মানুষ সমুদ্রে ডুব দিতে পারে, সমুদ্রকে ধারণ করার সক্ষমতা মানুষের নেই। নজরুল এক সমুদ্র, তাকে ধারণ করা সহজ নয়, তাতে ডুব দিতে হয়।
যে কবি লিখেছেন, "মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল" তাকে রোমান্টিক কবি না বলে, শুধু বিদ্রোহী কবি বলা হয়।
যিনি লিখলেন, "যত পাপী তাপী সব মোর বোন, সব হয় মোর ভাই" তাকে উদার না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখেছেন,
"যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!"
তাকে অভিমানী নয়, শুধুই বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি নিজেই বলেছেন, "বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম" তাকে প্রেমিক না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখেছেন "সুন্দরের অবহেলা আমি সইতে পারিনা, বন্ধু! তাই এত জ্বালা!" কিংবা "আমি কবি, আমি আঘাতকরলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি। অসুন্দর কুৎসিতের সাধনা আমার নয়। আমার আঘাত বর্বরের কাপুরুষের আঘাতের মতো নিষ্ঠুর নয়"। আহা! তাকে সৌন্দর্যের কবি না বলে বিদ্রোহী কবি বলা হয়।
যিনি বললেন "ছেলেবেলা থেকেই পথে পথে মানুষ আমি। যে স্নেহে, যে প্রেমে বুক ভরে ওঠে কানায় কানায়, তা কখনো কোথাও পাইনি" তাকে অবহেলিত না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখেছেন, "শোনো শোনো ইয়া ইলাহি আমার মুনাজাত"
কিংবা
"মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই। যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই",
তাকে ধার্মিক না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখলেন, "আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ, এই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হজরত" তাকে নবী প্রেমিক না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখলেন, "রোজ হাসরে আল্লাহ আমার করো না বিচার" তাকে ধর্মভীরু না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখেছেন,
"যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল?"
তাকে শোষিত মানুষের বন্ধু না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখেছেন, "কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট" তাকে প্রতিবাদী না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখেছেন,
"বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।"
তাকে দুরন্ত কিশোর না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখেছেন,
"ভোর হলো দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে যুঁই-শাখে
ফুল-খুকি ছোটরে!"
তাকে শিশুতোষ কবি না বলে বিদ্রোহী কবি বলা হয়।
যিনি লিখলেন,
"বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।"
তাকে সমতার কবি না বলে বিদ্রোহী কবি বলা হয়।
যিনি লিখেছেন,
"বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।
রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা।"
তাকে অসহায় না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি লিখলেন,
"গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু -বৌদ্ধ -মুস্লিম -ক্রীশ্চান।"
তাকে অসাম্প্রদায়িক না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
যিনি 'উমর ফারুখ' কবিতা লিখলেন তিনি রাজনৈতিক কবি নয়? বিদ্রোহী কবি?
যিনি খালিদ বিন ওয়ালিদকে নিয়ে 'খালিদ' লিখেছেন, যার এক হাতে রণতূর্য, তিনি যোদ্ধা না, তিনি বিদ্রোহী?
যিনি লিখেছেন, "ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে আবার লিখছি । কিন্তু আর লিখতে পারছিনে ভাই! চোখের জল, কলমের কালি দু-ই শুকিয়ে গেলো । তোমরা কেমন আছো, জানিও । তার কিছু খবর দাওনা কেন? নাকি সে মানা করেছে?" আহা! তাকে বিরহী, না বলে বিদ্রোহী বলা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:১০