মোটা দাগের কথা
০৮-১২-২০১৪
মিরপুর, ঢাকা
আমার অফিস বারিধারায়। আমি সস্ত্রীক থাকি কল্যানপুর এরিয়ায়। বাসা পরিবর্তন করে বরিধারা এলাকায় বা আসপাশে কোথাও নেব তা সম্ভব না। তাতে আবার আমার বউয়ে পড়াশুনায় বেশ অসুবিধা হবে। আমার অফিস টাইম সকলাল দশটা থেকে সন্ধা ছয়টা পর্যন্ত। মোট তিনদিন দেরীতে অফিসে ঢুকলে একদিনের স্যালারি কাটা যায় আমাদের এখানে। ফলে আমাকে সকাল সকাল বের হতে হয়। সকাল সকাল মানে আগে আগে। তা কত আগে বলতে পারেন? আমার অফিস দশটায় আমাকে বউয়ের কাছথেকে বিদায় নিয়ে নিচে নামার সিড়িতে পা রাখতে হয় ঠিক আটটা ত্রিশে। একত্রিশ বত্রিশ হলে হয়তো সমস্যা হয়না। কিন্তু পয়ত্রিশ হলেই বড় ধরনের ঝামেলা। শ্যামলি কল্যানপুর থেকে বরিধারায় আসতে একটা মাত্র বাস নাম বৈশাখী পরিবহন। আমাকে সেটায় উঠতে হয় শ্যামলী শিশু মেলার সামনে থেকে। বৈশাখি ছাড়ে সাভার থেকে একটা ছাড়ে গাবতলী থেকে একটা । সে বাস কল্যানপুরে থামে না শ্যামলিতে থামে না থমে শিশু মেলায়। আগে থেকেই সব সিটে লোক বসা থাকে। ঠেলাঠেলি করে উঠে শুনতে হয় অন্য যাত্রিকে গজগজানি। কেউ কেউ হেল্পার কন্ডাকটরকে অশ্লীল ভাবে গালি দিতে থাকে- কেন আমরা সিটের বাইরে উঠলাম। আর আমরা যারা সীটের অতিরিক্ত যাত্রি হয়ে উঠি তারা তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরের অপার সৌন্দয্য দেখতে থাকি। কে কি বলল সেদিকে কান দেই না। ব্যপারটা একদমই এরকম না যে আমরা উঠি আর বাস শা শা করে টানতে থাকে ঘন্টায় ষাট কিমি বেগে। আমরা ঘন্টায় দেড় কিমি বেগে আগাতে থাকি। জাঙ্গির গেট পর্যন্ত এসইে মোবাইলে তাকিয়ে দেখি পৌনে দশটা। আর সামনে বিশাল গাড়ীর সমুদ্র। যার শতকরা নব্বই ভাগই প্রাইভেট কার। দুইটা প্রাইভেট কার একটা বাসের সমান যায়গা নেয়। আর দুইটা গাড়ীতে অফিসগামী লোক থাকে দুইজন। আর একটা বাসে অফিস গামী বাসে যাত্রি থাকে গড়ে একশ বিশজন। তাহলে আমি কি করে অফিসে পৌছাব? মহাখালি পার হয়ে যখন গুলশানের দিকে রওনা দেই তখন চিন্তা করি আসলে আমরা যারা সাধারন যাত্রি রেগুলার বাসে যাতায়াত করি তাদেও জন্য এই রাস্তা কত পার্সেন্ট আর ব্যবহৃত হয় কত পার্সেন্ট। রান্তার দুই পাশে যে পরিমান গাড়ী পার্কিং করে রাখা তাদে দুই পাশ দিয়ে তিনভাগের এক দুই ভাগ রাস্তাই পার্কিংএ চলে যায়। পাশে ট্রাফিক দাড়িয়ে আছে। বাঁশিতে ফু দিচ্ছে। রিক্সাওয়ালা ভ্যান ওয়ালাদের সাথে হম্বিতম্বি করছে। ছুঁচালো স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে তাদের চাকা ফুটো করে দিচ্ছে। আর তার পাশেই এক দশাশই চেহারার লোক গাড়ী পার্ক করে দরজা খুলে পা বের করে দিয়ে গান শুনছে ‘‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হতে।’’ তারে কিছু বলতে যান দেখবে সে এমন কোন লোকে ড্রাইভার যাকে সয়ং শেখ হাসিনাও কিছু বলবে না। আপনি কি করবেন? মুড়ি খান।
যারা শ্যামলি থেকে গাবতলীর দিকে যান তারা কি এমন কোন সন্ধা পেয়েছেন যে সন্ধায় বিশ মিনিটের একটা জ্যাম পাননি? জ্যামটা কেন হয় জানেন? নানা কারন-ই আছে। তার মধ্যে একটা বড় কারন রাস্তার দুই পাশেই হানিফের বাস পার্ক করা থাকে। তারপর রং সাইড দিয়ে আসতে থাকে রিক্সা বাস বাহী ভ্যান। ট্রাফিক কর্মকর্তাদের যেন কিছুই করার নেই। আমি প্রায়ই নেমে হেঁটে যাই। একদিন একট্রাফিক পুলিশের কাছে গেলাম সাহস করে। জানতে চাইলাম
-এই যে এভাবে গাড়ী পার্ক করে রাখে এতে তো প্রচুর যানজট তৈরি হয়। এর জন্য কোন আইন নাই?
- আইন তো আছেই আইন থাকবে না কেন? আমি আইন প্রয়োগ করতেছি আপনি এই বাসগুলো পার্ক করার যায়গা দেখাইয়া দেন।
- আমি যায়গা দেখিয়ে দেব কেন? বাস কি আমার না আমি যোগাযোগ মন্ত্রি?
- আপনে যহন বাসে মালিকও না আর যোগাযোগ মন্ত্রিও না তখন আপনের এত কথার কাম কি? যে দিকে যাইতেছিলেন যান।
- আপনার কোন মাথাব্যথা নেই?
- ভাই আজাইরা প্যাঁচাল বাদ দেন তো। আপনি কি মিডিয়ার লোক?
না আমি মিডিয়ার লোক না। তার পরও আজাইরা প্যাচাল বাদ দিতে পারি না। আমি একজন সাধারন পথচারী। আমার টাকায় বানানো রাস্তা তো, তাই জানতে চাইলাম এই যে হানিফ বাস এইরকম পার্ক করে রেখেছে এর কোন নিয়ম আছে কিনা। এই রাস্তা দিয়ে তো গর্ভবতী মায়ের এম্বুলেন্সও যায়। সময় মত পৌছাতে না পেরে যদি মা শিশুর মৃত্যু হয় তাতে হানিফ বাস মলিকে কিছু আসে যায়না। ট্রাফিক পুলিশেরও কিছু আসে যায় না। মাননীয় প্রধান মন্ত্রি আপনিও তো একজন মা। আপনার পেটেও তো সন্তান হয়েছে। একজন মা ও শিশুর চাইতে হানিফ বাসের পার্কিং কি আপনার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ন?