মোটা দাগের কথা
অশনি সংকেত- পর্ব ০১
আমি যখন কক্সবারাজে থাকতাম তখন আমার সাথে বরিশালের এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। সঙ্গত কারনে আমি তার নাম বলতে চাইনা। লালন ভক্ত নির্লোভ মজার মানুষ উনি। তার বাবা সরকারী চাকরী করেন। আর উনি একটি বিমা কোম্পানীর বড় কর্মকর্তা। ঢাকায় বাবা মা ভাইবোনের সাথেই থাকেন। আমি কক্সবাজার পর্ব গুটিয়ে ঢাকায় আসার পরও ওনার সাথে আমার যোগাযোগ রয়ে যায়। আমাদের প্রায়ই দেখা হয় শাহবাগের ছবির হাটে। আড্ডা দেই, চা সিগারেট খাই, গল্প করি। তো একদিন আমরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম উনি বললেন- আমি আর আমার পরিবার আমার ছোট ভাইটা নিয়ে ভীষন ভীষন দুশ্চিন্তায় আছি। আমি স্বভাবতই জানাতে চাইলাম কেন। এর পর উনি যা বললেন তা আমার কাছে আসলেই অদ্ভত ঠেকালো।
- আর কইয়ো না। ভাইডা গোল্ডেন এ প্লাস পাইছে তো এইডা নিয়া আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছি।
- মানে কি? গোল্ডেন এ প্লাস এর চাইতে ভালো রেজাল্ট আর কি আশা করেছিলেন?
- তুমি বোঝনাই ব্যাপারটা। গোল্ডেন এ প্লাস তো বহু দুরের ব্যপার ওর তো কোন সাবজেক্টেই পাশ করার কথা না।
- মানে কি?
- তাইলে বোঝ এবার...! যে ছেলের কোন সাবজেক্টেই পাস করার কথা না সে যদি পায় গোল্ডেন এ প্লাস তাহলে কি তার অভিবাবকদের দুশ্চিন্তা করার কথা না? সে হলো একজন প্রফেসনাল হিরোইন খোর। তার কাজই হচ্ছে হিরোইন খাওয়া আর হিরোইনের টাকার জন্য চুরি চামারি করা।
- বলেন কি ভাই আপনার পরিবারে এরকম একটা ছেলে তো আশাই করা যায়না।
- কিচ্ছু করার নাইরে ভাই। আমরা ভাবছিলাম যদি রিহ্যাব করে টরে আবার নতুন করে শুরু করা যায় কিনা। হয়তো চিকিৎসা শেষে আবার নতুন করে নাইনে ভর্তি করে সুন্দর জীবন শুরু করাব। কিন্তু তা তো আর সম্ভব হলো না। সে এখন এসএসসিতে গোল্ডেন পাইছে। তারে তুমি কি আর নতুন করে নাইনে ভর্তি করাতে পারবে? এইটা দুনিয়ার কেউ মানবে?
- কেন তার দরকার কি?
- এইতো এবার লাইনে আইছ। তার দরকার আছে বলেই তো এত চিন্তা করছি। সে ক্লাস নাইন থেকে বেশীরভাগ বিষয়েই ফেল করতে করতে এসছে। টেষ্টে সে একটা সাবজেক্টেও পার করেনাই।
- তার পরও তাকে এলাউ করলো কিভাবে? কোন স্কুলে পড়তো সে?
- এলাউ করছে আমার বাবার কারনে। যদিও আমার বাবা চায়নি সে এলাউ হোক। তার পরও স্কুল এলাউ করছে, পরীক্ষা দিতে দিছে কিন্তু এখন তো গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে বসে আছে। এখন?
- তার মতামত কি?
- সে তো এখন মহা রাজা। গোল্ডেন এ প্লাস পাইসে তারে পায়কে? এখন কলেজে পড়বে। হিরোইনের পাশাপাশি পার্ট টাইম ইয়াবা খাবে, ছিন্তাই শুরু করবে। এখনই ছিন্তাই টিন্তাই করে কিনা কে জানে?
- এখন কি করবেন ভাবছেন?
- কি আর করব? আইএ ভর্তি করে দিতে হবে। তারপর হয়তো আইএ টাও এইভাবেই পাশ করবে, একসয় অনার্স পাশ করবে। আরো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বোঝই তো।
- হ আদুভাই বানাইয়া ছাইড়া দেয়।
- বয়স ত্রিশ হওয়ার তিনমাস আগে হয়তো অনার্স পাশ করবে কুইত্তা মুইত্তা। তারপর ঘুষ আর বাপের মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট দিয়া একটা চাকরী পাবে। কিন্তু দেশ?? তোমার আমর মতো গাধাগো ঘামের টাকা দিয়া অর মতো একটা কোয়ালিটি লেস লোক দিয়া কাজ করাবে। মানে দেশ খাবে গোয়ামারা। বুচ্ছ এইবার আমি ক্যান চিন্তিত? দেশটা তো শুধু হিরোইন খোর আর ঘুষখোরদের না ভাই। এইটা তো আমরও দেশ। তাইনা? আমারও তো কইলজা পোড়ায়।
কিন্তু এই চিন্তা কয়জন অভিবাবকের আছে? আমার বন্ধু আশরাফুল বারী এখন বিশ্ব সাস্থ সংস্থার বড় কর্ম কর্তা। একসময়ে সে প্রাইভেট পড়িয়ে চলত। তো তাকে ফোন করে তার কয়েকদিন আগে ছেড়ে আসা এক স্টুডেন্টের মা বলছে স্যার সারাদিন ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকেন আপনি আর সবাই পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পায় আর আমার মেয়ে পেলো না। কি করেন আপনি?
আমারেদর দেশের সব ছাত্র-ছাত্রীর বাবা-মা ই চায় তার সন্তান স্কুলে পরীক্ষায় প্রথম হোক, বেশী নম্বর পাক। আর তা যে করেই হোক। তাহলে তার বাবা অফিসের কাজ বাদ দিয়ে দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে গল্প করবে আর মা স্কুলের সামনে পেপার বিছিয়ে অন্য মায়েদের সাথে নিজের নতুন কেনা শাড়ী আর পাশের বাসার ভাবীর শাড়ী তুলনা করবে কিংবার রাশী সিরিয়ালের কাহিনি আর ফাকে ফাকে নিজের ছেলে মেয়র প্রসংসার করতে পারবে। ছেলে মেয়ে আসলে কি শিখলো তাদে তাদের থোরাই কেয়ার।
সাইফুল বাতেন টিটো
০১ ডিসেম্বর/২০১৪
দঃপীরেরবাগ, মিরপুর
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৪