই লাগে কোনো ক্লাস করার বাধ্যবাধকতা নেই । ও ওর ব্যাগ নিয়ে চলে গেল । যাওয়ার আগে অবশ্য বুঝিয়ে দিতে হল আসলে এটা স্যারের পড়া হেহেহে । নাহলে কি লিখছি সেটা আবার দেখতে চেয়ে বসে ! দেখাতে চাইলাম না কারন আমি কি লিখছি লেখা শেষ হওয়ার আগেই কেউ দেখে আমার সামনেই হাসাহাসি করুক তা আমি চাই না । এখন আর কোনো ক্লাসের স্যারই মনোযোগ আকর্ষণ করে পড়াচ্ছে না ।আমারও ক্লাসে কোনো মনোযোগ নেই । এখন মাথার মধ্যে গল্পের প্লাটফরম দাঁড়িয়ে গেছে । প্লাটফরমে হয়ত কিছুক্ষনের মধ্যেই রেল আসবে । রেল যাতে মিস না হয় সেদিকেই মনোযোগ । যাই হোক রেল আসার আগেই ছুটি হয়ে গেল । ভাবলাম ট্রেন কিভাবে আনা যায় তার জন্যে কিছু সময় পাব । আজকে আর বাসে করে বাসায় যাব না । বাসায় হেঁটে যেতে বেশী হলে লাগবে ত্রিশ মিনিট । হাঁটা যাক । হাটতে হাটতে হয়ত ট্রেন আনা যেতেও পারে ! শার্লক হোমস নাকি বেশী চিন্তা করার সময় হাটত । হুমায়ূন আহমেদও নাকি কি লিখবেন তা ভাবার সময় হাটতেন তাই আমি হাটলেও কোনো সমস্যা নেই । রাস্তায় হাটতে দেখছি ভালই লাগছে । গাড়ির সাথে পাল্লা দেওয়া শুরু করেছি । একটি গাড়িকে টার্গেট করছি দুইটা সিগন্যাল পার হওয়ার আগেই আমি গাড়িটাকে ধরে ফেলছি বেশ মজাই লাগছে । বাড়ি পৌছানোর পর পরই জেরার মুখোমুখি হব ভাবিনী । শুরু হল , পাখা গজিয়েছে স্বাধীনতাটাকে আমি যেন বিপথে যাওয়ার উপায় হিসেবে না ব্যবহার করি সে বিষয়ে হাজারটা উপদেশ । রাগে নিজের ঘরে এসে গল্প যেখানে লিখা শুরু করছিলাম পাতাটা ছিঁড়ে ঘরের মধ্যেই ফেলে দিলাম । হয়ত পরে বড় বোনের হাতে গেছে । রাতেই আমার রুমে এসে বলে গেল কিরে আজকাল কি প্রেম-পত্র পাচ্ছিস নাকি ? নাকি লেখার চেষ্টা করছিস ?
বললাম গল্পের মধ্যে এসব থাকতেই পারে !
- ও তাই নাকি! তাহলে আব্বুকে বলি ?
আরে এসব আব্বুরে দেখানোর কি হল ?
- না না তাও দেখাই । তার ছেলে কেমন গল্প লেখে একটু দেখুক । স্কুল পালিয়ে কবে কাকে দেখতে গিয়েছে একটু জানুক ! হিহিহিহি (আবার শয়তানের হাসি )
আমি কিন্তু ফেসবুক থেকে ব্লক মারব !
- মার ! তো কি হয়েছে ? আমি কি তোকে মানা করছি নাকি ? আমি আম্মুকে দিতে যাচ্ছি তোর গল্প ।
এই বলে ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেল । আমি তাড়াতাড়ি লগ-ইন করে ওকে ব্লক মারলাম । একটু পর আব্বু এসে বলল বাবা তা আজ কি কি দেখলে ?
- আমি বললাম কোথায় !
ঐ যে কার সাথে নাকি কলেজের পর বেড়াতে গেছিলে ?
- কই ? না তো !
ও তা কলেজে ক্লাস কেমন চলছে ?
- জ্বী । ভাল ।
এবার শয়তানটাকে আরেকটা ব্লক মারতে ইচ্ছা করছে । আমি ওর রুমে গিয়ে আর কোনোদিন আমার রুমে আস্তে মানা করে দিয়ে আসলাম । এবার একটু শান্তি লাগছে ।
আবার দেখছি ও সকাল থেকে ও আমার রুমে ঠিকই আসছে । মনে হল একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে । আবার মনে হল কি দরকার আমরা আমরাইতো ! সকালেই আবার বাড়িতে আসল মাহবুব । আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে বদাইম্মা । সাইকেল চালিয়ে নাকি বন্ধুরা কোথায় যাবে তাই আমাকেও যেতে হবে সেজন্য ডাকতে ।একটু পর আবার আমার রুমে আসল আপু । এসে মাহবুবকে গতদিনের নিজের তৈরি ফালতু কাহিনী শোনান শুরু করল । বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই মাহবুব কে বুঝিয়ে শুনিয়ে বললাম এসব ফালতু কাউকে যে এই কাহিনী না বলে । কাউকে বললে আমি ওকে ব্লক মারব । কোনো কাজ হল না । ও খুব রসিয়ে সব কিছু সবাইকে বলে দিল । আর যে কাজটা করল তা হল গল্প বলার শুরুতে একটা মেয়ের নাম জুড়ে দিল । যাকে সবাই চেনে বলেই আমিও চিনি বলে ! ব্যাস ...............।।