somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে ধ্বংসের পথে পরিবার ব্যবস্থা।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগে আড্ডা দিতেদিতে একজন বেবি-কেয়ারে তার একদিনের ইন্টার্নির অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিল। তার ঐ একদিনের অভিজ্ঞতা শুনেই আমি অবাক! আট মাসের বাচ্চাকে বেবি-কেয়ারে রেখে বাবা-মা যে'যার কাজে চলে যাচ্ছে, কত ভয়ংকর কথা!
যাবেই'বা-না কেন। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে নিজের অজান্তেই তো মানুষ সার্বজনীন ভাবে পশ্চিমা পুঁজিবাদী ধর্মকে গ্রহন করে নিচ্ছে, যার কলেমা হচ্ছে "মানি ইজ সেকেন্ডে গড" ['সেকেন্ড' শব্দটা না থাকলে একেশ্বরবাদীরা গ্রহণ করতো না তাই টেকনিক করে 'সেকেন্ড' শব্দটা প্রবেশ করানো হয়েছে মাত্র]। তাই মানুষ আজ অর্থের আরাধনায় মত্ত। মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ করা হয় অর্থে। মানুষকে কেনা যায় অর্থে। কিসের ঘর, কিসের সংসার, কিসের পরিবার।
অথচ সুন্দর সমাজের জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিবার। সুন্দর পরিবারের জন্য চাই সুন্দর মানুষ। মানুষের সৌন্দর্য থাকে তার মনে, তার চিন্তায়। ঘুরেফিরে আমাদের চিন্তাগুলো রসুনের মতো অর্থের মধ্যে এসেই মিলিত হয়৷ তাই সরাসরি কর্মের মানদণ্ডে মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ করা হয় না। অর্থের মানদণ্ডে কর্মের মর্যাদা নির্ধারণ করার পর কর্মের মানদণ্ডে মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ করা হয়। গৃহস্থালি কাজে যেহেতু অর্থ নেই, তাই তাতে মর্যাদাও দেয়ার হয় না।

অথচ অবস্থা ও উপযোগিতা অনুসারে দুনিয়ার দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে নারী-পুরুষে উভয়েই সমান অংশীদার। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগের পিথাগোরীয় সমাজও তা বুঝতো, কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর উন্নত মানুষেরা তা বোঝে না। পিথাগোরীয় সমাজে নারীর গৃহস্থালি কাজকে পুরুষের বাহিরের কাজের মতো সমানভাবে মর্যাদা দেয়া হত। পিথাগোরীয় সময়ে নীতিবিদ্যার মাধ্যমে সমাজের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করা হত। পুরুষের বহির্মুখী কাজ এবং নারীর গার্হস্থ্য কর্মের সমমর্যাদা পিথাগোরীয় নীতিবিদ্যারই অংশ ছিল।

নারী কি চায়? নারী চায় একটি ঘর, যেটাকে সে সুন্দর এবং মনের মতো করে সাজাবে। সৃষ্টিকর্তা সেভাবেই নারী হৃদয়কে সৃষ্টি করছেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার নারীর প্রথম পরিচয় সে মানুষ, তারপর নারী। মানুষ চায় সম্মান, চায় মর্যাদা। গৃহস্থালি কর্মে যেহেতু অর্থ নেই এবং অর্থই যখন মর্যাদা পরিমাপের স্কেল, তখন মানুষ হিসেবে কাঙ্খিত মর্যাদা অর্জনে নারীকে অর্থের পেছনেই ছুটতে হয়। ফলে ধ্বংস হয় পরিবার। সন্তান বঞ্চিত হয় মায়ের বুকের দুধ থেকে, ভালোবাসা থেকে।

মানুষের জীবনে অর্থ এবং ভালোবাসা দুটোই প্রয়োজন রয়েছে। অর্থ মানুষের বাহ্যিক চাহিদা পূর্ণ করে, পরিবার মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। ভালোবাসা মানুষের আত্মাকে তৃপ্ত করে। ভালোবাসাহীন মানুষ কতটা অসহায় তা কদিন আগেই মোহসিন খানের ( রিয়াজের শ্বশুর) আত্মহত্যা থেকেই উপলব্ধি করা যায়। এত অর্থ সম্পদ তার ভালোবাসার অভাব দূর করতে পারেনি।

আল্লাহ বলেন-
তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সংগিনীদেরকে যেন তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন (সূরা রূম: ২১)
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তা থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়। (সূরা আরাফ: ১৮৯)

কিন্তু অর্থের মোহে আমরা যখন পরিবারকে ধ্বংস করে দিচ্ছি, তখন তৈরি হচ্ছে ভালোবাসার শূন্যতা। সৃষ্টিকর্তা নারী-পুরুষকে সৃষ্টি করে এমন একটা বিধান দিয়েছেন যেখানে সবকিছুর ভারসাম্য বজায় থাকে। মানুষ তা উপলব্ধি করে না, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যেমন; সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রী এবং সন্তানের ভরনপোষণের দায়িত্ব ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে । (সূরা আল-বাকারা:২৩৩, সূরা আত-তালাক: ৬, সুনানে আবূ দাউদ:২১৪২)। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (সঃ) স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের নিকট আল্লাহর আমানত।

আবার নারীদের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে -
তোমরা ঘরে অবস্থান করো এবং জাহেলি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করো না। (সুরা আহজাব: ৩৩)

আবার নারী-পুরুষ দু'জনকে দু’ধরনের দায়িত্ব দিয়ে বলে দেয়া হয়েছে, একজন অপরজনের আবরণ সরূপ ( সূরা আল-বাকারা:১৮৭)। অর্থাৎ একে অন্যের নিরাপত্তা দেবে, সুখে অসুখে পরস্পরের পাশে থাকবে, সেবা করবে।

নারীর দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ না থাকলে সে আর্থিক প্রয়োজনে কর্ম করতেই পারে। কিন্তু সমাজ যখন নারীর গৃহস্থালি কাজকে মর্যাদা দেয় না তখন পশ্চিমা পুঁজিবাদীরা মার্কেটিং করে, উপার্জনই নারীর মর্যাদা, এবং নারীও সেই মর্যাদার পেছনে ছোটে।
সুতরাং সমাজের চিন্তায় পরিবর্তন দরকার। উপযোগ অনুযায়ী গৃহস্থালি কাজ এবং অর্থ উপার্জন কোনাটাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সৃষ্টির উপর স্রষ্টার বিধান প্রকৃত ভাবে মেনে চলা দরকার, তবেই পৃথিবী সুন্দর হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২৩ ভোর ৫:১৭
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×