বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পূর্বে নববর্ষে যে বিষয়টা খুবই বিতর্কিত সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাই। কারণ এই বিষয়টি মানুষেকে নববর্ষ উজ্জাপনে বিভক্ত করে দিচ্ছে। আপনার সনাতন ধর্মের বন্ধুকে রোজার ঈদে দাওয়াত দিলে সে আসবে, কিন্তু যদি কুরবানি ঈদে দাওয়াত দেন তাহলে? না, এক্ষেত্রে সে আপনার বাসায় আসবে না, বরং সে আপনার দাওয়াতকে নেতিবাচক ভাবে গ্রহণ করবে। অর্থাৎ আপনার ঈদ উজ্জাপন তার জন্য কোন সমস্যা নয়, গরু কুরবানির দেয়াটা তার জন্য সমস্যা।" ঠিক একইভাবে পহেলা বৈশাখ নিয়ে কারো কোন সমস্যা নাই। সমস্যা জীবজন্তুর মুর্তি এবং কল্পিত রাজা-রানির মুখের অবয়ব নিয়ে মঙ্গলশোভাযাত্রায়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকটা বিমূর্তকে মূর্ত করাটা তাঁদের ইবাদতের প্রধান অংশ। মঙ্গলশোভাযাত্রাটা মূলত তাঁদের ইবাদতের ঐ কনসেপ্ট থেকেই এসেছে। সনাতন ধর্মের ইবাদতের কনসেপ্ট থেকে আসাটাও মুসলমানদের জন্য কোন সমস্যা নয়, সমস্যা হলো মুসলমানদের নিকট বিমূর্ত বিষয়টিকে মূর্ত করাটা গ্রহণযোগ্য নয়। মূলত এই কারণেই দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ লোক মঙ্গলশোভাযাত্রাকে গ্রহণ করে না। ঠিক যেমন আপনার ঈদ উৎসবের দাওয়াত সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধুটা গ্রহণ করলেও গরু কুরবানিরকে গ্রহণ করতে পারে না।
মানুষের ধর্ম তার বিশ্বাস, তাই প্রত্যেকের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, যারা জীবজন্তুর মুর্তি বানিয়ে মঙ্গলশোভাযাত্রা করতে চান তাঁরা সেটা করতেই পারেন, বাঁধা নাই। কিন্তু সেটাকে সার্বজনীন বলে প্রতিষ্ঠিত করতে যাবেন না, দেশের অধিকাংশ মানুষই এটা বর্জন করেছে। গুটিকয়েক লোকের একটা অনুষ্ঠানকে সার্বজনীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হতে সরে আসলেই আর কোন সমস্যা থাকবে না। মানুষের মধ্যে মতের পার্থক্য থাকবেই, সম্প্রতি গড়ে তুলতে হলে একে অপরের মতকে সম্মান করতে হবে। একের উপর অপরের মতকে জোরপূর্বক চাপিয়ে দিয়ে সম্প্রতি রক্ষার চেষ্টা কখনো সফল হয় না। বরং এতে বিভাজন তরান্বিত হয়, টলারেন্স ভেঙে পড়ে।
একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, কেবলমাত্র নববর্ষ পালন এবং আমারো একটা ক্যালেন্ডার আছে, এটা বলা ব্যতিত আমাদের বর্তমান জীবনে বাংলা সনের আর কোন ব্যাবহার কি আছে? না, নাই। তাহলে এখানে এমন একটা বিষয়কে কেন জোরপূর্বক অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে, যেটা দেশের মানুষকে বিভক্ত করছে?
সবার বোধদয় হোক, সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা, শুভ নববর্ষ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:১৭