somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সকাল ও তার অপেক্ষা...!

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন অফিসের নানান কাজ, অকাজ, ঝামেলা কোন মতে শেষ করে যখন বাসায় ফিরি, পরদিন সকালের অপেক্ষায় থাকি, তাকে দেখার জন্য!

প্রতিদিন লাল-সবুজ রঙে সেজে আমাকে ক্রস করে যায়। তার আমার দিকে আসার ছন্দ, প্রথম দৃষ্টি বিনিময়, যদিও তার সাথে প্রায় প্রতিদিনই আমার দৃষ্টি বিনিময় হয়, তবুও কেন যেন প্রতিদিনের দৃষ্টি বিনিময়ই আমার কাছে প্রথম আর একান্ত আনন্দের মনে হয়। ঠিক যেন আজই প্রথম দেখলাম তাকে। প্রতিদিন তাকে এভাবে দেখাটাই যেন তার সাথে আমার প্রথম দেখা। যেটা প্রতিদিন আমাকে নতুন করে একই রকম দুর্বার একটা আনন্দের শিহরণ বইয়ে দেয়, আমার চেতনা জুড়ে।

আর তারপর যেটা হয়, সেটা হল... মনটা যেমনই থাকুক কিছুটা আনন্দের পরশ লাগে প্রানে, একটা হালকা বাতাসের ঝাপটা লাগে মুখে এসে, যেন কিছুটা চাপমুক্ত করে দেয় আমাকে, একটা অন্যরকম আবেশ ছুঁয়ে যায় আমাকে, নতুন উদ্যাম পাই সেই দিনের হাজারো চাপ সামলে নেবার জন্য। তার দিয়ে যাওয়া সেই অজানা আনন্দ আর সুখের বাতাসে ভাসতে ভাসতে ভাবি, একদিন...

একদিন আমিও যাবো তার, সাথে-সাথে, পাশে-পাশে, সে যেথায় যায়, তার সাথে, তার কাছে, তার লাল-সবুজের সাঁজের সাথে, হারাবো তার অপরূপ সাঁজের মাঝে। যেতে-যেতে, শুনবো তার সুর তোলা গুনগুন গান, কান পেতে রইবো শুনতে তার খিলখিল হাসি, চোখ মেলে দেখবো তার প্রতি আরও হাজারো মানুষের আকুল হয়ে তাকিয়ে থাকা, তার রুপে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকা, দেখবো তাকে কখনো মেঘ ছুঁয়ে যায়, কখনো সে নিজেই সবুজে হারায়, কখনো হলুদ সরিষা খেতে অবাধ্য হয়ে ছুটে যায়...

কখনো রোমাঞ্চ খোঁজে কোন গুহায় বা পাহাড়ের গুহার ভেতর দিয়ে ছুটে চলা অন্ধকার রাস্তায়, কখনো ধীর লয়ে হেটে বেরায় সবুজ সমুদ্রের সবুজ-সোনালি চা বাগানে, কখনো নিজেকে ভিজিয়ে নেয় কোন জলাশয় বা বৃষ্টির জলে, দূর করে নেয় সকল ক্লান্তি।
কখনো আমাকে নিয়ে থেমে যাবে নির্জন কোন লোকালয়ে, এক শীতের সকালে, সেখানে ধোঁয়া ওঠা লাল চায়ে চুমুক দেব তার পিঠে হেলান দিয়ে।

কখনো সবুজ, কচি, ডাবের মুখে চুমুক দেব নোনতা পানির দারুন স্বাদ নিতে, কোন এক গরমের ক্লান্ত দুপুরে, কখনো কোন গ্রামের গাছ পাকা হলুদ-সবুজ সাগর কলায় সুখ খুঁজে নেব, তার কোলে মাথা রেখে, আর এরপর ঘুমিয়ে যাবো তার আচলের ছায়া তলে, তার ছন্দময় ছুটে চলার দোলায় দোল খেতে খেতে। এমন করে ভাবি, ঠিক এমন করেই।

তো কদিন ধরে অফিসের খুব বেশী ব্যাস্ততা যাচ্ছে, কাজ কাজ আর কাজ। কাজের চাপে অন্যকিছু মনে করার মত কোন সময় পাওয়া যাচ্ছিলনা কিছুতেই। এমনকি এতো, এতো প্রিয় লেখালেখি থেকে পর্যন্ত দূরে ছিলাম! মন আনচান করছে কিসের জন্য যেন? অস্থির লাগছিল খুব নিজের জন্য কোন সময় খুঁজে না পেয়ে, বেশ বিষণ্ণ বোধ করছিলাম নানা রকম ঝামেলায়।

আজ সকালেও তাই। মনটা মনে ছিলোনা। কোথায় যেন কি নেই? কি যেন খুঁজে ফিরছিলাম মনে মনে। একটা বেশ ঘন কালো মেঘ যেন ছেয়েছিল আমার সুখের, কল্পনার আর বর্ণিল আকাশের সবটুকু জুড়ে। উহ বেশ অসহ্য লাগছিল কাল রাত থেকেই। এমনকি এই সকালেও সেই গুমোট ভাবটা আঁকড়ে ধরে ছিল যেন। সেই গুমোট মন নিয়েই অফিসের গাড়িতে চেপে বসলাম প্রিয় জানালার পাশে, কানে হেড ফোন গুঁজে গানের মাঝেই কিছুতা প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা।

মিরপুরের ধুলোর সাগর পেরিয়ে, কয়েকটি মোড় নিয়ে গাড়ি মিরপুর ফ্লাইওভারে উঠতেই তার কথা মনে পড়লো! নিজের অজান্তেই একটুখানি হাসলাম আর তাকিয়ে রইলাম তার চলার পথের দিকে, আমাকে ক্রস করে ছুটে যাওয়া সেই দিকে, অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকলাম তার লাল-সবুজ সাঁজ দেখতে, অনেকটা আকুল হয়ে। ফ্লাইওভার পার হতে মাত্র কয়েক মিনিট লাগে। কিন্তু সেই কয়েক মিনিটও যেন ঘণ্টার চেয়ে দীর্ঘ মনে হতে লাগলো আমার কাছে। অদ্ভুত!

না অদ্ভুত না মোটেই। প্রিয় কিছুর অপেক্ষা, অনেক কাঙ্ক্ষিত কিছু দেখতে চাওয়ার আকুলতা সব সময় কেন অনেক লম্বা মনে হয় সবার কাছে। সেই অপেক্ষা আর অপেক্ষার সেই প্রতিটি প্রহরই যেন সুখের একটা একটা মুহূর্ত! এই সে এলো, এই দেখা দিল, এই বুঝি আমায় দেখে মুচকি হাসল, এই বোধয় তার লাজুক পলক ফেলল! আর এই বুঝি ছন্দ তুলে নিমিষেই ছুটে পালিয়ে গেল, চোখের আড়ালে! ঠিক এমনই অনুভূতি হচ্ছিল ভিতরে ভিতরে। আর একা একা হাসছিলাম নিজেই নিজের সাথে, কিন্তু চোখ ছিল অপলক তার ছন্দ তুলে চলে যাওয়া রাস্তার দিকে।

ফ্লাইওভার থেকে নামছি আর তার অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি রাস্তার দিকে... বুকের মধ্যে একটা ধড়ফড় অনুভূতি গ্রাস করছিল ক্ষণে ক্ষণে, এই এলো, দেখা দিল আর ছুটে গেল বুঝি!

হ্যা সে এলো, তার সেই লাল সবুজ সাঁজে সেজে, হেলেদুলে, একেবেকে তবে বেশ ধীরে-ধীরে। বোধয় আমার আকুল আহ্বান আর তার প্রতি আমার মোহাছন্নতা সে অনুভব করতে পেরেছে। তাই সে আজ এলো অনেক ধীরে ধীরে, চলে গেল ঠিকই তার পথে। তবে আমাকে অনেকক্ষণ ধরে তাকে দেখার সুযোগ দিয়েছে আজ!

তাকে দেখেছি অনেক সময় নিয়ে আর প্রান ভরে। দুজন দুজনকে ক্রস করে দূরে হারিয়ে গেলাম। তবে মনের মধ্যে সেই সুখের রেশ রেখে গেছে আজও, দিয়ে গেছে এক মুঠো কোমল বাতাস, আর দূর করে গেছে মনের মধ্যে গুমোট হয়ে থাকা কালো মেঘ, নিমিষেই!

তাই তাকে মনে মনে কথা দিয়েছি... একটু চাপ কমুক, একটু মুক্ত হই ঝামেলাগুলো থেকে, একটু সময় বের করে নেই নিজের জন্য, তারপরই একদিন সকালে তোমার জন্য দাড়িয়ে থাকবো, তোমার অপেক্ষায় তোমার বারান্দায় অথবা তোমার আঙিনায়, তোমার সাথে যাবো বলে। কোন এক অজানায়, যেখানে তুমি যাও প্রতিদিন, সেখানেই।

তোমার লাল-সবুজের আচলের ছায়া তলে হেলে-দুলে, নিজেকে এলিয়ে দিয়ে অথবা চোখ বুজে ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে, তোমার আচ্ছন্নতায় মুগ্ধ হয়ে।

প্রহর গুনছি আমি সেই দিনের অপেক্ষায়...

সকালের সেই লাল-সবুজ ট্রেনে করে হারিয়ে যাবার প্রতীক্ষায়...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×