প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।
২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। রেজাল্টও ভালো। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অনার্স বা মাস্টর্সে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ পড়ানো হয়। তারপরেও তাদের প্রশ্ন করা হয়, জেন্ডার স্টাডিজ নিয়ে পড়েছেন কীনা। দুজনেই উত্তর দেন, এ বিষয়ে তারা একটি কোর্স পড়েছেন। ফলে এই অধিক্ষেত্রে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে আর কোন বাঁধা থাকার কথা নয়।
প্রথম জনের বেশভূষা দেখে বুঝা যায়, তিনি আধুনিক। তাকে প্রশ্ন করা হলো-জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে পার্থক্য কী? এ প্রশ্নে তিনি থামলেনও না, ভাবতেও সময় নিলেন না। গড়গড়িয়ে বলে যেতে লাগলেন, জেন্ডার হলো- লিঙ্গ। নারী পুরুষ। আর সেক্স হলো, নারী পুরুষ মিলে যৌন কাজ করা। সেক্স ওঠার পর পুরুষ লিঙ্গ শক্ত হয়। পরে তা স্ত্রী লিঙ্গে …. প্রশ্নকর্তা এ পর্যায়ে দ্রুত তাকে থামিয়ে দেন। বললেন, আর বলতে হবেনা। পুরা ভাইভা বোর্ড অপ্রস্তত। তারা প্রার্থীর বেশভূষা দেখে আধুনিক ভেবেছিলেন। তবে মুখ খোলার পরে বুঝতে পারেন- ইনি তো অতিআধুনিক। সেক্স কীভাবে করে সেটা ভাইভা বোর্ডের মতো একটি ফরমাল পরিবেশে অবলীলায় কোন ইতস্ততা ছাড়াই বলে যেতে শুরু করেছেন। এটাই অতিআধুনিকতার সাইড ইফেক্ট।
এবার অন্য নারী চাকরি প্রার্থীর কথা বলি। তিনি আপদমস্তক ঢেকে এসেছেন। মুখও ঢেকে রেখেছেন। ধার্মিক হিসেবে সম্মানের যোগ্য। তাকেও একই প্রশ্ন করা হয়। জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে পার্থক্য কী! এ প্রশ্নে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন, চাকরি করতে আসছি বলে কী এমন সব প্রশ্ন করবেন! আপনাদের কী মা বোন নেই! বলেই কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। প্রশ্নকর্তারা তাকে থামানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন না। অতিধার্মিকতার সাইড ইফেক্ট শুরু হয়ে গেছে। পরে তাকে মা-টা বলে টলে বহু কষ্টে থামনো হয়।
দুটি ঘটনার অস্বাভাবিকতায় প্রশ্নকর্তারা হতভম্ব। কাকে দোষ দেবেন! দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দোষ দিতে পারেন। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের একটি সাবজেক্ট থেকে পাস করা চাকরি প্রার্থিদের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের বেসিক বিষয়ে ধারণা নেই। তবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দোষ দিয়ে বসে থাকলে তো হবেনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। কারণ এরা বাইরে গিয়ে যদি লোকজনকে বলে দেয়, ভাইভায় সেক্স নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তাহলে তৌহিদী জনতার ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে। পাবলিকের মার একটাও নিচে পড়বেনা। পরে আর কী! দুজন প্রার্থীকেই চা নাশতা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয। তারপর ভাইভা বোর্ডের জেষ্ঠ্য সদস্য তাদের বুঝিয়ে দেন, জেন্ডার হলো-ছেলে মেয়ে, নারী পুরুষের সামাজিকভাবে নির্মিত ভুমিকা, আচার, আচরণ অভিব্যক্তি ও পরিচয়। আর সেক্স বলতে পুরুষ ও মহিলার বিভিন্ন জৈবিক ও শরীরবৃত্তিয় বৈশিষ্ট্যকে বুঝায়। মানে- জেন্ডার সোসাল পারসপেকটিভ আর সেক্স বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল পারসপেকটিভ। এটা যারা বুঝেনা তারাই বলে, আমার ছেলে আমার মেয়ে। বলা উচিত আমার পুত্র, আমার কন্যা। নিজের পরিচয় দেয়া উচিত, আমি ছেলে বা আমি মেয়ে। বুঝতে পেরেছেন, এটা কত বেসিক বিষয়৷ একজন প্রাথমিক শিক্ষকের এটা জানা দরকার৷
আমাকে যারা চেনেন, তারা জানেন আমি অতিআধুনিক ও অতিধার্মিক পছন্দ করিনা। উপরের ঘটনা এর কারণ। অতিআধুনিকরা অল্পতেই সাবালক হতে চেষ্টা করে। কোনটা ঢেকে রাখতে হয়, আর কোনটা খোলা রাখতে হয়- এই ভেদাভেদটাই তাদের থাকেনা। তারা সব কিছু উদোম রাখতে চায়। আর অতিধার্মিকরা এর বিপরীত। যেটা খুলে রাখার বিষয় সেটাও তারা ঢেকে রাখতে চায়। এদের সাথে বোনাস হিসেবে যুক্ত হয় প্রতিক্রিয়াশীলতা।
যাই হোক আর একটি বোনাস গল্প বলি।
বাংলাদেশ থেকে এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র গেছে। ইমিগ্রেশন পার হতে গিয়েই তার জেরার মুখোমুখি হতে হয়। তাকে আলাদা করে একটি কক্ষে নেয়া হয়। এরপর একটি সাদা কাগজ ধরিয়ে দেয়া হয়। বলা হয়, সে যেন সঠিক ও সত্য তথ্য দেয়।
প্রথমে তাকে নিজের নাম লিখতে বলে। সে নিজের নাম লিখে।
পরে তাকে বলে সেক্স সম্পর্কে লিখেতে। নিজের সেক্স লিখতে গিয়ে সে থমকে যায়। ভাবে, যুক্তরাষ্ট্র উন্নত দেশ। উন্নত প্রযুক্তি। ভুয়া তথ্য দিলে ধরে ফেলতে পারে। পরে আর যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবেনা। একারণে সে আর ঝুঁকি নিতে চায়নি। সে সেক্স লিখে হাইপেন দেয়৷ পরে তার সামনে লিখে, থ্রি টাইমস অনলি।
এজন্যই বলি ভাই ভগ্নিগণ, জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে পার্থক্য জানুন। নয়তো নিজে অতিআধিুনিকতা বা অতিধার্মিকতার পরিচয় দিয়ে ফেলবেন। অন্যদিকে অন্যরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বেন।