কলা ভবন আর এর পরে তার নিজের রবীন্দ্র ভবনের নিরামিষ, নিয়মিত আর নিরানন্দ সকালের বাধ্যকতা এড়িয়ে, এগিয়ে যেতেই বামে প্রজাপতির মেলার শুরু! মানে মেয়েদের একটি আবাসিক হল। মন্নুজান হলের বর্ণিলতা চোখে পরে গল্পের। আজ তার মনে রঙ লেগেছে, আচমকা এক অজানা ঘোরে আচ্ছন্ন সে। অন্যান্য দিন বন্ধুদের সাথে এসব দিকে তার চোখ পরেনা তেমন একটা, বা চোখে পরলেও সেটা মনে কোন প্রভাব ফেলেনি কোনোদিন।
তার অন্যান বন্ধুরা এসব নিয়ে কতশত কথা শোনায় সেসব নিয়ে। সে নাকি হাফ লেডিস! কোন প্রজাপতির রঙে নাকি তার চোখ ঝলসায়না কোনোদিন! সে নাকি নাক বন্ধ এক নির্বোধ! কারণ কারো বডি স্প্রের গন্ধে নাকি সে হয়না মাতাল! কারো উড়ে যাওয়া ওড়নার বাতাসে সে নাকি হয়না বিলীন! শেষ সন্ধার ভিড় ঠেলে এগোতে গিয়ে কারো হাতের আলতো ছোঁয়ায় তার নাকি, জাগেনা কোন শিহরণ! কারো চোখে পরা চোখের দৃষ্টি নাকি তাকে ভাবায়না রাতভর! এসব নিয়ে শত সহস্র কথা তাকে শুনতে হয় অবিরত!
সেসব কথা মনে পরে যাওয়াতেই যেন চোখে, মনে আর অজানা কোন এক আকর্ষণে সে রুদ্ধশ্বাসে ছোটে ওই তাপসী রাবেয়া আর রোকেয়া হলের মাঝে জনম জনম ধরে ছায়া দিয়ে যাওয়া বট তলার কাছে। গল্প আজ ওখানে বসবে, চা খাবে একটার পর একটা, দুই চোখ মেলে, মন-প্রান ভরে দেখবে রঙিন প্রজাপতিদের মেলা আর ওড়াউড়ি! বিকেল কে করবে বর্ণিল আর সন্ধাকে করবে সত্যিকারের রাঙা গোধূলিতে রঙিন।
কেমন এক মোহময়তার ঘোরে সে পৌঁছে গেল ছায়া দিয়ে চলা বটতলায়। আর বটতলায় গিয়ে দেখতে পেল, বসার জন্য বিসৃত বট গাছের একটি আরামদায়ক শেকড়ও অবশিষ্ট নেই! সবগুলোই কারো না কারো দখলে চলে গেছে এরই মধ্যে! যাবে তো স্বাভাবিক ভাবেই। কারণ গল্পরতো আর এখানে আসার কোন তাড়া ছিলোনা, তাই সে তেমন আগে থেকে এসে যায়গা দখল করার ভাবনাও ভাবেনি। কিন্তু অন্যদের তো তাড়না অনেক! কারো আসলেই কারো সাথে সময় কাটানোর, কারো অন্য কারো সাথে সহযাত্রী হয়েই অন্যের সুখ উপভোগের, আর কারো এটি একটি নেশা! আর সেই নেশা কাটাতে নেশার আড্ডায় এসে নেশাতুর হয়ে, নেশা কাটানোর নেশা!
এমনকি বট গাছের ছায়া ঘেরা অংশের পরে, ঘাসে ঘাসে আচ্ছাদিত চারপাশটাও দখলে চলে গেছে, কারো না কারো। এই সব দেখে তার মনের মাঝে কিছুক্ষণ আগ থেকে জমে ওঠা অজানা আনন্দের রঙিন মেঘ গুলো যেন, কালো হতে শুরু করলো! বুকের ভেতরে জেগে ওঠা সুখের বুদবুদ এখন, অসস্থির খাবি খাচ্ছে! ধুর এমনকি চা খাবার বিশেষ আকর্ষণটুকুও মিলিয়ে গেল, এক নিমিষে! তাই গল্প আর কোথাও বসে থেকে মনকে আরও বিষিয়ে তুলতে না দিয়ে, অন্য পথ ধরলো। পথ ধরতে গিয়েই পথ নিয়ে মতভেদ! নিজের সাথেই নিজের!
কোন দিকে যাবে সে? বায়ের শিক্ষকদের বাসভবনের নিরিবিলি আর মিহি পথ ধরে, পাখিদের শেষ সন্ধার পাখা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে শুনতে? যেখানে সবুজ রঙ, সন্ধার সাথে সাথে কালো হতে হতে নিকষ আঁধার হয়ে যায়? যেখানে নামে গ্রামের নিস্তব্ধতা, পিছনের জাঁকজমকের পেরিয়ে একটু এগোলেই।
নাকি ডানের পথ ধরবে সে? পেরিয়ে টলটলে পুকুর, ফাঁকা অল্প-বিস্তর ধানের ক্ষেত, ডানের ঝোপঝাড় আর মৃদু জঙ্গলের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলাদেশের ম্যাপ আকৃতির অনিন্দ্য শিল্পিত ছোঁয়ার নিস্তব্ধ পুকুর! অসহ্য তুঁত বাগান, আবেগ আর ভাবনাহীন বিজ্ঞান ভবন পেরিয়ে আবার সেই কলকাকলিতে মুখরিত শেষ সন্ধার টুকিটাকির কাঁচা-পাকা ইটের রাস্তা?
নাহ আজ আর সে কোন কলকাকলির গুঞ্জন শুনতে চায়না! সেই মানসিকতাটুকু সে হারিয়ে ফেলেছে বট তলার যায়গায় নিজের যায়গা করতে না পেরে। তাই সে অবশেষে পাখির ডানা ঝাঁপটানো শুনতে শুনতে আর কোন রকম যানবাহনের শব্দহীন একাকী পথে নিজেকে হারিয়ে ফেলল। আর মিলিয়ে গেল সকল আলোক বর্তিকা পেরিয়ে, অন্ধকারের মাঝে।
যেতে যেতে শুনতে পেল, কে যেন এখনো ডাকছে রোকেয়া হলের পাশে দাড়িয়ে তার কোন পরিচিতাকে, নাম ও রুম নাম্বার ধরে। এটাই এখানে সহজে আর নির্ঝঞ্ঝাটে কাউকে ডেকে পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়। কিন্তু উপর থেকে কোন প্রতি উত্তর দিচ্ছেনা কেউই! সাড়া দিচ্ছেনা ডাকে। আর সাড়া না পেয়ে ওখানে জড়ো হওয়া তিন-চারজন ছেলে বেশ কিছু আজে-বাজে আর ভীষণ নোংরা মন্ত্যব্য করতে করতে চলে মিলিয়ে গেল! সাথে হুমকি দিয়ে গেল, কাল আবার আসবে, একই সময় আর এখানেই। ক্লাসে কিছু বলতে পারেনা, বিভাগের বড় ভাইয়ের ভঁয়ে। এখানে তো আর কোন বড়ভাই নেই। আজ হোক বা কাল বা পরশু কতদিন থাকবে নিজেকে আটকে রেখে! নামতে ওকে হবেই!
এটা শুনে গল্পের তেতো মন আরও তেতো হয়ে গেল, আর সেও মনে মনে ভেবে রাখলো, সেও আসবে কাল, তবে এবার আর বট তলায় নয়, এবার সে আসবে এদের কার্যক্রম দেখতে। কি ব্যাপার? সেটা দেখতে! কৌতূহল তৈরি হল গল্পের। কে এলো না এলো তাই নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কিসের এদের? তাও জোর করে নামাতে চাইছে, হুমকি দিয়ে আর ভঁয় দেখিয়ে? ব্যাপারটা তো দেখতেই হয়? ঠিক আছে কাল আসবে আর তাড়াতাড়িই আসবে সে?
এরপর? আগামী সপ্তাহে......
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩